এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসেই কি ধাক্কা? বঙ্গে বিজেপি-নেতৃত্ব চিন্তা বাড়াচ্ছে কর্মী-সমর্থকদের!

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসেই কি ধাক্কা? বঙ্গে বিজেপি-নেতৃত্ব চিন্তা বাড়াচ্ছে কর্মী-সমর্থকদের!


সদ্য ফল প্রকাশ হয়েছে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের। সেখানে দেখা গেছে দুই রাজ্যেই গতবারের তুলনায় অনেকটা কম আসন পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে শিবসেনার উপরে ভর করেই ক্ষমতা দখল করতে হবে ভারতীয় জনতা পার্টিকে। সেইখানে আবার ফিফটি ফিফটি ফর্মুলা নিয়ে এগোনোর কথা বলে দিয়েছ শিবসেনা প্রমূখ উদ্ধব ঠাকরে।

জানা যাচ্ছে, আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকবে দুইটি দল এই শর্তেই সরকারে শামিল হতে চায় শিবসেনা বলে খবর। আবার অন্যদিকে হরিয়ানার ক্ষেত্রে 40 টি আসন পেয়ে ম্যাজিক ফিগারে থেকে 6 টি আসন দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। সেখানে জেজেপির হাত ধরে ও তাদের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে কোনোরকমে সরকার গঠন করা গেছে! কিন্তু দুই রাজ্যেই, আশার তুলনায় বাস্তবে আসন প্রাপ্তি অনেক অংশে কম বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের।

বস্তুত, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে গতবারের তুলনায় এবারে ভালো ফল করার কথা ভেবেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। সেখানে মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা জোট পেয়েছে 160 টি আসন। কিন্তু এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি ভারতীয় জনতা পার্টি। আবার হরিয়ানাতে 40 টি আসন পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ম্যাজিক ফিগার থেকে 6 টি আসন কম পেয়েছে পদ্মফুল শিবির।

কেন এমন ফলাফল হল, তাই নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ভারতীয় জনতা পার্টির অন্দরে। যদিও নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরে বিজেপি অধ্যক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই রাজ্যের জনগণকে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকারের উপরে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দুই রাজ্যেই বিজেপির ‘ভোট বৃদ্ধি’ নিয়ে বাহবা দিয়েছেন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহও। কিন্তু, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, আসার তুলনায় অনেক কম আসন পেয়ে যাতে দলীয় কর্মীরা ভেঙে না পড়েন – তারই ব্যবস্থা করেছেন মোদী-শাহ!

কিন্তু, যে দুই রাজ্যে বিরোধী বলে প্রায় কিছুই ছিল না, যেখানে কয়েকমাস আগেই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিপুল ভোট পেয়েছে, সেখানে কি করে এমন ফল হল? নিরাশ করা 2 বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অনেকে ভারতীয় জনতা পার্টির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করছে। 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে 300 র বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি এই দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে আগের থেকেই এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, প্রচারে সেই অর্থে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

তাই এইরকম বিপরীত ফলের সম্মুখীন হতে হয়েছে পার্টিকে। অপরদিকে এই একই রকম ঘটনা বাংলার ক্ষেত্রেও ঘটে কিনা, তাই নিয়েও চিন্তিত একাধিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। ইতিমধ্যেই বাংলার রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দলের তকমা পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি সদস্য সংগ্রহ অভিযান থেকে শুরু করে একাধিক তৃণমূল বিরোধী কর্মসূচিতে টক্কর দিচ্ছে অন্যান্য বিরোধী দলকে। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনের পর যেভাবে গোটা বাংলা জুড়ে বিজেপি-হাওয়া দেখা যাচ্ছিল, বর্তমানে তা যেন অনেকাংশেই স্তিমিত, বলে অভিমত একাংশের!

