প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় রেকর্ডকালীন ভালো ফল করে তিন-তিনজন বিধায়ক পায় ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু, তারপর থেকেই দ্রুত বদলাতে থাকে বাংলার রাজনৈতিক পটচিত্র – বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দ্রুত প্রধান বিরোধী হিসাবে উঠে আসে বিজেপি। মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেবার পরেই বিভিন্ন উপনির্বাচনে গেরুয়া শিবির বিশাল সংখ্যক ভোট বাড়িয়ে সকলকে চমকে দিচ্ছিল।

আর তারপর বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচন বা লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে গেরুয়া শিবির তো বাংলায় এবার পরিবর্তনের পরিবর্তন করার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন আমজনতাকে। আর সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে তৃণমূল কংগ্রেস তো বটেই বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস থেকেও ঝাঁকে ঝাঁকে বিধায়ক নাকি বেরিয়ে এসে যোগ দেবেন বিজেপিতে। ফলে নাকি ক্ষমতাচ্যুত হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের।

আর বিজেপির হয়ে এই দল ভাঙানোর দায়িত্ব প্রায় একার কাঁধেই এতদিন তুলে নিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের একদা অঘোষিত দুনম্বর নেতা মুকুল রায়। ২০০৬ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক দায়িত্ব পেয়ে, তিনি দলকে বড় করার জন্য সব ধরনের নেতাদের তৃণমূলে শামিল করেছিলেন। আর এবার সেই একই কায়দায়, তৃণমূল কংগ্রেসকে ভেঙে ক্রমশ কলেবরে বাড়াচ্ছেন বাংলায় গেরুয়া শিবিরকে।

আর এবার মুকুল রায়ের সেই আক্রমনকে আরও তীক্ষ্ণ করতে ময়দানে তাঁর পাশে চলে এসেছেন – শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টোপাধ্যায়, শঙ্কুদেব পাণ্ডা, অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ বা নিশীথ প্রামানিকের মত নেতারা। ফলে গেরুয়া শিবিরের দাবি মত সত্যিই হুড়মুড়িয়ে ভাঙছে – তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে কংগ্রেস, বামফ্রন্ট সকলেই। বিধানসভার আগেই বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে ক্রমশ আকর্ষণীয় জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে বিজেপি।

আর তাই, এইসব একের পর এক দলবদলের পর দেখে নেওয়া যাক, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে হওয়া বিভিন্ন উপনির্বাচনে জিতে ও দলবদলের ফলে বাংলায় বর্তমানে বিজেপির মোট বিধায়ক সংখ্যা কত দাঁড়াল ও তাঁরা কারা –

১. মনোজ টিগ্গা (মাদারিহাট – ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী)
২. স্বাধীন কুমার সরকার (বৈষ্ণবনগর – ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী)
৩. নীরাজ তামাং জিম্বা (দার্জিলিং – ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে জয়ী)
৪. জুয়েল মুর্মু (হবিবপুর – ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে জয়ী)
৫. আশীষকুমার বিশ্বাস (কৃষ্ণগঞ্জ – ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে জয়ী)

৬. পবনকুমার সিং (ভাটপাড়া – ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে জয়ী)
৭. দুলালচন্দ্র বর (বাগদা – ১২ ই মার্চ, ২০১৯ কংগ্রেস থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
৮. শুভ্রাংশু রায় (বীজপুর – ২৮ শে মে, ২০১৯ তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হয়ে বিজেপিতে)
৯. মনিরুল ইসলাম (লাভপুর – ২৯ শে মে, ২০১৯ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
১০. সুনীল সিং (নোয়াপাড়া – ১৭ ই জুন, ২০১৯ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)

১১. বিশ্বজিৎ দাস (বনগাঁ-উত্তর – ১৮ ই জুন, ২০১৯ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
১২. উইলসন চম্পামারি (কালচিনি – ২৪ শে জুন, ২০১৯ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
১৩. শোভন চট্টোপাধ্যায় (বেহালা-পূর্ব – ১৪ ই আগস্ট, ২০১৯ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
১৪. সব্যসাচী দত্ত (রাজারহাট-নিউটাউন – ১ লা অক্টোবর, ২০১৯ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
১৫. মিহির গোস্বামী (কুচবিহার-দক্ষিণ – ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)

১৬. শীলভদ্র দত্ত (ব্যারাকপুর – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
১৭. সৈকত পাঁজা (মন্তেশ্বর – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
১৮. বিশ্বজিৎ কুণ্ডু (কালনা – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
১৯. শুকরা মুণ্ডা (নাগরাকাটা – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
২০. বনশ্রী মাইতি (কাঁথি-উত্তর – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)

২১. দীপালি বিশ্বাস (গাজোল – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সিপিএম থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
২২. অশোক দিন্দা (তমলুক – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সিপিআই থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
২৩. তাপসী মণ্ডল (হলদিয়া – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সিপিএম থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
২৪. সুদীপ মুখার্জি (পুরুলিয়া – ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ কংগ্রেস থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)
২৫. অরিন্দম ভট্টাচার্য (শান্তিপুর – ২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ কংগ্রেস থেকে দলবদল করে বিজেপিতে)

* হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায় বিজেপিতে যোগ দিলেও পরবর্তীকালে তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু হয়, তাঁকে এই তালিকায় রাখা হয় নি
** বিষ্ণুপুরের কংগ্রেস বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বিজেপিতে যোগ দিলেও পরে আবার তৃণমূলে ফেরত যান