এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৮

অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৮


অভি চলে গেছে। গুঞ্জা একা ঘরে দিন কাটায়। জুঁই এর সঙ্গে থাকার কথা বলেছিলো বাড়ি থেকে কিন্তু যায়নি গুঞ্জা। অভি যেখানে শুতো সেখানেই শোয় গুঞ্জা। মনে হয় যেন অভিই রয়েছে ওর সাথে। অভি বাড়িতে ফোন করে কিন্তু গুঞ্জার কথা জিজ্ঞাসা করে না। কেমন আছে, বেচেঁ আছে নাকি মরে গেছে। অবশ্য কি এসে যায় ওর গুঞ্জা মরে গেলে। অভির তো আছে সেই মেয়েটা। আচ্ছা সে খুব সুন্দরী নিশ্চই। গুঞ্জার থেকেও। অভির মনেও পড়েনা না যে কেউ একজন আছে যাকে সে সিঁদুর পড়িয়েছে। হুম শুধু সিঁদুরই পড়িয়েছে ওকে, ভাবতে ভাবতে কাটছে দিনরাতগুলো। বাকি সময়টা ওর কাকার মেয়েকে নিয়ে ব্যাস্ত রাখে নিজেকে।

সুপ্রিয়া, অনুপমা গুঞ্জাকে দেখে চোখের জল ফেলে আড়ালে। প্রতিদিনই ফোনে অভিকে বলেন গুঞ্জার সাথে যেন একবার কথা বলে। অভির রাগ এখনো কমেনি। পরে বলবো বলে রেখে দেয়। অভি ভাবে কেন গুঞ্জা পারে না ওকে কল করে জিজ্ঞাসা করতে কেমন আছে ও? থাক একাই থাকুক।

দাদুভাই কিছু আন্দাজ করেছে। সেদিন সকালেই গুঞ্জাকে জিজ্ঞাসা করেছে অভি কল করে কিনা। গুঞ্জা বলেছে করে রাত্রে কথা হয় ও খুব তাড়াতাড়ি আসবে বলেছে। সুপ্রিয়াকে জিজ্ঞাসা করেছে অভি গুঞ্জার মধ্যে সম্পর্কটা একটু হলেও ঠিক হয়েছে কিনা ? দুজনে ফোনে কথা বলে কিনা ? সুপ্রিয়া বলেছে হ্যাঁ ওরা কথা বলে। তারপরেই কি হলো গুঞ্জা দেখেছে দাদুভাই খুব ঘামছে , কেমন একটা করছে। ছোট পিসির দেখিয়ে যাওয়া ওষুধটা দিয়েছে। সবাইকে ডেকেছে। ডাক্তার ডাকা হয়েছে। ছোটপিসেও যত তাড়াতাড়ি পেরেছে এসেছে, বিপদ কেটেছে। গুঞ্জা দু দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দাদুর সেবা করে যাচ্ছে। ছোট পিসে কাল সন্ধে বেলা ফের এসেছে। খবর পেয়ে রিম্পা এসেছে। বসার ঘরে রয়েছে রিম্পা, অভির মা, কাকিমা, গুঞ্জা। অভি ঢুকলো।

অভি – দাদুভাই কেমন আছে ?

অভির গলা পেয়ে চমকে তাকালো সবাই।

অভি – দাদুভাই কেমন আছে ?

অনুপমা – ভালো আছে বাবা। তুই ? তোকে কে বললো?

রিম্পা – বাবা যা বাড়াবাড়ি হয়েছিল, আমি ভাবলাম হয়তো দাদু আর থাকবে না তাই আমি বলেছি।

সুপ্রিয়া – তোর মুখে কি কিছুই আটকায় না ?

অভি – এতটা বাড়াবাড়ি কি করে হলো ?

