এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ২

বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ২


সোমেস্বরবাবু নীরার বিয়ে দেবার কথায় রাজি হতেই নীরার মুখ কালো হয়ে এলো। তবে কি পড়াশোনা সব শেষ, আর চাকরি করার ইচ্ছা, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ?মেয়ের মনের ভাব বুঝতে অসুবিধা হয়নি সোমেস্বরবাবুর। তিনি স্ত্রীকে বললেন তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন তবে একটা শর্তে – মেয়ে বিয়ের পরেও পড়বে – আর চাকরি করবে। যে রাজি হবে সেইখানেই বিয়ে।
অতসীদেবী না করলেন না।

স্কুল থেকে এসে সন্ধেবেলায় সোমেস্বরবাবু চা খেতে খেতে জানালেন তিনি স্কুলে তাঁর সতীর্থদের জানিয়েছেন যে তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে চান। তেমন পাত্র থাকলে জানাতে। তবে তাদেরকে তাঁর শর্তের কথাও জানাতে ভোলেন নি। নীরার সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই কেননা নীরা আর ইরা ওই স্কুল থেকেই পড়েছে। ফলে তারা সবটাই জানেন। মুখ বেকালেন অতসীদেবী। তীব্র কন্ঠে বললেন, কত কাজ করেছে। কেউ দেখেনি মেয়েকে, তারা হাজার খানেক ছেলে ওনার পায়ে এনে ফেলবে! চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে থমকে গেলেন সোমেস্বরবাবু। বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন – চেনাজানা যারা আছে তাদেরকে তো বললাম আবার কি করবো?

স্ত্রী মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন – তারা তো দেখেছে তোমার কালো মেয়েকে। কোন রাজপুত্র আসবে জেনে শুনে এমন এমন কালো মেয়েকে বিয়ে করতে? সোমেস্বরবাবু বাড়ি ফিরলে প্রত্যেকদিন সোমেশ্বরবাবু,নীরা, ইরা, অতসীদেবী একসঙ্গে চা খেতেন। এদিন তার অন্যথা হয়নি। ফলে সকালেই উপস্থিত।মায়ের কথা শুনে নীরার মুখটা কালো হয়ে গেলো। তবুও চুপ করে বসে রইলো। কোনো কথা বললো না। ইরা বললো মা পাগল হয়ে গেছে। চোখ পাকালেন অতসীদেবী। চেঁচিয়ে বললেন – যেদিন মা হবে সেদিন বুঝবি। তোদের সবসময় ভালো চাইছি, তোদের কথা চিন্তা করছি তো তাই মা পাগল। কি বলেছি রে আমি? পাগল বললি, বল,বল।

ইরা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। তার আগেই সোমেস্বর বাবু চেঁচিয়ে বলে উঠলেন ঠিক বলছে ইরা। সোমেস্বরবাবু বরাবর শান্ত খুব কম রাগ করেন। তাই তাঁর এ হেনো চিৎকারে স্তম্ভিত সকালেই। তিনি বলে উঠলেন। তুমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো।নিজের পেটের মেয়েকে যা খুশি বলছো দিনরাত। একবার ভেবেছ ওর কি হচ্ছে ? ও কোথায় যাবে। তুমি ওর মা। তুমি তো ওকে বুকে করে আগলে রাখবে। এবার কেঁদে ফেললেন অতসীদেবী। গলা নিচু করে বললেন- আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। আমি তো অমন আমার এখানকার চেনা জানা লোককে বললাম সবাই তো না করে দিলো।সবার এক কথা মেয়ে কালো। ইরা বলে উঠলো বাস আর পাত্র সব শেষ হয়ে গেলো পৃথিবীতে। মুখ ঝামটা দিয়ে অতসী দেবী বললেন – চুপ কর বলে দিচ্ছি ,এরপর সোমেস্বরবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন – ওকে তো তোমার স্কুলের সবাই চেনে তারা কি করবে ?সেই তো এক কথা বলবে।

ইরা মুখ বেকিয়ে বললো – কিসে আর কিসে? তোমার পাড়ার ওই কাকিমা জেঠিমারা আর স্কুলের স্যারেরা। কাকিমা জেঠিমা যাদের কাজ হচ্ছে লোকের নিন্দা করা, এর কথা ওকে লাগানো, ওর কথা তাকে লাগানো তারা কি বলেছে সেই নিয়ে পৃথিবী তোলপাড়। এবার অতসীদেবী কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন সোমেস্বরবাবু ফের বললেন ইরা ঠিক বলছে। অতনু (স্কুলের শিক্ষক ) বললো যে তার কে একটা চেনা জানা আছে তারা ভালো মেয়ে খুঁজছে। আমি বলছি দেখছি। অতসীদেবীর মুখে হাসি ফুটলো। তথনকার মতো সব মিটলো।

