উপনির্বাচনের হারেই বেরিয়ে পড়ল কঙ্কাল! বিজেপিতে এখন পাল্টা দোষারোপ আর ক্ষোভের ঝড়! নদীয়া-২৪ পরগনা রাজ্য November 29, 2019 ছয় মাস আগে হয়েছিল লোকসভা নির্বাচন। আর ছয় মাস পরে হল তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। কিন্তু ফলাফলে যেন আকাশ- পাতাল ফারাক লক্ষ্য করা গেল। লোকসভায় কলকাতা সংলগ্ন চারটি জেলাতে বিজেপি তৃণমূলকে পর্যুদস্ত করতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এদিন করিমপুর, খড়গপুর এবং কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের তিনটিতেই বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূল বাড়তি অক্সিজেন পেলে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিকে করিমপুর, খড়গপুর এবং কালিয়াগঞ্জে খারাপ ফলাফলের পরেই অন্যান্য জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে দোষারোপের পালা। মন্ডল সভাপতি নিয়ে যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে এবং যেভাবে সেই মন্ডল সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে, তাতে অন্য জেলাতেও নির্বাচনের প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ। যার কারণে এই উপনির্বাচনের ফলাফলের পর দলকে সতর্ক হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন অনেক জেলার বিজেপি নেতা কর্মীরা। কিছুদিন আগেই লোকসভা নির্বাচনে উত্তর 24 পরগনা এবং দক্ষিণ 24 পরগনায় বিজেপি ব্যাপক সাফল্য পেলেও, বর্তমানে যেভাবে এই সমস্ত জায়গায় মন্ডল সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে একতা না থাকায় বিজেপি যে এখানে প্রবল বিপাকে পড়তে পারে, সেই ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে অনেকের মনেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপনির্বাচনে বিজেপির যে ফলাফল সামনে এসেছে, তাতে নিজেদের সেফসিট বলে দাবি করা খড়গপুর এবং কালিয়াগঞ্জে ধূলিসাৎ হতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। যেখানে এনআরসি ইস্যু ফ্যাক্টর হলেও বিজেপির অন্দরের একতার অভাবকেই দায়ী করছে একাংশ। ইতিমধ্যে বেশকিছু জেলার বিজেপি নেতৃত্বের গলায় এই সমস্ত সুর শুনতে পাওয়া গেছে। এদিন এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সুফল ঘাটু বলেন, “আমরা যারা কঠিন সময়ে দল করেছি, তাদের অনেককেই বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন পয়সা দেখে পার্টির পদ দেওয়া হচ্ছে। এখন এই পার্টি বড়লোকদের হয়েছে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে।” আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - তবে ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র অবশ্য অন্য কথা বলছেন। এদিন তিনি বলেন, “উপ নির্বাচনের ফলাফলে আমরা মুষড়ে পড়িনি। আমাদের কর্মীরা উজ্জীবিতই আছেন।” তবে ফাল্গুনীদেবী তার বক্তব্য দিয়ে যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করুন না কেন, দল যদি এইভাবে চলতে থাকে এবং গোষ্ঠী কোন্দলে মজে যায়, তাহলে জয় পাওয়া যে কার্যত অসম্ভব ব্যাপার, তা বুঝতে পেরেছেন বিজেপি নিচুতলার নেতাকর্মীরা। এদিকে তিন বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি পর্যদুস্ত হওয়ায় গেরুয়া শিবিরকে প্রবল কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা। এদিন এই প্রসঙ্গে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, “বাংলায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিকল্প যে কেউ নেই, তা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। বিজেপি সরকারের জন্য মানুষ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাই বিজেপিকে যোগ্য জবাব দিয়েছেন। আগামী পৌরসভা ভোট ও বিধানসভা ভোটে বিজেপি এই জবাব পাবে।” একইভাবে বিজেপিকে আক্রমণ করে উত্তর 24 পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং হাওড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ রায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখে মানুষ ভোট দিয়েছেন। গত লোকসভা ভোটে কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি ভোট পেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে বিজেপি যে কতটা দেশের সর্বনাশ করছে, তা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। আর তারই প্রতিফলন এই উপনির্বাচনের রায়ে দেখা গেছে।” তবে তৃণমূল বিরোধী দল হিসেবে বিজেপিকে কটাক্ষ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে এবারের উপনির্বাচনের ফলাফলে বিজেপিকে অনেকটাই ডুবিয়ে দিল, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত অনেকেই। ফলে শৃঙ্খলাপরায়ন দল হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত হওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি এখন নিজেদের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আগামী 2021 এর বিধানসভা জন্য নিজেদের কতটা প্রস্তুত করতে পারে, সেদিকেই নজর থাকবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। একটা উপনির্বাচনে ভরাডুবিই কিন্তু বিজেপির সাংগঠনিক দৈনদশা প্রকট করে দিল! আপনার মতামত জানান -