সুপ্রিয়া কিছু বলার আগেই রিম্পা – তোর বউই তো ভুল ওষুধ খাইয়েছিল দাদুকে।

অভি – কি ? ভুল ওষুধ। গুঞ্জার দিকে ভীষণ রেগে গর্জন করে – কি চেয়েছিলে মেরে ফেলতে ? কেন করেছো?নিজেকে ডাক্তার ভাবতে শুরু করেছো ? বলে জোরে ধমক দিলো অভি।

গুঞ্জা হতবাক হয়ে গেছে। ও স্বপ্নেও ভাবেনি অভি ওকে এই কথা বলতে পারে। এইভাবে কথা বলতে পারে। এতটা ঘৃণা করে ওকে। চোখ ভর্তি জল আর জিজ্ঞাসা নিয়ে অভির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ফের চোখটা নামিয়ে নিলো গুঞ্জা।

অভি একমুহূর্তের জন্য থমকে গেলো। চোখ দুটো গেঁথে গেলো ওর মধ্যে।

সুপ্রিয়া – অনুপমা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কি বলছিস কি তুই ওকে।তুই রিম্পার কথা শুনছিস? আজ ওর জন্যই বেঁচে গেছেন বাবা। অভিজিৎ ওকে যে ওষুধ দিতে বলেছে সেটাই ও দিয়েছে।

অভি – কি ?  রিম্পার দিকে আগুন ঝরা চোখে তাকাতেই  রিম্পা বললো দাদুর অমন শরীর খারাপ আমার মাথা ঠিক নেই। আমি ভুল শুনেছি। তাই ভুল বলে ফেলেছি। আর দাঁড়ালো না।

গুঞ্জা আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অভি কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু ঘরে ঢুকলো অভিজিৎ – তুই ? কখন এলি?

গুঞ্জা বেরিয়ে গেলো।

অভি – এখুনি এসেছি। দাদুভাই কেমন রয়েছে ?

অভিজিৎ – ভালো, যা দেখা করে আয়।

অভি দাদুভাই এর ঘরে গেলো। সুপ্রিয়াও গেলো।

অভি – দাদুভাই ?

দাদুভাই – তুমি? তুমি এসেছো? কখন এসেছো? ছোট বৌমা গুঞ্জাবতী, গুঞ্জাবতী কোথায়? সে দেখেছে আমার দাদুভাই এসেছে?
ডাক ডাক তাকে।

সুপ্রিয়া – দেখেছে , আপনি ব্যাস্ত হবেন না আমি ডাকছি। বেরিয়ে গেলো সুপ্রিয়া।

অভি – কি করে বাধালে এইসব? আমি বাইরে থাকি আমার তো চিন্তা হয়।

দাদুভাই – তুমি এসেছো আর কিছু হবে না আমার , কে খবর দিলো গুঞ্জাবতী? আমি বড় ভয় পেয়েছিলাম জানো। মনে হচ্ছিলো তোমাদের মধ্যে বড় দূরত্ব, তোমরা কথাও বলো না।আমার কেমন জানি দিনরাত মনে হয় আমি কি তবে বড় ভুল করলাম। আমার জন্যই তোমাদের দুটো জীবন নষ্ট হয়ে গেলো ? অবশ্য গুঞ্জাবতী বার বার বলেছে আমাকে তুমি ফোন করো তাকে। কথা হয় তোমাদের। তুমি খুব তাড়াতাড়ি আসবে বলেছে। কিন্তু আমার বড় চিন্তা হতো। মনে হতো গুঞ্জাবতী সত্যি বলছে তো? আর আমার চিন্তা নেই।

তার মানে রিম্পা মিথ্যা কথা বলেছে ? গুঞ্জা দাদুকে কিছুই বলেনি। মুখে বললো – সব ঠিক আছে দাদুভাই।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

গুঞ্জা উপরে নিজের ঘরে গিয়ে কাঁদছিলো। অভি যে ব্যবহার ওর সাথে করেছে তাতে কাঁদাটা স্বাভাবিক। সুপ্রিয়া গিয়ে কোনো মতে  সামলে মুখ ধুইয়ে নিয়ে এসেছে ওকে।  সুপ্রিয়া ঘরে ঢুকলো গুঞ্জাকে নিয়ে। মুখ দেখলে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সে কেঁদেছে। দাদুভাই – গুঞ্জাবতী কাঁদছো কেন? আমার দাদাভাই এসেছে তো ? হাত বাড়িয়ে ডাকলেন।  তার হাতটা অভির হাতে দিলেন। অভির হাতটা গুঞ্জার হাতে দিতেই গুঞ্জার হাতটা কেঁপে উঠলো। বুঝতে পারল অভি। দাদুভাই বললেন – সামলে রেখো, তোমরা ভালো থাকলেই আমি ঠিক হয়ে যাবো।

