এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > পদ হারাতেই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার বাড়িতে বিজেপি নেতারা! বাড়ছে রাজনৈতিক জল্পনা

পদ হারাতেই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার বাড়িতে বিজেপি নেতারা! বাড়ছে রাজনৈতিক জল্পনা


রাজনীতিতে কখন কি হবে, তা নিশ্চিত করেই কেউ বলতে পারেন না। সম্প্রতি রাজ্যের মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোতে নির্বাচন না হওয়ার কারণে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তৃণমূল হোক বা বামফ্রন্ট, রাজ্যের যে সমস্ত পৌরসভায় যারা বিদায়ী চেয়ারম্যান এবং মেয়র ছিলেন, তাদেরকেই সেখানকার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি পৌরসভায় প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহন বসুকেই প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হবে বলে মনে করা হয়েছিল।

কিন্তু রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেখানে দেখা যায়, মোহন বসুকে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান করা তো দূর অস্ত, প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি। যার পরেই রীতিমত অবাক হয়ে যায় জলপাইগুড়ি জেলার রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে নিজের ক্ষোভ উগরে দিতেও দেখা গেছে সেই মোহন বসুকে। তৃণমূলের চেয়ারম্যান হয়ে কেন তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে তার নাম রাখা হল না, তা নিয়ে তার অনুগামীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে জল্পনা।

অনেকে বলছেন, এর পেছনে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর হাত রয়েছে। কেননা জেলা সভাপতির সঙ্গে মোহনবাবুর সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। তার কারণেই তাকে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়নি। যার জায়গায় সেই বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পাপিয়া পালকে। আর এমত একটা পরিস্থিতিতে যখন এই বিষয় নিয়ে টানাপোড়েন চলছে জলপাইগুড়ি জেলা রাজনীতিতে, ঠিক তখনই জলপাইগুড়ি পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহনবাবুর বাড়িতে দেখা গেল জেলা বিজেপি নেতৃত্বদের।

যে ঘটনায় মোহন বসুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, সোমবার মোহন বসুর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন উত্তরবঙ্গ জোনের বিজেপির কনভেনার দীপেন প্রামাণিক, বিজেপি জেলা যুব মোর্চার সভাপতি শ্যাম প্রসাদ এবং মিডিয়া সেলের নেতা দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছুক্ষণ মোহন বসুর সঙ্গে কথা বলেন তারা‌‌। আর তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের এই কথোপকথন ঘিরে এখন জলপাইগুড়ি শহরে কার্যত আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

হঠাৎ কেন তারা তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়িতে আসলেন? এই প্রসঙ্গে বিজেপির দীপেন প্রামাণিক বলেন, “আমরা সৌজন্য সাক্ষাত করতেই ওনার বাড়িতে আসি। আমাদের মাঝেমধ্যে দেখা হত। কিন্তু লকডাউনের কারণে ওনার সঙ্গে দেখা হচ্ছিল না। ওনার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিলাম। পৌরসভার অতীতের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে‌। সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। যা বলার মোহনবাবু বলবেন।” কিন্তু হঠাৎ তার বাড়িতে বিজেপি নেতারা কেন?

যেখানে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের পাশে বসা নিয়ে বিতর্ক ছড়াচ্ছে, সেখানে তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর বাড়িতে বিজেপি নেতাদের এই আগমন কি নতুন কোনো বার্তা নিয়ে আসছে? তাহলে কি প্রশাসক পদে বসতে না পেরে অভিমানী হয়ে এখন বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করলেন তিনি? এদিন এই প্রসঙ্গে মোহন বসু বলেন, “সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ ছিল। ওনারা আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে এসেছিলেন। এর আগে আমি যখন দিল্লিতে নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলাম, তখন জলপাইগুড়ি সাংসদ আমার সঙ্গে দেখা করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “এটা ছোট শহর। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু আমরা একে অপরের খোঁজখবর রাখি। কোনো রাজনৈতিক কথা হয়নি‌। কোনো প্রস্তাব এলে আমি ভেবে দেখব‌। রাজনীতিতে কাল কি হবে, তা কেউ বলতে পারে না।” তবে বিজেপি নেতৃত্ব তার বাড়িতে আসলেন, দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘক্ষন কথা হল, অথচ রাজনীতির বিষয়ে একটা কথাও হবে না, এটা ভাবতেও দ্বিধাবোধ করছেন অনেকে। একাংশের মতে, আসলে মোহন বসু তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসকে কিছুটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন।

তার বাড়িতে বিজেপি নেতৃত্বদের আগমনের পর তিনি “কাল কি হবে, তা কেউ বলতে পারে না” বলে তার দল বদলের জল্পনাকে কিছুটা হলেও উস্কে দিলেন বলে দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। যদিও বা এই প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কিষাণ কুমার কল্যাণী বলেন, “আমরা করোনা মোকাবিলা নিয়ে বসে রয়েছি। ওসব নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। অসুস্থ মানুষকে কেউ দেখতে যেতেই পারেন। এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।”

তবে যে যাই বলুক না কেন, প্রশাসক পদে জায়গা না পাওয়ার পর থেকে যেভাবে মোহন বসু অভিমানী হয়ে রয়েছেন এবং তারপর যেভাবে তার বাড়িতে বিজেপি নেতাদের আগমন ঘটল, তাতে পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন একাংশ‌। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের পরেই যেখানে বিজেপি নিশ্চিত করে দিয়েছে – এবার লক্ষ্য নবান্নের কুর্শি। আর তা দখলের জন্য তৃণমূলকে ভাঙতে অল আউট যাওয়া হবে। এখন বিজেপি নেতাদের মোহনবাবুর বাড়িতে আগমনের পর মোহন বসুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তার দিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!