এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১৩

অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১৩


না আর কোনো পর্দা নেই, সবটা পরিষ্কার গুঞ্জার কাছে। এতদিন ওর সাথে অভি প্রিয়া সেজে হোয়াটস্যাপ করেছে। মুখটা দু হাত দিয়ে চেপে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো গুঞ্জা। ও কেন করলো এমন? ছি ছি প্রিয়াদি ভেবে অনেক কথা বলছে ও অভিকে, যেগুলো একটা ছেলের কাছে ও কখনো বলতো না। তাছাড়া সোহিনীর কথা। আচ্ছা তবে কি অভি সেদিন সত্যিই বলেছিলো ? গুঞ্জা এবার ঘর থেকে বেরোতে যাচ্ছিলো। অভি ঘরে ঢুকলো। গুঞ্জা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে গেলো। অভি দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
পিছন থেকে গুঞ্জাকে জড়িয়ে ধরে বললো – সরি, কিন্তু কি করতাম তুমি যে আমার সাথে কথাই বলতে না আর আমার তোমার সঙ্গে ভীষণ কথা বলতে ইচ্ছা করতো। তাই প্রিয়াদিকে বললাম – ওর নাম নিয়ে কথা বলতাম।
গুঞ্জা কাঁদছে বুঝতে পারছে অভি।

গুঞ্জাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো – সরি বলছি তো , কাঁদলে আমার খারাপ লাগবে তো। না কথা বলবে কি করে জানতাম তোমার পছন্দ, অপছন্দ। আর আমাকে যে পছন্দ করো না সেটাও জানতাম কি করে।

গুঞ্জা এবার লজ্জা পেয়ে বললো – আমি অমন কখনো বলিনি।

অভি – ও আচ্ছা, আমার তো ওখানে একটা বৌ আছে, তার সাথে থাকি আমি সেই জন্য আমাকে পছন্দ করে লাভ নেই । আচ্ছা তুমি কি পাগল, আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি লম্পট।
যদি সত্যি আমি কাউকে ভালোবাসতাম, তাহলে আমি তার কথা বাড়িতে বলতাম না , আর সেটা জেনেও দাদুভাই আমার বিয়ে দিতো তোমার সঙ্গে। আর ধরে নিচ্ছি বাড়িতে জানে না, তাতেও কি আমি তো জানি। আমি তোমাকে বিয়ে করতাম তাহলে ?

হুম আমার সেদিনই বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না। হয়তো পরে সম্মন্ধ করে বিয়ে হলেও হতো। কিন্তু ঐভাবে ,তাছাড়া রিম্পাদি ছাড়ো। কি এখনো বিশ্বাস হয়নি। আমার কোনো বৌ, গার্লফ্রেন্ড নেই , আর সোহিনী আমার শুধু বন্ধু, ওর অলরেডি বয়ফ্রেন্ড আছে। পরে তোমাকে ওর ফেসবুক দেখাবো এত এত পিকচার দেখতে পাবে।

গুঞ্জা – এবার আরো কেঁদে ফেললো।

অভি ওকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো।আবার ?

গুঞ্জাও ওকে জড়িয়ে ধরেছে।

এখানেও শেষ হতে পারতো গল্পটা। কিন্তু রিম্পার কি হলো জানবেন না। সে ফের চাল চলতে গিয়ে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

এইসময় দরজায় ধাক্কা – অভি দাদা , বৌমনি। তোমার বাবা মা এসেছে। নিচে তোমাদের ডাকছে সবাই। অভি আর গুঞ্জা নিচে গেলো। গুঞ্জার বাবা মা আর ভাই এসেছে। কথা হলো। গুঞ্জার মায়ের ব্রেস্ট ক্যান্সার ছিল। এখন সেরে উঠেছেন। তবে চেক আপের এর জন্য বোম্বে যেতে হয়। আজকে ফের যাবেন ওনারা। তাই অভিদের সাথে দেখে করতে এসেছেন। কথাবার্তা হলো। অভি ওনাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছে। নিজের নাম্বার দিয়ে বলেছে কোনো অসুবিধা হলে কল করতে। ওখানে মেজপিসির ছেলে থাকে ওর অনেক চেনা জানা আছে। কোনো অসুবিধা হলে যেন জানায়। তাঁরাও জামাইকে দেখে অনেকটা নিশ্চিন্ত। মেয়ের মুখ দেখেও স্বস্তি পেয়েছেন। মুখ জুড়ে একটা আনন্দের ছাপ।

সেজোপিসির ছেলে রিপন আর ওর বউ শিউলিও এসে গেছে। তারা অভির খুব ভালো বন্ধু। গল্প আড্ডা হলো। এবার দুপুরের খাওয়া শুরু হলো। সেজোপিসির ছেলের বউ গুঞ্জাকে অভির পাশে বসিয়ে দিলো। তারাও খেতে বসেছে। ছোট পিসে এসেছে সেও বসেছে। রিম্পা আর টুম্পা এলো। টুম্পা – বাব্বা — তুই বৌকে নিয়ে খেতে বসে গেলি? একবারও আমাদের ডাকলি না। তোদের সঙ্গে খাবো বলে বসে ছিলাম সেই কখন থেকে।

