এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ১০

বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ১০


চলুন একবার, আমাদের হিরোর হাল কি জেনে নিই। সে তো পালিয়ে গেলো কিন্তু পালতে পারলো কি?

ধ্রুব চললো তাদের গ্রামের বাড়ি। ট্রেনে নীরার সাথে প্রথম দেখা থেকে শুরু করে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সব কিছু মনে পড়ছে। অস্থির লাগছে। কেন এলো সে? ওখানেই তো ভালো ছিল। মনে প্রশ্ন জাগলো আচ্ছা যখন নীরা জানতে পারবে ধ্রুব চলে গেছে। ওর থেকে অনেক দূর, কিছু মনে হবে ওর? একবার ও থমকে দাঁড়াবে? কোনোদিন মনে পড়বে আমাকে ওর? ট্রেন এতকিছুর খবর রাখলো না। নিজের বেগে ছুটে চললো। ঈশানপুরে আজকেও অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল ট্রেনটা। যদি নীরা আসতো তাকে খুঁজতে ? ১ ঘন্টা পর নিজের স্টেশন বেলাপুরে ট্রেন থামলো। ট্রেন থেকে নামলো। রিকশা করে বাড়ি গেলো।ধ্রুবদের বাড়ি জয়েন্ট ফ্যামিলি। ধ্রুবর বাবাও নীরার বাবার মতোই এখানকার স্কুল টিচার। ধ্রুবর বাবার চার ভাই। ধ্রুবর বাবা সেজো। আর ভাই বোনেদের বিয়ে যে গেছে। বাড়িতে ধ্রুবই একা বিয়ে হতে বাকি আছে। জ্যাঠতুতো, খুড়তুতো দাদা দিদিরা সব কেউ বোম্বে, দিল্লি, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, বেঙ্গালুরু তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর দুই দাদা বাড়িতে থাকে। ছোট কাকুর মেয়ে আছে সে ছোট। বাড়ি সর্বক্ষণ গমগম করছে।

অন্যবারের মতো দাদাদের ছেলে মেয়েরা এবারেও ছুটে এলো ধ্রুবর কাছে। ধ্রুব প্রত্যেকবার চকলেট আনে মনে করে। এবার? মন মনে আছে ওর? অনেক কান্ড করে বোঝালো ওদেরকে। এত লোকের মাঝেও ভালো লাগছে না। ধ্রুবদের বাড়িতে সর্বক্ষণ হাসি ঠাট্টা তামাশা চলছে। এত লোকের মাঝেও যেন সব ফাঁকা। ধ্রুবর ভেতরে শুধু ঝড়। ঠিক করলো কলকাতা চলে যাবে। বিকালের ট্রেন ধরে কলকাতা চলে গেলো। কলকাতায় ডাক্তার দেখতে যেতে হয় আবার ফিরে আসা ঝামেলা। বয়েস হচ্ছে।এতগুলো লোক যাবে, থাকবে। তাছাড়া ছেলে ফিরে এসে কলকাতায় যদি থাকে সেই ভেবে তাই ধ্রুবর বাবা কলকাতার ফ্লাট কিনে রেখেছে।একটা ৩ বেডরুম ফ্লাট, বেশ বড়। বড় ফ্লাট ,খোলামেলা। অন্যবার এলে ভালো লাগে। এবার যেন ওকে গিলতে আসছে। ভালো লাগছে না, কিছু ভালো লাগছে না।

পরের দিন কাটলো তেমনি খারাপ লাগা নিয়ে ,কেননা ধ্রুব জানে আজ অবিনাশের সাথে নীরা শাড়ী কিনতে যাবে। অনেক ঘুরবে ওরা। সারাদিন এই সব ভাবতে ভাবতেই শেষ হয়ে গেলো। বাড়িতে ওই ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দেয়। সীমাকেও পৌঁছে গেছি বলে ফোন করে দিয়েছিলো আর ফোন করে নি ধ্রুব। সে নীরার বিয়ে ভাঙার কথা কিছুই জানে না।

ফেইসবুক খুলে বার বার দেখছে , না স্বপ্নের আলোতে কোনো আপডেট নেই। কেন? কি হলো নীরার ? লিখছে না কেন? সব ঠিক আছে তো? একবার মনে প্রশ্ন জাগলেও ইরার কথা মনে পড়লো। ইরা বলেছিলো অবিনাশ পছন্দ করে না নীরা লিখুক। ভালো – এখন থেকেই ছেড়ে দিলে? পুরোনো গল্পগুলোই পড়তে লাগলো ধ্রুব। এই করেই কাটছে ধ্রুবর।

