এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > বিরোধীরা করলেই FIR! অথচ তৃণমূল নেতারা বড়বড় জনসভা করলেও চুপ কেন পুলিশ-প্রশাসন? উঠছে প্রশ্ন

বিরোধীরা করলেই FIR! অথচ তৃণমূল নেতারা বড়বড় জনসভা করলেও চুপ কেন পুলিশ-প্রশাসন? উঠছে প্রশ্ন


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – অনেকেই রসিকতা করেই বলে থাকেন, এসব আইন-আদালত, ওই পুলিশ যা কিছু আছে না, তা সব সাধারণ মানুষের, জন্য দেশের নেতা মন্ত্রী আছেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আর এসব ব্যাপারে কথা বলতে গেলেও বিপদ, তখন কিন্তু নেমে আসবে পুলিশের লাঠি। প্রসঙ্গত, দেশে করোনা সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা সংক্রমণকে। কারণ করোনার ভ্যাকসিন এখনো মানুষের হাতে এসে পৌঁছায়নি। তাই জলের স্রোতের মতো বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এই বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে বারবার মানুষকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে মাক্স পরিধান করতে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে সেইসঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়েই এবারে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান একেবারেই শ্রীহীন করা হয়েছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিচ্ছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবার জন্য। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, মুখ্যমন্ত্রীর এই হিতোপদেশ তাঁর দলের বেশকিছু নেতা-মন্ত্রীর কানেই ঢোকেনা। মনে হয়, এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার তাঁদের কোন দায় নেই, সমস্ত দায়ই যেন মুখ্যমন্ত্রীর।

এ ব্যাপারে তাঁদের প্রশ্ন করা হলে তার জবাবে তাঁরা বলে থাকেন, ” আরে এ তো রাজ্যের শাসক দলের সভা, ভিড় তো হবেই।”আর এদিকে, সমাজের রক্ষক পুলিশ, প্রশাসন সবকিছু দেখেও যেন নীরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করছেন। যা নিয়ে বারবার সরব হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতারা। এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের জনৈক কংগ্রেস নেতা রসিকতা করে বলেছেন, ‘‘করোনার কিন্তু কোনও দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব আছে, এমন অভিযোগ নেই, ফলে তৃণমূল এবং তার দলীয় নেতা-কর্মীদের ছাড় দেবে এমন সম্ভাবনা নেই, কথাটা শাসক দলের কর্তাব্যাক্তিরা বুঝতে পারলে তাঁদেরই মঙ্গল।’’

প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহাকুমা অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ থেকে অতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কিন্তু স্থানীয় শাসক দলের বিশেষ যেন এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো মাথাব্যথা আছে বলে, মনে হচ্ছে না। কারণ, এই অবস্থার মধ্যে বারবার সেখানে চলছে শাসক দলের সভা-সমাবেশে। গত সাত দিনে সাত বার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল একাধিক সমাবেশ শাসক দলের পক্ষ থেকে।

সামাজিক দূরত্ব হেলায় অমান্য করে হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে চলেছে সমস্ত সভা গুলি। আর সব জেনেও, কালো চশমা পড়ে বসে আছে পুলিশ বাহিনী। পুলিশ অবশ্য স্বীকার করেছে, এইসব সভা গুলির জন্য তাদের কাছে কোন প্রয়োজনীয় অনুমতি নেয়নি শাসকদল। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, অনুমতি ছাড়া এই সভাগুলো কি করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে? কি করেই বা সভাগুলিতে রক্ষকের ভূমিকায় পুলিশ অবতীর্ণ হচ্ছেন?

প্রসঙ্গত ইতিপূর্বে মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু স্থানে বিরাট প্রকাশ্য সভার আয়োজন করেছিল শাসকদল। যার মধ্যে আছে সামশেরগঞ্জএর চারটি সভা। যেগুলি আয়োজিত হয়েছিল ১০ থেকে ১৪ ই আগস্টের মধ্যে। ফারাক্কাতে করা একটি সভা, রঘুনাথগঞ্জ একটি, রবিবার জঙ্গিপুরের করা হয়েছে একটি।

