সদরে না করে দাপুটে বিজেপি নেতার খাসতালুকে প্রশাসনিক বৈঠক করেই কি গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন মমতা? উত্তরবঙ্গ কলকাতা রাজ্য November 17, 2019 দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূল চালাতে একসময় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভরসা ছিল বর্তমান বিজেপি নেতা বিপ্লব মিত্র। তবে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে অর্পিতা ঘোষ পরাজিত হওয়ার পর সেই বিপ্লব মিত্রকে জেলা তৃণমূল সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এর পরেই দীর্ঘদিনের নেত্রীর সংসর্গ ত্যাগ করে দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে গেরুয়া শিবিরের পতাকা হাতে তুলে নেন দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের মিত্র পরিবারের মেজো ছেলে। যারপরেই সেই বিপ্লব মিত্র বিজেপির হয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় তৃণমূলকে অনেকটাই চাপে রাখবে বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। প্রথমদিকে সেইভাবে তার রণকৌশলও সাজিয়ে নিয়েছিলেন বিপ্লব মিত্র। বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিজেপিতে থাকায় সেইভাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে নেই। যার ফলে কিছুটা হলেও অসুবিধায় পড়তে তৃণমূল। পাশাপাশি বিপ্লববাবুর অনুগামীরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এই পরিস্থিতিতে নিজের দলের প্রাক্তন নেতা বিপ্লব মিত্রের গড় গঙ্গারামপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাকে ঘিরে এখন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। সূত্রের খবর, আগামী 19 তারিখ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জেলা সদর বালুরঘাটকে বাদ দিয়ে গঙ্গারামপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করেই মালদহ চলে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। আর এইখানেই তৈরি হয়েছে জল্পনা। অনেকের মনেই প্রশ্ন, বিপ্লব মিত্র বিজেপিতে যাওয়ার পর এই প্রথম দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই কি জেলার অন্য জায়গা এমনকি সদর শহর বালুরঘাট বাদ দিয়ে সেই বিপ্লব মিত্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেই তার গড়ে প্রশাসনিক বৈঠক করতে চলেছেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান! এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মনে। একাংশের মতে, তৃণমূল থেকেই বর্তমান বিজেপি নেতা বিপ্লব মিত্রের গড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রশাসনিক সভা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - যদিও বা এই ব্যাপারে বিপ্লব মিত্রকে গুরুত্ব দিতে নারাজ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষ। এদিন তিনি বলেন, “বিপ্লব মিত্র কে! আমাদের একজন নিচুতলার কর্মীর যে ক্ষমতা রয়েছে, তা বিপ্লব মিত্রের নেই। আমাদের দলে যে গোষ্ঠী কোন্দল শুরু হয়েছিল, তা বিপ্লব মিত্র দলত্যাগের পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওনাকে গুরুত্ব দেওয়ার মত আমাদের কোনো সময় নেই। উনি বলেছিলেন, তৃণমূলকে ধুলিস্যাৎ করে দেবেন! আজ পর্যন্ত একটা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যকেও বিজেপিতে নিয়ে যেতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী জেলার উন্নয়নের জন্য আসছেন। জেলার মানুষের কথা ভেবে তিনি গঙ্গারামপুরে কর্মসূচি নিয়েছেন।” কিন্তু জেলাসদরকে বাদ দিয়ে গঙ্গারামপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রশাসনিক বৈঠক নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। এদিন তিনি বলেন, “কালিয়াগঞ্জে ভোট হচ্ছে। তবে তিনি সেখানে আসছেন না। আসছেন আমাদের জেলায়। তাও জেলায় এত সভাগৃহ থাকতে সরকারের লক্ষাধিক টাকা খরচ করে তিনি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান করছেন। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলাকে নিয়ে ভয়ে আছেন। বালুরঘাটকে নিয়ে বিশেষ তার আশা নেই। তাই তিনি শহরে পা রাখতে পারছেন না।” সত্যিই কি তাই! বালুরঘাট 2011 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিতিয়ে দিলেও 2016 সাল থেকে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, প্রায় সব কটিতেই সেখানে তৃণমূল পর্যদস্তু হয়েছে। তাই সুকান্ত মজুমদারের এই কথা কিছুটা হলেও বাস্তব হতে পারে বলে মনে করছেন একাংশ। অন্যদিকে অনেকে বলছেন, দলের প্রাক্তন নেতা বিপ্লব মিত্রকে শায়েস্তা করতে এবং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেই তার গড় গঙ্গারামপুরকে বেছে নিয়ে সেখানে প্রশাসনিক বৈঠক করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের এত দিন শেষ কথা বলা বিপ্লব মিত্রের বিজেপিতে যোগদানের পর তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গঙ্গারামপুরের প্রশাসনিক বৈঠক ঠিক কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের। আপনার মতামত জানান -