এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ১২

বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ১২


আজ মনটা খুব ভালো আছে ধ্রুবর। ভোর রাতে ও আজ স্বপ্ন দেখেছে নীরাকে নিয়ে। বিয়ে হচ্ছে ওদের।একটা লাল বেনারসি পড়েছে নীরা। ধ্রুব সিঁদুর পরালো, নাকেও পড়লো সেই সিঁদুর। খুব সুন্দর লাগছে নীরাকে। কি একটা বলতে গেলো নীরা, তার আগেই ঘুম ভেঙে গেলো আর ঘুম আসেনি। ধ্রুবর মা বলে ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। কিন্তু ধ্রুবও ওসব মানে না। ধ্রুব বরাবরই খুব বিচ্ছু ছিল। বাড়ির সাথে যে বড় বাগান আছে , তার পিয়ারা গাছে শুয়ে শুয়ে পিয়ারা খাওয়াটা খুব শখের ছিল। আর সেই গাছে উঠতে গিয়ে হাত, পা ভেঙেছে, হাত পা মচকেছে। মার্ খেয়েছে বাবা, জ্যাঠার কাছে। সত্যি আগে মনের সুখে পেটাতো তার পর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত বাড়ির বড়োরা। তখন খুব রাগ হতো ধ্রুবর। আজ ওগুলো স্মৃতি, ভাবলেই হাসি পায়। বাড়িতে সবাই ওকে  ‘হনুমান, বাঁদর, বলে ডাকতো। এখন বড় হয়ে গেছে বড়রা আর সেই সব নাম ধরে না ডাকলেও সেজদা এখনো বাঁদর বলে ডাকে। মানা করে লাভ হয়নি, বেড়েছে বই কমেনি।এখন অভ্যাস হয়ে গেছে ধ্রুবর।

সেজদার  এখনো বাঁদর বলার কারণ হচ্ছে – বাড়ির লোকেরা যখন গাছে ওঠা থেকে কিছুতেই ধ্রুবকে আটকাতে পারতো না ,তখন বাড়ির ছেলেমেয়েদের দ্বায়িত্ব ছিল ধ্রুবকে আটকানো। পালা ছিল সবার। না পারলেই ধ্রুবর সাথে তারাও মার্ খেত। সেজদা বেশি মার্ খেত এই নিয়ে। সেজদা খেতে খুব ভালোবাসে, ধ্রুব তার ভাগের মাছ ডিম্ খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে গাছে উঠতো। আর সেটা কেউ দেখতে পেলেই ধ্রুবর পাশাপাশি মার্ খেত সেজদাও। আর যেহেতু ধ্রুব মার্ খেয়ে নিয়েছে তাই প্রমিস করা মাছ, ডিমের ভাগটাও দিতো না।

পাড়ার একটা ছেলে সুজয় সেটা শুনে ইস্কুলে বলে দিয়েছিলো, বন্ধুরা রোজ খেপাতো ধ্রুবকে । আর ধ্রুবর সব রাগ গিয়ে পড়তো সুজয়ের উপর। ভাবতো মারবে ,কিন্তু সাহসে কুলাতো না, বেশ মোটাসোটা ,পেল্লায় চেহারা ছিল সুজয়ের। একদিন ভোরবেলা স্বপ্ন দেখেছিলো বিশাল শক্তি হয়ে গেছে ধ্রুবর। সুজয়কে খুব মেরেছে ধ্রুব। ওই পেল্লাই চেহারা নিয়েও কিছু করতে পারেনি সুজয়। মায়ের কথায় ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। তাই ইস্কুল থেকে আসার সময় সুজয়কে মারতে গিয়েছিলো কিন্তু সুজয়ের হাতে ভীষণ মার্ খেয়েছিলো। জামা ছিঁড়ে, হাত পা কেটে বাড়ি এসেছিলো। সুজয়কে মারতে গিয়ে নিজে মার্ খেয়ে এসে কষ্টের শেষ ছিল না ধ্রুবর। বাবা জানতে পেরে আরো পিটিয়েছিল। – নাহ – সুজয়কে মারতে গিয়েছিলো বলে নয়। সুজয়ের হাতে মার্ খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এসেছে বলে। বাবার কথা ছিল – মার্ খেয়েছিস, বদলা নিয়ে মেরে বাড়ি ঢুকবি। বাকি আমি সামলাবো। মায়ের আঁচলের তলায় বসে বাতাস খাওয়া যাবে না। বলে ১০ দিনের সময় দিয়েছিলো, ১০ দিনের মধ্যে যদি না মারতে পারে ধ্রুবকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। জ্যাঠুদের,কাছে নালিশ করে লাভ হয়নি। বকা খেয়েছিলো ধ্রুব। কাকা তো আর কাঠি ওপরে। ঘা কতক ধরিয়ে দিয়েছিলো। বাবার নামে নালিশ করছে বলে। আর জেঠিমারা, মা, কাকিমা সব তো ভয় পায় বাবা, কাকাদের ফলে কেউ কিছু বলবে না। পাশে দাঁড়িয়েছিল দাদারা। নানা প্রস্তুতি নিয়ে সুজয়কে মেরে নাক ফাটিয়ে আসতে হয়েছিল ধ্রুবকে। অবশ্য দাদারাই সেই ট্রেনিং দিয়েছিলো কি করে কারুর নাক ফাটানো যায়। সুজয়ের বাবা ঝামেলা করেছিল,কিন্তু বাবা খুব খুশি হয়েছিল সব নিজেই সামলেছিলো। বলতে গেলে স্বপ্ন কিছুটা সত্যি হয়েছিল। কিন্তু ধ্রুবকেও তো মার্ খেতে হয়েছিল। তার পর আর কিছু এমন স্বপ্ন সত্যিই হয়েছিল কিনা মনে নেই ধ্রুবর।

