এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১০

অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১০


সুপ্রিয়া – তাই , এখানে আসেনি তো ? উপরে ঘরে আছে বোধ হয় ,দেখছি দাঁড়া।

অভি – তুমি চা করো , আমি একেবারে উপরে নিয়ে গিয়ে দেখছি।

টিভিতে মায়েরা যা দেখছে আর কিছু কখন দেখলে অভিরও মাথা খারাপ হয়ে যাবে।রিমোটটা নিয়ে চ্যানেল ঘোরাতেই মা ঠাকুমা আঁতকে উঠলো। যেন কিন্ডনি দুটো নিয়ে নিয়েছে অভি।
মা – বাবু ঘোরাবি না, যেখানে হচ্ছিলো সেখানে দে
ঠাকুমা- ও দাদুভাই, খুব ভালো হচ্ছে তুমি পরে দেখো, নাহলে উপরে গিয়ে টিভিতে দেখো না। অভি চ্যানেলটা ঘুরিয়ে দিলো। পাশের ঘরে বাবা কাকুর মেয়েকে পড়াতে বসিয়েছে , জুঁইও পড়ছে। হারু কাকু দাদুর পায়ে তেল মালিশ করতে উপরে গেলো।

রান্না ঘরে গিয়ে সুপ্রিয়া ধরলো অভি – ছোটমা তুমি ইচ্ছা করে সিঁড়ির দরজা বন্ধ করেছিলে না?
সুপ্রিয়া – আমি ইচ্ছা করে? যা

অভি- একেবারে মিথ্যা বলবে না। নাহলে মালতী পিসি জন্য কি করে গুঞ্জা উপরে ?
সুপ্রিয়া – বেশ করেছি। এমন ভালো ছোটমা পাবি না। অন্য শাশুড়িরা ছেলের সঙ্গে বৌদের মিশতে দেয়না। এই নে চা , যা।

অভি চা নিয়ে চললো উপরে।

ঘরে ঢুকে দেখলো ঘর অন্ধকার আলোজ্বালালো, গুঞ্জা বিছানায় গুটিসুটি দিয়ে যেমন শুয়ে ছিল ঠিক তেমনিই শুয়ে রইলো। চা রেখে একবার ডাক দিলো। গুঞ্জা উঠলো না। ফের ডাকলো এবার গুঞ্জা উঠে বসলো।
অভি – তোমার শরীর খারাপ?
গুঞ্জা – না
অভি মাথায় হাত দিয়ে দেখলো গুঞ্জার জ্বর এসেছে। বললো – জ্বর এসেছে তো? শুয়ে থাকো। নিচে গিয়ে সুপ্রিয়াদের বললো , অভিজিৎকে ফোন হলো। কাকু ওষুধ আনলো। অভি বৌয়ের সেবা করতে লাগলো।

রাতে জ্বর বাড়লো। ছোটপিসে বলেছে জ্বর বাড়বে। চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু অভির চিন্তা যাচ্ছে না। সে বলেছে ব্লাড টেস্ট করার কথা কেননা ডেঙ্গু হচ্ছে। অভিজিৎ বলেছে দরকার নেই, দাদুভাইকে নিয়ে খুব খেটেছে আর সিমটম বলছে ভাইরাল ফিভার। ৭ দিন থাকবে। না কমলে তারপর টেস্ট। রাত্রে জলপটি দেওয়া ওষুধ খাওয়ানো সব কিছু অভিই করেছে। ঘুমন্ত গুঞ্জার মুখের দিকে তাকিয়ে কদিন কেটেছে অভির। গুঞ্জার জ্বর কমেছে কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ নয়।

