অ্যানসার প্লিজ – (লাভ স্টোরি) – কলমে অপরাজিতা-পর্ব ৩ অন্যান্য অপরাজিতা গল্পে-আড্ডায় March 17, 2020 শনিবার – আজ শ্রাবনীদি আর অরিত্রদার বিবাহবার্ষিকী। অরিত্রদা মোহনবাগানপ্রেমী অভ্রও তাই , একসাথে খেলতে যায়, একটা বড়সড় গ্রুপ আছে ওদের নানা গেট টুগেদারে তাদের সাথে দেখা হয়। খুব ভালো করে চেনে, চেনাজানা এমনটাই যে ওদের বাড়িতেও গেছে অনেকবার ,গেট টুগেদার বা বিবাহবার্ষিকী । আজ ও যাবে। সকালে অভ্র দেখলো ফেসবুক কিন্তু না অনলাইন নেই দীপশিখা। কোথায় একটা যাবে বলেছিলো। কিন্তু এত সকালে? একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রেডি হতে গেলো।এখন কথা না হলে ভালো লাগে না অভ্রর। কিন্তু আজ কথা হলো না ভালো লাগছে না কিন্তু যেতেও হবে,রেডি হয়ে বেরোলো অভ্র। পৌঁছে গেছে অভ্র , বাইক রাখার সাথে সাথেই দেখা নীতীশদা আর বৌদির সাথে, ওরাও এসেছে। একসঙ্গেই উপরে উঠলো।বৌদি বেল বাজালো,দরজা খুললো লাল শাড়ী পড়া একটা মেয়ে, অভ্র স্নিকার খুলছিল , সামনে নীতিশ দা আর বৌদি। অভ্র ওদের পাস্ থেকে মুখ বের করে দেখলো, চমকে গেছে, একি এ এলো কোথা থেকে? দীপশিখা ! যাকে এখন স্বপ্নে জাগরণে সবসময় দেখছে অভ্র। যারা এসেছেন তাদেরকে দীপশিখা চেনে না। তারা দীপশিখাকে দেখে মুচকি হেসে ভেতরে গেলো। এবার দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো অভ্র। এতক্ষন দীপশিখা খেয়াল করে নি , যারা ভেতরে গেলো তাদেরকেই দেখছিলো দীপশিখা। এবার দরজায় চোখ পড়তেই দেখলো সামনেই অভ্র। না চিনতে এতটুকুও ভুল হয়নি। বার বার দীপশিখাও দেখছে অভ্রর প্রোফাইল ,ওর পিকচার। ভূত দেখার মতো চমকে গেলো দীপশিখা। দীপশিখা – তু তু তুমি ? অভ্র – কাল বলেছিলাম , হোয়াটস্যাপ নাম্বার না দিলে পৌঁছে যাবো। দীপশিখা – প্লিজ যাও কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। অভ্র – তোমাকে ব্যাপক লাগছে , সিরিয়াসলি, পিকচারের থেকেও সুন্দর। দীপশিখা -মুখটা বন্ধ করো আর যাও অভ্র – আমি সত্যি বলছি। তোমার ভাসা ভাসা চোখ, শান্ত ভয় পাওয়া মুখ , হালকা লিপস্টিক , সিরিয়াসলি – দিল ধক ধক করনে লাগা দীপশিখা – দেখে নিয়েছো , এবার বিদেয় হও। অভ্র – নাম্বারটা দাও চলে যাচ্ছি। দীপশিখা – শাট আপ। অভ্র – ওকে, বলে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গেলো দীপশিখা দরজা আটকে – নো, প্লিজ অভ্র – নাম্বার দীপশিখা – তুমি কিন্তু আমাকে ব্ল্যাকমেল করছো অভ্র – সে তো অনেকক্ষন থেকে তুমি এখন বুঝলে ? দীপশিখা – যাও না মুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে দীপশিখা খুব ভয় পেয়েছে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ভেতরে