এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > 370 ধারা অবলুপ্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত, জেনে নিন বিস্তারিত

370 ধারা অবলুপ্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত, জেনে নিন বিস্তারিত


“যাহা বলিদান হয়ে মুখার্জি, বো কাশ্মীর হামারা হ্যায়” স্বাধীনতা লাভের পরে তদানীন্তন কাশ্মীরের পার্মিদের বিরোধিতা করে জম্মু-কাশ্মীর যান তদানীন্তন জনসংঘ এবং বর্তমান বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। কিন্তু কাশ্মীর থেকে তার ফিরে আসা হয়নি। সেই কাশ্মীরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডক্টর মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কাশ্মিরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকেশরী।

এরপরে রাবি, চেনাব, ঝিলম দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। 370 ধারা কার্যকর করে তদানীন্তন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ভারতবর্ষের আর পাঁচটা অঙ্গরাজ্য থেকে বিশেষ মর্যাদা বলে জম্মু-কাশ্মীরকে আলাদা করে রেখেছিলেন। কিন্তু জনসঙ্ঘ বা বিজেপি বরাবরই দাবি ছিল, ধারা 370 এর অবলুপ্তি। স্বাধীনতার পরবর্তী অবস্থায় যতগুলো নির্বাচন ভারতীয় জনতা পার্টি লড়েছে, প্রত্যেকটির ঘোষণাপত্রে 370 ধারা অবলুপ্তির কথা উল্লেখ ছিল।

কিন্তু 99 থেকে 2004 এনডিএ সরকার যা অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন ছিল, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় ধারা 370 এ হাত দিতে সাহস দেখায়নি তদানীন্তন বাজপেয়ী সরকার। কিন্তু 2014 সালে যখন পূর্ণ বহুমত নিয়ে ভারত বর্ষ সরকার গঠন করলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, সেই সময় অনেকের মনেই সন্দেহ জন্মেছিল, এবার কি বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে ধারা 370, রাম মন্দির ইত্যাদি বিজেপির বহু প্রতীক্ষিত নীতিগুলোকে বাস্তবায়িত করার পথে নামবে!

কিন্তু মোদি ওয়ান সরকারে এর কোন ঝলকই দেখতে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই ভারতবর্ষের বিরোধী দলগুলো চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন ঘোষণাপত্রে আলাদা কিছু কথা রাখলেও নেহেরু নীতির বাইরে বেরোবে না মোদি সরকার। কিন্তু সমস্ত জল্পনা-কল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে 2019 সালে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ভারতবর্ষের মসনদে ক্ষমতায় আসার পর মোদি 2.0 সরকার প্রথম ঝটকাতেই সংসদের দুই কক্ষ থেকে প্রথমে পাস করিয়ে নেয় তিন তালাক বিল। যার জেরে স্পষ্ট হয়ে যায় দ্বিতীয় ইনিংসে মোদি সরকার কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। যার চূড়ান্ত প্রমাণ মিলল গত সোমবার।

বিগত দুই দিনে কাশ্মীরের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ছোট থেকে বড় সমস্ত রাজনৈতিক দল তথা ভারতবাসী চিন্তা করছিলেন এবার কোন বড় সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে চলেছে মোদি সরকার। আর সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে সোমবার রাজ্যসভায় ধারা 370 এর অবলুপ্তির সংকল্পপত্র পাঠ করে ভারতবর্ষের গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ। শুধু তাই নয়, জম্মু-কাশ্মীরকে ইউনিয়ন টেরিটোরি অফ ্থাৎ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আলাদা করে দেওয়া হয় লাদাখকে।

জম্মু-কাশ্মীরে এখন থেকে বিধানসভা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষানাবেক্ষণের দায়িত্ব সরাসরি ন্যস্ত থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। লাদাখের ক্ষেত্রে রাজ্যের কোনো বিধানসভা থাকবে না। লাদাখ কাউন্সিলের মাধ্যমে শাসিত হবে সেই অঞ্চল। অর্থাৎ সেখানকার শাসনব্যবস্থা সরাসরি কেন্দ্র সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে। লাদাখের ক্ষেত্রে এই নিয়ে কোন আপত্তি না থাকলেও জম্মু কাশ্মীর ইস্যু ইতিমধ্যেই ঝড় তুলেছে আসমুদ্র হিমাচলে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। অনেক জায়গায় পটকা পাঠিয়ে, রং খেলে কাশ্মীরের এই পূর্ণাঙ্গ ভারত অন্তর্ভুক্তিকে উদযাপিত করছে দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাই বলে রাজনৈতিক জলঘোলা হতেও কিছু বাকি নেই। ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই জম্মু কাশ্মীরে কারফিউ জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। মানুষকে বাড়ি থেকে বের হতে পর্যন্ত বাধা দেওয়া হয়, যে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে।