ইতিমধ্যে খেপিটা কল করেছিল। অভির সাথেই পড়তো সোহিনী সে এখন আমেরিকাতে থাকে। তার বয়ফ্রেইন্ড আর সে ব্যাঙ্গালুরুতে ঘুরতে গেছে। সব আগে থেকেই ঠিক ছিল। দেখাও হতো ওদের , কিন্তু দাদুর শরীর খারাপ অভি এখানে চলে এসেছে। ফলে সোহিনী অভিকে কল করে ঝগড়া করেছে। বৌ এর প্রতি টানে অভি চলে গেছে ওর সাথে দেখা না করে, অভি ওকে ভুলে গেছে এই সব।পরে অবশ্য গুঞ্জার সাথে কথা বলতে চেয়েছে। কিন্তু শরীর খারাপ বলে বলা হয়নি। গুঞ্জা অবশ্য জানে না সে ঘুমাচ্ছিলো। অবশ্য না ঘুমালে কথা শুনে ভাবতো অভির কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে সে অভির সাথে ঝগড়া করছে গুঞ্জাকে নিয়ে। নির্ঘাত কেস খেত অভি।

সোহিনীর ওই রকম মজা করার অভ্যাস আছে। একবার মাকে কল করে বলেছিলো – অভি আর সোহিনী নাকি বিয়ে করে ফেলেছে , অনেক কান্ড করে বোঝাতে হয়েছিল সোহিনী পীযুষকে ভালোবাসে। মজা করছে। ফের সোহিনিই সামলেছিলো ব্যাপারটা।,ওকে বিশ্বাস নেই। গুঞ্জা ঠিক হলেও সোহিনীকে ওর ফোন নাম্বার দেবে না, আবার কিছু একটা ইয়ার্কি করবে , ফের কেস খাবে অভি।

কিন্তু সত্যিই কি তাই ? গুঞ্জা শুনেছে সবটা। কিন্তু ঘুমানোর ভান করে শুয়েছিল। মরে যেতে ইচ্ছা করছে গুঞ্জার। তারপর থেকে সব ওষুধ খায় নি। মরে যায় যাবে।

এদিকে অভি টাইমলি ওষুধ দিলেও কাজ হচ্ছে না জ্বর ছাড়ছে না গুঞ্জার। ধরা পড়লো গুঞ্জা। অভি দেখে ফেলেছে গুঞ্জা ওষুধ ফেলে দিচ্ছে।অভির কাছে বকা খেয়ে বলেছে ওষুধ তেঁতো। দিব্যি দিয়ে অভি প্রমিস করিয়েছে গুঞ্জা আবার ওষুধ খাচ্ছে। কিন্তু অভিকে এবার যেতে হবে। অফিসের কাজ আছে তাছাড়া সোহিনীদের সাথে আর দেখা হবে না। ওরা আবার ১ বছর পর আসবে। যেতে মন চাইছে না কিন্তু তবুও।

চলে গেলো অভি মনের মধ্যে গুঞ্জাকে নিয়ে। শুধু ওর ঘুমন্ত মুখটা মনে পরে অভির। রোজ দুবার ফোন করে জানতে চায় কেমন আছে গুঞ্জা । গুঞ্জার সাথেও কথা বলে, গুঞ্জা হুম, হ্যাঁ, না ব্যাস এইটুকুই। মায়া বাড়িয়ে লাভ কি ? ও তো সোহিনীর। শরীর ভালো হয়ে গেছে গুঞ্জার তাও অভি দুবার কল করে সকালে রাত্রে। কিন্তু গুঞ্জা সেই একই -হুম, হ্যাঁ, না। অভির খুব ইচ্ছা করে গুঞ্জার সাথে কথা বলতে, ওর কথা শুনতে, ওকে অনেক কথা বলতে। কিন্তু হুম, হ্যাঁ, না -র বেশি কোনো কথাই যে বলেন না ম্যাডাম। ফোন নিয়ে নিজেদের বিয়ের ফটোগুলোই দেখে।

ও ফিরে এসে দেখেছে যে কোম্পানিতে ও ইন্টারভিউ দিয়েছিলো সেখান থেকে অফার লেটার এসেছে। যার আশা ছেড়েই দিয়েছিলো। সাথেই সুধীর ওদের অফিসের সিনিয়র আমেরিকা চলে যাচ্ছে। সে নিজের বড় ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে একেবারে আমেরিকাতে সেটেলড হতে চাই, অনেক কম দাম বলছে। অভিকে বলেছে কেউ কিনতে চাইলে বলতে , বা অভি যদি নেয়। বাড়িতে কথা বলেছে অভি।বাড়িতে সবাই রাজি। গুঞ্জাকে পুজোর পর আনবে ও না ভাড়া বাড়িতে নয়, নিজেদের ফ্ল্যাটেই আনবে এখনো অবশ্য সে কথা বলেনি বাড়িতে। মা শুনে বলেছে লক্ষীর পা বাড়িতে পড়েছে এক এক করে সব ভালো হচ্ছে। অন্য সময় হলে অভি উড়িয়ে দিতো কিন্তু এখন মানতে ইচ্ছা করে ওর।

