প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – আজ নির্বাচনের চতুর্থ দফার দিনে এক বড়োসড়ো বোমা ফাটালো বিজেপি। প্রথম দফার ভোটের দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অডিও টেপ ফাঁস করে দিয়েছিল বিজেপি। আজ বিজেপি ফাঁস করে দিলো তৃণমূলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের একটি অডিও ক্লিপ। বিজেপির আইটি সেলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত মালব্য এমনই একটি অডিও ক্লিপ আজ টুইট করেছেন। যেখানে প্রশান্ত কিশোরের কন্ঠে তৃণমূলের পতনের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এই অডিও টেপটির সত্যতা বিচার করে দেখা প্রিয় বন্ধু মিডিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

এই অডিও টেপে শোনা যাচ্ছে যে, দিল্লির বেশ কিছু সাংবাদিক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছেন তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায় তিনি জানাচ্ছেন যে, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, হিন্দিভাষী ভোটার, তপশিলি ভোট, মেরুকরণ হলো বড় ফ্যাক্টর। তিনি জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর নামে ভোট হচ্ছে। হিন্দুরা ভোট দিচ্ছেন বিজেপিকে। শুভেন্দু অধিকারীর চলে যাওয়া বা প্রশান্ত কিশোরের মত বিষয়গুলি তেমন কোন প্রভাব ফেলছে না। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা এই সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। হিন্দি বাসীদের ভোট রয়েছে এক কোটিরও বেশি। ২৭ শতাংশ ভোট আছে দলিতদের। যারা সকলেই বিজেপির পক্ষে। আর তার সঙ্গে আছে মেরুকরণ।

প্রশান্ত কিশোর জানালেন, মতুয়াদের অধিকাংশ বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন । মতুয়াদের ৭৫ শতাংশ ভোট দিচ্ছেন বিজেপিকে, ২৫ % তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছেন। তাঁরা বহু মানুষকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, কাকে তারা ভোট দেবেন? সরকার কার হবে? দেখা যাচ্ছে তাঁর সমীক্ষায় অধিকাংশ মানুষ জানাচ্ছেন যে, সরকার আসছে বিজেপির। যারা বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন তাঁরা এমনটা বলছেন। কিছু বাম ভোটারও এমনটা ভাবছেন।

কিছু বামপন্থী মনে করছেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের সুবিধা হবে, এখন যেভাবে হোক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো প্রয়োজন। প্রশান্ত কিশোর জানালেন, তাঁরা মনে করতেন যে, একেবারে তৃণমূল স্তরে বিজেপির সংগঠন নেই, কিন্তু বাস্তবটা তেমন নয়। বিজেপির রয়েছে প্রচুর কর্মী, সমর্থক। বাম থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছে অনেকে। কিন্তু, এখন তারা বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। একটা-দুটো জেলা বাদ দিলে বিজেপির সংগঠন সমস্ত জায়গায় শক্তিশালী রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ হিন্দু ভোট দিচ্ছেন বিজেপিকে।

বিজেপির উত্থান ঘটার বড় কারণ হিসেবে প্রশান্ত কিশোর দায়ী করেছেন সংখ্যালঘু তোষণকে। তিনি জানিয়েছেন, গত ২০ বছর ধরে বাংলাতে সংখ্যালঘু তোষণ চলছে। সমস্ত রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের তোষণ করতে ব্যস্ত। সংখ্যালঘুরা যাকে ভোট দেবে তারাই সরকার গঠন করবে, এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকে মুসলিম ভোট দখলে ব্যস্ত। এই প্রথমবার হিন্দুরা মনে করছেন যে, তাদের ভোটেরও গুরুত্ব আছে। এই বিষয়টি কাজে লাগাতে পেরেছে বিজেপি।

প্রশান্ত কিশোর আরো জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধীতার হাওয়া তেমন একটা নেই। গোটা দেশে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন তিনি। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোটার তাঁকে ভগবান বলে মনে করেন। হিন্দিভাষীরা তাঁকে সমর্থন করছেন। প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা রয়েছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা বাংলায় একই রকম। বাংলার মানুষ কখনো বিজেপি সরকার দেখেননি। তাই অনেকেই ভাবছেন, বিজেপি উন্নয়নের জন্য যা কিছু করেছে, তা থেকে বঞ্চিত বাংলা।

একদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিজেপিকে সুবিধা করে দিচ্ছে। ভোটের প্রচারও বিজেপির দিকে হাওয়া টানছে বলে মনে করছেন তিনি। ইতিপূর্বে, ভোটের প্রথম দফার দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অডিও টেপ ফাঁস করে দিয়ে রাজনীতিতে শোরগোল তুলে দিয়েছিল বিজেপি। এরপর আজ প্রশান্ত কিশোরের অডিও টেপ প্রকাশ করেও তুলে দিল শোরগোল। ঘটনায় তীব্র অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের।