এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ডিও/বিএলও ডিউটি নিয়ে আজ ‘অন্তিম মহাযুদ্ধের’ পথে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ

ডিও/বিএলও ডিউটি নিয়ে আজ ‘অন্তিম মহাযুদ্ধের’ পথে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ


ডিও, বিএলও ও সুপারভাইজারের ডিউটি করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমছিল রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে – আর তা ক্রমশ আকার নিচ্ছিল বারুদের স্তুপের। সেই বারুদের স্তুপে এবার কার্যত অগ্নিসংযোগ হয়ে যায় যখন গত ২৮ শে আগস্ট নাকাশিপাড়ার বিডিও ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের হাতে চরম হেনস্থা হতে হয় শিক্ষক শাশ্বত ঘোষকে।

আর এরপরেই প্রতিবাদী শিক্ষক মইদুল ইসলামের নেতৃত্ত্বে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ দীর্ঘ আইনি পরামর্শে বসে প্রখ্যাত আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য্য ও ফিরদৌস শামিমের সঙ্গে। সেই আলোচনাতেই বেড়িয়ে আসে, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের নামমাত্র পারিশ্রমিকে ও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের ধমকে-চমকে যে ডিও, বিএলও ও সুপারভাইজারের ডিউটি করতে কার্যত বাধ্য করা হচ্ছে – সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন মামলার রায় বলছে – কার্যত তা বেআইনি।

এরপরেই শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের প্রধান সেনাপতি মইদুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলার পথে হাঁটেন সুতন্দ্র হালদার, সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দেন শাশ্বত ঘোষ, জয়ন্ত মুখার্জিদের মত একঝাঁক তরুণ-তুর্কি। কলকাতা হাইকোর্টে মাননীয় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের একের পর এক রায় তুলে ধরে কার্যত ঝড় তুলে দেন এই মুহূর্তে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলার অন্যতম বিশিষ্ট আইনজীবী ফিরদৌস শামিম।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

ফিরদৌস সাহেব আদালতে দাঁড়িয়ে জানান, ‘রাইট টু এডুকেশনাল অ্যাক্ট ২০০৯ এর ২৭ এর সি ধারা অনুযায়ী, শিক্ষকরা শিক্ষা বহির্ভূত অন্য কোন কাজ করতে পারেন না। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ‘সেন্ট মেরি’ জাজমেন্ট অনুযায়ী, নির্বাচনের কাজে প্রথমে ব্যাঙ্ক ও সরকারি কর্মীদের নিযুক্ত করা হয়। তারপরেও যদি প্রয়োজনীয় কর্মী অপ্রতুল থাকে তাহলে ‘বিশেষ অবস্থায়’ শিক্ষকদের এই কাজে নিযুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু, সেক্ষত্রে কিন্তু যে দিনে বা দিনগুলিতে ওই নির্বাচনী কাজ শিক্ষকদের করতে হবে তা ‘ঘোষিত ছুটি’ হতে হবে। কিন্তু ১ লা সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ শে অক্টোবর পর্যন্ত – যে ডিও, বিএলও বা সুপারভাইজারের ডিউটি প্রাথমিক শিক্ষকদের করতে হচ্ছে – তা উপরোক্ত কোনো নিয়ম মেনেই হচ্ছে না। এছাড়াও, চাকরির নিয়ম অনুযায়ী এই ডিউটি করতে প্রাথমিক শিক্ষকরা এই ডিও ডিউটি করতে কোনোমতেই বাধ্য নন।

তরুণ আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের এহেন সওয়ালের সামনে কার্যত দিশেহারা লেগেছে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীদের। পাল্টা আইনি যুক্তির জায়গায় তাঁরা একপ্রকার ‘আবেগের তাস’ খেলতে বাধ্য হয়েছেন, আদালতের কাছে তাঁদের যুক্তি – কিছু কাজ দেশের জন্য করতে হয়! যা শুনে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীও রাজ্য সরকারকে প্রঃন করতে বাধ্য হয়েছেন – ইলেকশন আগে না এক্সেলেন্স আগে?

এরপরে গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর এক ঐতিহাসিক রায়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী স্পষ্ট জানিয়ে দেন – ডিও, বিএলও ও সুপারভাইজারের ডিউটি সংক্রান্ত যে নির্দেশিকা তা আইন মেনে হয় নি, তাই এই নির্দেশিকা ‘অবৈধ’। মুক্তির আনন্দে মেতে ওঠেন রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষক – কিন্তু রাত পোহাতেই ভাঙে ভুল! আদালতে এত বড় ‘ধাক্কা’ খেয়েও কতকটা জোর করেই প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ দাবি করেন ‘রায়ের কপি’ দেখান আর নাহলে ডিউটি চালিয়ে যান! প্রসঙ্গত, যে কোন মামলার রায়দানের পর সাথেসাথেই তার কপি হাতে মেলে না – কদিন সময় লাগে।

অবশেষে, ৪ ঠা অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সেই রায়ের কপি হাতে পাওয়া যায়। কিন্তু এরপরেও এক ‘অদ্ভুত’ যুক্তি বার করেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা – তাঁরা বলেন, এই রায় শুধুমাত্র নাকি মূল মামলাকারী সুতন্ত্র হালদারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বাকি শিক্ষকদের নিজের নিজের ডিউটি চালিয়ে যেতে হবে! সবথেকে বিস্ময়ের – এই মামলায় ‘পার্টি’ হিসাবে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন উভয়েই থাকলেও – এত সংবেদনশীল মামলায় পরাভূত হয়ে – কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা, দেন নি কোন সরকারি বিবৃতি!

আর সেই ‘সুযোগটাকেই’ কাজে লাগিয়ে রাজ্য শিক্ষকদের ‘হেনস্থা’ ও ‘আদালত অবমাননার’ পথে ঠেলে দিতে উঠে পরে লেগেছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ। সাথে যুক্ত হয়েছে, স্থানীয় স্তরের একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতার শিক্ষকদের সঙ্গে এই নিয়ে দুর্ব্যবহার এবং হুমকি। স্বাভাবিকভাবেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে শাসকদলের দিকে। আর তাই এবার কার্যত অনন্যপায় হয়ে – রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষকদের স্বার্থরক্ষায় ‘অন্তিম মহাযুদ্ধের’ ডাক দিল শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ।

সংগঠনের স্থপতি মইদুল ইসলামের নেতৃত্ত্বে আজ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের তরফে নির্বাচন কমিশন দপ্তর অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুপুর ২ টোর সময় ফেয়ারলি প্লেসে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নিজের নিজের ডিউটির ফাইল নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য সংগঠনের তরফে অনুরোধ করা হয়েছে। সেখানে আদালতের রায়ের কপি সহ ডিউটির ফাইল ফেরত নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। তবে সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশন যদি তা নিতে অস্বীকার করে – তবে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে পারেন মইদুল ইসলামরা – আর তাই, সব মিলিয়ে শিক্ষকদের স্বার্থরক্ষায় আজ উত্তাল হতে পারে মহানগরীর রাজপথ বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!