এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > বাংলায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এবার নতুন সংযোজন হতে চলেছে এনারা , জেনে নিন বিস্তারিত

বাংলায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এবার নতুন সংযোজন হতে চলেছে এনারা , জেনে নিন বিস্তারিত


একদা রাজ্যে সন্ত্রাসের অভিযোগে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। সময়টা ছিল বামফ্রন্ট শাসিত বঙ্গের। তারপর 2011 সালে সেই হার্মাদ বাহিনীদের সন্ত্রাসকেই মূল হাতিয়ার করে রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে।

প্রসঙ্গত, বামফ্রন্ট জমানায় বারংবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বামপন্থী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কখনও কোলকাতায়, কখনও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে, কখনও বা দিল্লির লোকসভায় সোচ্চার হতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর একুশে জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য প্রাণ দেওয়া সকল শহীদ পরিবারেরকে দলের তরফ থেকে সম্মাননা এবং আশ্বাস প্রদান করেন। তাই রাজনীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মীদের আত্ম বলিদানের প্রতি নিজস্ব দলের সহমর্মিতা বাংলা রাজনীতিতে নতুন নয়। আর এবার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতিকেই তারই বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপি।

বস্তুত, গত 6 জুন বেনারস থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেন। আর এই অভিযান সমগ্র ভারতবর্ষে চলবে বলেই জানা গেছে। ভারতবর্ষের অন্যান্য অঙ্গরাজ্য তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান যে একটা নতুন আকার পেতে চলেছে এই বিষয়ে সন্দেহ নেই রাজনৈতিক মহলের।

বিগত 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারতীয় জনতা পার্টি। আর সেই থেকে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি তাদের। একেবারে বুথ স্তর থেকে কাজ করে তৃণমূল বিরোধী মানসিকতার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিজেদের দলে শামিল করে বঙ্গ বিজেপি নিজেদের প্রস্তুত করে। তবে এই গোটা ঘটনাচক্রের উপরে অবশ্যই কড়া দৃষ্টি ছিল দিল্লির দিন্দয়াল উপাধ্যায় মার্গের।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরামর্শে এবং রাজ্য নেতৃত্বের পরিশ্রমে সুফল পায় বিজেপি। গত 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেকটাই বেগ দিয়ে ৩৪ প্রাপ্ত তৃণমূল কংগ্রেসকে ২৩ আসনে আটকে দেয় বিজেপি। আর এবার তৃণমূলের সেই পুরনো সন্ত্রাস বিরোধী ইমেজকে কাজে লাগিয়েই বঙ্গ রাজনীতির মাঠে আরও বলিষ্ঠভাবে নামতে দেখা যাচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে।

শোনা যাচ্ছে, বিজেপির নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে বাংলার শহীদ পরিবারের সদস্যদেরকে তালিকাভুক্ত সদস্য করতে উদ্যত হয়েছে। বঙ্গ বিজেপির যে সমস্ত দলীয় নেতাকর্মীরা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছে বলে বিজেপি অভিযোগ করছে, 2021 সালের আগে সেই সমস্ত পরিবারদেরকেই বিজেপি তাদের সদস্য বানানোর ব্যাপারে তৎপর হয়েছে।

সূত্রের খবর, আজ নয়াদিল্লিতে দিন্দয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রাসবিহারী বেরা। বিজিপির তরফে ভূতপূর্ব সময় অভিযোগ করা হয়েছিল, এই রাসবিহারী বেরার বাবা রামপ্রসাদ বেরাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খুন করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডা বাহিনী।

বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই নতুন সদস্যরা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং তৃণমূলী সন্ত্রাস নিয়ে আরও বেশি করে সোচ্চার হতে পারেন।, লক্ষ্য করার মতো বিষয়, বিগত দিনে যেভাবে বাংলার ভগ্নপ্রায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের লোকসভায় সরব হতে দেখা গিয়েছিল তদানীন্তন রাজ্যের বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসকে, তেমনই সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের পরে লোকসভায় বাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক ভাবে সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে হুগলি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিজেপি সাংসদদের।