দেখছে দীপশিখা । শ্রাবনী আর অরিত্র যারা এসেছে তাদের নিয়ে ব্যাস্ত, এই ফাঁকে একে বিদেয় করতে হবে। অভ্র – নাম্বার দাও চলে যাচ্ছি। দীপশিখা – যাও না প্লিজ, এখুনি কেউ চলে আসবে দেখে ফেলবে। অভ্র – তুমি ফালতু ফালতু টাইম ওয়েস্ট করছো দীপশিখা – ৮৬৯৬৭৫ ভেতর থেকে অরিত্রদার গলা – কে এসেছে রে ? দীপশিখা ভয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অরিত্রদা মুখ বের করে ও তুই? বাইরে কি করছিস ? ভেতরে আয়. এই শ্রাবনী এই দেখো অভ্র এতক্ষনে এসেছে। আয়, ভেতরে আয়- বলে চলে গেলো। দীপশিখা এবার বুঝেছে অভ্র শ্রাবনীদের আমন্ত্রিত , সূত্র না জানলেও এটুকু বুঝেছে অভ্র খুব ক্লোজ ওদের। কটমট করে তাকালো অভ্রর দিকে। অভ্র – একটু আমতা আমতা করে বললো – আর তো মোটে চারটে ডিজিট, বলে দিলে হতো না। হোয়াটস্যাপ নাম্বারের কথা বলছি। দীপশিখা দাঁড়ালো না চলে গেলো। হেব্বি রেগে গেছে বোঝাই যাচ্ছে। তবে অরিত্রদা ভুল সময়ে এসে সব কেলো করে দিলো। নাহলে আজকেই নাম্বারটা পেয়ে যেত।এবার অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - ভেতরে ঢুকলো অভ্র, দীপশিখা শ্রাবনীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দীপশিখা দেখলো অভ্র এদের গ্রুপের বেশ পরিচিত মুখ। শ্রাবনী – কি রে তুই যে সকাল থেকে এসে আমাদের সব কাজ করে দিবি বলেছিলিস, আর এখন সবার শেষে ঢুকলি ? অভ্র – না একটু দেরি হয়ে গেলো , কি কাজ আছে বলো। করে দিচ্ছি নমিতা বৌদি – সব কাজ আছে, ঘর ঝাঁট, মোছা ,করবি ? শর্মিলা বৌদি – এটা একটু দেরি? অভ্র – আরে উঠতে দেরি হয়ে গেছে নমিতাবৌদি- কেন কি করছিলি রাত্রে ? অভ্র – তোমার বর কি করছিলো ? শর্মিলা – আমাদের বর যাই করুক তাদের বউদের সাথে ছিল , তুই কোথায় কার সাথে কি করছিলি? অভ্র – আমি একাই ছিলাম হ্যাঁ, তোমাদের বরেদের সাথেই গ্রুপে দরকারি সব আলোচনা করছিলাম । প্রতীকদা – এই তুই মিথ্যে কথা বলছিস কেন? কাল তো আমাদের সাথে গ্রুপে ছিলি না ? প্রশান্ত? প্রশান্তদা – না ছিল না তো। অভ্র – প্রমান আছে, সাবির – কিছু প্রমান নেই। সুবীরদা – আমরা ১১.৩০ পর্যন্ত কি ১১.৪৫ পর্যন্ত আলোচনা করেছি তারপর? তোর সারারাত কেন ঘুম হয়নি?। আমির – হ্যাঁ , ঠিক, বল কোথায় ছিলি? অভ্র – আমাকে এমন করলে আমি কিন্তু চলে যাবো নীতীশদা – যা , এই কেউ ওকে বাইরে বের করে ,দরজা বন্ধ করে দে। অনিন্দিতা বৌদি – এখনো বলছি বল, কার সাথে ছিলি ? অভ্র – অরে দূর বাবা, কারুর সাথে না শ্রাবনী -বলবি না কানটা কস কস করে মুলে দেব? অভ্র – তোমার চেনা একজনের সাথে শ্রাবনী -কে? অভ্র – পরে বলবো কানে কানে। – দীপশিখা ভয়ে তাকালো ওর দিকে।