এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৪

অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৪


বর কনেকে দেখে লোকের মুখে একটাই কথা ঠিক যেন লক্ষী – নারায়ণ। কেউ কেউ বলছেন যার সাথে যার লেখা থাকে। বিয়ে সম্পন্ন হলে ফের খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা হলো। না এবারে আর অভি কিছুই খেল না, গুঞ্জাও তাই।এবারে অবশ্য কুশল সব পুষিয়ে নিলো। বর কনেকে আশীর্বাদ করে সবাই বাড়ি চলে গেলো। রইলো পিসি, কুশল আর জুঁই। সকালে আশীর্বাদ সারা হলো। গুঞ্জর মা, বাবা বার বার অভির হাত ধরে কেঁদে নিজের মেয়ের দ্বায়িত্ব দিলেন। অভির কাকা নিতে এসেছে বর কনেকে। কনকাঞ্জলি দিয়ে গুঞ্জার নতুন যাত্রা শুরু।সকাল সকাল বর কনে বাড়ি পৌঁছে গেলো।  ঠাকুর দালানে প্রণাম করল। গুঞ্জার মনে পরে গেলো আগেও এসেছিলো। তখন সে জানতো না এই বাড়িতেই তাকে সারাজীবনের জন্য আসতে হবে।

বৌ বরণ হলো। অভির ঘর ওর হাতছাড়া হলো। সে ঘরে এখন গুঞ্জা থাকবে। ছাতের একটা ঘরে অভি আর কুশলের ঠাঁই হলো।  অবশ্য ওই ঘরেই বেশিরভাগ সময় কাটায় অভি। কোনো ডিস্টার্বেন্স নেই। নিজের মতো সিগারেটে খাওয়া থেকে শুরু করে ইচ্ছামতো বই পড়া, ভিডিও দেখা সব হয়। এই ঘর থেকে নেট কানেকশন খুব ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু ছাতের ঘর গরম তাই অভি রাতে এই ঘরে থাকলেও দিনের বেলা দোতলায় নিজের ঘরেই থাকে। কিন্তু আজ ইচ্ছা করেই দোতালার অন্য ঘরে থাকতে চায়নি অভি।স্নান করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো অভি।

কুশল ও আছে অভির সাথেই এই ঘরে। কুশল বললো তোদের বাড়ির দূর্গা সত্যিই জাগ্রত।

অভি – হুম খুব, তাই এইভাবে ফাঁসলাম আমি। তা কিসে আবিষ্কার করলি তুই?

কুশল – নারে সত্যি, কাল সকালে তোর ছোঁওয়া হলুদ লাগলো গুঞ্জার গায়ে , কোথাও কিছু নেই আর রাতে সব ঠিক থাকা বিয়ে ভেঙে এখন গুঞ্জা তোর স্ত্রী।
অভি ভাবছে  সেটা ঠিক। জুঁই লুচি নিয়ে ঢুকছিল সব শুনে লুচির থালা রেখে ,মা মা করে ছুটলো। মাকে লাগাতে গেলো।

কুশল বললো – যাই বলিস , তোর বৌকে কিন্তু দেখতে হেভি, ঐশ্বর্য, করিনা, দীপিকাকে  বলে বলে গোল দেবে।

অভি – চুপ করবি তুই।

কুশল বলেই চললো – তবে আমি আর কোনো বিয়েবাড়ি যাচ্ছি না ভাই, মানে বিয়ের দিন। এবার থেকে রিসেপশনে যাবো। নাহলে তোর মতো।

এবার অভি আর সামলাতে পারলো না নিজেকে। কুশলকে বললো ঘর থেকে এখুনি বেরিয়ে যা। নাহলে আমি মেরে ফেলবো তোকে।

রাতেই খবর পেয়েছে অভির বাকি পিসি, মাসী, মামা, চেনা জানা আত্মীয়রা। । সবাই একে একে ঢুকছে বাড়িতে। চেনা জানা সকলে খুব সাহায্য করায় প্যান্ডেল, রাঁধুনি  সব কিছুরই ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সানাই বাজিয়ে মাস্টারমশাইদের বাড়ি বিয়েবাড়ি হয়ে উঠলো।

