এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > বিয়ের ফুল – ছোটগল্প – কলমে অপরাজিতা

বিয়ের ফুল – ছোটগল্প – কলমে অপরাজিতা


ভালো লাগে না আর – এবার ছোট মিষ্টি আনতে,কাল ভাইফোঁটা আজকেই যেতে হবে মিষ্টি নিয়ে আসতে কেননা কালকে একটাও মিষ্টি থাকবে না দোকানে। আচ্ছা পরশুই ওদের আসতে বলার কি দরকার ছিল – ব্যাগটা নিতে নিতে বললো সুবর্ণ।

দরকার ছিল, ছেলে ভাইফোঁটার পরের পরের দিন চলে যাবে। – বললো সুবর্ণর মা।

নিশ্চই বুঝতে পারছেন বিয়ের দেখাশোনা। হুম, সুবর্ণকে দেখতে আসবে ছেলে সঙ্গেও কেউ আসবে? কে ঠিক হয়নি।  ছেলের দিদি, বাবা, কাকা একপ্রস্থ দেখে গেছে। তাদের পছন্দ হয়েছে। এবার ছেলে আসবে। তার যদি পছন্দ হয় তবে বিয়ের দিকে এগোবে ব্যাপারটা।

সুবর্ণ বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। ভালো গান করে বলে বাবা, সুবর্ণর খুব ইচ্ছা ছিল গান নিয়েই পড়বে। কিন্তু পাড়ার লোকজন অতিরিক্ত বিজ্ঞ ব্যাক্তিরা সুবর্ণর মায়ের মাথায় ঢুকিয়েছিল শুধু গান নিয়ে পড়লে মেয়ের বিয়ে হবে না। রবীন্দ্র ভারতীতে চান্স পেয়েছিলো সুবর্ণ। ভর্তি হলেও পড়তে দেয়নি ওর মা। সুবর্ণর বাবা একটু সাদামাটা মানুষ , মা তেজি প্রকৃতির। মায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারেননি বাবা। আর সুবর্ণর তখন কতটুকুই বা তখন বয়স ছিল, প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। শেষে বাংলা নিয়ে এম এ পড়তে হয়েছিল।

কিন্তু ইচ্ছা দমেনি।এম এ পাশ করে সুবর্ণ ফের সরাসরি রবীন্দ্র ভারতী থেকে এম মিউসিক এ ভর্তি হয়েছিল। ফাস্ট ক্লাস পেয়ে পাস্ ও করেছে সদ্য। ইচ্ছা পি এইচ ডি করবে। সেই মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সুবর্ণকে শান্ত শিষ্ট ভাববেন না। যত বড় হয়েছে তেজ বেড়েছে। আর এখন তো সুবর্ণ, কালোকে কালো সাদাকে সাদা বলে, রেখে ঢেকে কারুর মন ভোলানো সে কথা বলে না। আগেও বলতো না তবে কিছু কথা চুপ করে শুনতো। এখন না। সুবর্ণ যখন হয় ডাক্তারবাবুই নাম রেখেছিলেন সুবর্ণ। যে সে সুবর্ণ নয়। আশাপূর্ণা দেবীর – ‘ সুবর্ণলতা’ র সুবর্ণ। ডাক্তারবাবু বলেছিলেন – মেয়েকে সুবর্ণলতার মতো তেজি করবে সুজাতা ( সুবর্ণর মা )। ডাক্তারবাবুর দেওয়া নামটা রেখেছেন সুবর্ণলর বাবা মা। না সুবর্ণলতার মতো এতটা না হলেও চুপ চাপ শান্ত মেয়ে সে নয়।

দেখতে অপ্সরী নয়, মোটামোটি ভালোর দিকেই। ছোট ফ্যামিলি, বাবা রিটায়ার্ড গেজেটেড অফিসার, অবস্থা ভালো কিন্তু তবুও বিয়ে হচ্ছে না। এম এ পাস্ করে এম মিউসিক এ ভর্তি হওয়া থেকে শুরু হয়েছিল দেখাশোনা। প্রথমে ৬ মাস অন্তর , তারপর ৩,৪ মাস অন্তর পরে সেটা মাসে একটা করে না হলেও ২ মাসে একটা করে ঠেকেছে। এই নিয়ে অনেকবার, লোকজন আসে মিষ্টি খায় আর চলে যায়, কারুর সুবর্ণকে পছন্দ হয়, কাউকে আবার সুবর্ণরর বাড়ির লোকের পছন্দ হয়না। অবশ্য সুবর্ণকেই লোকের বেশি অপছন্দ হয়েছে। কেন? নানা কারণে – কেউ বলেছে, রংটা ফর্সাই তবে আমাদের আরো একটু ফর্সা হলে ভালো হতো ( এটাই বেশি ) কেউ বলেছে সায়েন্স নিয়ে পড়লে ভালো হতো , কেউ বলেছে আর একটু লম্বা হলে আর আপত্তি থাকতো না। কেউ বলেছে ভাই থাকলে ভালো হতো. নাহলে বাবা মা বার্ডেন হয়ে যাচ্ছে। কিছু মনে হয় না সুবর্ণর, যেন বাঁচে। কেননা সুবর্ণর কাউকেই পছন্দ হয় না। না না প্রেম ট্রেম নয়, তার মাথায় এখন পি এইচ ডি-র ভূত চেপেছে।  সে রবীন্দ্র ভারতীতে পড়ার সময় দেখতো ম্যামরা কি সুন্দর সুন্দর শাড়ী পরে, গয়না পরে,তাছাড়া ম্যামরা যেমন স্টেজ পারফর্মেন্স করে তেমন অনেক লোকের সামনে গাইবে। নিজের মতো লাইফ স্পেন্ড করে, কোনো চাপ নেই,বাধ্যবাধকতা নেই। নিজের মনের মতো করে গান গাও আর গান শেখাও। টেনশন মুক্ত জীবন। ও ঠিক তেমনটাই হবে। পি এইচ ডি করে চাকরি করবে তারপর যদি মনে হয় বিয়ে করবে। এখন দরকার নেই। একটা কথা বলে রাখি – সুবর্ণ যেখানে সামান্যতম পছন্দের আভাস পেয়েছে নিজেই বিয়ে ভেঙেছে। একথা অবশ্য ওর মা ,বাবা জানেন না।

