প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের শুরুর পর্ব থেকে 2020 এর শেষ পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী কিন্তু তৃণমূলের অন্যতম নেতা হিসেবে বিবেচিত হতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাল কাটে এবং শুভেন্দু অধিকারী ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হতে হতে তৃণমূল শিবির থেকে নিজেকে টেনে বার করে নেন এবং ঘাসফুল ফেলে দিয়ে তিনি হাতে তুলে নেন পদ্মফুল। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী গেরুয়া শিবিরে যোগদান করার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে প্রবল জল্পনা- তাহলে কি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার অন্যতম মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হয়ে উঠতে চলেছে শুভেন্দু?

কিন্তু না- শুভেন্দু অধিকারী নিজেই সমস্ত জল্পনার অবসান করলেন এদিন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে এক দলীয় সভায়। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন বিধানসভা নির্বাচনে তিনি লড়াই করতে ইচ্ছুক নন, পরিবর্তে তিনি দলের হয়ে কাজ করবেন। এদিন শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে তিনি রাজ্য থেকে তৃণমূল সরকারের বিসর্জন চান। তার জন্য যা করার তিনি তাই করতে প্রস্তুত। এদিন শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহের পদক্ষেপের কারণে রাজ্যজুড়ে পাচার চক্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে শুভেন্দু বিজেপি দলে যোগদান দিয়েই যে অভিযোগ তুলেছিলেন, তারই পুনরাবৃত্তি করলেন এদিন।

এদিন সভামঞ্চ থেকে সরাসরি অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে উল্লেখ করে শুভেন্দু বলেন “তোলাবাজ ভাইপোর হাত থেকে বাংলাটাকে বাঁচান”। স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্যের জেরে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও শুভেন্দুর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা দিয়েছেন। বরাবরই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে যিনি বলে আসছেন, সেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তীব্র কটাক্ষ করে শুভেন্দুকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, শুভেন্দু কি নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে পারছেন? এর পরেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বলেন- হলদিয়ার মানুষ ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছে তোলাবাজ কে?

এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীকেই যে অন্যতম তোলাবাজ হিসেবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত করেছেন সে কথা একবাক্যে বলে দেওয়া যায়। অন্যদিকে এদিন পূর্বস্থলীর সভায় ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপির সাধারণ কর্মী হিসেবেই পরিচয় দেন তিনি সর্বসমক্ষে। তবে শুভেন্দুর ভূয়সী প্রশসা শোনা যায় এদিন রাজ্য বিজেপি সভাপতির গলায়। যে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাত ধরে তৃণমূল রাজ্য রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য স্থানে এসেছিল, সেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কৃতিত্ত্বের অংশীদার এদিন বিজেপিকে করে দিলেন শুভেন্দু। শুভেন্দু এদিন দাবি করেন, লোকসভা-রাজ্যসভা অচল করে নন্দীগ্রাম গণহত্যা দিল্লিতে পৌঁছে দিয়েছিল শুধুমাত্র বিজেপি।

2011 সালে তৃণমূলের সরকার গড়ার পেছনেও যে বিজেপির হাত, সেকথাও ব্যাপকভাবে জানান শুভেন্দু। এদিন তিনি দাবি করেন, গেরুয়া শিবিরের নেতারা 2011 সালে মানুষের কাছে আবেদন রেখেছিলেন হয় বিজেপি, না হলে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার জন্য। তাহলে পারতপক্ষে বাংলার ক্ষমতা দখলের পিছনে যে গেরুয়া শিবিরের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে সে কথা এদিন সভা মঞ্চ থেকে তুলে ধরেন শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী এদিন তৃণমূল সরকার সম্পর্কে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে এনেছেন। তাঁর মতে, এই মুহূর্তে তৃণমূল শিবির হয়ে গিয়েছে একটি প্রাইভেট কোম্পানি। এ কথা বলে তিনি প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর সংস্থা আইপ্যাকের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে রাজ্যজুড়ে চাকরির হাহাকার প্রসঙ্গেও শুভেন্দু মুখ খুলেছেন এদিন। এদিনের সভা থেকে রাজ্য বিজেপি সভাপতিও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রাজ্য প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই চমকে গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারী গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ামাত্রই তাঁর গলায় যেভাবে তৃণমূল শিবিরের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। তবে যেভাবে শুভেন্দু অধিকারী এদিন নিজেকে গেরুয়া শিবিরের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিলেন তাতে মনে করা হচ্ছে, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসাবে শুভেন্দু অধিকারী অন্যতম সম্পদ হয়ে উঠতে চলেছেন বিজেপির। তবে শুভেন্দু একুশের নির্বাচনে লড়তে চান না বললেও রাজ্য রাজনীতিতে কিন্তু কৌতূহল বিন্দুমাত্র কমার নয়। বরং সবার নজর এখন টিকে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী ঘোষণার দিকে।