অভি তা জানে না জানার কথাও নয়। বললো বোস না। জায়গা রয়েছে তো। খেতে খেতে গল্প চলছে। জুঁই আর গুঞ্জার মাঝে বসেছে অভি।খেতে খেতে নানা কথা হচ্ছে। রিম্পা রিপনকে বলছে – জানিস রিপন অভি বৌয়ের জন্য ৪,৫ টা শাড়ী এনেছে। রিপন – ভালো তো।  ঠিক কাজ হলো না। টুম্পা এবার মাঠে নামলো। কিরে জুঁই? তোর দাদাভাই তো বৌমনিকে এত গুলো শাড়ী দিলো তোকে কি দিয়েছে। জুঁই শুক্তোর ডাঁটা খায়না। অভি খেতে ভালোবাসে অভির পাতে ডাঁটা তুলে দিয়ে বললো – আমি যা যা আনতে বলেছিলাম সেগুলো এনেছে তাছাড়া আমাকে ১০.০০০ টাকা দিয়েছে। আমার পছন্দমতো কিনতে।

এটা মিথ্যা কথা বললো জুঁই। অভি ওকে ৪০০০ টাকা দিয়েছে। মানে বাকি ও আবার নেবে অভির থেকে। ওকে ঠিক আছে চল টুম্পাকে মাত দিলো যখন তখন দেওয়াই যায়। আর কিছু টাকা দিয়ে দেবে ও জুঁইকে। এটাও ঠিক হলো না , টুম্পাও ফেল পরে গেলো।

গুঞ্জা পেটির মাছ খেতে ভালোবাসে। গুঞ্জাকে একটা অন্য পিস্ দিয়ে গেলো অভি সকালের বেগুনভাজার মতোই মাছটা তুলে নিয়ে বললো পেটির মাছ দাও। আর আমাকে আর একটা দাও।

রিম্পা এবার বললো – বাবা তুই যা আদিক্ষেতা করছিস বৌকে নিয়ে?

অভি শান্তভাবে খেতে খেতে বললো – আমি না করে আমার বৌকে নিয়ে তোর বর আদিক্ষেতা করলে তোর ভালো লাগতো ?

রিপন হেসে উঠলো। বাকিরাও তাই। রিম্পা চেঁচিয়ে উঠলো – অভি, উল্টোপাল্টা বলবি না , বলে দিচ্ছি।

অভি – তুই মুখ বন্ধ রাখলে তোকেও শুনতে হবে না কিছু।

টুম্পা – রিম্পাদি বলেছে কেননা এইসব দেখে আমাদের লজ্জা করছে।

অভি – কার লজ্জা করছে ? তোর ? ও অনেকদিন হয়ে গেলো না। রিপনদা তোদের বাড়িতে ওর বিয়ের আগে ও আর ওর বরকে নিয়ে কি যেন হয়েছিল তোর মনে আছে।

রিপন বললো – ইসশ সব অশ্লীল কথাবার্তা। খা না , রান্নাবান্না খুব ভালো হয়েছে। টুম্পা ঘাঁটাস না , অভি মুডে আছে।

অভি চুপচাপ খেতে লাগলো। টুম্পা বিয়ের আগে সেজপিসির বাড়ি গিয়েছিলো আইবুড়ো ভাত খেতে। সেখানে তার বরও নিজে যেচে নেমতন্ন নিয়ে আইবুড়ো ভাত খেতে গিয়েছিলো। তারপর সেখানেই দুজনে রাত্রেও ছিল। আলাদা আলাদা ঘরে থাকতে দেওয়া হলেও রাত্রে তারা লুকিয়ে ছাতে ছিল। বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে ধরা পরে যায় মাঝরাতে। মাথা নিচু করে নেমে আসে দুজনে। সেজপিসি নিজের বোনঝির কীর্তিতে গোটা বাড়ির লোকের সামনে লজ্জায় পরে গিয়েছিলো। তবে এসব অনেক আগের কথা এখন তার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে ক্লাস ৯ এ পড়ছে। আর সেই টুম্পা আর তার বর এখন সাধু হয়েছে।

 

কিন্তু গুঞ্জাকে এখনো দেওয়া হয়নি আসল জিনিসটা। ঘট নিয়ে সন্ধ্যেবেলা সবাই ঘাটে গেলো। ছোট পিসে আর রিপনদাকে বলেছিলো অভি –  গুঞ্জার সাথে একটু একা দরকার আছে। দুজনেই ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। রিম্পা টুম্পাকে বাড়ির সবাইকে লুকিয়ে। কেননা ষষ্ঠীর বোধন এর উপাচার শুরু হয়ে গেছে আর দুজনকে একা কোনোমতেই থাকতে দেওয়া হবে না।

