এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > একুশের লক্ষ্যে মমতাকে প্যাঁচে ফেলার কৌশল অতি সন্তর্পণে চালু করে দিলেন অমিত শাহ?

একুশের লক্ষ্যে মমতাকে প্যাঁচে ফেলার কৌশল অতি সন্তর্পণে চালু করে দিলেন অমিত শাহ?


প্রিয় বন্ধু এক্সক্লুসিভ – ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পরেই মূলত ঠিক হয়ে গিয়েছিল বাংলায় ২০২১-এর নির্বাচনে মূল লড়াইটা হতে চলেছে তৃণমূল ও বিজেপি মধ্যে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এখানে বাম-কংগ্রেস জোটের একটা ছোট্ট ভূমিকা থাকতে পারে, কিন্তু তা কখনোই এই জোটকে সরকারে আনার মত হবে না। এই জোট যদি কিছুটা ভোট বাড়াতে পারে, তাহলে কপাল পুড়বে বিজেপির। আর যদি ভোট কমে বা একই থাকে তাহলে তা বড়সড় ধাক্কা হবে তৃণমূলের।

এই পরিস্থিতিতে বাংলার কুর্শি দখলের জন্য গেরুয়া পরিকল্পনা ধীরে ধীরে সামনে আসতে শুরু করেছে। আর তা যে তৃণমূল সরকার বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপ ক্রমশ বাড়াচ্ছে তা বিভিন্ন ঘটনাতেই প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীকে চাপে রাখার খেলাটা মূলত খেলছেন প্রাক্তন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে, তৃণমূল কংগ্রেসের আক্রমণের মূল লক্ষ্য এখন অমিত শাহই।

সম্প্রতি, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠক হয়। আর সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই নিজের ক্ষোভ চেপে রাখতে না পেরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী রীতিমত টেবিলে ফাইল চাপড়ে প্রতিবাদ জানান। যে ঘটনায় কার্যত অবাক হয়ে যান ওই বৈঠকে উপস্থিত বাকি মুখ্যমন্ত্রীরা। ওই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেস্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্বাচিত রাজ্য সরকার কেন্দ্রের ক্রীতদাস নয়! এমনকি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিভাবে তাঁর রাজ্য সরকারকে অপমান করছেন – সে কথাও নাকি তুলে ধরেন তিনি।

এর আগে, যখন বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়, তখনও রাজ্য সরকার বনাম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর লড়াইটা চরমে ওঠে। পরিস্থিতি এমনই বেগতিক হয়ে ওঠে যে, স্বয়ং অমিত শাহ ফোন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কলকাতার এক নামী সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সেই টেলিফোনে মমতা তৃণমূল নেত্রী সরাসরি ক্ষোভ দেখিয়ে বলেন, রোজ রোজ এভাবে ব্যতিব্যস্ত না করে কেন্দ্র বরং যা করার এক বারে করে ফেলুক। যদি মনে করা হয়, রাজ্য কাজ করতে পারছে না, তা হলে বরং কেন্দ্র এসে এখনই দায়িত্ব বুঝে নিক! বাকিটা মানুষ বুঝে নেবে।

অমিত শাহের মত পাকা রাজনীতিবিদ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সেই পাতা ফাঁদে পা দেন নি। উল্টে তিনি সাংবিধানিক ভাবেই সেই কড়া বাউন্সারের জবাব দেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্বাচিত রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করা কেন্দ্রের নীতি নয়। এ নিয়ে ভুল বোঝার কোনও অবকাশ নেই। অর্থাৎ তিনি বুঝিয়ে দেন, রাজ্য সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করতে নয়, বরং কেন্দ্রীয় দল বাংলায় এসেছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রকে বাংলার জন্য যথাযুক্ত সাহায্যের জন্য পরামর্শ দিতে। অমিত শাহের সেই খেলায় পিছু হঠতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল বাংলা ঘুরে রিপোর্ট পাঠায় কেন্দ্রকে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু এই ঘটনাতেই প্রমাণিত, বাংলায় খেলাটা কোন উচ্চমাত্রায় নিয়ে যেতে চাইছেন অমিত শাহ। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই খেলায় কিন্তু ক্রমশ ব্যাকফুটে যাচ্ছে রাজ্য সরকারই। কিভাবে? বর্তমানে যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায়, তাহলে কেন্দ্র বনাম রাজ্য সংঘাতটা আর মৌখিক নেই। পুরোটাই হচ্ছে লিখিতভাবে। যাতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসাবে যেন নতুন মাত্রা যোগ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। আর এখানেই বিশ্লেষকদের মত হল, সরকারের চিঠিতে লিখিত অভিযোগগুলি সেইভাবে নথিবদ্ধ করা হয়, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হওয়া অসম্ভব নয়।

