এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৬

অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৬


বেছে বেছে নতুন বৌয়ের জন্য গয়না নিলো সুপ্রিয়া। বাড়ির একমাত্র বৌ সে তো স্পেশাল হবেই। এত আদিক্ষেতা সহ্য হচ্ছে না মেজপিসি, ছোট পিসি আর রিম্পার। রাত হলো – সবার চোখে ঘুম এলেও জেগে রইলো কয়েকটি মানুষ অভি, গুঞ্জা, সুপ্রিয়া, ছোট পিসে আর রিম্পা।

অভি – এখনো ভাবছে সত্যিই কি গুঞ্জা বলেছে?এইসব করছে সে?কেননা রিম্পা ফের গুঞ্জার নামে অনেক কথা বলেছে অভিকে যেমন – ছোট মামী নতুন গয়না এনেছে তাও পছন্দ নয় মেয়ের – বলেছে বড্ডো হালকা ওজন। ঠাকুমার বেশিরভাগ গয়না রেখে দেওয়া হয়েছে। দাদুভাইয়ের নির্দেশ নতুন বৌ পুরোনো গয়না পড়বে না। যখন ঠাকুমার গয়না খোলা হয়েছে তখন নাকি গুঞ্জা খুলতে চাইছিলো না। এ যে রিম্পার ধাঁচেই গড়া। ছিঃ ভীষণ লজ্জা করছে অভির। ও যে এইসবে অভ্যস্থ নয়। ও বরাবর দেখেছে ওর মা, কাকিমা, একে অপরের গয়না পরে আবার ফেরত দিয়ে দেয়। জুঁইও বেশিরভাগ ছোটমার গয়না পরে কিন্তু গুঞ্জা? সবাই তো ওকে অভির স্ত্রী বলে পরিচয় দেবে। অভির বৌ এই করেছে, ওই করেছে। লোকের কাছে মুখ দেখাবে কি করে সে।

গুঞ্জা – কি আছে ওর কপালে। যার হাত ধরে এসেছে সেই যদি গুঞ্জাকে কোনো দিন না মানে? যদি ভবিষ্যতে সে যাকে ভালোবাসে তাকেই বিয়ে করে? আচ্ছা ওখানে তাকে বিয়ে করেনি তো?তবে কি হবে গুঞ্জার? বাবা মাকে কি বলবে ?

সুপ্রিয়া – অভির মুখ থমথমে, এমন চিন্তা করতে খুব কম দেখেছে সুপ্রিয়া, গুঞ্জাকে নিয়ে ও সুখী হবে তো? বাবা ভুল করলেন না তো?

ছোট পিসে – কি হলো অভির? যে অবস্থায় বিয়ে হচ্ছে তাতে আজকেই সব মানা সম্ভব নয়, কিন্তু সত্যিই সব ঠিক হবে তো? নাহলে গুঞ্জাকে মুখ দেখাবে কি করে? সুপ্রিয়া লক্ষ করেছে অভি কিছু খাচ্ছে না, সেই আমাকে অভির সাথে খাওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু এইভাবে কদিন? কিসের আপত্তি ওর গুঞ্জাকে মেনে নিতে? ও কি কাউকে ? না না আমাকে তো তেমন হলে আগে বলতো সে। সব ঠিক হবে তো? ভুল হয়ে গেলো না তো কোথাও কিছু ?

রিম্পা – ওই মেয়েটা সব খাবে? আমি কিছুতে হতে দেব না ।আচ্ছা অভি বিশ্বাস করেছে তো? আরো কিছু ভাবতে হবে, যাতে ওর মুখ দেখা বন্ধ করে অভি। কিছুতে এক হতে দেব না। আমি এইভাবে সব হারাবো না।

 

—————————————————

 

বৌভাতের দিন লোকসমাগম বাড়তে লাগলো। অনেকেই আসেননি। কিন্তু অনেকেই আবার এসেছেন। বাড়ি ভর্তি লোকজন।বাড়ির দালানে বড় গালচে বিছানো হয়েছে সেখানেই সুতো লুকানো, কাজললতা, জাঁতি নামানো, আশীর্বাদ হবে। দাদু, ঠাকুমা, মা ,বাবা, কাকু, কাকিমা বড়রা সবাই রয়েছেন। অভি এসে বসেছে। রিম্পা চিৎকার করতে করতে এসে জানালো – সর্বনাশ হয়ে গেছে। নতুন বৌ কাজললতা হারিয়েছে, গোটা ঘর তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে পাওয়া যাচ্ছে না।

