আমরণ অনশনে প্রাথমিক শিক্ষকরা, কড়া হুঁশিয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর কলকাতা রাজ্য July 16, 2019 উচ্চ স্কেলের বেতন ও শাস্তিমূলক বদলি হওয়া ১৪ জন শিক্ষককে পুরনো কর্মস্থলে পুনর্বহাল করার দাবি নিয়ে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা বিকাশভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন। তাঁদের এই আন্দলনকে সমর্থন জানিয়েছেন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। অনশনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে ইতিমধ্যে কয়েকজন শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে ইতিমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরপর গতকাল বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষকদের কড়া বার্তা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, এনসিটিইর নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য নূন্যতম উচ্চমাধ্যমিক যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। সেই একই নির্দেশিকা মেনে এই রাজ্যে প্রাথমিকে নিয়োগ হয়। এমনকি এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার আগে পুরোনো যে শিক্ষক শিক্ষিকারা চাকরিতে যোগদান করেছেন ও ৫০% নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা নেই তাঁদের দূরশিক্ষার মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক সমতুল্য যোগ্যতা বাড়িয়ে নিতে হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকাদের অভিযোগ যে চাকরির যোগ্যতামান উচ্চমাধ্যমিক করা হলেও তাঁরা সেই যোগ্যতার বেতন পাচ্ছেন না। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের একজন প্রাথমিক শিক্ষক পে ব্যান্ড ২ পর্যায়ের বেতন পান। যার পে ইন পে ব্যান্ড ৫৪০০–২৫২০০ ও গ্রেড পে ২৬০০। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হলে গ্রেড পে হয় ২৩০০ টাকা। প্রাথমিক শিক্ষকরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক থেকে বাড়িয়ে উচ্চমাধ্যমিকে নিয়ে গেলেও তাঁদের সেই আগের নিয়মের মাধ্যমিক যোগ্যতার বেতনই দেওয়া হচ্ছে বলে ক্ষোভ বাড়তে থাকে শিক্ষকদের মধ্যে। গত একবছর ধরে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে উস্থি। গতকাল বিকেলে এই অনশন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে জানান যে, “আমি আপনাদের খুব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যাঁরা বসে আছে তাঁরা অকারণে বসে আছে৷ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যাতে আপনারা কতটা খবর করবেন।” তবে বেতন বৈষম্যের দাবি মেনে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “প্রাইমারি টিচারদের গ্রেড পে নিয়ে যে একটা নিজেদের মধ্যে একটা অসন্তোষ আছে, সেটা সমাধান করব৷।” ২১ শে জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবসের পরে এই মাসেই কোনও একদিন নজরুল মঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষকদের ডেকে তাঁদের বেতনবৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশাপাশি রাজ্যের এমএসকে, এসএসকে ও কলেজের অতিথি শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির কথা সরকার ভাবছে এমনটা তিনি জানিয়েছেন। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনকারী সংস্থা উস্থি সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী জানান, “উস্থিদের সঙ্গে বহুবার বসেছি৷ যখন বিধানসভার অধিবেশন চলছিল, তখন তাঁদের সঙ্গে বসেছি৷ ওদের মনে হচ্ছে যে, একটু দিচ্ছি আরও একটু যদি সরকারকে টাইট দেওয়া যায়৷” এরপর তিনি সরাসরি অনশনরত শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে বলেন ,”কোনও দিন যা বলিনি তাই আজ বলছি৷ স্কুল কামাই করে যারা আন্দোলনে বসছেন, তাঁদের কিন্তু এই অপশনের জন্য যদি কোনো ছুটি না থাকে, তাহলে কোন ছুটি এডজাস্ট হবে না৷ যারা ছাত্রদেরকে না পড়িয়ে দিনের পর দিন নানা ধরনের আন্দোলন করছেন, স্কুল কামাই করেছেন, তাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি, ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে কাজে ফিরুন৷’’ দ্রত সরকারের তরফে এই সংক্রান্ত সার্কুলারও বেরোতে চলেছে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত,কিছু দিন আগে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন যে প্রাথমিক শিক্ষকদের এক স্কেল বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সরকার ভাবনা চিন্তা করছে। তিনি এর বেশি বিশেষ কিছু না বললেও ফিনান্স দপ্তর থেকে আসা খবরে জানা গেছে প্রাইমারি শিক্ষকদের বেতনক্রম পে ব্যান্ড ২ থেকে বাড়িয়ে পে ব্যান্ড ৩-এ নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। এর পর তৃণমূলপন্থী প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের তরফ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে কলকাতায় মিছিল বের করা হয়। কোনও লিখিত সার্কুলার বেরনোর আগেই সেই মিছিল বের করা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের অন্যান্য সংগঠন সমালোচনাও করে। তবে এই উস্থি সংগঠন অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় হারে অর্থাৎ পে ব্যান্ড ৪ হারে বেতনক্রমের দাবি জানিয়ে আসছে। সেই দাবি আদায়ের জন্যই তাঁরা এই আমরণ অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। অনশনকারী শিক্ষক শিক্ষিকাদের অভিযোগ অনশনমঞ্চে জলের সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শৌচাগার না থাকায় সমস্যায় পরছেন শিক্ষিকারা।গতকাল আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অনশনমঞ্চে হাজির হন কবি মন্দাক্রান্তা সেন, পরিচালক অনীক ধর ও বিশিষ্ট শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র। তাঁরা মঞ্চে পৌঁছে প্রতীকী অনশন শুরু করেন। এরপর আন্দোলনকারিদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। এর আগে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী অনশন মঞ্চে এসে বলেছিলেন,”রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের নায্য বেতনের দাবিতে রাস্তায় বসে অনশন করতে হচ্ছে, এটা রাজ্যের লজ্জা।” আন্দোলনকারী শিক্ষকদের শাস্তিমূলক বদলিকেও স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ করেন সুজনবাবু। প্রাথমিক শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সন্দীপ ঘোষ ও সম্পাদক পৃথা বিশ্বাস জানিয়েছেন, “আমরা যে পে স্কেল জমা দিয়ে এসেছিলাম, শোনা যাচ্ছে রাজ্য সরকার অন্য স্কেল দিতে চাইছে৷ যেটা সাধারণ শিক্ষকরা মেনে নেবেন না৷” পাশাপাশি তাঁদের দাবি আন্দোলন করার জন্য সরকার অনৈতিক ভাবে ১৪ জন শিক্ষককে বদলি করেছেন। সেই বদলির সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করতে হবে। সরকারের তরফে এই দুই বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এমনটাই জানিয়েছেন উস্থির প্রতিনিধিরা। আপনার মতামত জানান -