অর্থাৎ, সোজা বাংলায়, বাংলায় গণতন্ত্র নেই – তা প্রমান করা। আর তারই সবথেকে বড় প্রমান হবে এই চিঠির আদানপ্রদান। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে একুশের নির্বাচনের আগেই বাংলায় হয়ত হয়ে যাবে বড় পদক্ষেপ। রাষ্ট্রপতির সুপারিশে পরে যেতে পারে নির্বাচিত সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আদতে সেইটাই হয়ত চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কেননা ১০ বছরের রাজ্যপাট চালানোর পর খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রবল হয়েছে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া। সেখানে যদি কেন্দ্রীয় সরকার, সময়ের আগেই সরকার ফেলে দেয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সহানুভূতির হাওয়া থাকবে তৃণমূল শিবিরের দিকে।

আর তা খুব সহজেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করবে। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা জানাচ্ছেন, যখন এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলন চলছে, তখন প্রকাশ্যেই তৃণমূল নেত্রী কেন্দ্রীয় সরকারকে তাঁর সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য বলছেন। তিনি প্রমান করতে চাইছেন, সরকারি ক্ষমতা নয়, আসলে মানুষের পাশে আছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই, এই প্রতিমূর্তি তিনি তুলে ধরলে, তা তাঁকে আরেকটা নির্বাচনী বৈতরণী পার করে দেবে। বিশেষ করে, যেখানে এখনই তৃণমূলের তরফে প্রচার শুরু হয়ে গেছে – বিজেপির কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প মুখ কোথায়?

কিন্তু অমিত শাহও কি অতই কাঁচা খেলোয়াড়? তৃণমূলের এই পাতা ফাঁদ তিনি বুঝতে পারছেন না? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাঁর মত নির্বাচনের অঙ্ক গোটা ভারতে খুব কম লোকই বোঝেন! তিনি সবদিক বুঝেশুনেই বাঘের পিঠে সওয়ার হচ্ছেন। দলীয় স্তরে তাঁর কাছে যা রিপোর্ট আছে, তাতে নাকি উঠে এসেছে প্রশাসনের বড় একটা অংশ রাজ্যের শাসকদলের পাশে আছে। অথচ দলীয় সংগঠনের একটা বড় অংশ ধ্বসে গেছে। যার বড় প্রমান ২০১৯-এর ফলাফল। বিজেপির বাংলায় সেভাবে শক্তপোক্ত সংগঠন না থাকা সত্বেও যে ফলাফল হয়েছে, তাতেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে গেছে।

এই অবস্থায় আশঙ্কা খুব স্বাভাবিকভাবেই, বিধানসভা নির্বাচনে সরকারে থাকা অবস্থায় তৃণমূল ভোটে গেলে দলীয় সংগঠনের পাশাপাশি নাকি প্রশাসনকেও ব্যবহার করা হতে পারে। আর তাই সেই প্রশাসনিক ‘লিঙ্ক’ টাই যদি কেটে দেওয়া যায়, তাহলে অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে। তখন তৃণমূল বা বিজেপির মধ্যে নাকি বিশেষ সাংগঠনিক পার্থক্য থাকবে না। আর এই অবস্থায়, জনগনের আস্থা যে জিততে পারবে সরকার তার। আর সেই সূত্রেই, তৃণমূলের অঙ্কেই এবার তৃণমূল বধের পরিকল্পনা রচনা করছেন তিনি। আর তাই সব দেখে শুনে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন – বাংলার আগামী নির্বাচনে – যে সূক্ষবুদ্ধির লড়াই তা এর আগে খুব একটা দেখা যায় নি। ফলে আগামী নির্বাচন যে জমজমাট – তা এখন থেকেই স্পষ্ট!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!