আজ মনে হচ্ছে যদি মায়ের কথাটা সত্যিই হয়। যদি ওর সাথে নীরার বিয়ে হয়। নীরা যদি সত্যি ওর হয়ে যায়। সকালে উঠেই স্নান করা ধ্রুবর অনেকদিনের পুরোনো অভ্যাস।চান করে একটু ম্যাগি বানিয়ে খেলো ধ্রুব। মেইল এসেছে অনেকগুলো সেগুলো দেখা হয়নি কদিন। সেগুলো খুলে দেখতে দেখতে ফোনটা হাতে নিয়ে নীরার সেই ছবিটা দেখলো। এই নিয়ে অনেকবার দেখলো ফটোটা। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ইরা ফোন করেছে। কি বলবে আবার খেপিটা? ফোন তুলে বললো – বল।

ওপাশ থেকে কাঁদো কাঁদো গলায় ইরা যা বললো, ধুবর মাথায় বাজ পড়লো। ধ্রুবদা, সর্বনাশ হয়ে গেছে, দিদি সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। কি বলছে ইরা ? আর্তনাদ করে ধ্রুব বলে উঠলো -কি? কি কি করেছে নীরা ? কেমন আছে ?

ইরা চুপ করে আছে কোনো উত্তর দিচ্ছে না। ইরা? ইরা? কথা বলছে না কেন? ফোন কেটে গেলো।

সকালের আনন্দ ভরা মনটা , ভয়ে আতঙ্কে ভরে গেলো। কি? কি করেছে নীরা? কেমন আছে ও এখন? সঙ্গে সঙ্গেই ইরাকে ফোন করলো ধ্রুব। না ফোন তুলছে না। দুবার, তিনবার , পাঁচবার- কেউ ফোন তুললো না। কি করবে এবার ধ্রুব। দাদাভাই- হুম দাদাভাইকে কল করলো। উফফ ফোন বেজে যাচ্ছে , কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না। কেন? কি করছে। তবে কি বাড়াবাড়ি রকমের কিছু একটা করেছে নীরা? হসপিটালে নিয়ে গেছে ওকে ? আর ভাবতে পারছে না। সীমাকে কল করলো – নাহ, দিদিও ফোন তুলছে না। বার বার ফোন করছে ধ্রুব। কেউ ফোন তুলছে না। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কিছু মাথায় আসছে না ওর। ল্যাপটপের বাগে ল্যাপটপ, ওয়ালেট ঢুকিয়ে নিয়ে। জিন্সের প্যান্টটা পরে নিলো ধ্রুব। ভীষণ টেনশন হচ্ছে। হাত পা কাঁপছে ধ্রুবর।ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে ছুটলো রাস্তায় দিকে। ক্রমাগত ফোন করে যাচ্ছে ধ্রুব। কেউ ফোন তুলছে না। টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে ধ্রুবর।

 