বলে দেবে ? অরিত্র – আচ্ছা পরে হবে, শ্রাবনী দিশার সাথে আলাপ করাও সবার। শ্রাবনী – আচ্ছা এ হলো দীপশিখা, চেনাজানা বোন হয়। অনিন্দিতা বৌদি – সেই থেকেই বলছি কে এটা ?বেশ মিষ্টি দেখতে তো। খুব শান্ত না ! শ্রাবনী – খুব না তবে শান্ত, বাড়ির সবচেয়ে ভালো মেয়ে, বাড়ির লোক যা বলবে তাই করবে। তাতে নিজের ইচ্ছা থাকুক না থাকুক। (অভ্র লক্ষ্য করলো বৌদি কথাগুলো খুব একটা ভালো করে বলছে না , কিছুটা দীপশিখাকে ঠেস দিয়ে,বৌদি যখন বলছে দীপশিখার সম্পর্কে দীপশিখার মুখটা ছোট হয়ে গেছে) অরিত্র – আচ্ছা হয়েছে এবার। শর্মিলা বৌদি – এই দীপশিখা আমাদের নাম এত মনে থাকবে না। আমরা হলাম বৌদি বা দিদি আর বাকিরা দাদা , ভাই। অভ্র – সবাই দাদা , ভাই কেন? নমিতাবৌদি – কি বললি ? অভ্র – কি বললাম ? কিছু না। নীতীশদা – না না মনে থাকুক না থাকুক , নাম বলে পরিচয় করতে হবে একে একে সবার নাম বলা হলো , এবার পালা অভ্রর। নমিতাবৌদি – এ হলো অভ্র , জানো তো এ হলো আমাদের খুব ভালো ছেলে। খুব গুণী।(বৌদির খুব করে চায় যে অভ্রর একটা গার্লফ্রেন্ড জুটুক , ওদের গ্রুপে যারা আছে সবার হয় বৌ আছে , নয়তো গার্লফ্রেন্ড। অভ্র আর আর সুদীপ্তর কেউ নেই, বৌদিরা ছাড়া। তবে আজ খবর পাওয়া গেছে সুদীপ্তর বিয়ে ঠিক ফলে অভ্র একা। ) নীতীশদা – কি গুন্ আছে ? অনিন্দিতা বৌদি – তোমার মতো নয়, চুপ করে বোসো নমিতাবৌদি – জানো তো দীপশিখা অভ্র ব্যাচেলর, সাবির – কথা শেষ হতে না দিয়েই – ব্যাচেলর হওয়াটা গুন্? প্রশান্তদা – তার মানে আমাদের একটা গুন্ বিয়ে করে শেষ হয়ে গেলো। অনিন্দিতা বৌদি – এইবার লাঠি করে পেটাবো, চুপ করবি। নমিতাবৌদি – হ্যাঁ যা বলছিলাম, অভ্র ভালো গান গায়, খুব ভালো ফুটবল খেলে, খুব ভালো ডাক্তার। প্রশান্তদা – এমন গান আমরা সবাই গাই ডাক্তার কথাটা শুনে দীপশিখা ওর দিকে একটু বিস্মিত হয়ে তাকালো , অভ্র ডাক্তার ? এতদিন তো বলেছে সেক্টর ফাইভে জব করে। না কি জব করে তা বলেনি,তবে ডাক্তার সেটাও বলেনি। তাছাড়া লোকে সেক্টর ফাইভে জব মানে আইটি সেক্টর ই বোঝে।তেমন পরিচিত নয় কলকাতা, সল্টলেক সম্পর্কে দীপশিখা। তাই হাসপাতাল আছে কিনা জানা নেই, ওকে অভ্র মিথ্যা বলেছে নাকি ওই বুঝতে পারেনি -ব্যাপারটা একটু ধোঁয়াশে ওর কাছে। অভ্র চোখটা বুঝে হালকা করে মাথাটা নাড়লো – মনে মনে ভাবলো – সব ঠিক ছিল ডাক্তার কথাটা বলে আমার সাড়ে, এক, দুই, তিন সব সর্বনাশ করে দিলো বৌদি। না অভ্র ইচ্ছা করেই দীপশিখাকে বলেনি যে ডাক্তার,কারণ আছে। প্রদীপ্তদা – আচ্ছা এবার কিছু খাওয়া হোক , কি রে অরিত্র ?