এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > এবার বিজেপির হয়ে সরাসরি প্রচারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, জোর চাঞ্চল্য

এবার বিজেপির হয়ে সরাসরি প্রচারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, জোর চাঞ্চল্য

 

বরাবরই হিন্দুত্বের রাজনীতির জন্য প্রসিদ্ধ ভারতীয় জনতা পার্টি। এক্ষেত্রে দেশজুড়ে নেপথ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রচার অভিযান চালিয়ে চলে অনেক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। যাদের মধ্যে বজরং দল, হিন্দু সেনা এবং সর্বোপরি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অন্যতম। বিজেপি সরকারের হিন্দুত্ববাদী কর্মকান্ড সমর্থন করে থাকে এই সংগঠনগুলি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজেপির পক্ষে নেপথ্যে প্রচার চালায় তারা।

তবে সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিক আইন নিয়ে জনগণের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে একেবারে রাজ্য স্তর থেকে শুরু করে বুথ স্তর পর্যন্ত যেভাবে বিরোধী প্রচার চালাচ্ছে, তাতে করে আগামী নির্বাচনগুলিতে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে এই প্রচার যে কঠিন প্রমাণ হতে পারে, তা বুঝতে বাকি নেই গেরুয়া শিবিরের নেতা-নেত্রীদের। আর সেই কারণেই এইবার গোপন প্রচারের রাস্তা ত্যাগ করে একেবারে প্রকাশ্যেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে মাঠে নামতে দেখা গেল বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে।

এক্ষেত্রে সংশোধিত নাগরিক আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানকেই সমর্থন জানানো হচ্ছে পরিষদের পক্ষ থেকে। গত রবিবার কোচবিহারের মাঘপালায় চড়কের মাঠে সমাবেশের ডাক দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। আর এই সমাবেশ থেকেই সংশোধিত নাগরিক আইনের স্বপক্ষে আওয়াজ তোলে ওই হিন্দু সংগঠন। জনগণের মধ্যে সিএএর সমর্থনে বলতে গিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা বলেন, “বাংলাদেশ থেকে কিভাবে ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতবর্ষে আসতে হয়েছে, সেই দেশের হিন্দুদেরকে।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

একই সঙ্গে এই আইন প্রসঙ্গে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা। এদিন কুচবিহারের চড়কের মাঠে হিন্দু মহামিলন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফ থেকে অত্যন্ত সুকৌশলে এই সমাবেশের জন্য চড়কের মাঠকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ মাঘপালা চড়কের মাঠ এলাকা উদ্বাস্তু সম্প্রদায় অধ্যুষিত।

বিশেষত 1971 সালে বাংলাদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে আসা নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষেরা আধিক্য এই এলাকায় বেশি। তাই নাগরিক আইন নিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বক্তব্য এই মানুষগুলোর কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যান বলছে, সভাস্থলের আশেপাশে প্রায় কুড়ি হাজার নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের বসবাস রয়েছে। আবার এই ঘটনা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে যায়, এই কারণে যে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল কোচবিহার জেলা নমঃশূদ্র পরিষদের তরফ থেকে।

এছাড়াও সভার সমগ্র কার্যাবলী পরিচালনা করেন নমঃশূদ্র পরিষদের কর্তাব্যক্তিরা। উল্লেখযোগ্যভাবে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির অনেক নেতাকর্মীরা। নিজেদের সভা প্রসঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কোচবিহার জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ থাপা বলেন, “যে সরকার হিন্দুদের স্বার্থে কাজ করবে, আমরা তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ জানাব। আর আমাদের দেশে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন। সেই কথা আমরা বারবার বলে আসছি।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাহায্যের পাশাপাশি সংশোধিত নাগরিক আইনের বিরোধিতা করে কোচবিহার জেলাতেও পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে সর্বস্তরে সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে একেবারে অন্তস্থল পর্যন্ত জনমত গড়ার কাজ চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। ভারতীয় জনতা পার্টি কিন্তু প্রথম দফায় প্রচারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি পিছিয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে। তারা মনে করেছিল, জেলার ভাটিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের সঙ্গে থাকবে।

কিন্তু বিজেপির সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কিন্তু এদিনের সভায় প্রচুর পরিমাণে নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড় হওয়াতে রীতিমতো বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে জেলার গেরুয়া শিবির। বিগত সময়ে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের মধ্যে কোচবিহার জেলায় পাবনা এবং ময়মনসিংহ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের ভিড় বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। এদিন সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন হরেরাম সিংহ বলেন, “সেই 40 বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমরা এখনও অনেক স্মৃতি মনের মধ্যে ভাসে। এবারে স্থায়ী নাগরিক হতে চাই। তাই নরেন্দ্র মোদি সরকারের নাগরিকত্ব আইনে আমরা খুশি।”

 

পাশাপাশি তিনি বলেন, “বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে সেই বিষয় বোঝানো হচ্ছে।” উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি জেলার নমঃশূদ্র সম্প্রদায় এক নেতা অধীর চন্দ্র মন্ডল বলেন, “বাংলাদেশ থেকে সবাইকে কিভাবে আসতে হয়েছে, তা কারও অজানা নয়। দেশ যখন আমাদের সুরক্ষা দিচ্ছে, তখন বিরোধিতা ঠিক নয়।” কিন্তু বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অথবা অন্যান্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সমর্থনকারী নেতৃত্বের কথা মানতে রাজি নয় কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিনয় কৃষ্ণ বর্মন। এদিন এই বিষয়ে তিনি বলেন, “বিজেপি ধর্ম ভাঙ্গিয়ে দল করছে। মানুষ সব বুঝতে পারছে। ঠিক সময় জবাব দেবে।”

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রথম দফায় নাগরিকত্ব আইনের বিপক্ষে তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে প্রচার অভিযান চালিয়েছে, তাতে করে যথেষ্ট কোণঠাসা হতে হয়েছে রাজ্যের গেরুয়া শিবিরকে। কিন্তু এবার দ্বিতীয় দফাতে একেবারে কলকাতা থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে যেভাবে ঝাপিয়ে পড়েছে রাজ্যের গেরুয়া শিবির, তাতে করে কিন্তু আগামী দিনে রক্তচাপ বাড়তে পারে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের। এখন গোটা পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায়! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!