এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৭

বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৭


কিছুক্ষন পর -নীরা? বলে নীরার কাঁধটা ধরে ঝাঁকালো ধ্রুব। একরাশ সন্দেহ, কষ্ট, জল ভরা দুটো চোখ ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুব নীরার মুখটা দুই হাতে তুলে তার কাছে ঝুঁকে বললো আমি সত্যি বলছি মেসোমশাইয়ের কিছু হয়নি , প্লিজ বিশ্বাস করো। নীরা ধ্রুবর দুই চোখে সত্যিটা খুঁজছে।খুব কাছাকাছি ধ্রুব আর নীরা। খুব কাছাকাছি। ধ্রুব ফের বললো তোমাকে আমি মিথ্যা বলবো না নীরা, সত্যি সব ঠিক আছে।

নীরা জিজ্ঞাসা করলো সত্যি বলছেন ?

ধ্রুব বললো  – হুম সত্যিই বলছি, মেসোমশাই তোমার কোনো পিসির বাড়ি গেছেন রাইট , নীরা বললো হুম ছোট পিসুর বাড়ি গিয়েছিলো কিন্তু ফিরে আসার কথা । ধ্রুব বললো হাওড়ায় অনেক ট্রেন ক্যানসেল হয়ে গেছে তাই আজ উনি বাড়ি আসেননি। আর দাদাভাই বাড়ি নেই তাই আমি এসেছি। প্লিজ বিলিভ মি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে ফোন করো ইরাকে? ধ্রুব নিজের ফোনটা বের করে নীরার হাতে দিলো। নীরারও এই সময় মনেও থাকলো না যে ওরও একটা ফোন আছে। ফোনটা দিয়েই নীরার হাত থেকে ফের ফোনটা নিয়ে বললো ইরার নম্বর বলো।

এদিকে এর মধ্যেই আর একটা সর্বনাশ হতে যাচ্ছিলো। জোর বেঁচে গেলো ধ্রুব। নীরা যদি আজ ধ্রুবর ফোনটা খুলতো তাহলে নিজের ছবি দেখতে পেতো। যেটা ডিলিট করতে গিয়েও পারেনি ধ্রুব। ফোনটা পকেটে ভরে নিয়েছিল। নীরা নম্বর বলতে বলতেই হঠাৎ আবিষ্কার করলো ও ধ্রুবর কতটা কাছে চলে এসেছে । ছিটকে সরে গেলো, সরে এলো ধ্রুবও। কথা হলো ইরার সঙ্গে। শান্ত হলো নীরা। পাশেই একটা চায়ের দোকান ছিল। দোকানে থাকা গুটিকয়েক লোক হা করে দুজনকে দেখছিলো। নির্ঘাত ভেবেছে প্রেমে ছ্যাঁকা, ছেলেটা বদ, মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে চাইছে তাই মেয়েটা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।  চিনবে বলে মনে হয়নি কেননা ঈশানপুর স্টেশন থেকে বেশিদূর আসেনি ওরা। তবুও রিস্ক নেওয়া যায়না। আছে তো সব পাগল লোকজন, তিলকে তাল করতে দুবার ভাববে না। নিজের জন্য ভাবে না। কিন্তু নীরা ? হেলমেটটা পরে নিয়ে নীরাকে বললো গাড়িতে ওঠো চটপট। ফের যাত্রা শুরু হলো।