তবে শুধু একতরফা বিজেপি বলেছে তা নয়, বিজেপি বলার পরে এই নিয়ে তাদের সঙ্গে জোড় বাকবিতণ্ডা বাধে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদদেরও। এমনকি এ নিয়ে বিগত এক অধিবেশনে কিছুটা ভৎসনা করতে দেখা যায় লোকসভার স্পিকার ওম বিরলাকে। বাংলার সাংসদদের উদ্দেশ্যে ওম বিড়লা বলেন, “এটা ভারতবর্ষের লোকসভা। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নয়।”

কিন্তু যাই হোক না কেন, আগামী দিনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি যে আরও কোমর বেঁধে মাঠে নামবে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই রাজনৈতিক মহলের। আর সেই বিরোধিতায় বিজেপি যে এবার শহীদ পরিবারকে কাজে লাগাতে চলেছে তা অবশ্য 30 মে রাষ্ট্রপতি ভবনে দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল।

যেখানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মোট 54 টি শহীদ পরিবারের সদস্যকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “গণতন্ত্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমার যাবার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যেভাবে গোটা ব্যাপারটাতে রাজনৈতিক রঙ ছড়িয়ে তাকে কুলুষিত করল, এরপরে আমার শপথ গ্রহণে যাওয়া উচিত হবে না। আমায় ক্ষমা করবেন মোদিজি।”

কিন্তু বঙ্গ রাজনীতিতে শহীদ পরিবার এবং রাজনৈতিক হানাহানির শিকার ব্যক্তিরা যে বরাবরই বঙ্গের মানুষদের কাছ থেকে সহানুভূতি পায়, সেই বিষয়ে নিশ্চিত বিজেপি। আর তাই সদস্য সংগ্রহ অভিযানে তারা যে শহীদ পরিবারকে আরও বেশি বেশি করে শামিল করবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত ওয়াকিবহাল মহল।

সূত্রের খবর, এই যোগদানের ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপির যুব সংগঠনকে। এদিন এই প্রসঙ্গে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার কেন্দ্রীয় সম্পাদক সৌরভ সিকদার বলেন, “একটি শহীদ পরিবারের একজন সদস্যকে আজ আমরা দিল্লিতে বিজেপির সদস্য পদ দিয়েছি। বাকি যোগদান পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে করানো হবে।”

অন্যদিকে এই ব্যাপারে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “সদস্য সংগ্রহ অভিযান স্থানীয় স্তরে প্রত্যেকের বাড়িতে বিয়ে করা হবে। সামাজিক ক্ষেত্রে সমস্ত বিশিষ্ট জনের বাড়িতেও যাবে। দিল্লিতে শহীদ পরিবারের সদস্যকেও বিজেপিতে যোগ করানো হয়েছে।” যাদের একজন সিপিএম আশ্রিত গুন্ডাবাহিনী এবং অন্যজন তৃনমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দ্বারা খুন হয়েছে বলে বিজেপির অভিযোগ।

এছাড়াও সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত জম্মু-কাশ্মীরের তিনটি শহীদ পরিবারের সদস্যরাও গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছে। উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে জম্বু কাশ্মীর হামলা এবং তার জবাবে ভারতের এয়ার স্টাইক যে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে একটি বিশেষ মাত্রা যোগ করেছিল সেই বিষয়েও নিশ্চিত রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

তাই এবার সেই জম্মু কাশ্মীরের শহীদ পরিবার বিজেপিতে যোগ দেওয়াতে এবং রাজ্যে রাজ্যের বিজেপির শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিজেপির ছাতার তলায় আসাতে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হতে চলেছে তা একপ্রকার নিশ্চিত ভাবেই বলা চলে। কিন্তু এই যোগদান পর্ব বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায় পুরনো সন্ত্রাস বিরোধী গণ আন্দোলনের চেহারায় বিজেপির মুখ উজ্জ্বল করতে পারে কিনা বা গণতান্ত্রিক দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ প্রকৃত অর্থে ভূতপূর্ব বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত করে লড়াই আন্দোলন করতে পারে কিনা! এখন সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!