অভিজিৎ নিচে সব শুনেছে। পরিবেশ হালকা করতে অভিজিৎ ঢুকলো,  হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে গুঞ্জা সরে দাঁড়ালো। অভিজিৎ বললো – বাবা আমরা সবাই বলছি ওদের মধ্যে সব ঠিক আছে আপনিই বিশ্বাস করছিলেন না। এখন অভির কথা শুনে বিশ্বাস হলো। আর চিন্তা করবেন না।

দাদুভাই – না আর চিন্তা নেই।

অভি চা খাবি তো? গুঞ্জারানি ( অভিজিৎ ওই নামেই ডাকে গুঞ্জাকে) ২ কাপ চা করে নিয়ে আয়। বড় ভালো চা করিস তুই। গুঞ্জা চলে গেলো চা করতে।

অভি – দাদুভাই তুমি রেস্ট নাও। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।

দাদুভাই – এসো।

অভি নিজের ব্যাগটা ওর ঘরে রেখে সিগারেট নিয়ে ছাতে গেলো। সিগারেট খেতে খেতে ভাবলো – গুঞ্জর কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। ছিঃ সবার সামনে যা খুশি বলেছে মেয়েটাকে। এত বাজে ব্যবহার করেছে ওর সঙ্গে ,মেয়েটা কেঁদে ফেলেছে। কি করে এতটা খারাপ ব্যবহার করলো অভি – খুব খারাপ লাগছে, নিজের উপর রাগ হচ্ছে খুব। ও কিনা শেষে একটা ছাগল হয়ে গেলো। রিম্পার কথায় নেচে গুঞ্জাকে এইভাবে ছিঃ ছিঃ। ………… রিম্পাকে ও ধরবেই কেন গুঞ্জার নামে মিথ্যা বলেলো। থমকালো – এখন রিম্পাকে কিছু বললেই নাটক শুরু করবে , চিৎকার চেঁচামেচি করবে, দাদুভাইয়ের কাছে গিয়ে যা খুশি বলে চেঁচিয়ে কাঁদবে, দাদাভাইয়ের কিছু হলে ওর কিছু যায় আসে না। এতদিন যা বলেছে অভিকে সেগুলোও মিথ্যা নয় তো। কিন্তু কেন? কি লাভ হবে ওর?

মায়ের উপর রাগটা কেমন যেন পরে গেছে। মায়ের সাথেও কদিন খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। রান্না ঘরে ঢুকে দেখলো মা অভির ফেভারিট পেঁয়াজ পোস্ত করছে , সুপ্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে, গুঞ্জা চা করছে। অভি রান্না ঘরে ঢুকে মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কাঁধে মাথা গুঁজে বললো সরি। কেঁদে ফেললেন অনুপমা। অভি – সরি বলছি তো। আর হবে না।
সুপ্রিয়া হেসে বললো – দিদিভাই সরো আমি পোস্ত দেখছি ,তুমি তোমার বুড়ো ছেলেকে সামলাও।
গুঞ্জা চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বললো – চা।
অভি চা নিলো।গুঞ্জা আর এক কাপ চা নিয়ে অভিজিতের খোঁজে চললো।
অনুপমা – কেঁদে ,সব সময় তো আমাকে ভুল বুঝবি তারপর নিজেও কষ্ট পাবি আর আমাকেও কষ্ট দিবি।

অভি- বলছি তো আর হবেনা। আচ্ছা আমি আসছি। বলে বেরিয়ে গেলো।

গুঞ্জা চায়ের কাপ নিয়ে বসার ঘরে গিয়ে দেখলো অভিজিৎ নেই, উপরে আছে মনে করে ঘুরতেই দেখলো অভি পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ।

অভি বললো – গুঞ্জা, সরি, আমি খুব টেনশনে ছিলাম। বাট ওই ভাবে রিএক্ট করা আমার ভুল হয়েছে সরি। গুঞ্জা মাথা নিচু করে থাকলেও তার গাল বেয়ে জল পড়ছে সেটা দেখলো অভি। ফের বললো – বললাম তো সিরিয়াসলি খুব অন্যায় করে ফেলেছি, আর এমন হবে না সরি। ছোট পিসি স্নানে গিয়েছিলো সে অভিকে এতক্ষন দেখেনি। সে দেখে বললো – তুই কখন এলি? ওদিকে ছোট পিসেও নিচে নেমে এসেছে। গুঞ্জার উত্তর দেওয়া হলো না। চোখ মুছে পিসের হাতে চা দিয়ে সে চলে গেলো।