এবার নীরার খুব লজ্জা করছে। এই প্রথম নীরা বাবা ছাড়া অন্য কাউকে জড়িয়ে ধরেছিলো। একজন অচেনা অজানা মানুষকে কি ভাবলো নীরাকে? ছিঃ ছিঃ আচ্ছা যদি এটা অবিনাশ জানতে পারে ভুল বুঝবে না তো নীরাকে। ভয়ে কাঠ হয়ে গেলো নীরা। গাড়ি এগিয়ে চললো। ধ্রুব আর আগে কি হবে জানে না কিছুই। শুধু এগিয়ে চললো। নীরা যখন জড়িয়ে ধরেছিলো কিছু ভাবতে পারছে না ধ্রুব। ভালো লাগছে না কিছু।শুধু একটাই প্রশ্ন ? কেন? এমন সময় বেশ জোরেই বৃষ্টি নামল। গোটা রাস্তা জুড়েই চায়ের দোকান কিছুটা অন্তর অন্তর। রাস্তার পাশেই একটা চায়ের দোকানে দাঁড় করাল বাইকটা। দু চারজন লোক ছিল। নীরা আর ধ্রুব ভেতরে গেলো। ঘুমটি কিন্তু একটু বড়।ভেতরে নীরাকে একটা বাঁশের বেঞ্চে বসতে বলে অন্যদিকে আর একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো। দোকানদার একটু বয়স্ক। ধ্রুব বললো কাকু দুটো চা দিন। নীরা আপত্তি করেছিল। কিন্তু যতক্ষণ না বৃষ্টি ছাড়ছে ততক্ষন তো আর বাড়ি যাওয়া হবে না তাই চা টা নিলো।

নীরা বসে বাইরের বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখছে।ধ্রুব চা নিয়ে বসলো। এক চুমুক দিয়ে হাতে ধরে রাখা হেলমেটটা বেঞ্চে নামিয়ে রাখতেই ধুয়ে রাখা কাঁচের গ্লাসের দিকে চোখ গেলো। নীরাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখানে। তাকিয়ে রইলো। হাতের চা টা হাতেই রইলো। মনে হলো নীরা কি ভাবছে ? ওকে জড়িয়ে ধরার কথা? নাকি অবিনাশের কথা? আচ্ছা কোনোদিন ওর ধ্রুবর কথা মনেও পড়বে। ধ্রুব বলে কেউ ছিল – হয়তো না। এমন সময় একজন উঠে চা নিতে গেলো। ধাক্কা লাগলো তার হাতের গরম চা টা পড়লো ধ্রুবর হাতে। আহ বলে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে পড়লো। সে সরি দাদা , আমি খেয়াল করিনি বলে ক্ষমা চাইলো। হাতে সত্যিই লেগেছে ধ্রুবর, বেশ জ্বলছে জায়গাটা। নীরা ধ্রুব হাতটা ধরে টেনে নিয়ে গেলো চায়ের কাপ ধোবার জায়গাটায়। নীরার হাতে জলের জগ। ধ্রুবর হাতে জল ঢালতে লাগলো। ধ্রুব ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে , কি করে বেরোবে ও এর থেকে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ হাতটা সরিয়ে নিলো। নীরা বললো কি হলো? আর একটু জল দিন জ্বালা কমে যাবে। ধ্রুব বললো – নাঃ ঠিক আছে। আর জড়াবে না কিছুতেই ? কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা কি? তিনি কি ভাবছেন? কে জানে সে তো বিধাতাই জানে।

 

