এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৪

বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৪


পটেটো প্যানকেক সত্যি ভালো হয়েছে। কিভাবে বানানো হলো এই সব কথাবার্তা হলো কিচ্ছুক্ষন। খাওয়া শেষ করে নীরা সীমাকে বললো – দিদি আসছি। আর ধ্রুবর দিকে চোখ তুলে ‘আসছি’ বলেই চোখ নামিয়ে নিলো। খুব আস্তে বলেছিলো। কিন্তু কথাটা কেমন যেন মনের ভিতরে লাগলো ধ্রুবর। ও নীরার দিকে তাকিয়ে বললো হুম। এদিকে ইরা ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো – এই যে পালাবে না। আমাদের বাড়ি যাবে কিন্তু। নাহলে তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ। ভাবটা এমন যেন কত দিনের  চেনা জানা। ইরা বরাবরই এমনি। ধ্রুব বললো – অজ্ঞে ম্যাডাম আছি। আমার ঘাড়ে কটা মাথা যে না বলে পালাবো। নীরা ইরা বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। সীমা খাবারের ফাঁকা ট্রে নিয়ে ফের রান্না ঘরের দিকে গেলো। ধ্রুব জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।রাস্তায় নীরা আর ইরা যাচ্ছে। যথারীতি ইরা কি সব বলছে আর নীরা মাথা নেড়ে চুপ করতে বলছে। ইরা তবুও বলে যাচ্ছে। ধ্রুব একটু হাসলো। দেখলো ইরা উপরে তাকাচ্ছে – সরে এলো। তারপর আনমনে কি ভেবে সীমার কাছে গিয়ে কি একটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেলো।

 

এদিকে সীমাদের বাড়ি থেকে আসতে আসতে ইরা নীরাকে বললো – ইসস তোর সাথে যদি ধ্রুবদার বিয়ে হতো। কি ভালো হতো। একেবারে আমার মনের মতো। মানে যেমন আমি তোর বরকে চাইতাম আর কি। এই দিদি অবিনাশের সঙ্গে বিয়েটা কেঁচিয়ে দেব। ধ্রুবদাকে বলবো তোকে বিয়ে করতে। নীরা চুপ করতে বলছিলো। ইরার থামার কোনো লক্ষণ নেই দেখে একটু বিরক্ত হয়ে বললো- এত কেন বাজে বকিস বল তো। অবিনাশ ঠিকই বলেছে। ইরার মাথা গরম হয়ে গেলো রেগে গিয়ে বললো – তুই মর, এখুনি পারলে গলায় দড়ি দে। কেননা যে বাড়িতে তোর বিয়ে হচ্ছে আজ নাহয় কাল তোকে মরতেই হবে।মানসিক রোগী সব। মুখ বেকিয়ে বললো – শুধু আমরা এই আমরা সেই – ছাগল। নীরা চোখ পাকিয়ে বললো ‘আবার ‘ এবার ইরার আরো রাগ বাড়লো। দিদিকে বললো -বাব্বা অবিনাশ ,ওর বাড়ির নামে কিছু বলা যাবে না। সব তো বিয়ের পর ছেড়ে দিতে হবে – না লিখে থাকতে পারবি? বললি তো অবিনাশকে – এমন ভাব দেখালো যেন রবীন্দ্রনাথ , শরৎচন্দ্র, নজরুল এদের থেকেও বড় লেখক। মর তুই।

 

নীরা -কালো রূপের আড়ালে চোখ দুটো যেমন মনের সব কথা বলে। ঠিক তেমনি চোখ ভরা স্বপ্ন, মনের ভেতরে অনেক প্রেম, যা প্রকাশ হয় তার ‘স্বপ্নের চোখ ‘ এ। হুম একমাত্র এই জগৎ সংসারে ইরাই জানে নীরা গল্প লেখে – প্রেমের গল্প, জীবনের চাওয়া পাওয়ার গল্প। নিজের দেখা স্বপ্নগুলো ,নিজের পূর্ণ না হওয়া ইচ্ছাগুলো, না পাওয়া গুলো প্রেমের গল্প হয়ে ডানা মেলে ওড়ে ‘স্বপ্নের চোখ ‘ ফেইসবুক পেজে। হ্যাঁ যে পেজটার কথা একটু আগেই ধ্রুব বলছিলো। যার এত প্রসংসা করছিলো ধ্রুব – সে যে নীরা।লেখায় কমেন্ট এ অনেকে প্রসংসা করে লেখার। কিন্তু সামনাসামনি না আজ পর্যন্ত হয়নি। যদিও ধ্রুব জানে না যে নীরাই লেখে তবুও তাঁর লেখার কথাই তো বলছে। আজ ‘অজানা সুখ’ গল্পটার শেষ অংশ দেওয়ায় কথা ছিল। ভেবেছিলো সন্ধেবেলা লিখে পোস্ট করবে কিন্তু সীমাদের বাড়িতে আটকে পড়লো। ভালোই তো হলো – নীরার লেখা পড়ার জন্য কেউ এত অধীরভাবে বসে থাকে ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেলো নীরার। পরক্ষনেই মনে পড়ল ইরার  কথাটা – ” সব তো বিয়ের পর ছেড়ে দিতে হবে, না লিখে থাকতে পারবি?” কেউ জানে না নীরা গল্প লিখতো। ইরাই জোর করে ফেসবুকে পেজ খুলিয়ে গল্প পোস্ট করিয়েছে। অনেক লোক তার গল্প পরে, প্রসংসা করে। মনে হলো যদি অবিনাশ বুঝতো – মনটা ভারী হয়ে এলো।