ঠাকুমা- সে কি গো, এত মহা অশুভ।

দাদুভাই – চুপ করো, কিছু হবে না।জিনিসটা বাড়ি থেকে উবে যাবে। ঠিক পাওয়া যাবে না পাওয়া গেলে নতুন আনানো হবে। মায়ের পায়ে ছুঁইয়ে গুঞ্জাকে দেওয়া হবে।

সুপ্রিয়া ছুটলো।

উঠে গেলো অভি।

মেজপিসি আর সেজপিসি সিঁড়ি দিয়ে নামছে। অভিকে দেখে তারা বললো যাচ্ছিস? যা দেখ তুই খুঁজে পাস্ কিনা? তোর বৌয়ের জিনিস তোকে দেখা দে কিনা ? মাথা গরম হচ্ছে অভির। আজ পর্যন্ত অভিকে মেজো পিসি , সেজো পিসি কথা শোনাতে পারেনি। আজ শুধু ওই মেয়েটার জন্য অভিকে মুখ বুজে এই সব শুনতে হচ্ছে। চোয়াল শক্ত করে উঠে গেলো অভি। যেতে যেতে শুনতে পেলো সেজোপিসি বলছে – কি অলুক্ষণে মেয়েকে নিয়ে এলো কে জানে?

মেজপিসি -এত শাড়ী গয়না পেয়েছে তার হিসেবে রাখতে গিয়ে কাজললতার খোঁজ রাখতে পারে নি।আমার ছেলের বৌ হলে মজা দেখতাম। এদের তো ঢং আছে।

 

ঘরে ঢুকে দেখলো গুঞ্জা, সুপ্রিয়া, অভির এক মামিমা, জুঁই আর সুপ্রিয়া রয়েছে। তারা সব তাদের মতো খুঁজে যাচ্ছে এখনো। গুঞ্জা সুপ্রিয়াকে বলছে আমি এখানেই রেখে শাড়ী পড়ছিলাম।

অভি আসায় ফের রিম্পাও ওর পিছু পিছু এসে ঘরে ঢুকেছে।

অভি – একটু কড়া সুরে – পাওয়া গেছে ?

সুপ্রিয়া – না রে দেখা হচ্ছে। কোথায় যাবে ?

অভি – গুঞ্জার দিকে তাকিয়ে কোথায় রেখেছিলে ?

গুঞ্জা – বিছানার একটা নিদিষ্ট দিক দেখিয়ে আস্তে আস্তে বললো – ওখানে।

অভি – ওখানে রেখেছিলে তো কোথায় গেলো? একটা জিনিস ঠিক করে রাখতে পারোনা।

সুপ্রিয়া – বাবু।…..খোঁজা হচ্ছে তো। তুই যা।

অভি নিজেকে সামলে – মনে করার চেষ্টা করো কোথায় রেখেছিলে

গুঞ্জা আমার হাতেই ছিল। তারপর মামিমারা আর জুঁই শাড়ী পড়াচ্ছিলো বলে আমি বিছানায় রেখেছিলাম , দিদিভাই (রিম্পা ) এসে বসেছিল, তার পর দিদিভাই উঠে গেলো,আমার শাড়ী পড়া হওয়ার পর আর খুঁজে পাচ্ছি না।

রিম্পা – ও মা গো, আমি চোর, তোমার ওই পেতলের দু টাকা দামের কাজলটা আমি নিয়ে রেখে দেব?

গুঁজে – আমি ও কথা বলিনি দিদিভাই।

রিম্পা – তো কি বলেছো তুমি ? তুমি যা বললে তার মানে কি দাঁড়ায় ? আমি অনেক বড় বাড়ির মেয়ে , তোমার মতো …………………………

অভি – জোরে চেঁচিয়ে – চুপ করবে তোমরা ? ছিঃ

যেটা হলো সেটা এবার রিম্পা বাড়িয়ে বাড়িয়ে লোকের কাছে বলবে, যারাই আসবে তাদের কাছেই এবার রিম্পা, মেজো পিসি, সেজো পিসি তাদেরকে বোঝাবে।ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো অভি।

সুপ্রিয়া ফিরে এলো ,জানালো পাওয়া যায়নি। নতুন কাজলটা আনতে দেওয়া হলো। ততক্ষনে অবশ্য গোটা বাড়িতে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে মেয়ের যত্ন নেই, একটা কাজললতা সামলাতে পারে না।একটা বড়সড় অশুভ ঘটে গেলো , একে এমন করে বিয়ে হয়েছে। বৌ বাড়ি আসতে না আসতেই মাথায় তুললে এমনিই হয়। কি করে লক্ষী বলছে কে জানে , এতো অলক্ষি। এমন হাজারটা ফিরিস্তি। অভি আর নিতে পারছে না। গুঞ্জার ঘর থেকে বেরিয়ে নিচেই এসেছিলো সে। বললো – আমি উপরে যাচ্ছি, সব রেডি হলে ডেকো।