ট্রেনে গেলে হবে না। গাড়ি নিলো একটা। ড্রাইভার জানালো অনেক বেশি লাগবে। সব করতে রাজি ধ্রুব। গাড়ি ছুটলো নীরার বাড়ির দিকে। গাড়িতে যেতে যেতেও প্রকাশকে কল করলো ধ্রুব। ফোন তুলে প্রকাশ শুধু বললো – ধ্রুব ,খুব ব্যাস্ত আছি , পরে কথা বলছি। কেটে দিলো।দাদাভাই ,দাদাভাই শোনো। ততক্ষনে ফোন কেটে দিয়েছে। একটু তাড়াতাড়ি চলুন দাদা, খুব ইমার্জেন্সি ড্রাইভারকে বললো ধ্রুব। গাড়ির স্পিড বেড়ে গেছে অনেকটাই। সাথেই ধ্রুবর মনের ভয়টাও – সব শেষ হয়ে যাবে না তো। না না নীরার কিছু হলে ধ্রুব বাঁচবে না। অবিনাশের উপর রাগ হচ্ছে। নীরার যদি কিছু হয়ে যায় ধ্রুব অবিনাশ ,ওর দিদি জামাবাবুকে খুন করে নিজেও মরবে। ভগবান কেন ইরার কথা শুনলো না সে। কেন গেলো না ও ? আচ্ছা নীরার বাড়ির লোকজনই বা কি? কেন এইসময় নীরাকে একা রেখেছিলো। গোটা শরীর কাঁপছে ধ্রুবর।  সব শেষ হয়ে যায়নি তো ? ফোন করলো এবার সীমাকে – সীমা ফোন তুললো – ধ্রুব শুনতে পেলো কাকিমা কাঁদবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাই তোকে পরে কল করছি বলেই কেটে দিলো। সব ঠিক হয়ে যাবে বললো দিদি – তার মানে নীরা, মানে যতটা খারাপ ভাবছিলো ততটা খারাপ কিছু হয়নি।নীরা এখনো ঠিক আছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

প্রকাশ বললো – ইয়েস , আসছে শালা , হর্ন দেওয়ার আওয়াজ পেয়েছি। কথা বলের সময় শো শো শব্দ পেয়েছি।

সীমা শালা শুনে – ইসশ ইরার সামনেই গালাগালি দিচ্ছ?

প্রকাশ- গালাগালি কেন? ও তো আমার শালাই হয়।

ইরা লাফিয়ে উঠে বললো – সত্যি, আসছে মনে হলো তোমার।

প্রকাশ – হুম , তবে এখনো ১ ঘন্টা ২০ মিনিট লাগবে কম করে, জ্যাম ট্যামে পড়লে আর একটু বেশি হতে পারে। তবে ধরে রাখ ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট হবে ম্যাক্সিমাম।

সীমা প্রকাশকে বললো – শুনছো গলা শুনে বোঝা যাচ্ছে খুব টেনশন হচ্ছে ভাইয়ের। ওকে সত্যি বলে দিলে হয়না , বেচারা।

প্রকাশ – হুম , তারপর সব কিছু শেষ হয়ে যাক , সে আবার আমাদের গালাগালি দিতে দিতে বাড়ি ফিরে যাক। আর শোনো সব তোমার ভাইয়ের জন্য করছি। আমি আর একটা বিয়ে করবার জন্য করছি না এইসব।

সীমা – বাবা রে, এই লোকটার মুখে কিছু আটকে না।

আচ্ছা আমি উঠছি এখন। অনেক্ষন এসেছি। ধ্রুবদা এলে আমি আসবো বললো ইরা।
প্রকাশ – হুম , একটা কাজ করবি, তোদের মেন্ দরজা বন্ধ রাখবি , দেখবি যেন
তোদের বাড়ির কেউ বাইরে না আসে। নীরা যেন বারান্দায় না আসে। আমি আর ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটে বাইরে গিয়ে দাঁড়াবো , ব্যাটা এলেই এখানে নিয়ে আসবো। তুই লক্ষ্য রাখবি – এলেই তুইও চলে আসবি।

ইরা ‘ ওকে’ বলে চলে যেতে গিয়েও থমকালো। বললো দাদাভাই – ফোনটা যে আমি করেছিলাম, ধ্রুবদা যখন জানবে মিথ্যা বলেছি………….

প্রকাশ – তাতে কি ? আমার কথাই তুই কল করেছিস ? আমার উপর ভরসা আছে তো। আচ্ছা শোন্ তুই ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট বাদে নীরাকে নিয়ে চলে

আসব। এখানে দিদিকে ? বললো ইরা

হুম- নীরার ও জানা দরকার ,

ইরা – আচ্ছা।

ক্রমাগত ফোন বাজছে। প্রকাশ, সীমা, ইরা কেউই ফোন তুলছে না।

 

আগের পর্ব – বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ১১

 

পরের পর্ব-  বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ১৩

 

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!