অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ২ অন্যান্য অপরাজিতা গল্পে-আড্ডায় December 17, 2019 অনুপমা – গুঞ্জাবতী – নামটা কি খারাপ রে? কি সুন্দর দেখেত তুই দেখেসনি বলে বলছিস। ঠিক লক্ষী ঠাকুর। অভি – আরে গুঞ্জাবতী, রঞ্জাবতী এমন নাম হয় এখনকার দিনে ? সুপ্রিয়া – তুই নাম শুনে হাসছিস? ওরা আমাদের মাকে( বাড়ির দূর্গা ) পুজো দিতে এসেছিলো , দিদিভাইয়ের খুব পছন্দ হয়েছে। বিয়ে ঠিক না হলে তোর সাথেই লাগিয়ে দিতো। অনুপমা – ছোট শুধু তুই আমাকে বলছিস? তুই নিজেও তো বললি যে আমাদের অভির সাথে খুব সুন্দর মানাতো। সুপ্রিয়া – হুম তা তো মানাতই। তবে তুমি যা আফসোস করছো। কুশল – কি বলো কাকিমা , মেয়েটাকে তুলে এনে অভির সাথে বিয়ে লাগিয়ে দিই। অভি – হুম তারপর জেলে ফুলসজ্জা। বলেই দুজনে হা হা করে হাসতে লাগলো। অনুপমা – এই চুপ কর। মা হই তো তাই মনে হয়। তোর মতো এই বয়সে তোর বাবা ছেলে কোলে ফটো তুলেছে। অনেকবার শুনেছে এই গল্পটা। বাবা এম এসসি পাস্ করেই চাকরি পেয়ে যায়। আর দাদু মাকে কোনো এক বিয়েবাড়িতে দেখে বৌ করে নিয়ে আসে। খুব অল্প বয়েসে বাবা মায়ের বিয়ে হয়ে যায়। তার তার পরের বছরই আমি হয়। বললো – অমন ছেলে কোলে তো আমি অনেকদিন ধরেই ফটো তুলেছি। কলেজ যখন পড়ছি পাপন কে ( ছোট পিসির ছেলে ) কোলে নিয়ে একটা পিকচার আছে আমার মনে নেই তোমার। অনুপমা – বাবু , সব কথা তে ইয়ার্কি ভালো আগে না। আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো অনুপমা, বাধা দিয়ে সুপ্রিয়া বলে উঠলো -আচ্ছা ঠিক আছে। এখন থামো। ঠাকুমা – না গো দাদুভাই, সত্যি ঠিক ই বলেছে অনু। খুব মানাতো তোমার সাথে। অভি – হুম, ঠাকুমা তুমিও। মা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে? যাই হোক মা আমাকে খুশি করে দিলে কাল কতদিন পর বিয়েবাড়ি খাবো। এই জুঁই, মেয়েটাকে চিনিস ? জুঁই – হুম চিনবো না কেন? অভি – একবার জিজ্ঞাসা কর তো কালকে রাতের মেনু কি ? জমিয়ে খাবো। জুঁই – আমি তোর মতো নির্লজ্জ তো যে জিজ্ঞাসা করবো কি মেনু? যাবি যখন তখন খেতে পাবি। অভি থাকে ব্যাঙ্গালোরে। বিয়ে বাড়ি বড্ডো মিস করে ও। বাংলার রাঁধুনির হাতের রান্না। আহা। অভিদের বাড়িতে দুর্গাপূজা হয়। মা দূর্গা স্বয়ং অভিদের পূর্বপুরুষ কাউকে একটা স্বপ্ন দিয়ে এই বাড়িতে এসেছিলেন। অভিদের বাড়ির দুর্গাপুজো একটু আলাদা।সারা বছরই মায়ের কাঠামো থাকে। নিত্য পুজো হয়। মানতও হয়। পুরোহিত এসে পুজো করেন। বিয়ে হলে আগে মায়ের পায়ে হলুদ দিয়ে সেই হলুদ বর বা কনে মাখে তারপর কনের বাড়ি হলুদ যায় , বা বরের ছোঁওয়া হলুদ কনের গায়ে লাগে। অভিদের বাড়ি থেকেই হলুদ বেটে মায়ের পায়ে ছুঁইয়ে দেওয়া হয় আর তার পর সেই হলুদ বর বা কনের বাড়ির লোক এসে নিয়ে যায়। সকাল হলো। চা খেয়ে অভি আর কুশল বাইরে বসেছিল। জুঁই একবাটি হলুদ নিয়ে আসছে ঠাকুরদালান থেকে। অভিদের কাছে আসতেই ফের ঠাকুরমশাই