গত রবিবারে জঙ্গিপুরে আয়োজিত হয়ে গেল শাসক দলের এক বিরাট জনসভা। জঙ্গীপুর মহকুমার পিয়ারাপুরে অনুষ্ঠিত তৃণমূলের এই সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেন, সেইসঙ্গে মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান। প্রশ্ন ওঠে যে, দেশ জুড়ে যখন করোনার সংক্রমণ তখন কেন তাঁরা এরকম একটি এই সভা করতে গেলেন? দুজনকেই এই প্রশ্ন করা হলে তাঁরা জানান,  ‘‘সভা যারা ডেকেছে এ ব্যাপারে তারাই যা বলার বলবে।’’ এর বক্তব্যর পর তাঁদের আবার যখন প্রশ্ন করা হয়, ” শাসক দলের জেলা সভাপতি হয়েও আপনার তা হলে কোনও দায় নেই?”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তখন দলের সভাপতি নিশ্চূুপ হয়ে থাকাটাই শ্রেয় মনে করেছেন। অন্যদিকে এই সভার অন্যতম উদ্যোক্তা রঘুনাথপুরে তৃণমূল বিধায়ক এই সম্পর্কে জানিয়েছেন যে, এই সভাটি নাকি তেমন কোন বড় মাপের সভা ছিলই না। প্রসঙ্গত বিজেপি, সিপিএমের বেশ কিছু নেতাকর্মী তৃণমূলে যোগ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তাদের এই ইচ্ছাকে সম্মতি জানিয়ে একটি সভার সভার আয়োজন করেছিলেন মুর্শিদাবাদ তৃণমূল জেলা সভাপতি আবু তাহের খান। সামাজিক দূরত্ব নাকি সম্পূর্ণ ভাবে মান্য করা হয়েছিল এই সভায়, এমনটাই রঘুনাথগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আখরুজ্জামানের দাবি।

কিন্তু বিরোধী দলের পক্ষ থেকে শাসক দলেরই সাফাই কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা সিপিএম সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহ জানিয়েছেন  ‘‘অতিমারি আইনে যে কোনওরকম জমায়েত নিষিদ্ধ। ইদ, শ্রাবণী উৎসব, জন্মাষ্টমী বন্ধ হয়ে গেল সব। শুধু চালু থাকল তৃণমূলের সমাবেশ। অথচ দেখুন, বিরোধীরা পাঁচ-সাত জনকে নিয়ে ডেপুটেশন দিতে গেলে জেলা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে। এই পক্ষপাতিত্বটুকু না করাই বাঞ্ছনীয় ছিল।’’

এ প্রসঙ্গে শাসকদলের প্রতি সিপিএম এর অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন সিপিএম সভাধিপতি সচ্চিদানন্দ কান্ডারী ও সিপিএম রাজ্য কমিটির জনৈক সদস্য জমির মোল্লাকে জনসমাগমের অভিযোগ দেখিয়ে সরকার ইতিমধ্যেই অতিমাতি আইনের নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু ১০ ই আগস্ট থেকে ১৬ ই আগস্ট পর্যন্ত জঙ্গিপুরে তৃণমূল একাধিক সভার আয়োজন করলেও পুলিশ যেন সম্পূর্ণই নীরব। শাসক দলের বেশ কিছু নেতা, মন্ত্রী সামাজিক দূরত্বের বিধিকে কোনরকম তোয়াক্কা না করেই এই সভাগুলি করেছেন।

অন্যদিকে বিরোধী দল বিরোধী দল বিজেপির পক্ষ থেকে সংক্রমণ কালে এই জনসমাগমের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার বিজেপি জেলা সভাপতির গৌড় সিংহ রায় জানিয়েছেন, ‘‘বিজেপির দশ, বিশ জনের জমায়েতও করতে দেওয়টা হচ্ছে না। অথচ তৃণমূল প্রকাশ্যে জনসভা করছে। শাসক দল বলে কি তাদের সাত খুন মাফ?’’ প্রসঙ্গত বেশ কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গ সফর করেছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই সফরকালে তিনি মাস্ক পরিধান না করায় তাঁর উপরে fir দায়ের করা হয়েছিল। তবে তৃণমূল দলের নেতারা কিভাবে সব বিধিকে বুড়ো আঙ্গুল এত বড় জনসভা করছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী দল বিজেপি।

অন্যদিকে শাসকদলের জঙ্গিপুরের এই সভা সম্পর্কে জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ” ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলকেই কোথাও কোনও সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেউ যদি সভা করে থাকে তবে সংশ্লিষ্ট থানার কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হবে।’’ তবে এসপিডিওর এই বক্তব্য তুষ্ট করতে অক্ষম বিরোধী দলনেতাদের, এমনটাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের অভিমত।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!