অভির অসহ্য লাগছে এগুলো।মন থেকে কিছুতেই মানতে পারছে না কিছুতেই। অনেক ছোট গুঞ্জা ওর থেকে। কি করে বুঝবে ও অভিকে। দেখতেই কি সব ? অভির ইচ্ছা ছিল সেম এজের কাউকে বিয়ে করবে। তাতে দুজন দুজনকে বুঝবে ভালো – কিন্তু। যে বন্ধনে জড়িয়েছে সেটা থেকে বেরোবার কোনো রাস্তা নেই। কিন্তু গুঞ্জাকে ?স্ত্রী ? কালকে দেখে ভালো লেগেছিলো কিন্তু সেটা এই ভালোলাগা নয়। কি করে থাকবে ও। কি করে সংসার। সানাই বেজে উঠলো। সানাইয়ের সুর বরাবর অভির প্রিয় হলেও আজ বড্ডো কানে লাগছে।

 

রিম্পা এসে হাজির হয়েছে। কিন্তু তার মুখ রাগ রাগ। কেন কারণ কেউ জানে না। রিম্পার অনেক গুন্ আছে। যেমন নিজের মনে ভেবে নিয়ে তাতে নানা প্রকার অলংকরণ করে হয়কে নয় করে  অন্যের নামে মিথ্যা করে ‘ ও বলেছে ‘ বলে পরিবেশন করা।  চরিত্রটা খানিকটা এমন। ধরুন আপনি এক্স ওয়াই জেড কারুর নামে একটা স্বাভাবিক কথা বললেন। সেই কথাটাকে মাঝখানে রেখে আগে পরে কথা বসিয়ে নিয়ে সুন্দর করে সেই এক্স ওয়াই জেড কে লাগাবে। তার এত সুন্দর ব্রেন ওয়াশ করবে যে সে বুঝতেও পারবে না যে কি হলো ? শুধু ভাববে এমন কথা বলেছে ? আপনার সাথে তার মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যাবে। আবার আপনি শুনবেন সে আপনার নাম করে উল্টো পাল্টা কিছু বলেছে। কেন কিছু বোঝার আগেই সব শেষ। আর সেটা এত সুকৌশলে আচ্ছা আচ্ছা লোক ঘোল খেয়ে যাবে।

রিম্পাকে দেখতে খুব সুন্দর। ডানা কাটা পরি বলা যায়।বাস ঐটুকুই। মুখ খুললেই রূপ তার কালো মনের কাছে হেরে গোহারা হয়ে যায়। অভি একেবারে দেখতে পারে না। অভি বলে ও সারাদিন ধরে ভাবে আচ্ছা একে এই কথাটা বললে, তার সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হবে। কি বললে তার সাথে তার মুখ দেখাদেখি বন্ধ হবে। আর ও ভালো সেজে নিজের আখের গোছাবে। কিছু আদায় করতে হলেই – আমি মা মরা মেয়ে, মা থাকলে আমার এমন হতো না। নিজে দেখে বিয়ে করেছে। চাকরি করেন জামাইবাবু।বৌ অন্ত প্রাণ। ওঠালে ওঠে বসালে বসে। বৌ নিয়ে কেউ একটা খারাপ কথা বললে তাকে হাতে কেটে ফেলবেন তবে নিজে বড় ভয় পান। অথচ এমন বর পেয়েও সুখী নয়, হাজারটা অভিযোগ।

এত কথা বলার কারণ, আমাদের গল্পে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সে কাছেই থাকে। অভির বিয়ের খবর শুনে সকালেই চলে এসেছে। অন্য পিসিরা তখন আসেনি। বর কনে এলো। নতুন বৌকে দেখেই বড় বড় চোখ করে তাকালো রিম্পা। যেন ভষ্ম করে দেবে ? যতক্ষণ নানা আচার আচরণ চললো ততোখন মুখ গোমড়া করেই বসে রইলো রিম্পা। কারণটা একটু পরে বোঝা গেলো। অভি গুঞ্জা নিজের নিজের ঘরে যাবার পর রিম্পা ঢুকলো দিদিমার ঘরে। ঢুকেই চেঁচিয়ে প্রশ্ন – ওই হারটা তুমি অভির বৌকে দিলে কেন? ওটা আমি তোমার কাছে চেয়েছিলাম তো। তুমি তো আমাকেই দেবে বলেছিলে।

ওই হাতটা অভির ঠাকুমার বড় প্রিয় হার প্রায় ৬ ভরি মতো হবে। রিম্পার খুব ইচ্ছা ছিল ওটা নেবার। অভির ঠাকুমাও বলেছিলেন যে ওটা ওকেই দিয়ে যাবেন। ওই হারটাই কাল পরে গিয়েছিলেন কিন্তু হঠাৎ করে বিয়ে হওয়ায় হাতের কাছে কিছু না পেয়ে ওই হারটা দিয়েই আশীর্বাদ সেরেছেন এত কথা মনে ছিল না প্রভাবতীদেবীর।তিনি বললেন ও সেকথা, কিন্তু কিছু কাজ হলো না।

শুরু হলো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল – আমার মা নেই তো তাই , মা থাকলে আদর যত্ন পেতাম। ছোট থেকেই …………………

প্রভাবতী – আচ্ছা আমরা করিয়ে দেব তোমাকে।

এমন সময় ঘরে ঢুকলো সুপ্রিয়া , বললো আচ্ছা মা আমি আসছি।

রিম্পা – কোথায় যাবে?

