এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > মালদা-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম > দুর্নীতি নিয়ে সতর্কবার্তা কেষ্টর, জোর শোরগোল!

দুর্নীতি নিয়ে সতর্কবার্তা কেষ্টর, জোর শোরগোল!

 

অতীতে বহুবার বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরে। আর এবার পুনরায় বীরভূম জেলায় একাধিক সংস্থার বিরুদ্ধে তার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগ আনলেন অনুব্রতবাবু। পাশাপাশি রেশন দোকান মালিকদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করতে দেখা যায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতিকে।

বস্তুত, গত শুক্রবার তারাপীঠ এলাকায় সংশোধিত নাগরিক আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বিরোধী একটি সভায় বক্তব্য রাখতে উপস্থিত হন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই রকম মন্তব্য করে বসেন অনুব্রতবাবু। এমনকি রেশন ডিলারদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি প্রদান করে তিনি বলেন, “অনেক রেশন ডিলার আছে যারা চার দিনের পরিবর্তে দুদিনের রেশন দিচ্ছে। সেই সব ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে কেস করুন। দরকার হলে আমরা দোকান শেষ করব।”

স্বাভাবিকভাবেই কেষ্টবাবুর এই মন্তব্যের ফলে এখন রীতিমত বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এনআরসি এবং সিএএ বিরোধিতা তৃণমূল কংগ্রেসের রামপুরহাট 2 নম্বর ব্লকের তরফ থেকে তারাপীঠ এলাকায় বেসিক মোড়ে একটি সভা আয়োজন করা হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলার অন্যান্য সভাগুলির মতনই এই সভাতেও মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। সেখানে উপস্থিত হয়ে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সংশোধিত নাগরিক আইন এবং এনআরসি বিরোধিতায় রীতিমতো আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।

তিনি বলেন, “তোমরা যতই চেষ্টা কর, এরাজ্যে এনআরসি হতে দেব না।” এদিনের সভা থেকে দলের অঞ্চল সভাপতি এবং বুথ সভাপতিদের উদ্দেশ্য করে জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, “আপনারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার করুন, এনআরসি হবে না।” নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে এদিনের সভা থেকে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে একহাত নেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, “দুটি ভেক দল বলছে খোল কর্তাল নিয়ে আবার বাজারে বের হই। নিমতলা ঘাটে মাঝে মধ্যে দুটি দলের যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। মানুষ বুঝে গিয়েছে এই রাজ্যে তোমাদের কিছু নেই।” আর এরপরই রেশন ডিলারদের উদ্দেশ্যে আক্রমণ সানিয়ে অনুব্রত মণ্ডল মন্তব্য করেন, অনেক ডিলার দুই দিনের বেশি রেশন সামগ্রী দেন না।

এমন অভিযোগ আমার কাছে ভুরিভুরি এসেছে। অঞ্চল সভাপতিরা শুনুন, সপ্তাহে চারদিন রেশন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। যদি কোনো গরীব মানুষ এই সপ্তাহে 2 টাকা কেজি চাল তুলতে না পারে, তাহলে পরের সপ্তাহে একসঙ্গে তা নিতে পারে। পাশাপাশি তিনি বলেন, “রানা সিং ডিএম অফিসে গিয়ে এই সার্কুলার জারি করে 167 টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ঢেঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে দাও, সপ্তাহে চারদিন রেশন দোকান খোলা থাকবে। কি কি মাল পাবে, তার লিস্ট ধরিয়ে দাও। সেইমতো সামগ্রী না পেলে ডিলারের বিরুদ্ধে কেস করুন। দরকারে আমরা সেই ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দোকান সিস করে দেব।”

কিন্তু দলীয় মঞ্চ থেকে এই ধরনের বক্তব্যকে রীতিমতো কটাক্ষ করেছেন বিরোধীদলগুলো। এই বিষয়ে বীরভূম জেলা সিপিএম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মন বলেন, “দলীয় মঞ্চ থেকে সরকারি নির্দেশ দেওয়া যায় কিনা, তাই নিয়ে তৃণমূল তোয়াক্কা করে না।” পাশাপাশি অনুব্রতবাবুর উদ্দেশ্যে সুর চড়িয়ে সঞ্জীব বাবু মন্তব্য করেন, “যে পরামর্শ উনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন, তা আসলে চোর কে বলছে চুরি করো, আর গৃহস্থ কে বলছে সজাগ থাকো।” অন্যদিকে আবার বীরভূম জেলার মুরারইয়ের রাজগ্রাম এলাকায় পাথরবোঝাই ওভারলোড লরি আটকে ধরে জোর করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ ওঠে কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। যার পরে লরি মালিকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অনুব্রত মণ্ডলের পার্টি ফান্ডের নাম করে ওই যুবকরা টাকা আদায় করছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দিন রাজগ্রাম এলাকার পাথর শিল্পাঞ্চলে যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় মালিকেরা।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে প্রশাসনের তরফ থেকে অভিযান চালাতে যাওয়া হলে প্রশাসনিক কর্তারা রীতিমতো আক্রান্ত হন। প্রশাসনিক কর্তাদেরকে মারধর করার পাশাপাশি তাদের গাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে রীতিমত ভাঙচুর করার ঘটনা সামনে আসে। বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অনুব্রতবাবু বলেন, “ট্রাক মালিকরা ঝামেলা করছে, তার জন্য কেস রয়েছে। 10 জন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিরাও গ্রেফতার হবে।” শুধু তাই নয়, তার নাম করে টাকা তোলার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “আমার নাম করে বীরভূম জেলার সবাই টাকা তোলে। ট্রাক মালিক, পার্টির লোক, সাংবাদিকরাও আমার নাম করে টাকা তোলে।”

কিন্তু অনুব্রতবাবু সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্য করে এহেন মন্তব্যকে রীতিমতো নিন্দা করেছেন বীরভূম প্রেস ক্লাবের সম্পাদক সুরজিৎ ঘোষ হাজরা। এদিন এই প্রসঙ্গে সুজিতবাবু বলেন, “সাংবাদিকরা তাদের কাজ করেন। শাসক বা বিরোধী দল যাই হোক না কেন, তাদের খবর অপছন্দ হলেই সাংবাদিকরা টার্গেট হয়ে যায়। এটা চিরকালই হয়ে এসেছে। এখানেও সেটাই হচ্ছে‌। তিনি বলেন, “প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি।”

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, অনুব্রতবাবুর কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য অতীতেও বহুবার শোনা গেছে। সেই কারণেই বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতির কাছে এই ধরনের মন্তব্য শুনে বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা আর ততটা আশ্চর্য হন না। কিন্তু নিজের মন্তব্যের মধ্যে সংবাদমাধ্যমকে এই ধরনের অভিযোগ করা কতটা প্রাসঙ্গিক! তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিশ্লেষকদের মধ্যে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!