এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > বিজেপির বুথস্তরে সাংগঠনিক নির্বাচনে সভাপতি সহ পদাধিকারী বাছার ক্ষেত্রে একাধিক নতুন পদক্ষেপ

বিজেপির বুথস্তরে সাংগঠনিক নির্বাচনে সভাপতি সহ পদাধিকারী বাছার ক্ষেত্রে একাধিক নতুন পদক্ষেপ


এক সময় কংগ্রেস দলে ইলেকশনের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরা পদাধিকার পেতেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা ইতিহাস হয়ে যায়। এখন কংগ্রেসী প্রায় সবগুলোতেই ইলেকশন নয়, সিলেকশন শেষ কথা বলে। তা জাতীয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, এনসিপি হোক বা আরজেডি – সর্বত্র একই ঘটনা। আর এবার বাঁকুড়া জেলায় বুথ স্তর থেকে নির্বাচনের মাধ্যম এড়িয়ে দলীয় কৌশলগতভাবে সভাপতি, সহ সভাপতি তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করল ভারতীয় জনতা পার্টি। বস্তুত, 2021 সালের নির্বাচন বঙ্গ বিজেপির কাছে পাখির চোখ।

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দুই থেকে এক লাফে 18 টি আসন পাওয়াতে তারা আগামী দিনে নবান্নের ক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আরএসএস থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সকলের কাছেই টার্গেট বেঙ্গল। তাই সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনোরকম ত্রুটি রাখতে চাইছে না পদ্মফুল শিবির।

তাই বুথ সভাপতি, সহ সভাপতি নির্বাচন ভোটাভুটির মাধ্যমে হবে না। বরং আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই বুথ থেকে শুরু করে জেলা প্রতিটি স্তরে সভাপতি ও কমিটি তৈরি করার উপরে জোর দিতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টিকে। বুধবার থেকে সাংগঠনিকভাবে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদেরকে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখে নির্বাচন পরিচালনা করতে বলা হয়েছে এবং উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বুথ সভাপতি স্থির করা নিয়ে সমস্যা দেখা যাবে, সেখানে মন্ডল বা জেলাস্তরে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানো হবে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিন এই বিষয়ে বাঁকুড়া জেলার সাংগঠনিক জেলা আহ্বায়ক অজয় ঘটক বলেন, “এদিন থেকে দলের বুথ সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেছে। বুথ কমিটির সভাপতি নির্বাচনের জন্য সংবিধান অনুযায়ী ভোটাভুটিভুটি হওয়ার কথা। কিন্তু তা যথেষ্ট পরিমাণে ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ হওয়াতে সমস্ত জায়গাতে যারা মন প্রাণ দিয়ে দলের জন্য কাজ করে, তাদেরকে বুথ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।”

জানা গেছে, বুথ সভাপতিরা নিজেদের এলাকায় সদস্যদের সংখ্যা অনুযায়ী সাংগঠনিক নিয়মকে মেনে আগামী দিনে কমিটি গঠন করবেন। তবে জেলা নেতৃত্বের অনেকে বলছেন, নির্বাচন না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সভাপতি নিয়োগ করার প্রক্রিয়ার পিছনে বিজেপির সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চিন্তাধারা রয়েছে।

কারণ গত 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই রাজ্যে ভালো পারফরম্যান্স করতে শুরু করে পদ্মফুল শিবির। আর এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ব্যাপক উত্থানের পর্যন্ত অনেক নবাগত নেতাই বিজেপিতে প্রবেশ করেছে। নেতাদের সঙ্গে তাদের বহু অনুগামীও গেরুয়া শিবিরে এসেছেন। ইতিমধ্যেই সমস্ত অনুগামীদেরকে দলের সদস্যপদ গ্রহণ করিয়ে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তাই নির্বাচন যদি হয়, তবে দীর্ঘদিন ভারতীয় জনতা পার্টিতে থাকা কর্মীদের তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে নবাগত কর্মীরা। আর সেই কারণেই শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনকে এড়িয়ে যাচ্ছেন পদ্মফুল শিবির।

পাশাপাশি এটাও চিন্তার বিষয় যে, যদি নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়, আর তাতে করে যদি নব্যরা স্থান পায়, তাহলে পুরাতন বিজেপিদের মধ্যে যে বঞ্চনার জ্বালা তৈরি হবে তা দলের পক্ষে শুভকর হবে না। তাই এই অশান্তির বীজকে কোনভাবেই অঙ্কুরিত হতে দিতে চায় না ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপির সাংগঠনিক নিয়ম মোতাবেক প্রতি 3 বছর অন্তর থেকে শুরু করে রাজ্যের প্রতিটি স্তরেই সাংগঠনিক দায়িত্বে কারা থাকবে তা নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক হওয়ার কথা।

পাশাপাশি বুথ থেকে শুরু করে মন্ডল কমিটি এবং জেলা কমিটি সর্বত্রই সদস্যদের সংখ্যার উপরে নির্ভর করে কোথায় কতজনের কমিটি হবে তা স্থির হবে সদস্য সংখ্যার উপরে। যদিও এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে নির্বাচন এড়িয়ে নবাগত সদস্যদেরকে অন্ততপক্ষে এক বছর দলের সক্রিয় এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করার গাইডলাইন বেঁধে দিয়েছে পদ্মফুল শিবির। দলের হিসেব অনুযায়ী, যে সমস্ত বুথে 25 জনের কম সদস্য থাকবে, সেখানে কনভেনার ও 5 থেকে 7 জনের কমিটি করা হবে।

সদস্য সংখ্যার 25 থেকে 49 জন হলে সভাপতি সহ 13 জনের বুথ কমিটি করতে হবে বলে বলা হয়েছে। সদস্য সংখ্যা 50 থেকে 149 পর্যন্ত হলে সভাপতি বাদে 18 জনের কমিটি বুথে সদস্য সংখ্যা 150 থেকে 299 হলে 25 জনের কমিটি ও সদস্য সংখ্যা 300 বা তার অধিক হলে 31 জন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। বুথ কমিটি গঠনের পর ধাপে ধাপে নির্বাচন হয় জেলা স্তর পর্যন্ত। বাঁকুড়া জেলায় আজ থেকেই বুথ স্তরের সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাঁকুড়ার সাংগঠনিক জেলায় 26 টি মন্ডলের 1660 টি বুথ। সব মিলিয়ে প্রায় 2 লক্ষ 90 হাজারের কাছাকাছি সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় 40 হাজার পুরনো সদস্য রয়েছে। অন্যদিকে বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলায় 25 টি মন্ডলের মধ্যে 1588 টি বুথে প্রায় 2 লক্ষ 28 হাজার বিজেপি সদস্য রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় 35 হাজার পুরনো সদস্য রয়েছে। বিজেপির ঘোষণা মোতাবেক, 10 তারিখ প্রতিটি বুথে সদস্য তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ওই সদস্যরাই বুথ সভাপতিকে নির্বাচিত করবেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান ভারতবর্ষে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, তার মধ্যে সর্ববৃহৎ ভারতীয় জনতা পার্টি। আর পার্টির অন্দরে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

কিন্তু পশ্চিমবাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে পদ্মফুল শিবিরেই যেরকম কৌশলীভাবে বুথ সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করল, তাতে দলের পুরনোদের স্বার্থ যে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে সেই বিষয়ে একমত প্রায় প্রত্যেকেই। তাই বিজেপি নিজেদের রণনীতির দ্বারা আগামী দিনের সংগঠনকে কতটা শক্তিশালী করতে পারে! এখন সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!