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

প্রসঙ্গত, 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনেও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মোট চারটি আসন কম পেয়ে 18 টি আসন লাভ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যা শাসকের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলার শামিল। তাই ইতিমধ্যেই রাজ্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব পশ্চিমবাংলায় 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে সরকার গঠন করার স্বপ্ন দেখছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ থেকে শুরু করে শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্বের গলায় সেই কথা বারবার প্রকাশ পেয়েছে।

কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির একাধিক নেতৃত্বের ব্যবহারে আগামী বিধানসভায় অতটা ভালো ফল করতে পারবে কিনা ভারতীয় জনতা পার্টি, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে শুরু হয়েছে গান্ধী সংকল্প যাত্রা। কিন্তু সেই যাত্রায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দীর্ঘ পথ পদযাত্রা করার কথা থাকলেও প্রায়শই দেখা যাচ্ছে বিজেপির মন্ত্রী থেকে শুরু করে নেতৃত্ব একাধিক সময়েই নিজেদের গাড়িতে করেই সেখানে যাচ্ছেন। ফলে ‘পদযাত্রায়’ দলীয় নেতা-নেত্রীদের কোথাও যেন একটা ‘দূরত্ত্ব’ তৈরী হচ্ছে বলে মনে করছেন বিজেপিরই একাংশ!

যার কারণে হতাশা ছড়াচ্ছে পার্টিকর্মীদের অন্দরে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রভাবশালী বিজেপি নেতা বিপ্লব মিত্র পর্যন্ত একাধিক নেতা-মন্ত্রীরাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মত পদযাত্রায় কর্মীদের সঙ্গে পা মিলাতে পারছেন না। কোনো কোনো নেতা তো আবার, পদযাত্রার মাঝপথেই গাড়ি চেপে চলে যাচ্ছেন! যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ গেরুয়া শিবিরের নিচুতলায়! আবার কিছু কিছু সময় রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতার বেফাঁস মন্তব্য অস্বস্তিতে ফেলেছে পার্টিকে।

আর এইসব অস্বস্তিকর মন্তব্য থেকে বিরত থাকছেন না রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ত্বও বলে অভিযোগ! রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে – বাংলার রাজনীতির বৈশিষ্ট্য ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যের থেকে বেশ আলাদা। এখানে, ‘মেরে ফেলব-কেটে ফেলব’ এর থেকে মানুষ বেশি পছন্দ করে উন্নয়নের-কর্মসংস্থানের কথা শুনতে। ধর্মীয় বিভাজনের থেকে এখানকার মানুষের বেশি পছন্দ শিক্ষা-সংস্কৃতির আলোচনা। অথচ, গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতার গলায় বারবার উঠে আসছে বিতর্কিত কথা, যা সাধারনের মনে উল্টো প্রভাব ফেলছে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের।

আবার কিছু কিছু সময় দলের অন্দরেই নতুন বনাম পুরাতন বিজেপি কর্মীদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসছে। যা আগামী 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির কাছে চিন্তার বিষয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাই সমগ্র পরিস্থিতিকে সামাল দিয়ে বাংলার ক্ষেত্রে যেন হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মত লোকসভার নিরিখে কম বিধানসভা আসন পাওয়ার ঘটনা না ঘটে ভারতীয় জনতা পার্টির ক্ষেত্রে, সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তিত হয়ে পড়েছে একাধিক বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলে খবর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতা-কর্মীর কথায় উঠে আসছে এসবেরই প্রতিফলন! তাঁদের বক্তব্য, কোথাও গিয়ে যেন মনে হচ্ছে, বিধানসভা নির্বাচনটা জেতা হয়ে গেছে, শুধু যেন শপথগ্রহণের আর মন্ত্রক বন্টনের কাজটা বাকি! যে তৃণমূল বামফ্রন্টের মত শক্তিকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তারা যে হারার আগে হারবে না, একটা তীব্র লড়াই দেবে – এই কথা যেন কোথাও গিয়ে ভুলে যাওয়া হচ্ছে! আর এতেই একের পর এক কর্মসূচি নিয়ে, পায়ের তলায় জমি অনেক শক্ত করে ফেলছে ঘাসফুল শিবির!

তবে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় বিজেপির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হওয়া কাজ করেছে এবং বাংলার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়া বিজেপিকে সাহায্য করবে বলে ইমন করা হচ্ছে। তবুও নেতা-নেত্রীদের এবং সাংসদ, মন্ত্রীদের আচরণের ক্ষেত্রে অনেকটাই রাজনৈতিক এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করছে একাধিক বিশ্লেষকরা। তাই আগামী দিনে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারিক দিক থেকে পরিবর্তন এনে কতটা দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদের ভূমিকা পালন করতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টির বঙ্গ নেতৃত্ব! সেদিকেই নজর থাকবে আমজনতার।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!