বড় পিসি – রিম্পার মা মারা যাবার পর রিম্পার বাবা যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁকেই অভিরা বড় পিসি বলে। মাটির মানুষ। যদিও রিম্পার নিজের ভাই ও তার বৌয়ের কোনো অভিযোগ না থাকলেও রিম্পার অনেক অভিযোগ,  ঠাকুমা  দাদু তাঁকেই বড় মেয়ে বলেন, বাবা,কাকা,ছোট পিসি, বড় দিদি বলেন। যদিও মেজো পিসি, সেজো পিসি পছন্দ করেন না।

 

প্রভাবতীদেবী চিন্তা করছেন দেখে তিনি বললেন – মা সবই ঠাকুরের ইচ্ছা, সে কাজললতাটা হয়তো অপয়া , তাই বিয়ে হতে গিয়েও বিয়ে ভাঙ্গলো, আমাদের অভির সাথে বিয়ে হলো। মা তাই চান নতুন কাজলটা তার হাতে আসুক।
অনেক প্রশ্ন থাকলেও তিনি ভাবলেন কথাটায় গুরুত্ত্ব আছে। মা যখন নিজেই বিয়ে দিয়েছেন তখন কোনো মতেই খারাপ হতে দেবেন না।

রিম্পা এতক্ষন ধরে বেশ সবার মনে – ওই মেয়ে অপয়া, ক্ষতি হবে বাড়ির – এই সব ঢুকিয়েছিল এবার ওর সৎ মা এসে সব ঘেঁটে দিলো। এই কারণের দেখতে পারে না মহিলাকে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

নতুন কাজলটা এলো, ঠাকুরের পায়ে ছুঁইয়ে সে কাজললতা গুঞ্জাকে দেওয়া হলো,ভাগ্না ভাগ্নিরা নামালো। আশীর্বাদ শুরু হলো। অভি মুখ কালো করে বসে আছে। কেননা এখনো কাজললতা নিয়ে চলছে কানাঘুসো। গুঞ্জাও বসে আছে মুখ নামিয়ে, যেন কত অন্যায় করেছে সে। তবুও কেউ আশীর্বাদ করে গিফট দিলে সে হালকা করে হাসতে চেষ্টা করছে। অভি যে অতন্ত্য রেগে আছে চোখ এড়ায় নি গুঞ্জার। অভি দেখছে গিফট নিতে নিতে হাসছে , এত বড় কান্ড করেও লজ্জা নেই।

না অভি এসব মানে না। এটা যদি অন্য কারুর সাথে হতো তাহলে অভিই আগে গিয়ে বলতো যে কিছু হয়নি। এটা কোনো ব্যাপারই নয় বা লুকিয়ে আর একটা কাজললতার ব্যাবস্থা করতো। কিন্তু একে দায়ে পরে বিয়ে করতে হয়েছে, হুম ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে। সে পছন্দ করে একজনকে তাকে ভালোবাসে কিনা জানে না। ভালোলাগাটা হয়তো ভালোবাসা নয়, কেননা সে তাকে বলার আগে নিজেও ভাবতে চেয়েছিলো সে সত্যি ভালোবাসে কিনা? কেননা শুধু ভালোলাগা হলে কি এগোনো উচিত হতো?এমন হাজারটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সে এখানে এসেছিলো। আর তাই এখনো পর্যন্ত বলা হয় নি। তার মাঝেই এই বিয়ে। হয়তো কিছুদিন সময় নিয়ে দাদুর মতে এই মেয়েকেই বিয়ে করতো সে। কিন্তু এমন হঠাৎ করে চায়নি। যদিও সেটা মেনে নিলো কিন্তু এই মেয়ের ব্যবহার যা শুনেছে, যা ঘটিয়ে যাচ্ছে সেগুলোই অভিকে গুঞ্জার থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরাচ্ছে। কথা শুনতে হচ্ছে তাকে। আশীর্বাদ শেষ হলো।

যে যার ঘরে গেলো। সন্ধ্যে হলো, বৌ এর বাপের বাড়ি থেকে লোকজন এলো। অভিকেও হাসিমুখে তাদেরকে অভ্যর্থনা করতে হলো। বন্ধু যাদের অভি বলেনি কিন্তু বাবা কাকা চেনায় নেমন্তন্ন হয়েছে তারাও এসেছে। ইয়ার্কি করার চেষ্টা করেছে অভি কড়া চোখে তাকিয়েছে তারা আর কিছু বলার সাহস পায়নি।