কিছু খেতে দে, অরিত্র – হুম কোল্ডড্রিঙ্কস, সাথে টুকিটাকি খাওয়া হলো। অনেক কিছু কথা বার্তা হচ্ছে। অনিন্দিতা বৌদি – এই এবার গানের লড়াই হবে। ছেলে ভার্সেস মেয়ে,গানের লড়াই শুরু হলো। নানা গানের পর। অভ্র গান গাইলো – “” মেরে প্যায়ার কি উমর হো ইতনি সনম, তেড়ে নাম সে শুরু তেড়ে নাম পে খতম।” অরিত্র – কার রে ? কার নাম সে শুরু, কার নাম পে খতম ? অভ্র – “দীপশিখা “বাকিরা সবাই এমন করে দেখছে যেন কত বিচিত্র ব্যাপার ঘটে গেছে। দীপশিখা ঢোক গিলে একটু সোজা হয়ে বসলো, বাকিরা হা করে, একরাশ প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে। অভ্র – দীপশিখা তোমাকে বৌদি ডাকছে। আবার সবার চোখ মুখ স্বাভাবিক। কেউ জানুক না জানুক, দীপশিখা খুব ভালো করে জানে অভ্র ইচ্ছা করে গানটা গেয়েছে আর দীপশিখার নামটা বলেছে , কেউ বোঝেনি সেটা আলাদা। শ্রাবনী – এই একদম কথা ঘোরাবি না আমি ওকে ডাকিনি। তুই বল অভ্র – আরে বাবা ওটা একটা গান। প্রদীপ্তদা – তুই হঠাৎ করে ওই গান গাইলি কেন? অভ্র – যা বাবা, ম দিয়ে গান এটা মনে এলো গাইলাম , আশ্চর্য। আসলে অভ্রকে সবাই খুব ভালোবাসে ওর ব্যবহারের জন্যই, ও মজাটা মজার মতো করেই নিতে জানে। তাই গ্রুপে সবার প্রিয় ও। শ্রাবনী – তুই বল। অভ্র – নিন তাম্মি শ্রাবনী – মানে? অভ্র – নানু নিম্মা সাহদারিয়াননু প্রীতিসুত্তেনে শর্মিলা বৌদি – এটা কোন ভাষা ? অভ্র – কর্ণাটকের ভাষা। শ্রাবনী – এক চড় মারবো জানিস। বাংলায় বল অভ্র – নিমাগে কান্নাডা গতিলা, আদ্দরিন্দা নানু ইনু মাদবাহুদু এন্ডু নিমাগে অর্থাবাগুত্তিলা অনিন্দিতা বৌদি উঠে কানটা ধরলো অভ্রর , বলবি বাংলায়? অভ্র – আরে লাগছে ,বলছি নন্দিতা বৌদি – বল অভ্র – বললাম কেউ নেই, থাকলে বলে দিতাম আর তোমরা কান্নাডা বোঝো না আমি কি করবো সবাই একটু সন্দেহের চোখে তাকিয়ে রইলো অভ্রর দিকে অভ্র – সত্যি না বিশ্বাস করে উপায় নেই, কেননা তারা কেউ কান্নাডা জানে না। মুখে অভ্র যাই বলুক দীপশিখা না বুঝলেও ও সিওর যে অভ্র অন্য কিছু বলেছে ওকে নিয়ে , হুম অভ্র যা বলেছে তার বাংলা মানে হলো , – নিন তাম্মি – তোমার বোন , নানু নিম্মা সাহদারিয়াননু প্রীতিসুত্তেনে – তোমার বোনের প্রেমে পড়েছি নিমাগে কান্নাডা গতিলা, আদ্দরিন্দা নানু ইনু মাদবাহুদু এন্ডু নিমাগে অর্থাবাগুত্তিলা – তোমরা কান্নাডা বোঝো না আমি কি করবো সব ঠিক আছে কিন্তু দীপশিখার সাথে একা কথা বলতেই হবে নাহলে রাত্রে অনলাইন থাকলেও কথা বলবে না , নাহলে ব্লক করে দেবে। টেনশন হচ্ছে একটু আগের পর্ব – এনসার প্লিজ – (লাভ স্টোরি) – কলমে অপরাজিতা-পর্ব ২ পরের পর্ব – অ্যানসার প্লিজ – (লাভ স্টোরি) – কলমে অপরাজিতা-পর্ব ৪ আপনার মতামত জানান -