 

বাড়ি এসে ইরা বাবার কাছে পড়তে বসলো। নীরা ঘরে গেলো। নীরা আর ইরা এক ঘরেই থাকে। তাই অবিনাশের সঙ্গে কি কথা হচ্ছে, নীরার গল্প লেখা সব কিছু যেমন ইরা জানে তেমনি ইরার সব খবরই নীরা পায়। সেদিন অবিনাশের সাথে নীরার কথাও শুনেছে ইরা। সেদিন নীরা অবিনাশকে জিজ্ঞাসা করেছিল অবিনাশ এইসব গল্প, কবিতা পড়ে কিনা? অবিনাশ জানিয়েছিল পরে তবে সব ইংলিশ। নীরা বলেছিলো ‘স্বপ্নের চোখ ‘ বলে একটা ফেইসবুক পেজ আছে সেখানে গল্প পোস্ট হয়। ভালোলাগে নীরার পড়তে। অবিনাশ লিংক পাঠাতে বলেছিলো। প্রমাদ গুনেছিলো নীরা। ভেবেছিলো অবিনাশ অন্যদের মতোই প্রসংসা করবে আর তখন সারপ্রাইস দিয়ে নীরা বলবে ওটা ওর পেজ – গল্পগুলো ওই লেখে।অবাক হয়ে যাবে অবিনাশ। না তেমন কিছু হয়নি। উল্টো হয়েছিল। অবিনাশ কড়া ভাবে জানিয়েছিল – অত্যন্ত কাঁচা হাতের লেখা। কে এইসব লেখে কে জানে , অবিনাশ গল্প লেখে না। লিখলে এর থেকে অনেক ভালো লিখতো। অত্যন্ত চিপ লেখা।তারপর জিজ্ঞাসা করেছিল নীরার আবার এইসব রোগ আছে কিনা, কেননা অবিনাশ চায়না তার বৌ ঐসব ন্যাকা ন্যাকা গল্প লিখুক। গলা বুজে এসেছিলো নীরার। মুখে বলেছিলো লেখেনা। যা নিয়েই তীব্র আপত্তি ইরার।

 

এত কিছু অমিল অবিনাশের সাথে নীরার তবুও নীরা অবিনাশ ছাড়া আর কিছু যেন ভাবতেই পারে না। আজকাল পড়তো বসলেও মন দিয়ে পড়তে পারে না। শুধু অবিনাশের কথা ভাবে। অবিনাশ নীরাকে যে দু চোখ ভরিয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছে, দেখাচ্ছে সেগুলো। তার জন্য সাধের লেখাটাও ছাড়তে পারবে নীরা। নীরার জীবনে অবিনাশই প্রথম পুরুষ – প্রথম ভালোবাসা। অবিনাশ যে তার মনটা দেখে তাকে আপন করে নিতে চলেছে। তার রূপ নয় নীরাকে ভালোবাসে অবিনাশ। অবিনাশ বলেওছে সে কথা নীরাকে। ইরা যখন রাগ করেছে অবিনাশকে নিয়ে। নীরা অবিনাশের এই সমস্ত কথা বলেওছে ইরাকে। ইরা কিছুতে মানবে না। মুখ বেকিয়ে বলেছে – ন্যাকা সষ্টি। তুই ওই নিয়েই থাক। হ্যাঁ, নীরা সত্যি অবিনাশকে নিয়েই থাকে। সর্বক্ষণ ভাবে এখন অবিনাশ কি করছে ? খেয়েছে? বাড়ি এসেছে ? নীরার কথা ভাবছে ? অবিনাশের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে চায় নীরা। এতদিনের এত অপমান কান্না হয়ে জমা হয়ে আছে নীরার বুকে। সব কিছু উজাড় করে দিতে চায় নীরা। ইরা যে সীমাদির ভাই ধুবকে নিয়ে ইয়ার্কি করছিলো সত্যি রাগ হচ্ছিলো নীরার। অবিনাশের জায়গায় আর অন্য কাউকে ভাবতেই পারবে না নীরা। কখনো নয়। আর ভাববেই কেন? আর তো কদিন পরেই অবিনাশ আসছে নীরাকে নিজের করে নিতে।