মেজপিসি, সেজপিসি রিম্পা প্রায় সব লোককে ধরে ধরে বলেছে গুঞ্জা কতটা অপয়া, অলক্ষীর মতো কাজ করেছে। গুঞ্জার বাড়ির লোককেও চারটি কথা শুনিয়েছে কাজললতা হারানো নিয়ে। আজকেও প্রায় কিছুই খায়নি গুঁজা আর অভি।
একটু পরেই ওদেরকে একটা ঘরে একেবারে একা ছাড়বে সেখানে কি নাটক করবে গুঞ্জা? যদি কান্না কাটি করে , রিম্পার মতো নাটক শুরু করে , যদি সন্দীপকে ভুলে গিয়ে তাকে জোর করে? না পারবে না অভি। জানে না কি হবে।

গুঞ্জর বাড়ির লোক আসতেই গুঞ্জা খুব কেঁদেছে। সেটাই স্বাভাবিক, আর সেই স্বাভাবিক ঘটনা টাকে অস্বাভাবিক করে রিম্পা অভিকে বলেছে – অমন করে কাঁদছে এবার ওর বাড়ির লোক মনে করবে আমরা আদর যত্ন করছি না।

এই কদিনে রিম্পা যখনই একা পেয়েছে গুঞ্জার উপর ঝাল মিটিয়েছে। বাড়ির লোক ঘোমটা দিতে মানা করলেও সে ধমকেছে – বলেছে, ঘোমটা দিতে বললাম তো, কথা কানে যাচ্ছে না। অভিকে যখন গুঞ্জার সাথে খেতে ডেকেছে তখন সে বলেছে- অভিকে ডেকেছিলাম অভি বলেছে সে ব্যাস্ত আসতে পারবেনা। যখন গুঞ্জার বাড়ির লোক এসেছে। গুঞ্জা উঠতে যাচ্ছিলো, গুঞ্জকে চোখ পাকিয়ে রিম্পা বলেছে – এই লোকে তোমাকে দেখতে আসছে, বসার জায়গায় বসো। তোমার বাড়ির লোক পালাচ্ছে না। তারা ওখানে গিয়ে দেখা করতে পারবে। আর সব ক্ষেত্রেই অভির কানে কায়দা করে মিথ্যা কথা বলেছে। যেমন -অভিকে শুনিয়ে অন্য কাউকে বলেছে নতুন বৌকে দিদিমা বললো ঘোমটা দিতে, দিলো না। নিজের পছন্দমতো শাড়ী পড়ছে আমরা সব বেছে দিলাম পড়লো না। এই সব। না সরাসরি অভির কানে তোলেনি। কেননা তাহলে যদি অভি ধরে ফেলে। রিম্পা অনেকটা বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে অভির মনে গুঞ্জাকে নিয়ে। কিছু একটা বলতে গিয়েছিলো অভিকে। অভি বলেছে – তোরা আমার লাইফটা হেল করে ছাড়বি, যা এখন থেকে।

গুঞ্জাকে শুনিয়ে সেকথাকে ঘুরিয়ে নিজের বরকে বলেছে – আমার লাইফটা হেল হয়ে গেলো বলেছে অভি।
ওর বর আবার বলেছে – একটা ছেলে আর কি ভাবে না বলবে

সেটাও শুনেছে গুঞ্জা।

রিম্পা বলেছে – যাই হোক আমার ভাইয়েরই কপাল খারাপ, মেয়েটার ভাগ্য খুব ভালো, সব হবে, সব পাবে, বিদেশে ঘুরবে, ভালো জায়গায় থাকবে। আমার ভাইটাই কিছু পেলো না। না রিসেপশনের এত ভিড়ের মাঝে আর অভি অন্য কাউকে ভালোবাসে, তার সাথে থাকে এসব বলেনি। বলার দরকার পড়েনি। যাকে শোনানোর ছিল শুনিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু গুঞ্জার ছোট পিসি চুপ করে কথা শোনার পাত্রী নন , তিনি শুনেছেন এই আলোচনা, তিনিও বলেছেন পাল্টা – আমাদের মেয়ের মতো সুন্দরী, শিক্ষিত ,ভদ্র মেয়ে পাওয়াটাও কম ভাগ্যের নয়। তারপরেই দাদাকে বলেছেন – এখানে মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা মনে হয় ঠিক হয়নি।