তারা রীতিমতো চিন্তিত। কেন মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না? যথারীতি পাড়ার লোকজনের তা নিয়ে রাতের ঘুম নেই।  যখন নানা অজুহাতে ছেলেপক্ষ না করে তখন মনে মনে সে বলে খুব ভালো কথা,থ্যাঙ্ক ইউ, এবার কেটে পরো। অনেকে আবার কোনো কথা না বলেই না করে – তবে আর কেউ না জানুক সুবর্ণ জানে অনেকে তার স্পষ্ট কথায় কষ্ট পেয়ে আর এই মুখো হয়নি।অবশ্য তাতে খুশি সুবর্ণ।

তবে সুবর্ণ যে তাদেরকে এমনি এমনি কাটা কাটা কথা শুনিয়েছিল তা নয় – কারণ ছিল। একবার ছেলে আর ছেলের বাবা এসেছিলো। বলেছিলো আসলে আর ভাই – বোন নেই ,তাই তাঁর ছেলের ঘাড়েই সব দ্বায়িত্ব পড়বে। সেটা নিয়ে একটু ভাবনা। বাকি ঠিক আছে। সুবর্ণর মা বলেছিলো আমাদের জন্য ভাবনা নেই। মেয়েকে আমাদের দেখতে হবে না। শুনে ছেলের বাবার মুখের হাসি চওড়া হয়েছিল। আর সুবর্ণর মাথায় রাগ চেপেছিল।

যখন সুবর্ণ সুযোগ খুঁজছে তখনি ছেলের বাবা বলেছিলো যে তাঁর মেয়ে জামাই তাঁদের সাথেই থাকে। তাঁদের মেয়ে তাঁদের খুব আদরের। তাঁদের সাথে মানিয়ে চলতে হবে। পারবে তো? ব্যাস সুযোগ হাতের মুঠোয়।
সুবর্ণর সুযোগ বুঝে উত্তর দিয়েছিলো – দেখুন একা একা তো আর কিছু হয়না। তাঁরাও যদি আমার সাথে মানিয়ে চলে তবে আমার কোনো অসুবিধা নেই। তা নাহলে অসুবিধা। আমি হয়তো পারবো না। ভদ্রলোক একটু চমকে গিয়েছিলেন। পরে জানাবো বলে উঠে পড়েছিলেন। সুবর্ণর মা রাগ করলেও পাশে দাঁড়িয়েছিল বাবা। বলেছিলো ঠিক বলেছে। মুখে এক মনে আর এক করে কি লাভ ?

 

আর একটা ছেলে পছন্দ করেছিল,ছেলেটা কোনো এক কলেজের প্রেফেসর। সে আর তার বন্ধু দেখতে এসেছিল। ছেলের বন্ধু বলেছিলো আসলে ছেলের বাবা মায়ের একটু আপত্তি আছে। তাদের মতে একটু ঘরোয়া হলে ভালো হয়।ছেলেও খুব সাধারণ। ছেলে গান ভালো বসে বলেই এসেছে এখানে। যদি মেয়েকে চাকরি না করে তাহলে অসুবিধা নেই। কথাটা শুনেই রাগ হয়েছিল। মানে এখানে বিয়ে হলে সব শেষ। অবশ্য ছেলে যে সাধারণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। একটা ছেঁড়া মোজা পরে এসেছিলো। চোখ এড়ায়নি সুবর্ণর। সুবর্ণ ঘরে ঢুকতেই ছেলে আর বন্ধুকে দেখলো। এক দু কথার পর সুবর্ণর বাবা মা বাইরে গেলেন।

ছেলের বন্ধু সুবর্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন – আমাদের মধ্যে ছেলে কে জানা আছে?
সুবর্ণ জানতো। কিন্তু তবুও উত্তর দিয়েছিলো – না।
ছেলের বন্ধু – বাড়ি থেকে বলেনি ?

সুবর্ণ – বলেছিলো , খেয়াল করিনি।

ছেলের বন্ধু – কেন? বাড়ি থেকে যাকে পছন্দ করবে তাকেই বিয়ে বিয়ে করবেন ?

সুবর্ণ – না , আমি কারুর কথায় ওঠা বসা করা এত বাধ্য মেয়ে নয়।

ছেলের বন্ধু – ও ,ওই পাত্র, আমি ওর বন্ধু ?

