এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > শুভেন্দু পন্থী না অভিষেক পন্থী শাসক দলে আড়াআড়ি বিভাজন,চিন্তা বাড়াচ্ছে মমতার

শুভেন্দু পন্থী না অভিষেক পন্থী শাসক দলে আড়াআড়ি বিভাজন,চিন্তা বাড়াচ্ছে মমতার


শারদ উৎসবের দিনগুলোতে প্রত্যেক নেতাকর্মীরা তাদের নিজের নিজের এলাকায় জণসংযোগে ব্যস্ত থাকলেও বিজয়া দশমীর ঢাকের কাঠি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ব্যর্থতা অনেকাংশেই দূর হয়েছে। পঞ্চমী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত ক্লাবে ক্লাবে প্রতিমা দর্শন, নিজেদের নিজেদের বুক স্টলে গিয়ে দলের ভাবাদর্শ মানুষের কাছে প্রচার, কোথাও বা দিদিকে বলো কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে উৎসবের দিনগুলোতেও দলীয় জনসংযোগ, ইত্যাদিতেই ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূলের ছোট-বড়-মেজো সব নেতারাই।

কিন্তু মা দুর্গার কৈলাসে যাত্রা করার সঙ্গে সঙ্গেই দূর হয়ে গেছে সেই সমস্ত ব্যাস্ততা। এখন তাই বিজয়া সম্মিলনী মধ্যে দিয়ে একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময় করে নিজেদের রাজনৈতিক সহাবস্থান এবং সম্প্রীতি রক্ষায় ব্যস্ত তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু যেমন বাড়ির ক্ষেত্রে বাবা-মা বা গুরুজন স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রনাম না জানালে বিজয়া সম্পন্ন হয় না, তৃণমূলের ক্ষেত্রে তেমনই সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম না জানিয়ে গোটা বছরটা ভালো কাটবে এরকম ভাবতেই পারে না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বরা।

তাই দশমী সমাপ্ত হতেই একে একে সব নেতারা ভিড় করতে শুরু করেছে ৩১ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে অবস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে। আর এই বিজয়ার প্রণাম বিনিময়ে একদিকে যেমন নেত্রীর প্রতি সকল নেতাদের অনুরাগ প্রকাশ পাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই কিছুটা সুরভঙ্গ হয়ে রাজ্য রাজনীতির মানচিত্রে প্রকট হয়ে উঠছে, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে বিদ্বমান রাজনৈতিক দূরত্ব।

কারণ কলকাতায় গিয়ে নেতৃত্বদের প্রণাম করার মুহূর্তের ছবি বা শুভেচ্ছা বার্তার ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হতে শুরু করেছে তৃণমূল নেতাদের সোশ্যাল হ্যান্ডেল অ্যাকাউন্টে। তার মধ্যে কোথাও দেখা যাচ্ছে অভিষেকবাবুর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ঘনঘটা, আবার কোথাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে বিজয় করার মুহূর্ত। যার জেরে কিছুটা হলেও জল্পনা ছড়াচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

জানা যায়, বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বিধায়কদের সহকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার পৌঁছে গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি। সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ সহকারে বিশিষ্ট নেতৃত্বরা।

কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম জানান তারা। বিজয়ার শুভেচ্ছাও বিনিময় হয় সকলের মধ্যে। আর নেত্রীর সঙ্গে বিজয়া সারার পরই পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ওই প্রতিনিধি দল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এদিনের বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পাশাপাশি পৌঁছে গিয়েছিলেন জেলা যুব তৃনমূলের সভাপতি প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী, কার্যকরী সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তী সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বরা। তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করার পাশাপাশি যুব তৃনমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

রাখঢাক না করেই বিধায়কদের সহকারে নিজের কালীঘাটে যাওয়ার ঘটনাকে মেনে নিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি। তিনি বলেন, “দিদিকে বিজয়ার প্রণাম জানাতে আমরা ওখানে গিয়েছিলাম। দিদির সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।” স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন ওঠে, জেলার সকল তৃণমূল বিধায়কদেরকে নিয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বিজয়ার প্রণাম করতে যাওয়া কি আসলে জেলার ঐক্যতার ছবিতে প্রদর্শিত করবার চেষ্টা!