ডাকলেন জুঁইকে। জুঁই হাতের হলুদের বাটিটা অভিকে ধরতে বললো। কুশল সেই হলুদ থেকে হলুদ নিয়ে অভির গালে লাগিয়ে দিলো। অভি – দূর , বলে গাল থেকে হলুদটা তুলে ফের বাটিতেই রেখে দিলো। অভির ফোনে ফোন এলো, ভালো টাওয়ার নেই শোনা যাচ্ছে না । কুশল এর হাতে বাটিটা দিয়ে উঠে গেলো। জুঁই এলে সেই বাটিটা তার হাতে তুলে দিলো কুশল। গুঞ্জার বাড়ি থেকে হলুদ নিতে এসেছে। কেউ কিছু জানলোনা বাটি চালান হয়ে গেলো গুঞ্জার বাড়িতে। হিসাব মতো অভির গায়ের ছোঁওয়া হলুদই আগে লাগলো গুঞ্জার গায়ে। আমাদের হিরো এসব কোনো খবরই রাখে না। দুপুরে খেতে গেলো না, কুশলকে নিয়ে অনেক পুরোনো এক বন্ধুর বাড়ি গেছে, দুপিরে সেখানেই খাবে। আসল খাওয়া তো রাতে তাই রাতে বিয়েবাড়ি। পরিমলবাবুর বাড়ি এখানে নয়। কিন্তু এখানেই অনেকদিন আছেন, বাড়িও করেছেন তাই এখান থেকেই মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। আর এই সম্মন্ধ অভির দাদু না করলেও এই বিয়ের ব্যাপারে পরমবাবু তারাশঙ্করবাবুকেও জানিয়েছিলেন যে মেয়ে তাদের খুব পছন্দ। কিন্তু ছেলের থেকে মেয়ে প্রায় ৯ বছরের ছোট তাই মেয়ের বাড়ি থেকে একটু আপত্তি করছে। তারাশঙ্করবাবুই পরিমলবাবুকে বলেছিলেন চোখ বন্ধ করে বিয়ে দাও , ঠকবে না। বয়েসের তফাৎটা একটু বেশি ঠিক কিন্তু ওর বাবা খুব ভালো মানুষ। তার ছেলে যখন বাবার মতোই হবে। তোমার মেয়ে সুখী হবে। তাই একদিকে বললে বলতে হয় অভির দাদুর জন্যই এই বিয়ে হচ্ছে।অন্যদিকে, বাবা ও দাদুর স্কুলের স্যার এর মেয়ের বিয়ে। ওদিকে আবার প্রাক্তন ছাত্রের ছেলের বিয়ে। ফলে দুই বাড়িতেই নেমতন্ন। জমিয়ে খাবে অভি দুই বাড়িতেই। ইতিমধ্যে অভির ছোট পিসি আর পিসেমশাইও এসেছে। গুঞ্জা রা যেদিন মা দুর্গাকে প্রণাম করতে এসেছিলো অভির ছোট পিসি তাদের সাথে খুব জমিয়ে গল্প করেছে। ফলে পরিমলবাবুর স্ত্রী তাঁকেও কার্ড দিয়ে নেমন্তন্ন করেছেন। বার বার ফোন করে আসতে বলেছেন, না এলেও খারাপ দেখায়। অভি বিকেলে এসে দেখলো। ছোট পিসে এসেছে, মনটা ভীষণ ভালো, একদিকে ছোট পিসে অন্যদিকে রাতে বিয়েবাড়ি। উফফ অন্যকিছু চাইলেও ভগবান দিয়ে দিতো আজকে অভিকে – ভাবলো অভি। পরিমলবাবু বাবা, দাদু আর কাকুকে একটু দেখাশোনা করে দিতে বলেছেন তাই বাবা, কাকু, দাদু আগেই এসেছে। বাকিরা একটু দেরিতে এলো গুঞ্জাদের বাড়িতে। গুঞ্জা কনের সাজে বসে আছে। লাল বেনারসি, একটা লালচেলি , কপালে চন্দন দিয়ে আঁকা।খুব সুন্দর লাগছে। এক মুহূর্ত চোখ আটকে গেলো। মা ঠিকিই বলেছিলো খুব সুন্দর দেখতে ভাবলো অভি। অভির মা কাকিমা পিসি গিফট দিলো।