সুবর্ণ – না তাকিয়েই – ওহ আচ্ছা।যদিও এই কথা বাবা মা জানে না।না সেও আর হ্যাঁ বলেনি , বলবে কোন মুখে ভেবেছে অন্য জায়গায় প্রেম আছে।

 

আর একটা ডাক্তার এসেছিলো, অসভ্যের মতো তার দিকে তাকিয়েছিলো। ছেলেটার চোখ গুলো সুবর্ণর গোটা শরীর জুড়ে ঘুরছে। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো সুবর্ণর। মনে হচ্ছিলো চোখ দুটো গেলে দিই। একা কথা বলার জন্য ছাড়া হয়েছিল।  ছেলে জিজ্ঞাসা করেছিল -শুনলাম আপনি গাড়িয়া মেট্রো দিয়ে যান – দেখিনি তো? আপনি আমাকে দেখেছেন? সুবর্ণ কড়া জবাব দিয়েছিলো – আসলে আমি রাস্তার দিকে তাকিয়ে যাই তো, ছেলেদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস আমার নেই। আপনি যেমন মেয়ে দেখেন তেমন আরকি, তাই আপনাকে খেয়াল করিনি।ডাক্তার আর এই মুখো হয়নি। হওয়ার কথা নয়।

 

আর একটা ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলো। সে আর তার দাদা। ছেলেটা খুব শান্ত। বাবা মাকে এসে প্রণাম করেছিল। সুবর্ণ যখন ঘরে ঢুকেছে সে মাথা নিচু করেই বসেছিল। একবার সুবর্ণর দিকে তাকিয়েই মুখ নামিয়ে বসে ছিল। একা যখন কথা বলতে দুজনকে যখন ছাড়া হয়েছিল সে শুধু বলেছিলো – আমি গান শুনতে খুব ভালোবাসি, একটা গান করবেন ? সুবর্ণ বলেছিলো – না , গলা খারাপ। আর মুড্ নেই, মুড্ না থাকলে আমি গাই না। ছেলেটা এতটাই সাদামাটা ইঙ্গিতটা বুঝতে পারেনি। বাড়ি ফিরে হ্যাঁ বলে বিপদ বাড়িয়েছিল সুবর্ণর। বাবা মাকে প্রণাম করেছে, তারা বলেছিলেন এমন ছেলে লাখে মেলে, এই যুগে পায়ে হাত দিয়ে কেউ প্রণাম করে? ভালো ছেলে এখানেই বিয়ে ফাইনাল। সুবর্ণ উত্তরা দিয়েছিলো – শুধু পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছে তাতেই এত লাফাচ্ছ, শুয়ে পরে প্রণাম করলে কি করতে? আমার ছেলে পছন্দ নয়। বাবা মায়ের দাবি ছিল ছেলের তরফ থেকে সুবর্ণর পিএইচডি বা চাকরি কোনোটাতেই আপত্তি নেই তাহলে কিসের অসুবিধা। সহজ সরল খুব ভালোমানুষ ছেলেটা দেখেই বুঝেছিলো সুবর্ণ। তবে না স্বভাবের দিক দিয়ে একেবারেই মিলবে না সুবর্ণর সাথে। ফলে না বিয়ে করা সম্ভব নয়।
বিয়ে হবে না ব্যাস, জোর করে বিয়ে দিলে ফল ভালো হবে না বলে দিলাম।

না সুবর্ণর বাবা মা মেয়েকে ভালো করে চেনে ? ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করবে না সুবর্ণ। রবীন্দ্র ভারতীতে পড়তে না দিয়েই হরে হরে টের পেয়েছিলেন সুবর্ণর মা বাবা, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলো সুবর্ণ। অনেক বুঝিয়ে, এম এ পাস্ করার পর ফের রবীন্দ্রভারটিতে গান নিয়ে পড়বে সুবর্ণ এমন পাকা কথা দিয়েই অবস্থা সামলাতে হয়েছিল। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে সুতরাং সুবর্ণর উপর রাগ হলেও বিয়ে দেননি ওখানে।

 

এই করেই চলছিল বেশ, সুবর্ণও নিশ্চিন্ত ছিল বেশ। কিন্তু পুজোর আগে পেপারে একটা অ্যাড দেখে ওর বাবা যোগাযোগ করে। জানা যায় ছেলের বাড়ি সুবর্ণর মামার বাড়ির পাশের গ্রামে। একেই সুবর্ণর মামারবাড়ির এলাকা পছন্দ নয় সুবর্ণর। কথায় কথায় বলে ধ্যারধ্যেরে গোবিন্দপুর। আর তার পাশের এলাকা একই হবে। সেখানে বিয়ে করবে না। কিন্তু সুবর্ণ জানতে পারে অনেক পরে তখন বাবা মামাকে দিয়ে ওদের বাড়ি ফটো পাঠিয়ে দিয়েছিলো। আর ওদের ফটো দেখে পছন্দ হয়েছিল দেখতে আসার দিন ঠিক হয়েছিল। তার পরেই ছেলের দিদি, বাবা আর কাকা দেখে যায় বলে পছন্দ হয়েছে। তরপর সব চুপচাপ। সুতরাং কোনো টেনশন নেই। সুবর্ণ ভেবেছিলো – মুখ লজ্জায় ওরা বলেছিলো যে পছন্দ কিন্তু আসলে পছন্দ হয়নি। ভালোই হয়েছে ওই ধ্যারধ্যেরে গোবিন্দপুরে কে বিয়ে করবে ?

কিন্তু আজ সকালে ফোন করে বলেছে যে ছেলে এসেছে। কাল ভাইফোঁটা পরশু দিন দেখতে আসবে যদি সুবর্ণদের কোনো আপত্তি না থাকে তো। সুবর্ণর বাবা যথারীতি জানিয়ে দিয়েছেন যে তাদের আপত্তি নেই। ফলে পরশু আসছে তারা দেখতে। পুজোর সময় সুবর্ণর বাবার চোখে অপারেশন হয়েছে ফলে তিনি বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না। তাই সুবর্ণকেই বেরিয়ে মিষ্টি আনতে হবে।