এই বিষয়ে অজিত মাইতির জবাব, আমরা সকলে মিলে যাব বলে ঠিক করেছিলাম। আর সেই মতই গিয়েছি। বৃহস্পতিবার যেমন অজিত মাইতি, প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীরা বিজয়ার প্রণাম সারতে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তেমনই পরদিন শুক্রবার সপার্ষদ হলদিয়ায় ছুটে গিয়েছিলেন রামপ্রসাদ গিরি, স্নেহাশীষ ভৌমিক থেকে শুরু করে সুনীল কর এবং অন্যান্য নেতৃত্বরা। জানা গেছে, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের পর যখন অনেক তৃণমূল নেতারাই বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছিলেন, সেই ভিড়ে কিছুটা পদস্খলন হয়েছিল রামপ্রসাদ গিরির।

পরবর্তীতে দলের হেভিওয়েট নেতা তথা পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে ফের তৃণমূলের ফিরে আসেন গিরি সাহেব। তাই রাজ্য রাজনীতির আঙ্গিকে রামপ্রসাদবাবু এখন শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বলেই সকলের কাছে পরিচিত। অপরদিকে মেদিনীপুর শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি স্নেহাশীষ ভৌমিক, সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতা সুনীল কর সকলেই শুভেন্দুবাবুর কাছের বলে জানা যায়। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে রামপ্রসাদ গিরি বলেন, “হলদিয়া  গিয়ে দাদার সঙ্গে দেখা করেছি। দাদার আশীর্বাদ নিয়েছি।”

স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলের মনে প্রশ্ন, একই জেলার শীর্ষ নেতারা কেউ ছুটছেন কালীঘাট, কেউ ছুটছেন হলদিয়ায়, বিধায়কদের সহকারে জেলা সভাপতি যখন কালীঘাটে উপস্থিত, তখন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা বলে পরিচিত রামপ্রসাদ গিরি হলদিয়া যাত্রা করায় বিভাজন স্পষ্ট হচ্ছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু রামপ্রসাদ গিরিকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, গতবার তো দিদির কাছে গিয়েছিলেন, এবার কি যাবেন!

সেই প্রসঙ্গে গিরিবাবু সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে বলেন, “শীঘ্রই যাব।” কিন্তু হিন্দুশাস্ত্র মতে যেমন অগ্রপুজ্য হিসেবে গণেশকে ধরা হয়, ঠিক তেমনই তৃণমূলের শাস্ত্র মতে বর্তমানে অগ্র প্রনম্য হিসেবে প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তারপরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বোঝানো হয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কিন্তু সেই জায়গায় মেদিনীপুরের মত জেলায় তৃণমূলের শাস্ত্র কিভাবে উলটপালট খেয়ে যাচ্ছে, সেই নিয়ে চিন্তিত দলের একাংশ মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।

কাজেই রাজ্য রাজনীতিতে যে কথা অনেকদিন ধরেই চুপিসারে তৃণমূলের অন্দরে কথিত ছিল, বিজয়া দশমীর প্রণাম সেই চুপিসারে হওয়া কথাগুলোকেই কি প্রকাশ্যে এনে দিচ্ছে না! জল্পনা চলছে সর্বত্র। রাজ্যে চিরকালই তৃণমূলের এক নম্বর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময় নাম্বার টু হিসেবে নাম উঠে এসেছিল বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের। কিন্তু সেই মুকুলবাবু এখন অতীত। কাজেই বিরোধী আমল থেকেই নেত্রীর মত রাজ্যময় দাপিয়ে বেড়ানো শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বদের চাপা অনুরাগ রয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ মহল।

অপরদিকে তেমনই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দায়িত্বে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বর্তমান রাজনীতির নিরিখে তার অনুগামী সংখ্যাও কম নয়। প্রায় প্রতিটি জেলারই তৃনমূল জেলা সভাপতি থেকে শুরু করে যুবনেতা অভিষেকবাবুর লোক হিসেবেই পরিচিত। তাই দলের অন্দরের দুই মহাশক্তির চাপা সংঘর্ষ আগামী দিনে তৃণমূল রাজনীতির ওপর কি রকম প্রভাব ফেলে! সেদিকেই নজর থাকবে বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!