এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > নিজের কাঁধেই দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গ-বিজয় পরিকল্পনায় অমিত শাহ

নিজের কাঁধেই দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গ-বিজয় পরিকল্পনায় অমিত শাহ


2014 সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় ভারতীয় জনতা পার্টি তার কাঁধে উত্তরপ্রদেশে দলের বিজয় সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় ভারতীয় জনতা পার্টি খুব ভালোমতো জানতেন, দিল্লি যাওয়ার রাস্তা লখনউ হয়েই যায়। দলের আশা ভরসা 100 শতাংশ রক্ষাও করেছিলেন তিনি।

উত্তরপ্রদেশ থেকে তদানীন্তন রাজ্যের শাসক দল সমাজবাদী পার্টি, প্রধান বিরোধীদল বহুজন সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের রাজনৈতিক অস্তিত্বকেই প্রায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে 2014 সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় জনতা পার্টিকে একতরফা বিজয়ের লাভ করান অমিত শাহ। আর নরেন্দ্র মোদির 14 সালের ভোটের ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হিসেবে তাকেই চিহ্নিত করে গেরুয়া শিবির।

তাই দেরি না করে তার হাতেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয় পদ্মফুল শিবিরের পক্ষ থেকে। সভাপতি হওয়ার পরেই অমিত শাহ সারা ভারতবর্ষে অপারেশন লোটাস কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে। আর এই অপারেশন লোটাস সফল করার মুখে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নাম যে পশ্চিমবঙ্গ, তা খুব ভালো করেই জানতেন অমিত শাহ। তাই বিগত লোকসভা নির্বাচনে অমিত শাহ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে বাংলায় পদ্মফুল ফোটাতে মরিয়া হয়ে পড়েন।

মোদি সরকারের প্রথম ইনিংসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিরোধী ছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় হিসেবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গে পদ্মফুল ফোটানো যথেষ্ট কঠিন জেনেও 16 থেকে 17 টি জনসভা করে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের পেক্ষাপটে নিজের দলের প্রতি আবহাওয়া তৈরি করতে সক্ষম হন বিজেপি অধ্যক্ষ। পশ্চিমবাংলায় কার্যত অস্তিত্বহীন ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি।

সেই পশ্চিমবঙ্গের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়ে 42 এর মধ্যে 18 টি লোকসভা আসনে পদ্মফুল ফুটিয়ে দেন বিজেপির অমিত ভাই। মোদি সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসে দায়িত্ব বেড়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। তাই বিজেপি কার্যকারী অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেপি নাড্ডাকে‌।

ভারতীয় জনতা পার্টির সংবিধান অনুযায়ী এক ব্যক্তি এক পদ অনুসারে অমিত শাহর বিজেপি সভাপতি পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু অমিত শাহের বিশেষ রাজনৈতিক গুনাগুনের কথা চিন্তা করেই পার্টির স্বার্থে তাকে এখনই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার দরুন পার্টির বেশিরভাগ কাজ তিনি এখন নিজে দেখাশোনা করতে পারেন না। তবে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভারত বিজয়ের লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় মাইলস্টোন পশ্চিমবাংলার দিকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের যে প্রত্যক্ষ লক্ষ থাকবে, তা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। অমিত শাহকে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় জনতা পার্টির সংস্থাপক শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির জন্মভূমি। তাই এখানে জয়যুক্ত হওয়া বিজেপির কাছে যথেষ্ট গুরুত্বের ব্যাপার।

পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতির পেক্ষাপটে মোদী সরকারের বিরোধীতা করে বিরোধীদের মধ্যে প্রথম সারিতে উঠে আসে পশ্চিমবাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তাই রাজনৈতিকভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাস্ত করাটাও বিজেপির কাছে বড়সড় অ্যাচিভমেন্ট থেকে কোনো অংশে কম নয়। আর এই সব কিছুকে মাথায় রেখেই টার্গেট বেঙ্গল সফল করতে বাংলার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

সূত্রের খবর, গত 11 সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতৃত্ব বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়, অরবিন্দ মেনন, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন অমিত শাহ। বৈঠকে তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখল কর্মসূচিকে সফল করতে বারবার পশ্চিমবঙ্গে আসবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও এই বৈঠক নিয়ে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কোনভাবেই মুখ খুলতে চাননি।

তবে বিশেষ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, অমিত শাহ বলেছেন, যেভাবে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে এনআরসিকে সামনে রেখে ভারতীয় জনতা পার্টি বাংলার ভোটযুদ্ধে নেমেছিল, একই কায়দায় 2021 সালের নির্বাচনেও প্রধান ইস্যু হতে চলেছে সেই এনআরসি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি লোকসভা নির্বাচনের সময় বারবার এনআরসি প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ভারতবর্ষের উত্তর পূর্ব রাজ্যের বড় সমস্যা যে অনুপ্রবেশকারী, তা বারবার বুঝিয়েছেন বঙ্গবাসীকে। এনআরসির পাশাপাশি 21 সালের নির্বাচনে বিজেপির কাছে সমান গুরুত্ব পেতে চলেছে হিন্দু নাগরিকত্ব আইন। যার জেরে মতুয়া সম্প্রদায় থেকে শুরু করে একাধিক উদ্বাস্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের মন জয় করতে চায় ভারতীয় জনতা পার্টি।

বৈঠকে বিজেপি অধ্যক্ষ বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানান, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি শুরু করাটা রাজনৈতিক মহাসংগ্রামের চাইতে কোনো অংশে কম হবে না। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল সহ পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য বিরোধী দলগুলো যে এই নিয়ে কঠোর বিরোধিতা করবেন, সেই বিষয়ে অবগত রয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই জনমানসে এনআরসি নিয়ে জাগৃতি সরাতে নিজের দলের নেতা-কর্মীদেরকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর নির্বাচনের পটভূমিতে সেই এনআরসি অস্ত্রকে আরও বেশি কার্যকরী ভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

এক্ষেত্রে সর্বভারতীয় বিজেপির কার্যকারী সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডার হাতে বাংলার দায়িত্ব তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে চান না বিজেপি অধ্যক্ষ। তবে বিজেপি নেতৃত্ব তাদের নির্বাচনী রণকৌশল এবং সেই কৌশলে অমিত শাহর ভূমিকা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অমিতবাবুর বঙ্গ আগমন প্রসঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির নির্বাচনী অধ্যক্ষ মুকুল রায় জানিয়েছেন, অমিতজী বারবার বাংলায় আসবেন। ঠিক যেমন লোকসভা নির্বাচনে এসেছিলেন। কার্যকারী সভাপতি জিপি নাড্ডাজিও আসবেন।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে 2021 সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আর এই নির্বাচনে দলের বৈতরণী পার করতে অমিত শাহের মত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী রণনীতিকারকে প্রয়োজন, তা নিজেরাও খুব ভালোমতো বোঝে গেরুয়া শিবির।

আর তাই বাংলা দখলের ক্ষেত্রে তারা কোনো রকম খামতি রাখতে চায় না বলেই অক্টোবর মাস থেকেই বঙ্গ আগমনের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন অমিত শাহ। দুর্গাপূজার সময় পুজো উদ্বোধন থেকে শুরু করে আগামী দিনে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত নানান ইস্যুতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় আসার ধারাবাহিকতা যে অব্যাহত থাকবে, সেই বিষয়ে একমত প্রায় সকল রাজনৈতিক বিশ্লেষকর।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!