একটু আপত্তি করেছিল সুবর্ণ, বাবা ছোটমেসোর সাথে এই নিয়ে কথা বলছিলো। সুবর্ণ এই নিয়ে ওর ছোট মেসোর কাছে বকাও খেয়েছে। ছোটমেসো বলেছে – ছেলে থাকে বেঙ্গালুরুতে, তুই তো সেখানেই থাকবি , তবে? বছরে একবার ৭ – ১০ দিনের জন্য আসবি। এই বাড়ি ও বাড়ি করেই কেটে যাবে। আর ধ্যারধ্যেরে গোবিন্দপুর কি? মামারবাড়ি যাস না। গিয়ে থাকিস না ? মামারা ধ্যারধ্যেরে গোবিন্দপুরে থেকে বলে তোকে কম ভালোবাসে ? এত আপত্তির কি আছে?  কিছু বলেনি সুবর্ণ। মনে হয়েছে বেশি বেশি ভাবছে। ছেলে নিশ্চই একা কথা বলবে ? তখন একটু কড়কে দেবে ব্যাস।

বাড়ি থেকে বের হলো সুবর্ণ। মনে পড়লো অনুপমকে ও একটা বই আনতে দিয়েছিলো। অনুপমকে ফোন করলো।

অনুপম – বল

সুবর্ণ – আছিস বাড়িতে ?

অনুপম – হুম, এখনো , একটু পরে সুমনদের দোকানে যাচ্ছি, কেন বল।

সুবর্ণ – খুব ভালো , আমার বইটা নিয়ে চল , আমি যাচ্ছি , প্রশান্ত কাকুদের দোকানে মিষ্টি নিয়েই তোর থেকে বইটা নিয়ে নেবো।

অনুপম – আচ্ছা।

সুমন, অনুপম, সুবর্ণ একসঙ্গে পড়েছে। সুমন চাকরির একটু চেষ্টা করে হাল ছেড়ে কালিপুর বাজারে বেশ বড় একটা ফার্স্ট ফুডের দোকান খুলেছে সেখানে ফাস্টফুডের পাশাপাশি  চা, কফি, কেক এইসব বিক্রি হয়। পাশেই প্রশান্ত কাকুর মিষ্টির দোকান। তবে বন্ধুরা গেলে ফ্রীতেই চা খাওয়ায় সুমন। এখানে এমন বসে খওয়ার দোকান নেই, ভিড় হয় ভালো। তবে সকালের দিকে ভিড় হয়না , ভিড় হয় সন্ধেতে, পা ফেলার জায়গা থাকে না।

প্রশান্ত কাকুর দোকানে এসে সুবর্ণ দেখলো একটা বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে কয়েকজন ছেলে দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে সিগাটের খাচ্ছে। ছেলেগুলোর বয়েস ২৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। গাড়িটা তাদেরই। সাইকেলটা রেখে শোকেসে সাজানো মিষ্টি গুলো দেখছিলো সুবর্ণ। দোকানের কর্মচারী একটা অল্পবয়সী ছেলে, চেনে সুবর্ণ। তাকে একটা মিষ্টি দেখিয়ে তার দাম কত জানতে চাইলো সুবর্ণ। সে নিজের মনে দু কানে দুটো হেডফোন গুঁজে গান শুনছিলো সুবর্ণর কথা তার কানে গেলো না। সুবর্ণকে দেখেছে সে, তার দিকে তাকিয়েই ছেলেটা চোখের ইশারা করে জানতে চাইলো কি বলছে সুবর্ণ ? গাড়িতে করে আসা ছেলেগুলো সুবর্ণকে দেখছিলো , না কোনো খারাপ ভাব নিয়ে নয়, এমনিই লোকে যেমন চারপাশ দেখে তেমনি। ফের দোকানের ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলো সুবর্ণ ? এটা কত করে পিস্ ? ছেলেটা ফের একই ভঙ্গিতে চোখের ইশারায় জানতে চাইলো। না তার চোখের ইশারায় কোনো খারাপ ভাব নেই। শুধু গান শোনাতে এত মত্ত হয়ে গেছে যে সুবর্ণ যে কিছু বলছে আর গান শোনার জন্য তার কানে কোনো কথা যাচ্ছে না সেটা সে বেমালুম ভুলে গেছে। ফের সুবর্ণ জিজ্ঞাসা করলো, ফের একই ইশারা।

এবার সুবর্ণর মাথা খারাপ হয়ে গেছে , একে এই রোদে বাজারে মিষ্টি আনতে আসতে হয়েছে। তার উপর ছেলেটার কোনো কেয়ার নেই। রেগে গেছে খুব, মুখ দেখলেই বোঝা যাবে। ছেলেটাও বুঝতে পারছে না কি হলো কেন রেগে গেলো সুবর্ণ, তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এবার সুবর্ণ একটা উত্পটাং কাজ করে ফেললো। সুবর্ণর একটা গুন্ রেগে গেলেও হাসতে পারে সে। সুবর্ণ হাসলো, তাকে দেখে ছেলেটাও হাসলো। সুবর্ণ ছেলেটাকে ইশারা করে একটু কাছে ডাকলো। ছেলেটা কিছু না বুঝেই হাসি হাসি মুখ করে সুবর্ণর দিকে ঝুঁকে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো কি ।

এবার সুবর্ণ তার হেডফোনটা ধরে জোরে টান দিলো। দু কান থেকেই খুলে গেলো হেডফোন। সে চমকে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে রাগ দেখিয়ে বললো – কি করছো টা কি ? আমার হেডফোন টা ছিঁড়ে যাবে, ছিঁড়ে গালে না আমি ক্ষতি পূরণ নিয়ে তবে ছাড়বো বলে দিচ্ছি।

সুবর্ণ – এবার কড়া গলায় বলে উঠলো – আমি সেই থেকে জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছি, আর উনি কানে জেডফোনে দিয়ে গান শুনছেন উত্তর নেই, প্রশান্ত কাকুকে বললো।

ছেলেটা এবার একটু হকচকিয়ে গিয়ে বললো – কি কি ? চাই কি ?