কদিন পর অতনুবাবু পাত্র নিয়ে দেখতে এলেন।পাত্র, পাত্রের দাদা-বৌদি, দিদি আর অতনুবাবু। মেয়ে দেখে পাত্রের দিদি বললেন অতনুবাবুকে সামনাসামনি বললেন ও কাকু গায়ের রং যে বড্ডো কালো? ঘর ভর্তি নিস্তব্ধরা। সকালের পাশাপাশি অতনুবাবুও চমকে নিয়েছিলেন। কেননা যিনি বললেন কথাটা তাঁর গায়ের রং কালোই। আর তাঁকে পার করতেও তাঁর বাবাকে বেজায় কাঠ খড় পোয়াতে হয়েছে। এনারা অতনুবাবুর দূর সম্পর্কের আত্মীয় হন। অতনুবাবু কিছু লুকাননি। মেয়ের রং চাপা সেকথাও বলেছেন , ভেবেছিলেন যেহেতু পাত্রের বাড়ির লোক আর যাই করুক রং নিয়ে মাতামাতি করবে না। কিন্তু হিতে বিপরীত। এই পাত্রও না করলো। অতনুবাবু বার বার সোমেস্বরবাবুর কাছে ক্ষমা চাইলেন। আরো এমন করে কজন পাত্র এলো কিন্তু সম্মন্ধ কোথাও পাকা হলো না।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অতসীদেবী বললেন এবার কাগজে বিজ্ঞাপন দিতে। বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য সোমেস্বরবাবু রাজি হলেন। বিজ্ঞাপন খানিকটা এমন — পঃ বঃ কায়স্থ, বাংলায় এম এ, ২৩/ ৫’৩,সুশ্রী শ্যামবর্ণ , বিবাহের পরেও আরো পড়াইতে ও চাকুরী করাইতে ইচ্ছুক উপযুক্ত পাত্র চাই , জাতিগত কোনো বাধা নাই। সব ঠিক আছে। কিন্তু ”শ্যামবর্ণ” কথাটায় বেজায় আপত্তি তুললেন অতসীদেবী। তাঁর দাবি লিখতে হবে ফর্সা। সোমেস্বরবাবু রাজি হলেন না। অনেক যুদ্ধ করেও যখন কিছু হলো না। ঠাকুর হলেন শেষ ভরসা। এতে এলো কয়েকজন। কারুর মুখে বড্ডো কালো। কেউ বলে কালো অসুবিধা নেই তবে বিয়েতে একটু খরচ করতে হবে।  এর মাঝে যে পাড়া প্রতিবেশী এতদিন ছেলে খোঁজার ভয়ে লুকিয়ে ছিলেন তারাও প্রকট হলেন। অ ,,, এখানেও হলো না , অনেক কজন তো এলো। আহা গো, আমরা তো বলাবলি করছি আসলে কালো তো। কেউ উপদেশ দিলেন – একটু বেকার ছেলে দেখো। ঠাকুরপোকে বলো টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা খুলে দিতে দেখবে হয়ে যাবে। অতসীদেবীকে স্বান্ত্বনা দিতে থাকলেন – কি করবে বলো রংটা তো কালো , ভেবোনা ঠিক হয়ে যাবে। সেখানেও হলো না। সোমেস্বরবাবু ঘোষণা করলেন তিনি এখন বিয়ে দেবেন না।  মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ালে আপনি ছেলে পাওয়া যাবে। আর তেমন হলে ও নিজে দেখে করবে। অতসীদেবীর হাজার মাথা খোঁড়াতেও কাজ হলো না।

এর মধ্যেই সুমন্তদের বাড়ি নতুন ভাড়াটে এসেছেন প্রকাশ বাবু। তাঁর মেয়েকে সোমেস্বরবাবু পড়াচ্ছেন। ভালো মানুষ নীরাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে। সুমন্তদের বাড়ি নীরাদের বাড়ির পাশেই। ওদের দোতালার বারান্দা আর নীরাদের বারান্দা সামনাসামনি। সুমন্তর মায়ের হাঁটুর ব্যাথা তাই তাঁরা একতলায় থাকেন আর দোতালাটা ভাড়া দিয়েছেন প্রকাশবাবুদের। প্রকাশ রায়। বয়স আন্দাজ ৩৮-৪০ হবে। সোমেস্বরবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সীমা কাকু কাকিমা বলেন। প্রকাশের স্ত্রী সীমা খুব মিশুকে। সীমার সাথে নীরা আর ইরার বেশ ভাব হয়ে গেছে।

