এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > মালদা-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম > যারা এতদিন মারধর-বোমাবাজি করেছে, তারাই এখন বিজেপিতে! দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে দিলীপ

যারা এতদিন মারধর-বোমাবাজি করেছে, তারাই এখন বিজেপিতে! দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে দিলীপ


পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিগত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ব্যাপক উত্থানকে প্রতিহত করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস 2014 সালের নরেন্দ্র মোদির রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোরকে উপদেষ্টা বানিয়েছে। আর প্রশান্ত কিশোরের মস্তিষ্কপ্রসূত “দিদিকে বলো” কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা যখন একের পর এক এলাকায় জনসংযোগ বাড়াতে ছুটে যাচ্ছেন, তখন তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতীয় জনতা পার্টি তো আর হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না!

তাই বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও রীতিমতো কলকাতা থেকে শুরু করে সাগরদিঘী, 24 পরগনা থেকে শুরু করে কালিম্পং, বিভিন্ন জায়গায় জনসংযোগ করার উদ্দেশ্যে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু জনসংযোগের রাস্তা সব সময় কুসুমরঞ্জিত হয় না। বরং এই রাস্তায় কন্টকাকীর্ণ পথের সংখ্যায় বেশি বলে মত রাজনৈতিক মহলের। আর তাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে মেদিনীপুরের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ বাবুকে।

সম্প্রতি রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় জনসংযোগ যাত্রা করতে গিয়ে দলীয় কর্মীদের কাছে রীতিমত অস্বস্তির মুখে পড়তে হল বিজেপি সভাপতিকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রঘুনাথগঞ্জ বৃহস্পতিবার দলীয় সমাবেশে যোগ দিতে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখানে একটি বেসরকারি লজে বিশ্রামের জন্য ছিলেন দিলীপবাবু। আর বেসরকারি ওই লজে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে দিলীপবাবুর সঙ্গে দেখা করেন রঘুনাথগঞ্জ মণ্ডলের বিজেপি সভাপতি রাজু দত্ত।

রাজ্য সভাপতির সঙ্গে দেখা করে রাজুবাবু ও তার দল বল অভিযোগ করেন, সম্প্রতি জামুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান সহ বিজেপিতে যোগদান করেছেন 9 জন তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য। কিন্তু স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে এই যোগদান যে মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তা স্পষ্টই রাজ্য সভাপতিকে বুঝিয়ে দেন রাজু বাবু। তৃণমূল ছেড়ে আসা এই নব্য নেতারা মাথার উপর ছড়ি ঘোরাবেন আর দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি করে আসা নেতারা বসে বসে তা দেখবেন – তা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিন রাজ্য সভাপতির কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়ে রাজু দত্ত বলেন, “তৃণমূল থেকে জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সদস্যরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যারা বিনা ভোটেই পঞ্চায়েত জিতেছে, আমাদের কর্মীদের বোমা মেরেছে, যাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে দলের কর্মীদের – আজ তারা বিজেপিতে আসবে আর আমরা তা মেনে নেব, এটা কিছুতেই হতে পারে না।” দলীয় কর্মীরাও রাজুবাবুর সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, “কুড়ি বছর ধরে আমরা বিজেপি করি। মার খাবো, পালিয়ে বেড়াবো, আর ওরা এসে বিজেপির হয়ে পঞ্চায়েত চালাবে, আমরা কি করে মেনে নেব!”

কিন্তু, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের এবং মন্ডল সভাপতির এই ধরনের অভিযোগ শুনে বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, যেমন করেই হোক ঘাসফুল শিবির থেকে পদ্মফুল শিবিরে আসা নবাগত কর্মীদের সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে হবে। তবে তিনি কর্মীদেরকে আশ্বস্ত করেন, নবাগত তৃণমূল কর্মীদেরকে বিজেপিতে কোনো পদে বসানো হবে না। কিন্তু দলের রাজ্য সভাপতির কাছে কোনো ধরনের সান্তনা বাক্য শুনতে রাজি হননি বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। তারা রীতিমত ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বেসরকারি অতিথি আবাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

এদিনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শতাধিক বিজেপি কর্মী সমর্থক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। এমনকি বিক্ষোভ দেখানোর পর রাজ্য সভাপতির বিকেলবেলা দলীয় সভায় যোগ দিতেও দেখা যায়নি ওই সমস্ত বিক্ষোভকারী বিজেপি নেতাকর্মীদেরকে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রঘুনাথগঞ্জ মন্ডলের বিজেপি সভাপতি রাজু দত্ত বলেন, “এই অবস্থায় তৃণমূলের থেকে আসা কর্মীদের সঙ্গে সহাবস্থান করে দলে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা পুজোর পরেই দল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তবে গোটা ব্যাপারটাকে মোটেই জটিল সমস্যা হিসেবে দেখতে নারাজ মুর্শিদাবাদ জেলার বিজেপি সভাপতি সুজিত দাস। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “কর্মীরা ক্ষুব্ধ। তাই এই বিক্ষোভ দেখিয়েছে।” তবে তিনি এও বলেন, “দলীয় ওই কর্মী সমর্থকদের ক্ষোভ অস্বাভাবিক কিছু নয়।” বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে মানভঞ্জন করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে বর্তমানে বিজেপির অভ্যন্তরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নবাগত তৃণমূল কর্মী সমর্থকদেরকে নিয়ে যে বিক্ষোভ আরম্ভ হয়েছে, খানিকটা সেরকমই বিক্ষোভ রাজ্যের শাসক দলকেও সামলাতে হয়েছে অনেকদিন ধরে।

যখন অনেক নেতা-কর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে এসেছিলেন, তখন পুরাতনী তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যেও এই ধরনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃণমূলের হারিয়ে যাওয়া জনপ্রিয়তার পিছনেও দায়ী পুরাতন কর্মীদের নবাগতদের সঙ্গে সহাবস্থান না করতে পারা। তাই রাজ্যে সদ্য উত্থান ঘটা ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষেও নতুন ভার্সেস পুরোনোর লড়াই যে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের হতে পারে, সেই বিষয়ে একমত প্রায় সকল বিশেষজ্ঞরাই। এখন দেখবার বিষয়, দিলীপবাবুর নেতৃত্বে রাজ্য বিজেপি এই সমস্যাকে সমাধানের জন্য কি কি পন্থা গ্রহণ করেন!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!