এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > বেনজিরভাবে দেশের জিডিপি পতন, প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার

বেনজিরভাবে দেশের জিডিপি পতন, প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – করোনা মহামারী আটকাতে প্রায় 68 দিনের লকডাউন ছিল দেশে। দুঃখের বিষয়, করোনা সংক্রমণ সেভাবে আটকাতে না পারলেও দেশের অর্থনীতি কিন্তু রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সোমবার প্রকাশিত হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান। যেখানে দেখা যাচ্ছে জিডিপির ব্যাপকমাত্রায় পতন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গত তিন মাসে দেশের অর্থনীতির যেভাবে নজিরবিহীন পতন হয়েছে তা বোধহয় গত 40 বছরেও দেখা যায়নি। দেশের বিরোধীরাও এই নিয়ে মুখর হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, দেশজুড়ে লকডাউন এর ধাক্কাতেই এই ব্যাপক পতন। গত এপ্রিল থেকে জুন এর ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে জিডিপির বৃদ্ধি 23.9 % আর্থিক সংকোচন হয়েছে।

যা অত্যন্ত চিন্তার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, 2019-20 অর্থবছরের শেষ থেকে এখনো পর্যন্ত জিডিপি প্রায় কুড়ি শতাংশ কমে গেছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আগেই এই জিডিপি পতনের অনুমান করে রেখেছিলেন। অন্যদিকে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, লকডাউন এর জেরে সমস্ত শিল্প এবং ব্যবসা যেভাবে বন্ধ হয়ে গেছে তাতেই এই সংকোচন। অন্যদিকে আমেরিকা, জাপান, বৃটেনের উদাহরণ দিয়ে মোদি সরকার জানিয়েছে- তাঁদের দেশের জিডিপি পতনের হার আরো বেশি। কিন্তু দেশের তাবড় অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পতন এখানেই থামবে না। আগামী বেশ কয়েক মাস এই অর্থনীতির সংকোচন অব্যাহত থাকবে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত তিন মাসে নতুন লগ্নি 47% কমেছে, যা ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম হলো বলে মনে করা হচ্ছে। আসুন, দেখে নেওয়া যাক জিডিপির সংকোচন কোথায় কতটা হয়েছে। জিডিপির মোট সংকোচন হয়েছে 23.9%, উৎপাদন শিল্পে 23.3%, নির্মাণ শিল্পে 50.3%, হোটেল, পরিবহণ, যোগাযোগ শিল্পে 47%, আবাসন আর্থিক, পরিষেবা 5.3%, সরকারি প্রশাসন, প্রতিরক্ষায় 10.3 শতাংশ এবং খনি ও খাদানে সংকোচন এর মাত্রা 23.3%। তবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক দাবি করেছে, আনলক পর্ব থেকেই দ্রুতগতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। দেশের আনলক পর্ব চলার মধ্যেই কিন্তু দেখা গেল আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রেই সংকোচন হয়েছে। জুলাইয়ের পরিকাঠামো শিল্পের 9.6% উৎপাদন কমেছে।

এছাড়াও অন্যান্য উৎপাদনেরও একই হাল। তবে বলা হচ্ছে, এই লকডাউন পর্বে একমাত্র খাদ্যপণ্য এবং ওষুধ ছাড়া বাকি সবেরই উৎপাদন বন্ধ ছিল। অন্যদিকে এপ্রিল-জুনে সবক্ষেত্রে সংকোচন হলেও কৃষিক্ষেত্রে কিন্তু বৃদ্ধি হয়েছে 3.4%। এ প্রসঙ্গে চিদম্বরম প্রধানমন্ত্রী মোদিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘মোদী সরকারের উদাসীন মনোভাবের জন্য দেশকে মূল্য চোকাতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর উচিত চাষিদের ও তাঁদের উপরে ভগবানের আশীর্বাদকে ধন্যবাদ জানানো।’’ অন্যদিকে আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যন যুক্তি দিয়েছেন এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দেশের শুধু নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে লকডাউন চলছিল। কিন্তু আনলক পর্ব শুরু হতেই অর্থনীতির সংকোচন কমতে শুরু করেছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ এখনই নিশ্চিত হতে পারছেননা। তাঁর মতে জুলাই-সেপ্টেম্বরেও জিডিপি 12-15% কমবে। একই কথা বলছেন আর্থিক মূল্যায়ন সংস্থা আইসিআরএর মুখ্য অর্থনীতিবীদ অদিতি নায়ার। তাঁর মতে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপির সংকোচন অব্যাহত থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে সংকোচন এর মাত্রা কিছুটা কম, বেশী হলেও হতে পারে বলে তিনি জানান। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক জিডিপির সংকোচনের ব্যাখ্যা দিয়ে জানাচ্ছেন, দেশের বর্ষার মৌসুম ভালো না হলে এবং কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি মিলে খাদ্য সুরক্ষা, জনসাস্থ্য এবং 100 দিনের কাজে নগদ, ভর্তুকিতে টাকা না ঢাললে অর্থনীতির সংকোচন আরো বেশি হতো।

দেশের অর্থমন্ত্রক এর মতে সবথেকে বেশি সংকোচন হয়েছে দেশের বাজারে বা কেনাকাটায়। সেখানে 27% সংকোচন দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে লকডাউন এর প্রভাবে রাজস্ব আদায়ও নিম্নমুখী এই সময়। মোটামুটি গত চারমাস ধরেই রাজকোষের ঘাটতি গোটা বছরের রাজকোষ ঘাটতির সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য শুনে ও দেশের অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, দেশের অবস্থা কিন্তু এর থেকেও খারাপ। কারণ কর্পোরেট সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের ছবি পুরোপুরি ধরা পড়বে না এবং লকডাউনে সবথেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছে অসংগঠিত ক্ষেত্র যে কারণে পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ হারিয়েছেন।

দেখা যাচ্ছে মার্চ মাসে ও দেশের বেকারত্বের হার ছিল 8.75% এবং 30 আগস্ট পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, বেকারত্বের হার 8 শতাংশের ওপরে। অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অন্য আশঙ্কা করছেন। তাঁদের মতে যেভাবে জিডিপি সংকোচন হয়েছে এবং এই সংকোচন যদি জারি থাকে, তাহলে খুব সম্ভাবনা সরকারিভাবে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়ার। মনে করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের মন থেকে ভবিষ্যতের আয় নিয়ে যতক্ষণ না শংকা কাটবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা আর অনাবশ্যক খরচ করতে সাহসী হবেন না এবং বাজারেও ক্রেতার চাহিদা ফিরবে না। আর চাহিদা না থাকলে যোগান অবধারিতভাবেই কমতে থাকবে। সব মিলিয়ে দেশের সামনে যে এই মুহূর্তে একটি কঠিন অবস্থা এসে হাজির হয়েছে সে ব্যাপারে একমত সবাই।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!