এর মাঝেই একদিন প্রকাশবাবু সোমেস্বরবাবুকে এক প্রস্তাব দিলেন। প্রকাশবাবুর মাসির ননদের ছেলে আছে। ছেলে ভালো চাকরি করে। একভাই একবোন। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে – দিদি জামাইবাবু দুজনেই চাকরি করেন। ছেলের বাবাও চাকরি করতেন রিটায়ার্ড করেছেন। কলকাতায় বাড়ি, গাড়ি। স্বছল পরিবার। ছেলের বাবা মা ভালো মানুষ। তারা ভালো মেয়ে খুঁজছে।নীরার কথা তাদেরকে বলেছেন প্রকাশবাবু। তারা রাজি। সোমেস্বরবাবু যদি হ্যাঁ বলেন তাহলে ওদের আসতে বলবেন নীরাকে দেখতে। সোমেস্বরবাবু আগের অভিজ্ঞতা মনে করে না করে দিলেন। অতসীদেবী নাছোড়বান্দা -দেখে যাক। হাতে আসা লক্ষী পায়ে কোনো মতেই ঠেলবেন না তিনি। অর্থাৎ তাদরেকে আসতে বলা হলো।

ছেলের বাবা মা এলেন না। ছেলে আর তার দিদি এলো। ছেলের নাম অবিনাশ, দেখতে এককথায় রাজপুত্র। এতদিনের এত অভিজ্ঞতা নিয়ে ছেলেকে দেখা মাত্রই নীরার বাড়ির লোক হাল ছেড়ে দিলেন। এ ছেলে কোনো মতেই এই মেয়েকে পছন্দ করবে না।অতসীদেবী ভাবলেন এবারেও হলো না।সোমেস্বরবাবু ভাবলেন শুধু শুধু সময় নষ্ট। ইরা ভাবলো শুধু শুধু টাকা খরচ করে মিষ্টি খাওয়ানো হচ্ছে। আর নীরা তার মুখটা কালো। আবার মুখের উপর কালো বলে না করে দেবে। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে নীরাকে দেখার পর ছেলের দিদি ছেলের সাথে একটু একা কথা বললেন ও জানালেন তাদের মেয়ে পছন্দ। সাথে এও জানালেন ছেলের যখন পছন্দ তখন বাবা মা আর না করবে না। সুতরাং মেয়ের বাড়ি যেন ছেলের বাড়ি দেখতে যান। যদি তাদের পছন্দ হয় তবে এখানেই বিয়ে হবে। সোমেস্বরবাবুরা এরপর ছেলের বাড়ি গেলেন তাদের পছন্দ। সুতরাং বিয়ে ঠিক হলো।

ঠিক হলো অবিনাশের বাবা মা পরে একবার দেখে যাবেন। কিন্তু হটাৎ পরে গিয়ে পা ভেঙে ফেললেন অবিনাশের মা। ফলে বিয়ে আরো পিছল। সুতরাং বিয়ে ৪ মাস পরে হবে। ইতিমধ্যে অবিনাশের জামাইবাবুর আসেনি নীরাকে দেখতে। তাই ঠিক হলো যেদিন গায়ে হলুদের শাড়ী কেনা হবে সেদিন নীরা আর ইরা কলকাতা যাবে। সেখানে অবিনাশ, অবিনাশের দিদি ও জামাইবাবু থাকবে। একসঙ্গে দোকানে যাবে। নীরাও নিজের পছন্দ বলবে আর সেই মতো শাড়ী কেনা হবে। আর জামাইবাবুর সাথেও দেখা হয়ে যাবে। উত্তম প্রস্তাব – সকালে রাজি হলো। তবে সে এখনো ঢের দেরি। কেননা এত আগে থেকে বিয়ের কেনাকাটা করে কি হবে বিয়ের কিছুদিন আগে কিনলেই হবে। এদিকে অবিনাশ সোমেস্বরবাবুর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নীরার ফোন নম্বর নিয়েছে। কথা হচ্ছে দুজনের মধ্যে। এদিকে বিয়ের প্রস্তুতির সাথে সাথেই নীরা পিএচডির প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুই তিন জায়গায় পড়তে, নোট নিতে এইসব কিছু নিয়েও ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। এদিকে এই বছর গরমও পড়েছে। এই নিয়েই বেশ চলছে।

গল্পের আগের অংশ  –  বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ১

 

 

পরের পর্ব  – বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৩

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!