গাড়িতে করে আসা ছেলেগুলোর সবাই ব্যাপারটা দেখেনি , কিন্তু যে কজন দেখেছে তারা নিজেদের মধ্যেই হা হা করে হাসছে ,শোকেসের কাঁচে দেখা যাচ্ছে। সুবর্ণ নির্লিপ্ত মুখে দেখে ছেলেটাকে ফের সেই মিষ্টিটা দেখিয়ে বললো – কত করে পিস্ ?

ছেলেটা বললো – ৫ টাকা।

সুবর্ণ – ১২ পিস্ দাও।

দোকানের মালিক একটু দূরে বসেছিল। সে সেসব কিছু শুনতে পায়নি। সে দোকানে বসা তার বন্ধু স্থানীয়দের  দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার এইসব নিয়ে বিস্তর জ্ঞান দিচ্ছে ।

যে মিষ্টিটা নিচ্ছে সুবর্ণ  সেই সন্দেশের  উপর একটা করে চেরি বসানো। ছেলেটা দিচ্ছে , সুবর্ণ দেখছে। এমন সময় গাড়িতে করে আসা একটা ছেলে দেখতে খুব সুন্দর, স্মার্ট, গায়ের রংটা ধপধপে ফর্সা। সুবর্ণর আবার পছন্দ নয়, তার রং ফর্সা হলেও ধপধপে ফর্সা নয়, ফর্সা ছেলের উপর তাই তার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কেননা লোকে বলবে ছেলের পাশে বৌ মানাচ্ছে না  বা বৌ কালো।

যাই হোক ছেলেটা এতক্ষন সিগারেট খাচ্ছিলো এবার সুবর্ণর পাশে এসে দাঁড়িয়ে দোকানের ছেলেটাকে বললো বস, ফ্রিজ থেকে একটা বিসলারি দাও।
ছেলেটা মিষ্টি দেওয়া থামিয়ে ছেলেটাকে একটা বিসলারির বোতল দিয়ে ফের মিষ্টি পকেটে দিতে লাগলো। ছেলেটা ওখানে দাঁড়িয়েই জল খেতে যাচ্ছিলো। একটা কথা শুনে ঘুরে দোকানের ছেলেটার দিকে তাকালো।

সুবর্ণ দোকানের ছেলেটাকে বলছে – এই, ওই মিষ্টিটা দিচ্ছিস কেন ?

ছেলেটা রেগে উত্তর দিলো – কেন? কি খারাপ আছে।

সুবর্ণ – চেরি নেই ওতে।

দোকানের ছেলেটা – তাতে কি হবে ?

মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে এবার গাড়িতে করে আসা ছেলেটা মুখে জল নিলো , না সুবর্ণ এত কিছু দেখেনি।

সুবর্ণ বললো – ওই মিষ্টি টার দাম কি ২ টাকা কম নিবি? দাম কম নিলে কিছু হবে ?

গাড়িতে করে আসা ছেলেটা আর সামলাতে না পেরে জোরে হেসে উঠলো। মুখ থেকে জল ছিটকে বাইরে পড়লো। না সুবর্ণর গায়ে জল লাগেনি। লাগলে সে ওখানেই হাতে থাকা ব্যাগ দিয়ে ছেলেটাকে পেটাতো সিওর। ছেলেটা কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে সুবর্ণর দিকে তাকিয়ে দেখলো সুবর্ণ খুব রেগে রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা ওকে সরি বলে কোনো মতে হাসি চেপে গাড়ির কাছে গেলো।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সুবর্ণ আর চোখে দেখলো সেখানে গিয়ে ও অন্যদের কথাটা বলছে, সবাই এবার একসাথে হাসছে আর সুবর্ণকে দেখছে। এতে হাসির কি হলো বুঝলো না সুবর্ণ, টাকা দিয়ে অর্ধেক মিষ্টি নেবে কেন সে? যাই হোক এদিকে দোকানের ছেলেটা ভাঙা , সরি চেরি ছাড়া মিষ্টি রেখে দিয়ে ভালো মিষ্টি দিতে দিতে দেখছে সুবর্ণকে। ভাবটা এমন সে যদি দোকানের মালিক হতো তবে  একটা মিষ্টিও দিতো না সুবর্ণকে।

এই মিষ্টি গেলো অন্য নানা মিষ্টি নিলো সুবর্ণ,না আর কোনো গোলযোগ ঘটেনি। মনের ভেতরে রাগটাকে চাপা দিয়ে সাবধানে বেছে বেছে নিখুঁত মিষ্টিই দিয়েছে ছেলেটা।  সাইকেলে মিষ্টির ব্যাগ রাখতে গিয়ে সুবর্ণ দেখলো তার সাইকেলের কেরিয়ারে বসে শান্তনু। শান্তনু ওদের সাথেই পড়তো তারপর এম বি এ করে সদ্য চাকরি পেয়েছে। সে বললো এত মিষ্টি নিয়ে কি করবি ?
গাড়িতে করে আসা ছেলেটা এবার দোকানে বিল দিতে এসেছে। সে এদিকেই তাকিয়ে দেখছিলো।

সুবর্ণ দাঁতে দাঁত চেপে রেগে রেগে বললো – কালকে একদল আসবে, তারা গিলবে তাই।

শান্তনু – দেখতে আসবে তোকে ? কে কে আসবে ?

সুবর্ণ – ছেলে আসবে আর তার সাথে কে আসবে জানি না।

শান্তনু – দুদিন পর বিয়ে করবি, তাকে এভাবে গালাগালি দিস না। হবু বরকে এইভাবে কেউ গালাগালি দেয় ?