রিম্পার বর বলেছে – না, কুটুম ভালো হলো না , আর ওদেরকে ভদ্রলোক বলতে আমার মুখে বাঁধছে।

হ্যাঁ হ্যাঁ, এই সব কথাও গেছে অভির কানে তবে অনেক মসলা মিশিয়ে, রীতিমতো সুস্বাদু করে, যেটা অভির আবার হজম করতে বুক ফাটছে।

গুঞ্জা জানে না আগে কি হবে? না অভি ওকে জোর করবে সে ভয় ওর নেই। ওর অন্য ভয়। যদি বন্ধ ঘরের আড়ালে ওকে বলে ডিভোর্স দিতে? যদি বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে ? কি করবে গুঞ্জা। হাতে পায়ে ধরবে ও ,বলবে এই ভাবে আশ্রিতা হয়েই থাকবে ও সারা জীবন। কিছু চাইবেনা ও। ওকে কোনো অধিকার দিতে হবে না। নাকি বলবে ও চাকরির চেষ্টা করবে। চাকরি পেলে চলে যাবে। কি করবে কিছু জানে না। ও জানে বাবার শুধু চাকরিটাই আছে। ওর বিয়েতে নিজের সঞ্চয়ের বেশিরভাগটাই লাগিয়েছে। ওর বিয়ের কোথাও কোনো ঠিক ছিল না সেই কারণে বাড়ি করা হয়েছে সেখানেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে।এখনো ভাইয়ের পড়াশোনা আছে। লোকেদের কথা আছে।

গুঞ্জা আর অভির ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো। গুঞ্জাকে ঘরে ঘিরে আছে, বৌদি, অল্পবয়সী মামী মাসি স্থানীয়রা। রিম্পাও আছে অবশ্য। ছোট পিসে আর সুপ্রিয়া অভিকে ঘরে দিয়ে গেলো। সুপ্রিয়া অভির হাতে একটা আংটি ধরিয়ে দিলো। এটা পড়াতে হবে। ওরা অনেকে অনেক ইয়ার্কি করা চেষ্টা করছে , সুপ্রিয়া আর ছোট পিসে বললো, চলো সব, অনেক রাত হয়েছে, ওদেরকে একা ছেড়ো, রেস্ট নিতে দাও , দুদিন অনেক ধকল গেছে। কিন্তু যাদেরকে একা ছাড়তে চাইছে তারা কি একা থাকতে চাইছে , না চাইছে না। সেটা আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক , সুপ্রিয়া আর অভিজিৎ ( ছোট পিসে) বুঝছে।

 

ঘর থেকে চলে গেলো ওরা। গুঁজে ঘাটের হাতল ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অভি আংটিটা বিছানায় রেখে বললো – এটা ছোটমা তোমার জন্য এনেছে পরে নিও। আর কয়েকটা কথা – আমি তোমার কথা জানিনা।কিন্তু আমি এখুনি বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, দাদুর এমন অবস্থা না হলে আমি এই বিয়ে করতামও না। আমার সময় লাগবে, হয়তো অনেকটা।আর এখুনি তোমাকে নিয়ে বেঙ্গালুরু যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমার প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস আমি ব্যাবস্থা করে দেব কিন্তু এখুনি আমার পক্ষে তোমাকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তুমি কান্না কাটি করে বাড়িতে জানাতে পারো সেক্ষেত্রে আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। আর কোনোদিনই হয়তো ফেরা হবে না।
গুঞ্জা বললো – কিছু চায় না সে।

অভি এবার ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার চাদরটা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিছানার এক কোনে বসে মোবাইল তা দেখলো – ফেসবুকে তার বিয়ের ছবি শেয়ার করেছে কুশল। আবার সে ছবি ট্যাগও করেছে তাকে।মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিলো বিছানায়। গুঞ্জা একটু ভয় পেয়ে পিছিয়ে গিয়ে চাদরটা মেঝে থেকে তুলে মোটামোটি মেঝেতে পেতে তাতে বসলো।শুতে যাবে। অভি বললো – আমি বলিনি মেঝেতে শুতে। খাটে অনেক জায়গা আছে সেখানে শোও।

এক পাশে গুঞ্জা অন্যপাশে অভি শুয়ে রইলো – মাঝে কেউ না থাকলেও বিশাল এলাকা জুড়ে পাহারা দিলো রিম্পার ছড়ানো বিষ।

দুজনে দুদিকে শুয়ে আগামী অন্ধকার ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবতে লাগলো রাত ভোর হয়ে সকাল হলো।

———————————————————–

আগের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৫

 

 

পরের পর্ব  –  অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৭

 

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!