সুপ্রিয়া – বিয়ের বাজার করতে। গুঞ্জার জন্য, বিয়েবাড়ির জন্য শাড়ী কিনতে যাচ্ছি।

প্রভাবতী – এসো মা, সাবধানে এসো।

রিম্পা – আমিও যাবো।

সুপ্রিয়া – তুই?

রিম্পা – হুম, অভি আমাকে বলেছিলো যে, দিদি তোর বিয়ের বেনারসিটা এত ভালো নয়। আমার যখন বিয়ে হবে আমার বৌ বৌভাতে যে শাড়ী পড়বে তুইও সেই একই রকম শাড়ী পড়বি। আমিই দেব সেটা।

সুপ্রিয়া – কি? মনে মনে ভাবলো – অভি বলেছে ? তাও আবার ওকে ? কখন বলেছে ? জিজ্ঞাসা করার উপায় নেই। অভি কারুর সঙ্গে দরকার ছাড়া কথা বলছে না। খুব ডিসটার্ব হয়ে আছে বোঝাই যাচ্ছে। একথা জিজ্ঞাসা করলেই চেঁচাবে এখুনি।
অনিচ্ছা থাকলেও বলতে হলো – ঠিক আছে চল।

দোকানে গিয়ে একটা জামদানি বেনারসি দেখে রিম্পা বললো এমন শাড়ী দেখান। ১৯,০০০ এর একটা বেনারসি নিলো। দামি হলেও এমন কিছু দেখতে নয়। সুপ্রিয়া কিছু বললো না।

এবার দোকানের ছেলেটা জিজ্ঞাসা করল –  দিদি কনের জন্য কি বেনারসি দেখাবো ?আর কেমন দামের ?

সুপ্রিয়া কিছু বলার আগেই রিম্পা বললো – ওই ৫, ৬০০০ এর মধ্যে দেখান।

দোকানদার ওই দিকে বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো।

সুপ্রিয়া বললো – আসলে আমাদের বৌমা বিয়ের দিন জারদৌসি বেনারসি পড়েছিল , আপনি একটা মিনাকারি ডার্ক কালারের ভালো বেনারসি দেখান।
মুখ বেকালো রিম্পা। দোকানের ছেলেটা জিজ্ঞাসা করলো দিদি একটা দামি ২৮,০০০ দামের নতুন মিনাকারী রয়েল ব্লু বেনারসি এসেছে দেখাবো ?

সুপ্রিয়া – বললো দেখান।

রিম্পা – এত কি তোমাদের ফালতু টাকা খরচ করা বুঝিনা।শুনলাম তো এমন কিছু বড় লোকের মেয়ে নয়। ৫,৬০০০ ই তো ঠিক ছিল।

সুপ্রিয়া চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো।

শাড়ী এলো সত্যিই খুব সুন্দর। ওটাই নেওয়া হলো , সাথেই আরো দামি দামি ৯- ১০ টা শাড়ী নেওয়া হলো গুঞ্জর জন্য। কিছু দামি ছাপা শাড়ীও নেওয়া হলো। রিম্পা ফের গোটা কয়েক শাড়ী নিলো। সুপ্রিয়াকে বললো তোমাকে বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে দেব।

সুপ্রিয়া জানে সে টাকা সারাজীবনেও পাওয়া যাবে না।
দোকানের লোকগুলো অবাক হয়ে দেখছিলো। আর সুপ্রিয়া দোকান থেকে বের হতে পারলে বাঁচে।এত নির্লজ্জ কেউ হতে পারে। কেন সুপ্রিয়া বললো না যে ওর জন্যও শাড়ী আনবে যাওয়ার দরকার নেই। লৌকিকতার শাড়ী কনের শাড়ী নেওয়া হলো। শাড়ির পর্ব মিটলো।

কসমেটিকসের দোকানে গিয়েও একই ঘটনা ঘটলো। কোনো মতে বাড়ি এলো সুপ্রিয়া।

কি বুঝছেন কিছু? হুম বুঝছি আশেপাশের অনেকের সাথেই মিল পাচ্ছেন তো? এখানেই শেষ নয়। রিম্পার আসল খেল এখনো বাকি আছে পড়তে থাকুন।