সুবর্ণ – চুপ কর তো। লোকের বাড়ি আসবে , গিলবে তারপর বলবে – আমাদের না মেয়ে ঠিক পছন্দ হলো না।

শান্তনু – দেখ আমি এখনো ফ্রি আছি। চাইলে তোর সাথে প্রেম, বিয়ে দুটোই করতে পারি।

সুবর্ণ – যত ফালতু কথা।

শান্তনু – না আমি সিরিয়াস।

সুবর্ণ – প্রশান্ত কাকু তোকে চেনে ?

শান্তনু – চিনবে না কেন? ভালো করেই চেনে ? কেন?

সুবর্ণ – কেননা আমি এখানে মেরে তোর মাথা ফাটিয়ে দেব তো, প্রশান্ত কাকু চিনলে তোকে হসপিটালে নিয়ে যাবে। তোর বাড়িতে খবর দেবে তাই জিজ্ঞাসা করছি।

শান্তনু – ভালো একটা প্রস্তাব দিলাম, নিবিনা তো কি করবো ?

সুবর্ণ এবার মিষ্টির ব্যাগটা করেই ওর মাথায় মারতে যাচ্ছিলো।

শান্তনু বললো- দাঁড়া দাঁড়া, মিষ্টিগুলো যাবে। তোর হবু বর এসে খেতে পাবে না।

সুমনদের দোকান থেকে মুখ বাড়িয়ে অনুপম ডাকলো ওদেরকে।

সুমনদের দোকানের বাইরে সাইকেলটা রেখে শান্তনু সুবর্ণকে রাগাতে রাগাতেই ভেতরে গেলো। হঠাৎ পাপিয়া ঢুকলো। সেও এদের সাথে পড়তো। ভেতরে গিয়ে একটা টেবিলে বসলো ওরা। বই নিলো সুবর্ণ, কেন মিষ্টি নিচ্ছে সে কথাও হলো।কথা প্রসঙ্গে বিয়ে না হওয়ার কথা উঠলো। বিয়ে হচ্ছে না সে সব কথাই হচ্ছিলো। এমন সময় গাড়িতে করে আসা ছেলে গুলো সুমনদের দোকানে ঢুকলো। তিন চার জন খাবার অর্ডার দিতে গেলো। বাকি পাপিয়া, শান্তনু,অনুপম আর সুবর্ণ  যে টেবিলে বসে আছে তার পাশের দুটো টেবিলে  গিয়ে নিজেদের মতো বসলো। সেই ছেলেটা বসলো সুবর্ণর সোজাসুজি। তারা চুপচাপ।

সুবর্ণদের চা দিতে এসে সুমনও একটা চেয়ার টেনে এদের সাথেই আড্ডা দিতে বসে গেলো। কমর্চারীরা খাবার অর্ডার নিচ্ছে। পাপিয়া বললো – ওর বিয়ে হচ্ছে না ওর দোষে।

অনুপম – কেন?

এবার একে একে সুবর্ণর সব কীর্তির কথা বলছে পাপিয়া। আর হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে সুমন, অনুপম ,শান্তনু , সাথেই গাড়িতে করে আসা ছেলেগুলো। তারা তাদের মতো করে হাসছে। পাপিয়া সুবর্ণর খুব ভালো বন্ধু ফলে সে সব জানে। সে প্রেম করে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। ফলে তাকে এইসব ফেস করতে হয় নি।

সুবর্ণ বুঝতে পেরেছে। ওই ছেলেগুলো কেন হাসছে। ওদিকে বসে থাকলেও কানগুলো এদিকে। সুবর্ণ – বললো চুপ করবি।

অনুপম – না আমরা শুনবো। তুই বল পাপিয়া।

পাপিয়া এবার বললো – তুইই বল অনুপম, তুই একটা মেয়েকে দেখতে গিয়েছিস ? সে যদি বলে তোকে – তোমাকে বিয়ের পর তোমার মায়ের সাথে ঝগড়া করতে হবে আমার জন্য। তুই কি তাকে বিয়ে করবি?

অনুপম – কি? সুমন, অনুপম ,শান্তনু , সাথেই আসা ছেলেগুলো সব হাসছে।

সুবর্ণ – এই তুই ফালতু বকবি না। আমি মোটেও এমন কথা বলিনি। আমি বলেছি – অনেক সময় ছেলের বৌকে নিয়ে প্রব্লেম হয়। পরের বাড়ির মেয়ে সেই নিয়ে একটা দোষ ধরো ব্যাপার থাকে। আমি পরের মেয়ে বলে বিনা দোষে কেউ শশুরবাড়িতে কথা শোনাবে আর আমি কথা শুনে চুপচাপ দরজা বন্ধ করে কাঁদবো এমনটা হবার সম্ভাবনা কম। দোষ করলে মাথা নিচু করে পা ধরে ক্ষমা চাইবো নাহলে কোনো মতে ক্ষমা চাইবো না। পাশে থাকতে পারবেন? এটাই বলেছিলাম।

পাপিয়া সুমনদের বললো – বল তোদেরকে এই কথা বললে কি করতিস?

অনুপম – ভুল কিছু বলেনি।  সুমন – আমি ভাই- মা, বৌয়ের ঝগড়ার সম্ভাবনা দেখলেই দোকানে এসে আশ্রয় নেবো। শান্তনু – সালা আমি বিয়েই করবো না।

পাপিয়া- লোককে দেখতে এলে তার আগে একটু পার্লারে যায়,ও যাবে না।

সুবর্ণ – আচ্ছা তাতে কি হবে, বিয়ে হলে আমি কি রোজ একবার করে পার্লারে যাবো? আমি যেমন তেমন দেখেই পছন্দ করা ঠিক নয় কি ?