 

এই ভাবতে ভাবতেই রাত হয়ে গেলো। খেয়ে এসে ভাবলো বাকি গল্পটা লিখবে ভালো লাগলো না শুয়ে পড়লো। শুয়েও নীরার ঘুম এলো না।অবিনাশকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে, স্বপ্নের জাল বুনতে বুনতে ভোর হয়ে এলো। এদিকে পাশের বাড়ির দোতালায় নীরার ঘরের সোজাসুজি একটা ঘরেও একজনের চোখে ঘুম আসছে না। বার বার মনে পড়ছে নীরার মুখটা। আর মনে পড়ছে “স্বপ্নের চোখ ” ফেইসবুক পেজ। এখনো যে কেন গল্প দিলো না।বার বার খুলে দেখেও কোনো আপডেট না পেয়ে নেট অফ করে দিলো ধ্রুব।  দুই বাড়ির দুই জন সারা রাত জেগে রইলো। বিধাতা ছাড়া আর কেউ জানলো না।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

বার বার নীরার গভীর চোখ দুটো মনে পড়ছে। মজার ছলে ইরার কথাটা -” যদি বিয়েটা কেঁচিয়ে দিতে পারো তাহলে কিছু হলেও হতে পারে। ধ্রুবকে অনেকবার ওর বাবা মা, দিদি অনেকবার বলেছে কিন্তু বিয়ে সে এখন কিছুতেই করবে না। আপাতত ইচ্ছা নেই। না প্রেমটেমের কোনো ব্যাপার নেই। আজ পর্যন্ত কারুর সাথে জড়ায়নি। অনেক সম্বন্ধ এসেছে কিন্তু ধ্রুব এখনিই বিয়ে করবে না। অবশ্য পাশে আসছে দাদাভাই প্রকাশ। প্রকাশের মত কতটুকু বয়েস আর ২ বছর যাক। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে দেখে এমন মনে হয়নি, কিন্তু আজ নীরাকে দেখে ওর কথাতে যেটুকুও বলুক সত্যি মন ছুঁয়ে গেছে। বার বার মনে পড়ছে ওই মুখটা। হঠাৎ মনে হলো ইরার কথা মতো যদি বিয়েটা কেঁচিয়ে দেওয়া যায়। অবিনাশকে কল করে। ……….. পরক্ষনেই সম্বিৎ ফিরে এলো ধ্রুবর। নিজেকে থাবড়াতে ইচ্ছা করছে। ছি ছি , একটা সাধারণ মেয়ে – যাকে মাত্র কয়েক মিনিট দেখেছে , যার কিনা দু দিন পর বিয়ে তাকে নিয়ে এইসব ভাবছে। সত্যিই মাথা গেছে। পরক্ষনেই মনে হলো নীরা সত্যিই কি সাধারণ? এরপরেই নিজেকে শাসন করে ভাবলো- অনেক হয়েছে এইসব ফালতু কথা ভেবে সে রাতের ঘুমটা নষ্ট করবে না।  জল খেয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। না ঘুম আসছে না ,শুধু ওই মুখটা। আচ্ছা জ্বালাতন তো …………….

 

আর কেউ খুশি হোক না হোক ধ্রুবর এই অবস্থা দেখে খুশি ও সাহায্য করতে পারতো একমাত্র ইরা। কিন্তু ধ্রুবর তেমন কোনো ইচ্ছা নেই। সুতরাং এইখানেই ব্যাপারটাকে যা হোক করে স্টপ করতে হবে। হাতে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে বারান্দায় এলো ধ্রুব। সিগারেটটা মুখে নিয়ে দেশলাইটা জ্বালাতে যাবে এমন সময় সামনের বাড়ির বারান্দায় চোখ পড়লো। সেই মুখটা। যে এতক্ষন ধ্রুবকে জাগিয়ে রেখেছে। ভগবান – পাগল হয়ে যাবো , বলে চোখ বন্ধ করে ঘরের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো ধ্রুব। পরক্ষনেই ভাবলো ঠিক দেখলো তো। ………..আজ দুপুরেই এসেছে ধ্রুব। এসে খেয়ে  খুম দিয়ে উঠতে না উঠতেই সীমা নীরাদের সাথে পরিচয় করতে ডেকেছে। ফলে ওই বাড়িটাই যে নীরাদের সেটা নিয়ে কথা হয়নি। রাত্রে হয়তো খাবার সময় কথা হতো। কিন্তু দাদাভাই এর সাথে দেখা হলো অনেক দিন পর এটা সেটা কথা বলতে বলেই সময় পেরিয়ে গেলো।

 

গল্পের আগের পর্ব  – বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৩

 

পরের পর্ব  –  বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৫

 

 

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!