এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > রাজ্যে যোগ্য নেতা ও সংগঠন না থাকলে শুধুমাত্র মোদী-শাহতে ভর করে বিধানসভা জেতা যাবে না!

রাজ্যে যোগ্য নেতা ও সংগঠন না থাকলে শুধুমাত্র মোদী-শাহতে ভর করে বিধানসভা জেতা যাবে না!


 

ভারতবর্ষের রাজনীতিতে একক ব্যক্তির জনপ্রিয়তার উপরে নির্ভর করে চলা পার্টির সংখ্যা নেহাত কম নয়। ভারতের সবচেয়ে পুরাতন রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেস থেকে শুরু করে এনসিপি, বিএসপি ইত্যাদি অনেক দলই ওয়ান ম্যান পার্টি হিসেবে পরিচিত। এই দিক থেকে বরাবরই পার্টি উইথ দা ডিফারেন্স হিসাবে পরিচিত ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি।

একসময় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে পার্টিতে অটল বিহারি বাজপেয়ির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া ছিল। কিন্তু তাতে করে দলের মূল শক্তি বা বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে থাকা দলের গঠনতন্ত্রের উপরে কোনো রকম প্রভাব পড়েনি। কেন্দ্রীয় স্তরে বাজপেয়ী নেতা হলেও রাজ্যস্তরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নেতৃত্বের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।

কিন্তু ছবিটা পাল্টে যেতে শুরু করেছে গত 2014 সালের লোকসভা নির্বাচনে। সেই সময় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠন হওয়ার পর কার্যত এই সময় থেকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে মোদি-শাহ যুগের পূর্ণাঙ্গ সূচনা হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

 

একদিকে যেমন সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে হু হু করে বেড়েছে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে তেমনই প্রদেশ স্তরে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। বিগত দিনে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে কার্যত হিন্দি ফিল্ড বলে পরিচিত ভারতীয় জনতা পার্টির ক্ষমতায় থাকা তিনটি রাজ্য ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে নির্বাচন হয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ সেই নির্বাচনকে লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল বলে মনে করছে। নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয় ভারতীয় জনতা পার্টিকে। এরপরে অনেকেই মনে করেছিলেন, আগত লোকসভা নির্বাচনে এই সমস্ত রাজ্যে ভালো ফল করবে বিধানসভা ভোটে জয়লাভ করা জাতীয় কংগ্রেস।

কিন্তু 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে লক্ষ করা যায় কার্যত সমীক্ষা উলটপালট করে দিয়ে সেই তিন রাজ্যের 66 টি লোকসভা আসনের মধ্যে একা ভারতীয় জনতা পার্টি 61 আসনে পদ্ম ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, কার্যত মোদি ম্যাজিক ধরাশায়ী করে ফেলে দেয় সমস্ত বিরোধী দলকে। তাই বিশ্লেষকদের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতীয় জনতা পার্টি থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদিকে ক্ষমতায় রাখতে চাইছে ভারতবর্ষের জনগণ। কিন্তু বিজেপির নামে যে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে পারছে না, তার কিছুটা ফল দেখা গেল সদ্যসমাপ্ত হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে। সেখানে লোকসভা নির্বাচনে হরিয়ানার দশটি লোকসভা আসনের মধ্যে দশটিতেই লাভ করেছিল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি। সেইখানে বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মুখ দেখেনি বিজেপি। অন্য দল থেকে সমর্থন নিয়ে সেখানে সরকার করতে উদ্যোগী হয়েছে গেরুয়া শিবির।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আবার অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে গত লোকসভা নির্বাচনে 48 টির মধ্যে 40 টি লোকসভা আসনে জয়যুক্ত হওয়ার পর এবারের বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারেনি। সরকার গড়া নিয়ে সেখানে সহযোগী শিবসেনার সঙ্গে ইতিমধ্যেই ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির।

কিন্তু চিন্তার বিষয়, শুধু এটাই নয়, যেভাবে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে শুরু করে বিদেশের মাটিতেও যেখানেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার স্বাগত বার্তা বহন করে নিয়ে আসে গগনভেদী স্লোগান এবং জনতার উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ, নিজের নির্বাচনে যেখানেই গিয়েছেন, তিনি সেখানকার মানুষই তাদের আশীর্বাদ উজাড় করে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির পদ্মফুল। তবে লোকসভা ভোট সমাপ্ত হওয়ার পরেই রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনগুলোতে মুখ থুবড়ে পড়তে হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টিকে।

বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, কেন্দ্রীয় স্তরে জনতা আকাঙ্ক্ষিত নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদী থাকলেও রাজ্যস্তরে ভারতীয় জনতা পার্টির সেরকম কোনো প্রভাবশালী মুখ নেই। যার উপরে সম্পূর্ণ আস্থা রেখে এবং যার জনপ্রিয়তাকে আঁধার করে পার্টি নির্বাচনে বৈতরণী পার করতে পারে। আর সেই কারণেই রাজ্যে নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রেও সেই নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের প্রতি আস্থা রাখতে হচ্ছে বিজেপিকে।

কারণ সদ্যসমাপ্ত দুটি বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে এসে অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় নীতি, কেন্দ্রের সরকার উপলব্ধি ধারা 370 অবলুপ্তি, তিন তালাক বন্ধ ইত্যাদি ইসু তুলতে ছাড়েননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেখা গেল কেন্দ্রীয় সরকারের উপলব্ধি অনুযায়ী রাজ্যের মানুষ বিজেপির রাজ্য নেতাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারলেন না সম্পূর্ণরূপে। কাজেই বিভিন্ন জায়গায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে সহযোগী দলেদের সাহায্য নিয়ে সরকার গড়তে হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টিকে। চিন্তার কারণ আরও রয়েছে।

ইতিমধ্যেই নীতীশ কুমারের সঙ্গে একাধিক ইস্যুতে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির। ধারা 370 এ লোকসভা এবং রাজ্যসভায় ভোটদান থেকে বিরত থেকে ছিল নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড। এমনকি কেন্দ্রের এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের পাশে নেই বলে প্রকাশ করে দিয়েছে নীতীশ কুমারের দল। তাই আগামী দিনে নির্বাচনে জোটবদ্ধ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গেও যে খুব একটা মসৃণ পথ পাবে না ভারতীয় জনতা পার্টি, তা বলাই বাহুল্য।

বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির বিকল্প কোনো মুখ না থাকার কারণে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতি আস্থা রাখে মানুষ। কিন্তু রাজ্যের ক্ষেত্রে তা নয়। ইতিমধ্যেই ভারতীয় জনতা পার্টি দ্বিতীয়বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জনসংঘের জন্মলগ্ন থেকে মুখরিত ধারা 370 কে অবলুপ্ত করে দিয়েছে। খুব শীঘ্রই রাম মন্দির মামলার রায় প্রকাশ করতে চলেছে সুপ্রিমকোর্ট।

আর সেই রায়দান যদি রাম মন্দিরের পক্ষে যায়, তাহলে আগত দিনে শীঘ্রই তৈরি হয়ে যাবে রাম মন্দির। যা আগামী দিনে সম নাগরিক সন্ধি থেকে শুরু করে অন্যান্য আরও অনেক ইস্যুতে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার মোতাবেক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি। যার অর্থ এই যে নিজেদের প্রতিপক্ষের প্রতি এমন কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায় ভারতীয় জনতা পার্টি, যাতে আগামী দিনে কেউ টেক্কা দিতে না পারে এবং দেশের পারম্পরিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও আমূল পরিবর্তন করে ফেলতে চাইছে ভারতীয় জনতা পার্টি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

অনেকে বলছেন, একসময় ভারতীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তার জনপ্রিয়তা কিছু কম ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে জনতা পার্টির সঙ্গে নির্বাচনে সেই ইন্দিরা গান্ধী নিজের লোকসভা আসনটিও পরাজিত হয়েছিলেন। তাই জনপ্রিয়তা কার কখন বাড়ে, কার কখন কমে, তা বলা যায় না।

কিন্তু দল যদি প্রকৃতভাবে মজবুত পরিস্থিতিতে না থাকে, শরিক দলের প্রতি যদি বেশি বিশ্বাস রাখতে হয়, তাহলে আগামী দিনে আজকের কংগ্রেসের দশাতেও পরিণত হতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এখন নরেন্দ্র মোদী- অমিত শাহের প্রতি ভরসা রেখে রাজ্যগুলোতে বিজেপি তাদের সংগঠন দলগতভাবে কতটা শক্তিশালী করতে পারে, সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!