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

মনটা বসে যাচ্ছে ধ্রুবর।বেঞ্চে গিয়ে বসলো। ফের আর এক চাপ চা দিলো দোকানের কাকু। এফ এম এ গান বাজছে। মনটা আরো ভারী হয়ে যাচ্ছে ধ্রুবর। এমন সময় একটা লোক ঢুকলো দোকানে।দেখতে ভারীক্ষে চেহারা। গায়ে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ঢুকু ঢুকু পড়েছে পেটে, সে নীরার দিকে দেখছে। চোখের চাহুনি মোটেই ভালো নয়। নীরার পাশে একেবারে প্রায় নীরার গায়ে গা ঠেকিয়ে বসলো।নীরা চমকে উঠে পড়লো। ভয়ে ছুটে এসে নীরা একেবারে ধ্রুবর গায়ে গা ঠেকিয়ে বসলো। ধ্রুবর পিঠে নিজের মুখ লোকাল। ধ্রুব মুখে কিছু বললো না। লোকটার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে লোকটাকে দেখিয়ে নীরার হাতটা শক্ত করে ধরলো। লোকটা বোধ হয় এতক্ষন খেয়াল করে নি ধ্রুবকে। এবার ভালো করে দেখলো ধ্রুবকে। লম্বা, রীতিমতো কসরত করা চেহারা। ভয় পেলো মনে হয়। মাথা নিচু করে বসে রইলো। আবার খুব কাছাকাছি নীরা আর ধ্রুব।এফ এম এ অরিজিতের গান বাজছে – হামারি আধুরি কাহানি। কি আশ্চর্য মিল। হাসলো ধ্রুব। ঠিক সময়ে ঠিক গান।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় ১১ টা বাজছে না আর দেরি করা যাবে না। এই লোকটার মতো অনেকে আছে এতটা দেরি করাও উচিত হয়নি। ফোন টা বেজে উঠলো ধ্রুবর। বাড়িতে সবাই চিন্তা করছে। প্রকাশ ফোন করেছে কতদূরে জিজ্ঞাসা করছে। নীরা বললো কোথায় এসেছে। বৃষ্টি, চায়ের দোকান সব কিছু। প্রকাশ জানালো প্রকাশ আর পাড়ার একটা ছেলে আসছে ওদের নিতে। কেননা অনেক রাত হয়ে গেছে। বেরিয়ে পড়লো ওরা। রাস্তায় দেখা হলো প্রকাশ আর ভরতের সঙ্গে।পাশেই থাকে ভরত। নীরা ধ্রুবকে কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেলো।

বাড়ি চলে এলো। প্রকাশ নিজের বাইক নিয়ে বাড়ি গেলো। ভারতও বাড়ি গেলো। ধ্রুব সোমেশ্বরবাবুর বাইকটা গ্যারেজে রেখে দিলো। নীরা দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা আসতেই ইরা আর ওর মা বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো। নীরার মা ধ্রুবকে বললো ভেতরে এস। নীরা ওর মাকে নিজের ব্যাগটা দিয়ে বললো এটা নিয়ে ভেতরে যাও। ওনাকে আর ডেকো না মা। পুরো ভিজে গেছেন ,এই কাপড়ে বেশিক্ষন থাকলে শরীর খারাপ করবে।নীরার মা ধ্রুবকে অনেক আশীর্বাদ করে কালকে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভেতরে গেলেন। ইরা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো নীরা ইরাকে বললো একটু জল নিয়ে আয়। দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে নীরা বললো যা না। ইরা বললো তুই তো ভেতরে যাবি গিয়ে খাবি। নীরা বললো যা না। ইরা ঘরে গেলো বটে কিন্তু দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলো। নীরাকে ধ্রুব গাড়ির চাবি আর হেলমেটটা দিলো। আবার হাতে হাত ঠেকলো। ধ্রুব ভাবলো এই শেষবার। ছোঁওয়া তো দূর, কদিন পর চলে যাবে ধ্রুব আর ওকে হয়তো কোনোদিন দেখতেও পাবে না।

নীরা চাবিটা নিয়ে বললো – একটা কথা বলছি।

ধ্রুব জানে কি বলবে নীরা। আমি তুমি ছাড়া আর কেউ জানবে না। প্রমিস। বাই – গুড নাইট বলে বাড়ির দিকে হাটতে লাগলো ধ্রুব।

নীরা দাঁড়িয়ে রইলো। ধ্রুব আর তাকাবে না পিছনে,কোনো পিছুটান রাখবে না আর। সোজা বাড়ির দিকে চলে গেলো। পারলো না ফিরে তাকালো নীরা দাঁড়িয়ে তখনও।

প্রশ্ন জাগলো কেন এখনও দাঁড়িয়ে আছে নীরা ?
তারপর মনে হলো শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতা। বাড়ির ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলো।

 

 

আগের পর্ব –  বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৬

 

 

 

পরের পর্ব  – বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৮

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!