চা খেতে খেতেই জুঁই ঢুকলো, সেও অবাক, দাদাভাইকে দেখে। কথা বার্তা হতে হতেই
ও বাবা গো – তুমি কেমন আছো গো। …………….করে কাঁদতে কাঁদতে ঢুকলো মেজপিসি। অভি প্রণাম করলো।ভালো আছিস বাবা, কখন এলি ? কথাটা বলেই ফের কাঁদতে শুরু করলেন।
অভিজিৎ বললো- কাঁদবেন না বাবা ভালো আছে। চলুন উপরে রয়েছেন।

জুঁই যেমন সোফায় বসে ছিল বসে রইলো। পিসিকে দেখে সে উঠলো না, কথাও বললো না। পিসিও তাকে দেখে মুখ বেকিয়ে চলে গেলো।

পিসি অভিজিৎ চলে যেতে অভি জুঁইকে জিজ্ঞাসা করলো – কি রে তুই মেজপিসির সাথে কথা বললি না ?
জুঁই – না ,
অভি – কেন?
জুঁই – আমি ওর সাথে জীবনে কথা বলবো না, আমাকে যেমন বলেছে আমি একটা অসভ্য মেয়ে  বলেছে তাতে ভদ্র মহিলার সাথে অসভ্য মেয়ের কথা বলার দরকার নেই।

অভি – অসভ্য মেয়ে? কেন? কি করেছিস?

জুঁই – আচ্ছা করে ধুইয়ে দিয়েছিলাম সবার সামনে সেই জন্য।

অভি – কি বলেছিস?

জুঁই –  আরে, তোর বিয়ের সময় বৌমনিকে যা ইচ্ছা তার বলে শোনাচ্ছিল। ও বাবা কিছুই নেই? এই কটা গয়না ? ভাগ্গিস বোন নেই তাহলে অভিকে বিয়ের খরচ টানতে হতো। তারপর শিখা মামিমা যখন এসে বললো- বৌ খুব সুন্দর হয়েছে, মেজপিসি বলে কিনা – শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, কপালটাও সুন্দর, ভাগ্যও সুন্দর, নাহলে কিছুই তো নেই সেই বাড়ির মেয়ে এই বাড়িতে পরে, বর্তে গেলো। ওর সাথে ওর বাবা মায়ের ভাগ্য খুলে গেলো , এই সব ফালতু কথা বার্তা বলছিলো।

অভি – গুঞ্জা কিছু বলে নি?

জুঁই – হুম সে সব বলবে? মাথা নিচু করে শুধু কাঁদতে পারে। যাই হোক আমি থাকতে না পেরে বলেছি যে – বৌমনিই মা লক্ষী, বৌমনিকে বিয়ে করে ভাগ্য খুলে গেছে তোর। ওর পিছনে কত ছেলে লাইন দিয়ে ছিল, এমন মেয়েকে পেয়ে বর্তে গেছিস তুই। আর কোথায় যায় ? আমাকে যা খুশি বলতে আরাম্ভ করলো। আমিও পাল্টা দিয়ে বলেছি ওই জন্যই তোমার ছেলেদের সাথে সম্পর্ক নেই। ব্যাস আমি অসভ্য মেয়ে হয়ে গেছি।

অভি বললো – আচ্ছা আমার ভাগ্য খুলে গেছে, বর্তে গেছি ? বলে একটু কড়া করে তাকানোর চেষ্টা করতেই জুঁই বললো – হুম একদমই তাই, এমন দেখতে, এত ভালো বৌমনি কার আছে দেখা তো তুই? বলে পালালো।

এখন সবটা পরিষ্কার অভির কাছে। মানে শিখা মামিমা – মেজপিসি জুঁইয়ের কথা বলেছে। গুঞ্জা নয়। রিম্পাকে খুন করতে ইচ্ছা করছে। দাদুভাই ভালো হোক, ওকে বের করবে এই বাড়ি থেকে। এখানে ঢোকা বন্ধ করবে ও।

 

আগের পর্ব- অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৭

 

পরের পর্ব   — অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৯

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!