অনুপম – হুম এটা ঠিক।

শান্তনু – আচ্ছা পরশু যে  আসবে তার নাম কি? দেখতে কেমন? কি করে ?

সুবর্ণ – জানিনা, দেখিনি, ইঞ্জিনিয়ার, থাকে বেঙ্গালুরু,

অনুপম – আসবে দেখে নিবি , আর তার মানে বিয়ের পর তুই বেঙ্গালুরুতে থাকবি। আমরা সব যাবো ঘুরতে ফাইনাল।

পাপিয়া – পরশু হবার ও চান্স কম। ওর বিয়ে করারই ইচ্ছা নেই।
শান্তনু – কেন?

সুবর্ণ – এটা কোনো কথা হলো না।মানা করেছি কেননা – আমার তাদেরকে দেখে মনে হয়নি যে তাকে না বিয়ে করলে মরে যাবো তাছাড়া তাদের যে আমাকে খুব পছন্দ ছিল তা নয়।আর তাছাড়া মানুষের একটা পছন্দ থাকতে তো নাকি? রাজপুত্র চায় না। মোটামুটি দেখতে, একটু আধটু স্মার্ট, একটা মোটামুটি চাকরি করুক, আর আমায় পড়তে, চাকরি করতে দিক ব্যাস।

পাপিয়া – ফালতু বকবি না। ওই ছেলেটা তোকে পছন্দ করেছিল তোর দেওয়া শর্ততেই, তুই না করেছিস।

সুবর্ণ –  আরে তুই দেখিসনি ছেলেটাকে তাই বলছিস। আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বসেছিল। ধমক দিলেই কেঁদে ফেলবে টাইপ ।

সুমন, অনুপম ,শান্তনু একসাথে –  কি? ধমক দিলেই কেঁদে ফেলবে – মানে?  ওরা হা হা করে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। ওই ছেলেগুলোও তাই।
সুমন, অনুপম ,শান্তনু ফের নিজেদের মধ্যেই – ‘ ধমক দিলেই কেঁদে ফেলবে ‘ কথাটা বলে ফের হেসে কাটিয়ে পড়লো। ছেলেগুলোও তাই।

এদিকেই কানগুলো রেখেছে। নির্লজ্জ কোথাকার সব,লোকেদের কথা শুনতে লজ্জাও হয়না। না আর থাকা যাবে না। আমি এবার উঠবো – বললো সুবর্ণ।

ঘড়িতে ১২ টা বাজলো।

পাপিয়া বললো আমিও যাই, দুজনেই উঠে দাঁড়ালো। শান্তনু – বিয়েতে নেমতন্ন করিস সুবর্ণ, তোরা যা বড়লোক, দারুন খাওয়াবি ,বুকে পাথর চাপা দিয়ে খেয়ে আসবো।

সুমন বললো – নেমতন্ন না করলেই বা কি, ভাবিস না। আমি খবর পাবোই,তোকে খবর দিয়ে দেব।চুপচাপ গিয়ে প্যান্ডেলে খেয়ে চলে আসবি।

সুবর্ণ আর পাপিয়া কিছু না বলেই বাড়ি গেলো।

দুটো চোখ সুবর্ণকে দেখে ফের নিজেদের মধ্যে কথা শুরু করলো।

 

 

ভাইফোঁটা মিটলো পরের দিন যথা সময়ে ছেলে, ছেলের মা, কাকিমা এলো। ডাক পড়লো সুবর্ণর। ঘরে ঢুকেই ছেলের দিকে নমস্কার করতে গিয়ে চমকালো সুবর্ণ। ছেলেটাও তাই। কালকের ছেলেটাই তো। বেশ নার্ভাস লাগছে সুবর্ণর। ছেলেটাও সুবর্ণকে দেখে নমস্কার বলেছে , সুবর্ণ বুঝতে পারছে ছেলেটা কোনো মতে হাসি চেপে রেখেছে।ছেলেটা কালকে সব শুনেছে, সব দেখেছে। ফটো দেখেনি মনে হয় তাই এসেছে নাহলে এই মুখো হতো না।যে বার বার হেসেছে। অন্যদের লাগিয়েছে আর হেসেছে। ইসশ। ভয় হলো সুবর্ণর – আচ্ছা পছন্দ নয় বলতে গিয়ে যদি ওই সব কথা বলে দেয় আমি কেস খাবো। যেখানে খুশি বিয়ে দিয়ে দেবে বাবা মা। উফফ আর জায়গা পেলো না ওখানে কি করছিলো কে জানে ?

 

ছেলের মা জিজ্ঞাসা করলো কি নাম?

বললো সুবর্ণ।

ছেলের মা গান করতে বললো। সুবর্ণ গান করলো।

কথায় কথায় জানা গেলো ছেলের নাম স্বপ্নীল।

দু চারটে কথা বলার পরেই ছেলের মা কাকিমা বললো তোমরা একটু একা কথা বলো। ঘর থেকে সকলে বেরিয়ে গেলে। সুবর্ণ একটু সোজা হয়ে বসলো।

স্বপ্নীল এবার বললো – তার মানে কালকের গালাগালিগুলো আমার জন্য ছিল।

সুবর্ণ – দেখুন আমি জানতাম না , জানলে বলতাম না।

স্বপ্নীল – ওই জন্যই মনের সব কথা বেরিয়েছে।

সুবর্ণ – দেখুন আমি আপনার নামে কোনো খারাপ কথা বলিনি।

স্বপ্নীল – আচ্ছা? তাই? সাক্ষী আছে কিন্তু। তবে মিষ্টিগুলো ভালো ছিল, আর চেরি না থাকলেও আমি কিন্তু সন্দেশটা খেয়ে নিতাম। আমার কোনো অসুবিধা ছিল না বলে হেসে ফেলে বললো সরি। ফের হাসছে।

সুবর্ণ – তার মানে আপনি বুঝেছিলেন আমি সেই যাকে আপনি দেখতে আসবেন?