জুঁই দাদার সাথে পরিচয় করলো গুঞ্জার। গুঞ্জা হাসি মুখে নমস্কার করলো। কনগ্রাটস বলে অভি হাত বাড়ালো। হাতে হাত মিললো অভি গুঞ্জার। এদিকের পর্ব মিটলো। বসেছে কুশল আর অভি। মা, ঠাকুমা আর পিসি কি সব আলোচনা করছে। কাকিমা এসে বললো – তোর মা-ঠাকুমা এবার অসুখে পরে যাবে। আজ গুঞ্জাকে দেখে, তোর মা – ঠাকুমার খুব কষ্ট। অতভালো মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে গেলো। অভি – দূর ছাড়ো তো , বলছি খাবে কখন? গন্ধ পাচ্ছ। আহা। কাকিমা – কোথায় গন্ধ পেলি তুই ? অভি – মনে মনে কাকিমা – চুপ কর , এমন করছে যেন খেতে পায়নি। অভি – পাইনা গো। এইরকম ভোজবাড়ি কোথায়। খুব আস্তে আস্তে কথা বার্তা হচ্ছিলো। ওরা ছাড়া আর কেঊই শুনতে পেলো না। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - পিসে এসে বললো – আচ্ছা চলো খাওয়া দাওয়া করে নাও। এরপর বরযাত্রী ঢুকবে তখন অসুবিধা হবে। এই তো খাবার ডাক এসেছে। চলো। বলছি বিয়ের তো আর সময় হয়ে এলেও। বিয়ে দেখে খেলে হতো না – ঠাকুমা , মা বললেও ছোট পিসে, অভি র আপত্তিতে খেতে বসলো। পরিমলবাবু ও তাঁর স্ত্রী অভিদের খুব যত্ন করছেন। দাদুকে আলাদা বসিয়ে যত্ন করে খাইয়েছেন এত কাজের মাজেও। বাবা, কাকু, পিসে এখনো খায়নি। একটু সামলে নিয়ে খাবে। কুশল অভি, ছোটমা, জুঁই একসাথে। অন্যদিকে ছোট পিসি, মা, ঠাকুমা, আর কাকুর মেয়ে কুহু। পরিমলবাবু অভিকে দেখে বললেন , তুমি এসেছো খুব ভালো লাগলো। তোমার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু দেখা হয়নি। আমি যখন এসেছি এই স্কুলে তুমি তখন পাশ করে গেছো। অভি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। যারা দেখাশোনা করছিলেন তাদের পরিমলবাবু বললেন এদিকে ভালো করে নজর দিবি। অভি, ওর বাড়ির লোককে বার বার বললেন নিজেদের মতো করে খেতে। কেউ একজন খুব গম্ভীর হয়ে এসে পরিমলবাবুকে কিছু বললেন। হঠাৎ পরিমলবাবুর মুখটা কালো হয়ে গেলো। কি হলো ? অভি লক্ষ্য করেও ভাবলো – যা হয় হোক। এখন খাবে আগে তারপর ভাববে। খাবার দেওয়া শুরু হয়েছে। ভালো ভালো আইটেম। আহা – অসাধারণ হয়েছে ছাগলের মাংসটা। আর একবার দিয়ে গেলো মাংস। দ্বিতীয়বার মাংসটা মুখে দিতে যাবে অভির হাতটা ধরলো ওর ছোটকাকা। অভি – আরে কি হলো ? ছোটকাকু – ওঠ ,বাবা ডাকছেন। অভি – খাচ্ছি তো, খেয়ে যাচ্ছি। ছোটকাকু – পরে খাবি , এখন ওঠ। অভি – পরে খাবি মানে ,এটা কি বাড়ি, যে আবার পরে বসবো। ছোটকাকু – একটু কড়া সুরে উঠতে বলছি তো। একপ্রকার জোর করেই তুলে নিয়ে গেলো অভিকে। সবাই দেখছে। অবাক হয়ে গেছে অভির বাড়ির লোকও। বাড়ির লোকেদের দিকে তাকিয়ে কাকা বললো – তোমরা খেয়ে এস। বাড়ির লোক হকচকিয়ে গেছে। খাওয়া এখন মাথায়। কি হলো ছেলেটাকে এই ভাবে খাওয়া থেকে তুলে নিয়ে গেলো। ওদের খেয়ে উঠতে বলেছে। এখন গেলে বকা খেতে পারে। এদিকে কুশলও ভাবছে কি হলো। তারপর ভাবলো পরে দেখবে আগে খেয়ে নিক। মাংসটা সত্যি ভালো হয়েছে। অনুপমা , সুপ্রিয়া প্রায় একসঙ্গে বললো – কুশল একবার দেখে আসবে। আমরা গেলে বকাবকি করবে। মাংসটা আর মুখে তুলেও তোলা হলো না। কুশলের – উঠতেই হলো। আগের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ১ পরের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৩ আপনার মতামত জানান -