 

 

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

 

ওরা বাড়ি ঢুকছে আর তার সাথেই প্রায় ঢুকলেন অভির মেজো পিসি। তার সাথে রিম্পার খুব ভাব। রিম্পা আর মেজপিসিকে নিয়ে বৌ দেখতে গেলো। বৌয়ের কাছে শুধু জুঁই। বৌ দেখে মেজো পিসি বললেন – খারাপ নয় , তবে ফোনে যত সুন্দরী শুনলাম তেমন কিছু নয়।
গুঞ্জামাথা নিচু করে বসে রইলো।

মেজপিসি- তা বাবা কি গয়না দিয়েছে দেখি। বলে গলাটা, হাতটা তুলে দেখলেন। গোটা কয়েক গয়না। বললেন ও বাবা এই কটা গয়না ? তা তোমার বাবা তো স্কুলে পড়ায়, শুধু ওটাই নাকি দেশে জমি জমা আছে ? বাবারা ক ভাই বোন ?

গুঞ্জা – আছে অল্প কিছু। ঠিক জানিনা , ওই বিঘে ১৮ মতো হবে। বাবার চারভাই, বাবা মেজো। আর দুই পিসি।

মেজো পিসি – ও বাবা , তার মানে তো কিছুই নেই প্রায়, ওই চাকরিটা শুধু। তা তোমরা ক ভাই বোন।

গুঞ্জর মুখটা ক্রমশ ফ্যাকাসে হচ্ছে – তাও উত্তর দিচ্ছে। সে বললো — আমার এক ভাই আছে, কলেজে পড়ছে।

মেজো পিসি – তাও ভালো , বোন নেই , নাহলে অভিকে তার বিয়ের খরচ টানতে হতো।

মেজো পিসি – বাহ্ শাড়ীটা তো ভালো দিয়েছে।

রিম্পা – ও বাবা ওটা ওদের বাড়ি থেকে দিয়েছে নাকি? এটা তো ছোট মামীর শাড়ী।বড় মামী সব হালকা কালার পরে বলে ছোট মামী এই শাড়ীটা দিয়েছে ওকে।

জুঁই রাগ করে মাথা নিচু করে বসে ছিল। মনে মনে ভাবছে দাদা যদি এখানে থাকতো ? পিসির এই শোন্ ন্যাকামো ঘোচাতো।

ছোট কাকিমা এলো, পাশের ঘরে জুঁইকে ডেকে নিয়ে গেলো।

গুঞ্জা একা।

বোসো, আমরা আসি – বলে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে রিম্পা বললো – অভির ইচ্ছা ছিল না বিয়ে করার জানতো মাসি , ও তো কাকে ভালোবাসে, তার সাথেই থাকে মনে হয়। দাদুর শরীর খারাপ বলে বিয়ে করেছে।তুমি কাউকে আবার বোলো না। মেজো পিসি কিছু সাড়া দিলো কিনা শোনা যায় নি।

কথাটা যতটা জোরে বললে গুঞ্জার কানে যাবে ঠিক ততটা জোরেই বললো রিম্পা।

গুঁজার মাথায় বাজ পড়লো। অভির সাথে তার সম্পর্ক এখনই স্বাভাবিক হয়ে যাবে এমন কিছু না ভাবলেও। যে কথাটা ও এখন শুনলো তাতে এক গভীর অনিশ্চিতের মুখে পড়লো গুঁজা। মুখে কিছু বললো না চোখ দিয়ে জল গড়াতে লাগলো। মনে হলো কেন বিয়ে দিলো বাবা, বিয়ে না হলে কি হতো? নানা প্রকার চিন্তা এসে জুড়লো মাথায়। আর সামলাতে পারলো না বিছানায় উবুড় হয়ে পরে কাঁদতে লাগলো।

অভিদের বাড়ি অনেক বড়। খানিকটা জমিদারবাড়ির আদলে। ওর দাদুর, দাদুর বাবা বা তার বাবা কেউ জমিদারের খাস লোক ছিলেন। জমিদারকে অনেক বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। সেই খুশি হয়ে এদের অনেক সম্পত্তি দিয়েছিলেন। ফলে প্রভাব , প্রতিপত্তিতে এক ডাকে এলাকার লোক চেনে ওদের। ওর দাদু মাস্টারমশাই হওয়ার আগে নাকি ওদের বাড়িকে লোকে ছোট জমিদারবাড়ি বলতো। এখনো দেখলে জমিদার বাড়ি বলে অনেক ভুল করে।