স্বপ্নীল – না, কেননা আমি আপনার ফটো দেখিনি। তবে জানলেও দেখতে আসতাম। এত কষ্ট করে এতগুলো মিষ্টি কিনলেন, নষ্ট হতো।

সুবর্ণ পরিষ্কার বুঝতে পারছে ছেলেটা ওকে নিয়ে মজা করে যাচ্ছে। কিন্তু নতুন করে কিছু বলার নেই কেননা , সেদিনের আলোচনা সবটাই শুনেছে ছেলেটা। চুপ করে মুখটা একটু ঘুরিয়ে বসে আছে সুবর্ণ।

এ ছেলে হ্যাঁ কিছুতে বলবে না তা জানে সুবর্ণ। বাড়ির লোক আগে বলবে ছেলের থেকে কালো। তাছাড়া ছেলেটা সব শুনেছে। কিন্তু ভয় একটাই যদি না বলার কারণ হিসাবে ওগুলো বলে।

সুবর্ণ – একটা কথা – আপনারা অন্য কিছু কারণ দেখিয়ে পছন্দ নয় বলবেন, কালকে আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল তাই না বলছেন এটা বলবেন না প্লিজ। ওই সব কথা জানলে আমাকে ধরে বেঁধে যেখানে হোক বিয়ে দিয়ে দেবে। আর কালকে আমি আপনাকে নিয়ে যে টুকু খারাপ বলেছি তার জন্য ——- সরি।

প্রথমত, আমি কালকে যে মেয়েটাকে দেখেছি তার মুখে এই কথাগুলো মানায় না। আর হঠাৎ না – ই বলবো এটা ভাবার বিশেষ কারণ?

সুবর্ণ মুখ নিচু করে বললো – এমনি, কোনো কারণ নেই। কালকে সব শুনেছেন —— তাই।

স্বপ্নিল – আমার তো শুনতে বেশ মজাই লেগেছে। ‘ধমক দিলেই কেঁদে ফেলবে’ টা বেস্ট ছিল। বলে ফের হেসে ফেললো। তারপরেই বললো – আচ্ছা আপনি কি কথায় কথায় ধমক দেন?

সুবর্ণ – মাথা নিচু করেই আছে। কোনো কথা বললো না।

স্বপ্নিল – আচ্ছা কটা সিরিয়াস কথা বলি –

আপনি খুব সুন্দর গান করেন। আমি জানতাম না যে আপনিই সে যাকে আমি কাল দেখতে যাচ্ছি। কিন্তু ভালো লেগেছে আপনাকে। মনে কিছু না রেখে এত সোজাসুজি কেউ বলে ? আমি কাউকে দেখিনি। আর আমিও আপনার মতো নয় বাট সোজাসুজি কথা বলতে আমারও ভালো লাগে।

স্বপ্নীল বললো আমার মা ঝগড়া করতে পারে না। এমনকি আমাকে আজ পর্যন্ত ভালো করে বকতেও পারে নি , পারে না। দেখে নিশ্চই বোঝা যাচ্ছে। সুতরাং মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হবার সম্ভাবনা কম। তবে ভুল বোঝাবুঝি হলে পাশে থেকে মেটাবো। মেয়েদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকাই না, ধপাধপ কাউকে প্রণাম করি না। রান্না বান্না জানি। ন্যাচারাল বিউটিই আমার পছন্দ। যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি তার বাবা মা আমার কাছে বার্ডেন নয় , আমার বাবা মা যেমন তারাও তেমনি। তাই দ্বায়িত্ব নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক।

আমার বৌ পিএইচডি করলে,চাকরি করলে আমার কোনো অসুবিধা নেই, আমার বৌ যদি স্টেজ পারফর্মান্স করে আমি খুশি খুশি চাকরি ছেড়ে পিএ হতে রাজি, আর আমাকে একবার ধমক দিলে কেঁদে ফেলবো এমনটা নয়, তবে বেশিবার দিলে কি হবে জানি না। আমাকে কি বিয়ে করা যায়।

সুবর্ণ বললো – জানিনা।

এদিকে সেই মুহূর্তেই ওর মায়েরা এলো। কথা শেষ হলো না। রাতে ফোন জানানো হলো ছেলের মেয়ে পছন্দ হয়েছে।না, সুবর্ণ আর না বলেনি, না করার কিছু নেইও। স্বপ্নীলকে ভালো লেগেছে ওর।দু মাস পর বিয়ে হলো স্বপ্নিল, সুবর্ণর।  তবে অষ্টমঙ্গলা যেতে না যেতেই সুবর্ণ স্বপ্নিলের সাথে ঝামেলা শুরু করেছে, সুবর্ণ ডিভোর্স চায়। কেননা পিএইচডি করলেই এখানে থাকতে হবে সুবর্ণকে, আর স্বপ্নীলকে থাকতে হবে বেঙ্গালুরুতে । এখন সে স্বপ্নীলকে ছেড়ে থাকতে পারবে না তাই পিএইচডি করবে না বলে ঠিক করেছে। আর স্বপ্নিল চায় সে পিএইচডি করুক। সুবর্ণর যুক্তি যদি আলাদাই থাকতে হয় তাহলে ডিভোর্স করেই আলাদা থাকবে। তবে এখনো এই নিয়ে নিজের মত জানায় নি স্বপ্নিল।

 

 

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!