এদিকে প্রিয়াদির ছেলে (অরুষ)র জন্মদিনে যেতে হবে। বড় করে হবে শনিবার রাতেই গেলো রবিবার সন্ধেয় অনুষ্ঠান। প্রিয়া দি কিছু একটা আন্দাজ করেছে। অভিকে প্রিয়া – তুমি কি স্বধর্ম হইতে বিচ্যুত হইয়াছ?

অভি – কি? এত কঠিন কঠিন বাংলা, গালাগালি দিচ্ছিস নাকি?

প্রিয়া – নারে বাবা, বলছি যে তোর রোজকার যে জীবনযাত্রা, সেটা হলো স্বধর্ম, আর বিচ্যুত বলতে তাতে কি ব্যাঘাত ঘটেছে। কোনো মুখ কি উঁকি দিচ্ছে? কাজ করতে করতে থমকে যাচ্ছ?

অভি – ভাগ।

প্রিয়া- এই দেখ তোর বৌ অরুষকে বার্থডে উইশ করেছে।

অভি – তোর সাথে কথা হয়? ওই হ্যাঁ, না হুম এটা তো?

প্রিয়া – হুম হয় তো , তবে কল করে না হোয়াটস্যাপ এই বেশি হয়।শুধু হ্যাঁ, না হুম এটা হবে কেন? যেমন লোকে স্বাভাবিক কথা বলে তেমনি বলে। ছি ছি নিজের বৌয়ের খবর জানিস না। বলে নিজের ফোনটা খুলে গুঞ্জা আর ওর চ্যাটটা দেখালো। অভি পড়েছে সবটা। এখানে তো ভালো করে কথা বলে, অনেক কথা তাহলে অভির সাথে কেন বলে না। লজ্জা পায়? হতে পারে।কিন্তু লজ্জাটা বেশি হয়ে যাচ্ছে না। অভি ওর বিয়ে করা বর তার সাথে কথা না বলে প্রিয়া দির সাথে এত কথা। অভির আজ রীতিমতো হিংসা হচ্ছে প্রিয়াদির উপর। বৌ আমার কথা হয় প্রিয়াদির সাথে, কোনো মানে হয় ?

গুঞ্জার হোয়াটসাপে একটা আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে

হাই, আমি প্রিয়া দি। আমার আগের নাম্বারটা একটু অসুবিধা হয়ে গেছে তাই ওটা আর ইউস করছি না। এতে ম্যাসেজ করো এবার থাকে। এতেই কথা হবে।

গুঞ্জা লিখলো – ঠিক আছে,

সঙ্গে সঙ্গেই নতুন ম্যাসেজ এলো – কি করছো?

গুঞ্জা – কিছু না, এই তো তোমার সাথে কথা বলছি। তুমি?

প্রিয়া –  সেম

গুঞ্জা -ও,দাদাভাই, পুচকু ওরা কি করছে ?

প্রিয়া- ঘুমোচ্ছে।

গুঞ্জা – এত তাড়াতাড়ি?

প্রিয়া -হুম, কাল অফিস আছে , স্কুল আছে।

গুঞ্জা- ও অন্য দিন ঘুমায় না বলেছিলে তাই বললাম।

প্রিয়া – ও , ছাড়ো, খাওয়া হয়েছে ?

গুঞ্জা – হুম, হয়েছে। তোমার?

প্রিয়া – না খাবো, অভি কল করেছিল? কথা হয়েছে ?

গুঞ্জা – হুম, আচ্ছা শোনো না আমি না তোমার সাথে পরে কথা বলছি। মা ডাকছে আসছি।

প্রিয়া – ওকে।

আগের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৯

পরের পর্ব  –অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১১

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!