একদিকে করোনা ভাইরাসকে সামলানো এবং অন্যদিকে ভয়াবহ দূর্যোগ সামলানো, এই দুইয়ের মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। তবে নানা বিষয় তুলে ধরে সেই রাজ্য সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করছে ভারতীয় জনতা পার্টি। বর্তমানে ভিনরাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে একসাথে ব্যাপক শ্রমিক রাজ্যে পাঠানোয় পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাই এমতাবস্তায় এবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে এই ব্যাপারে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক প্রধান। যেখানে তাকে বিপাকে ফেলতে বিজেপি রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, বুধবার নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাকে পলিটিকালি ডিস্টার্ব করতে গিয়ে কেউ কেউ বাংলার সর্বনাশ করতে চাইছেন। রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলেই করোনা জর্জরিত মহারাষ্ট্র থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ রাতের মধ্যে 11 টা ট্রেন আসছে। কাল আসবে আরও 17 টা। পরিযায়ী শ্রমিকরা আমাদের ঘরের লোক। কিন্তু সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, তাই পরিকল্পনা করে 235 টি ট্রেনের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকা মানা হল না! রেলমন্ত্রকের কোনো দায়িত্ব থাকবে না! গায়ের জোরে সব চালিয়ে দেওয়া হবে!”

অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, একসাথে এত শ্রমিক রাজ্যে এলে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। তাই এই সময় ধীরে ধীরে শ্রমিকদের পাঠানো উচিত। কিন্তু তা না করে যেভাবে একবারে পাঠানো হচ্ছে, তাতে তাকে অসুবিধায় ফেলার জন্যই বিজেপি এই কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হলেন তিনি। যাকে কেন্দ্র করে এখন রাজনৈতিক মহলে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন।

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “একসঙ্গে কয়েক লাখ শ্রমিক ফিরলে সামলাবে কি করে! আমার কথা না হয় ছেড়ে দিন, কেন্দ্র নিজে পারবে এত লোককে কোয়ারেন্টাইন করতে? আগে বলিনি। আজ বলছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেদিন ফোন করেছিলেন, সাফ বলেছিলাম, ঘনঘন টিম পাঠাচ্ছেন, আমরা যখন করোনা প্রতিরোধ করতে পারছি না, আপনারা দায়িত্ব নিন। তখন উনি বলেছিলেন, নেহি, চুনে হুয়ে সরকার কো ক্যায়সে তোড়ে!”

এদিকে এরপরই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালই আচ করতে পারছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। তাই বাইরে থেকে শ্রমিকরা এখন রাজ্যে ফেরা শুরু করায় তাদের শরীরেও যে সংক্রমণ বাসা বেধেছে এবং সেই ব্যাপারটি নিয়ে যে রাজ্যকে চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তা বুঝতে পেরে এবার ধীরে ধীরে শ্রমিকদের পাঠানোর ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানালেন তিনি। সব মিলিয়ে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আবেদন কেন্দ্র কতটা গুরুত্ব সহকারে দেখে, তার দিকেই নজর থাকবে সকলের।