প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –  বরাবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত তিনি। মন্ত্রিসভা থেকে শুরু করে দলীয় স্তর, সমস্ত জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করতে দেখা গেছে ফিরহাদ হাকিমকে। কলকাতা পৌরসভার প্রশাসক থেকে শুরু করে পৌরমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। আর তৃতীয় তৃণমূল সরকারের আমলে তাকে দেওয়া হয়েছিল পরিবহন দপ্তর। কিন্তু সেই সুখ ভোগ করতে পারলেন না ফিরহাদ হাকিম। মন্ত্রিসভা গঠনের কিছুদিনের মাথায় চেতলার বাড়ি থেকে গত সোমবার নারদ কান্ডে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফিরহাদ হাকিমের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয় রাজ্যের আর এক মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা ফিরহাদ হাকিম সহ তৃণমূলের অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তারি নিয়ে শাসক দলের পক্ষ থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করার অভিযোগ করা হচ্ছে।

কিন্তু তার মাঝেই সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে ফিরহাদ হাকিমকে গ্রেপ্তার করার পর কার্যত বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তার কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম। যেখানে প্রতি মুহূর্তে তার বাবাকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হত বলে অভিযোগ করতে দেখা গেল তাকে। স্বাভাবিক ভাবেই তার এই অভিযোগের পর তাহলে কি বিজেপিতে যোগ না দেওয়ার কারণেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ফিরহাদ হাকিমকে গ্রেপ্তার করা হল! এখন তা নিয়ে নানা মহলে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।

সূত্রের খবর, ফিরহাদ হাকিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই ব্যাপারে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তার মেয়ে প্রিয়দর্শনী হাকিম। এদিন তিনি বলেন, “যারা বিজেপিতে যোগ দেননি, শুধুই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাবাকেও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।” স্বাভাবিক ভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনের বেড়াজালে ফিরহাদ হাকিম গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে একাংশ দাবি করলেও, তার মেয়ের এই উক্তি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ প্রতি সময়ে করা হচ্ছে যে, বিজেপি পরাজিত হয়ে স্থির থাকতে পারছে না। তাই এখন প্রতিহিংসাপরায়ণতার রাস্তা বেছে নিয়ে তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ হাকিমকে গ্রেপ্তার করে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিতে চাইছে তারা।

তবে সেই একই অভিযোগ অর্থাৎ তার বাবাকে বিজেপিতে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হত বলে যে কথা বললেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রীর কন্যা, তাতে গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তি যে কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে কি সত্যি সত্যিই বিজেপিতে যোগ না দেওয়ার কারণেই গ্রেপ্তার হলেন ফিরহাদ হাকিম! এখন এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে নানা মহলে।

তবে গ্রেফতারের পর ফিরহাদ হাকিম সম্পর্কে তার মেয়ের এই ধরনের উক্তি বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলে দিলেও, তা মানতে নারাজ একাংশ। অনেকে বলছেন, আইন আইনের পথে চলছে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলা নারদা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী, এক বিধায়ক এবং এক প্রাক্তন মন্ত্রী। সেক্ষেত্রে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণের কোনো অভিযোগ খাটে না।

আসলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসলেও দুর্নীতি পরায়ন নেতারা এখন গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে শাসকদল। তাই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে এই ধরনের কথা বলা হচ্ছে। তবে গেরুয়া শিবির বা সমালোচক মহলের পক্ষ থেকে যে কথাই বলা হোক না কেন, গ্রেপ্তার হওয়ার পরই ফিরহাদ হাকিমের কন্যার এই মন্তব্য যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।