উপরে গেলো গুঞ্জা। অভি বিছানায় বসে মোবাইল দেখছিলো। গুঞ্জা ঘরে ঢুকতেই অভি বললো দরজা বন্ধ করো। তোমাকে আমাকে একসঙ্গে দেখলে হার্ট আটক হয়ে যাবে সবার।

গুঞ্জা জানতো না যে অভি ঘরে আছে। ছোট পিসে ওকে পাঠিয়েছিল। গুঞ্জা চলে যাচ্ছিলো। অভি হাত ধরে বললো দরকার আছে। দরজা বন্ধ করে বললো – নুপুর খোলো।

গুঞ্জা একটু ভয়ে ভয়ে – আমি পড়তাম না , মা বললো পড়তে হয়।

অভি – খুলতে বললাম তো।

গুঞ্জা বিছানায় বসে নুপুর খুললো। অভি ওর সামনে বসলো – হাতে একটা বাক্স। সেটা খুলে একজোড়া ভারী বাহারি নুপুর বের করে গুঞ্জার পায়ে হাত দিলো। গুঞ্জা পা সরিয়ে নিতে গেলো। অভি সরাতে দিলো না।

গুঞ্জা – তুমি আমার থেকে বড়, পায়ে হাত দিও না,পা ছাড়ো প্লিজ, আমি পরে নিচ্ছি।

অভি – পা ছাড়লো না, নুপুর পড়াতে পড়াতে বললো – সরি সেদিন নুপুর খুলতে বলেছিলাম। সত্যি সেদিন খুব প্রবলেমে ছিলাম। কিন্তু পড়তে মানা করিনি। এগুলো খুলবে না। বোঝা গেলো।

দুপায়েই পড়ানো হলো -এবার অভি বললো – আচ্ছা কি হয় পায়ে হাত দিলে ?

গুঞ্জা – জানি না, বলে গুঞ্জা পালতে গেলো। কিন্তু পালানো হলো না। না অভি কিছু করে নি। একটা বাদুড় ঘরে ঢুকে বন বন করে ঘুরছে। গুঞ্জা চেঁচিয়ে উঠলো। সে খুব ভয় পায় বাদুড়ে। ভয়ে ফের অভির কাছে চলে এলো।

অভি – কিছু হয়নি। প্লিজ চেঁচিয়ে না,আমি তাড়িয়ে দিচ্ছি।কেউ শুনলে উল্টোপাল্টা ভাববে। আমি কিছুই করলাম না তবুও আমি কেস খাবো। আরে আমি তাড়াচ্ছি।

গুঞ্জা মা গো , বাবাগো করে চেঁচিয়েই যাচ্ছে। তার কানে কোনো কথাই ঢোকেনি।

বাড়িতে বিশেষ করে দোতলায় কেউ নেই থাকলে আজ সত্যি অভি বড়সড় কেস খেত। খানিকটা টুম্পাদির কেস হয়ে যেত।

বাদুড় একটু উল্টোদিকে ঘুরলেই গুঞ্জা পালাতে গেলো কিন্তু বাদুড়ের কি শত্রুতা ছিল গুঞ্জার সাথে কেউ জানে না। সে ফের গুঞ্জার কাছে চলে এলো। গুঞ্জা ছুটে গিয়ে ধাক্কা মারলো অভিকে। অভি গুঞ্জাকে নিয়ে পড়লো বিছানায়। না বাদুড় অনেক উপর দিয়ে ঘুরছে কিন্তু গুঞ্জা তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে বাদুড়ের গতি প্রকৃতি লক্ষ্য করে যাচ্ছে। কি হলো গুঞ্জার সেদিকে খেয়াল নেই। সে বাদুড়কে দেখতেই ব্যাস্ত। অভি গুঞ্জার মুখটা দেখছে আর হাসছে। অনুপমা একবার বলেছিলো অভিকে যে গুঞ্জা বাদুড় দেখে ভয়ে এমন চেঁচিয়েছে গোটা বাড়ির লোক ছুটে এসেছিলো। গুঞ্জার মুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে সে কতটা ভয় পাচ্ছে।

অভির বাদুড় বস্তুটির উপর শত্রুতা নেই তবে পছন্দও ছিল না। আজ বড্ডো ভালো লেগেছে। বাদুর উড়ে পালালো। গুঞ্জা দেখলো বাদুড় পালালো। এবার সে দেখলো সে কি অবস্থায় কোথায় রয়েছে। এবার গুঞ্জার হুশ ফিরলো। সে পালতে চাইলো। অভি ছাড়লো না।

আজ আমাদের একসঙ্গে থাকতে নেই। মাও মানা করেছে। ছাড়ো প্লিজ। ঘট ভর্তি করে চলে এসেছে। ঢাক বাজছে।গুঞ্জা উঠে ছুটে পালালো ঘর থেকে। ঢাকের আওয়াজকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে গুঞ্জর পায়ের নুপুরের আওয়াজ।

 

আগের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১২

 

  পরের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , অন্তিম পর্ব 

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!