অভির বাবা, কাকা চাকরি করলেও যে বিয়েবাড়িতে বিয়েবাড়ি হলো অভির ওই জায়গাটা ওদের। সব ভাড়া দেওয়া আছে। সেখান থেকে মাসে মাসে একটা মোটা টাকা পায় ওরা। তাছাড়া শান্তিনগর বাজারে ওদের একটা বাড়ি আছে সেটা ব্যাংক, আর পোস্ট অফিসকে ভাড়া দেওয়া আছে। সেখান থেকেও টাকা আসে। আর চাষের জমিও আছে অনেক। লোক আছে তারাই দেখে। তবে সেখান থেকেও টাকা।বলা ভালো অভিরা কোটিপতি। কিন্তু তারাশঙ্করবাবু ছেলেদের ছোটবেলা থেকেই শিখেয়েছেন আছে বলে অহংকার করবে না। এসব আমরা কেউ উপার্জন করে করি নি, পূর্বপুরুষদের সব। আমরা দেখভাল করি মাত্র। ছেলেরাও তাই শিখেছে। নাতিও তাই।

তবে এই নিয়ে বড় অহংকার অভির পিসিদের। মেজো, সেজো পিসিও তাই। তবে ছোট পিসির সেসবের বালাই নেই। অভির ঠাকুমাও মাটির মানুষছোট পিসি তার মতো। দিদিদের থেকে ভাইয়ের বৌদের সঙ্গে তার বেশি ভাব। কিন্তু ছোট পিসি ছাড়া অন্য পিসিরা এক একটা পিস্। নিজের মেয়েদেরকে ভয় পায় ঠাকুমাও। নিজের মেয়েদের থেকে ঠাকুমার কাছে বৌরা অনেক আপন। তাই নিয়ে অবশ্য পিসিদের নানা ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় অনুপমা, সুপ্রিয়া আর অভির ঠাকুমা প্রভাবতীকে। বড় পিসিকে দেখেনি অভি তবে শুনেছে একই ছিল। তবে বড় পিসির জায়গাটা পূরণ করেছে তাই মেয়ে রিম্পা। রিম্পাদি নিজেকে এই বাড়ির মেয়ে বলে। সেই গর্বে পা পড়ে না মাটিতে। শুনেছে , অভির বাবার ঠাকুমা এমন ছিল নাতনিরা সব তার মতোই হয়েছে। অভি ভাবে বুড়ি বেঁচে থাকলে আচ্ছা করে টাইট দিতো। আর পিসিরা বা রিম্পাদি মা ছোটমাকে যেমন জ্বালিয়েছে, জ্বালাচ্ছে যদি ওর বৌয়ের পিছনে এমন করে লাগতে আসে ধুইয়ে দেবে অভি।

রিম্পা অভির ঘরে ঢুকলো। কুশল নেই। অভি খাটে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। টেবিলে দুটো থালা , একটা খালি,আর একটাতে লুচি, তরকারি, মিষ্টি যেমনকার তেমন। না খায়নি অভি। রিম্পা বললো – এই ভাই , তুই খাসনি, কি করবি বল, যখন বিয়ে হয়ে গেছে। যায় হোক দেখতে তো ভালো , পড়াশোনা করেছে, মন খারাপ করিস না। হুম একটু দেমাক আছে ঠিকই, কি আর করা যাবে সব কি আর মনমতো মেলে একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিতে হয়।  ওঠ ওঠ খেয়ে না। যত জ্বালা হয়েছে আমার। ওদিকে এতক্ষন মেজমাসিকে সামলালাম এবার তোকে।  ওঠ খেয়ে নে।

অভি – মেজো পিসি এসেছে?

রিম্পা – শুধু এসেছে? নতুন কনে তাকে ট্যাকোস ট্যাকোস করে কথা ও শুনিয়ে দিয়েছে। বাব্বা, নতুন কনে
ঐভাবে কথা বলে ?মেজমাসি কেঁদে ফেললো। তুই আবার কাউকে কিছু বলিস না। বিয়ে বাড়ি গাদা লোক,আর উপর দিকে থুতু ফেললে তো নিজের গায়েই লাগবে বল।

অভি একটু কড়া হয়ে বললো –  কি বলেছে গুঞ্জা ?

রিম্পা – ছাড় না,ওসব কথা। তুই খেয়ে নে।

অভি -বলতে বলছি তো।

 

আগের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৩

 

পরের পর্ব  – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৫

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!