অন্যদিকে মেহবুবা মুফতি, ফারুক আব্দুল্লা, ওমর আবদুল্লা ইত্যাদি কাশ্মীরি নেতাদেরকে গৃহবন্দী করে রাখা হয় এবং পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয় মেহবুবা মুফতিকে। যার জেরে ক্রমেই ঘোরানো হচ্ছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে বিরোধী রাজনীতির জল। দেশের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি 370 অবলুপ্তি প্রভাব সরাসরি পড়তে দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গেও।

রাজ্যসভায় 370 ধারা অবলুপ্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গ আর জম্মু কাশ্মীরের মধ্যে কোনরকম ভৌগোলিক তফাৎ থাকল না। অর্থাৎ এখন থেকে বাংলাও যেমন ভারতের অবিচ্ছেদ্য, অঙ্গ জম্মু-কাশ্মীরও তাই। তফাৎ শুধু এটুকুই, পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য, জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল। যা নিয়ে এদিন আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায় রাজ্য বিজেপির কর্তা ব্যক্তিদের।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

রাজ্যে মিষ্টি খাইয়ে, আতসবাজি ফুটিয়ে 300 এর অবলুপ্তিকে উদযাপিত করে রাজ্য বিজেপির সমর্থকরা। এই বিষয়ে বলতে গিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্যতম নেতা সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন তার সুযোগ্য শিষ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যার কারনে আজ এক বিন্দুতে মিশে গেছে বাংলা থেকে কাশ্মীর। ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।” এর পাশাপাশি মোদীর এই মাস্টারস্ট্রোকে বিরোধীরা যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাবে, তা অত্যন্ত সহজ অনুমেয়।

রাজ্যসভায় বিলের বিরোধিতা করলেও রাজ্যে এই নিয়ে গোটা ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতে দেখা যায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। কিন্তু বিলের চরম বিরোধিতা করা কংগ্রেস এবং সিপিআইএম রাজ্যস্তরেও এই বিষয় নিয়ে মুখ খোলে। 370 এর অবলুপ্তি নিয়ে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতার অপব্যবহার করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহর এই বিভাজনের রাজনীতি আগামী দিনে দেশের পক্ষে সুখকর হবে না। এখন চিন্তা হচ্ছে দার্জিলিং থেকে কোচবিহার বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ থাকবে তো!”

অন্যদিকে সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “এই ধরনের একপেশে সিদ্ধান্ততে কাশ্মীর ঘাটির পরিস্থিতি আরও বেশী উত্তপ্ত হবে। রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান আমরা চেয়েছিলাম।” কিন্তু মোদি সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তে পার্বত্য উপত্যকা আরও অশান্ত হবে বলে দাবি সেলিমের।

এদিকে জম্মু-কাশ্মীরের সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামির মুক্তির দাবীসহ এদিন 370 এর অবলুপ্তির বিরুদ্ধে মিছিল করতে দেখা যায় বামেদেরকে। যে মিছিল মহাজাতি সদন থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। আবার সমস্ত বিরোধী নেতা নেত্রীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানায় সিপিআইএমএল লিবারেশন। এই গোষ্ঠীর রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ এদিন কাশ্মীরপন্থী নেতা নেত্রীদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হোন।

এসইউসিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিবদাস ঘোষের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এদিন এক সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভা থেকেই অমিত চট্টোপাধ্যায় দলের তরফে 370 খারিজের প্রতিবাদ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষের নির্দেশে সভা শেষ হওয়ার পর সুবোধ মল্লিক স্কয়ার থেকে রাজভবন পর্যন্ত অভিযান করেন এসইউসিআইয়ের কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু রাজ্যে বাম কংগ্রেস একজোট হয়ে যতই প্রতিবাদে মুখর হোন না কেন, রাজ্যসভায় বিলের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও বাংলার মাটিতে শাসকদলের নিশ্চল অবস্থান চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বিরোধী শিবিরের কপালে।

অনেকেই অনুমান করছেন, এইমুহূর্তে কোনো রকম আন্দোলনের রাস্তায় গিয়ে নিজেদের গায়ে দেশবিরোধী তখন লাগাতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। সবকিছু মিলিয়ে 70 বছর পরে এহেন সাহসী পদক্ষেপে যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে একেবারে ছত্রভঙ্গ করে ছেড়েছেন মোদী-শাহ জুটি, তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বঙ্গ বিজেপিকে কোনো রাজনৈতিক অক্সিজেন জোগায় কিনা, বা বাংলার শাসক দলকে কোনো সিদ্ধান্ত সংকটে ফেলে কিনা! এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!