নীরাদের পাড়ার খবর জানবেন না? ঝড়ের বেগে খবরটা পৌঁছালো। যারা এতদিন মুখ বেকিয়ে কথা চুপচাপ কোনো মতে গিলছিলেন। তাঁরা ফের এলেন। নীরার মাকে অনেক কথা বললেন। আহা তাদের তো দুঃখ হয়। কেউ বললেন আহা গো , কত গর্ব করছিলে ? হলো না। কেউ বললেন – শোনো অতসী। এবার চোখ কান বুজে যেখান হোক লাগিয়ে দাও। বোস গিন্নি বললেন – একটা কথা বলছি অতসী, কিছু মনে করোনা। নজরটা একটু নিচু করো। সবার তো আর হিরে মানিক জোটে না। আর থাকতে পারলো না ইরা। বললো আপনারা আজ আসুন। আমাদের একটু একা থাকতে দিন।অন্যসময় হলে অতসীদেবী মেয়েকে কিছু বলতেন কিন্তু আজ চুপ। কি বলবেন ? যারা এসেছিলেন মুখ বেঁকাতে বেঁকাতে চলে গেলেন। ইরার খুব রাগ হচ্ছে ধ্রুবর উপরে। আজ যদি ধ্রুব মুখ খুলতো তাহলে এত কষ্ট পেতে হতো না। দিদির মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। একটা বিশাল ঝড়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে নীরা সেটা নীরাকে দেখলেই যে কেউ বলে দেবে।

দুদিন পর লুকিয়ে দিদির একটা ফটো তুললো ইরা। ফেসবুকে ম্যাসেজে ধ্রুবকে পাঠিয়ে দিলো ফটো। সঙ্গে লিখলো ” তোমার জন্য সুখবর, দিদির বিয়েতে আর আসতে হবে না। দিদির শ্রাদ্ধের কার্ড পাঠিয়ে দেব এসো কিন্তু।”

ধ্রুব কিছুক্ষন পর দেখলো একটা ম্যাসেজ এসেছে। দেখলো ইরা। খুলে দেখেই চমকে গেলো? কি চেহারা হয়েছে নীরার ? কেন? কি হয়েছে ? শ্রাদ্ধের চিঠি? কি এসব ? ফোন করলো ইরাকে। ইরা প্রথমে তুললো না। ফের ফোন করলো ধ্রুব।

ইরা ফোন তুলে বললো কি হয়েছে? খুশির খবর পেয়ে গেছো তো।

ধ্রুব রেগে বললো জাস্ট শুট ইওর মাউথ। তারপরেই উদ্বিগ্ন গলায় বললো – কি হয়েছে নীরার ? ওকে এমন দেখাচ্ছে কেন? সেদিনের শাড়ী কিনতে যাওয়ার সময় থেকে পর পর সব কথা বললো ইরা। সাথেই বললো তুমি যদি সেদিন আমার কথা শুনতে এমন হতো না।

ধ্রুব – নীরাকে চোখে চোখে রাখিস।

তুমি আসবে না ধ্রুবদা ? ইরা জিজ্ঞাসা করলো।

আমি একটু ব্যাস্ত পরে কথা বলছি বলে ফোন কেটে দিলো ধ্রুব।

 

এবার আরো কষ্ট হচ্ছে ধ্রুবর। কি করে পারলো অবিনাশ এমন করতে নীরার সঙ্গে। নীরা যে ওকে ছাড়া কিছু ভাবেনা। অবিনাশের উপর খুব রাগ হচ্ছে ধ্রুবর। একবার ভাবলো যাবে, নীরাকে জড়িয়ে ধরে বলবে আমি আছি তো, আমি ভালোবাসি তোমায়, পরক্ষনেই মনে হলো না যাবে না। যদি নীরা ভাবে ধ্রুব সুযোগ নিতে এসেছে। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। কখনো ভয় করছে , যদি নীরা এটা সামলাতে না পারে। যদি কিছু একটা করে বসে। নীরার কিছু হয়ে গেলে আর বাঁচবে না ধ্রুব।অন্য সময় মনে হচ্ছে যদি কোনো দিন নীরা অবিনাশকে ভুলে যায়, যদি কোনোদিন ওর কাছে আসে। এমন হাজারটা প্রশ্ন উত্তর মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কাল রবিবার, মনে পড়লো আগের সপ্তাহে এই দিনেই নীরার সাথে সে এতটা সময় কাটিয়েছিলো,নীরা জড়িয়ে ধরেছিলো। আজ ও একেবারে একা। কাল রবিবার, পরশু থেকে নতুন অফিস। ধ্রুব ভেবে নিয়েছে নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখবে।

 

 

আগের পর্ব – বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৯

 

 

পরের পর্ব – বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ১১

 

 

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!