এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সরকার পরে গেলেও বাংলায় হবে না সিএএ-এনআরসি, আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে আইন জারি করতে হবে: মমতা

সরকার পরে গেলেও বাংলায় হবে না সিএএ-এনআরসি, আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে আইন জারি করতে হবে: মমতা

 

নাগরিকত্ব আইন সংসদে পেশ হওয়ার আগেই সেই আইনকে বাংলায় লাগু হতে দেবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট লাগু হয়ে যাওয়ার পরেও পশ্চিমবঙ্গে সেই বিল কার্যকর হবে না এবং রাজ্য সরকার সেই বিলকে কার্যকর করবে না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

আবার এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারকে প্রত্যক্ষ আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকার পড়ে গেলেও বাংলায় হবে না সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট। হবে না এনআরসি। আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে এই আইন জারি করতে হবে।” বস্তুত, সোমবার দিন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে মিছিলে নামেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি স্পষ্ট করেছেন, যতদিন না পর্যন্ত এনআরসি এবং ক্যাব প্রত্যাহার করা হচ্ছে, আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব। তবে শান্তি-শৃঙ্খলা বজিয়ে রাখার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করব। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করব। যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমরা এনআরসি বা ক্যাব জারি করতে দেব না।” এদিনের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা আমাদের সরকার ফেলে দিতে পারে। কিন্তু আমরা আত্মসমর্পণ করব না। বাংলায় ওদের এই আইন জারি করতে হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে।”

কেন্দ্রের ভারতীয় জনতা পার্টির সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, “এই লড়াই কোনো ধর্মের লড়াই নয়, এটা সংস্কৃতি, মানুষ, সর্বধর্ম সমন্বয়ের লড়াই। একটা সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণ ধর্মের আমদানি করে দেশটাকে ভেঙে দিচ্ছে। ওরা তলায় তলায় বিভেদ তৈরি করছে। বিজেপির দালালদের আমি ক্ষমা করি না।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করি না। ধর্ম যার যার, দেশ সবার। আমরা সাহায্য করি, ভাগাভাগি করি না।” দেশের অন্যান্য রাজ্যে যে সমস্ত রাজ্যের সরকার এনআরসিকে সমর্থন করেন না, তাদের প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যখন আমরা এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলাম, তখন আমরা একা ছিলাম। এখন অন্য মুখ্যমন্ত্রীরা মুখ খুলছেন। আমি ওনাদের ক্যাবের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করার জন্য আবেদন করব।”

শুধু তাই নয়, এদিন জোড়াসাঁকোর মঞ্চ থেকে ভারতীয় জনতা পার্টিকে রীতিমতো প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এসে ভাবে, দেশে শুধু তারাই থাকবে।” তবে এদিনের মঞ্চ থেকে হিংসাত্মক ভাবে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হিংসার পথ থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে হবে। ট্রেন, পোস্ট অফিস এইসবে কেউ আগুন দেবেন না। পথ অবরোধ করবেন না। যেসব মানুষ আপনাদের সমর্থন করছে, তাদের বিরোধিতা করছেন কেন! এর ফলে বিজেপির সুবিধা হবে।”

তবে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কয়েকটা ট্রেনে আগুন লেগেছে বলে বিজেপি সফটওয়্যার বন্ধ করে দিয়েছে। যার জন্য রাজ্যবাসী মুশকিলে পড়েছেন। পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তারা রাষ্ট্রপতি শাসন চাইছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছেন। কিন্তু রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজ্য পুলিশ যথেষ্ট দক্ষ বলে মত প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিনের মিছিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাঁটতে দেখা যায় কয়েক লক্ষ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সামাজিক কর্মী এবং বিদ্বজনদের একাংশকে। বস্তুত, সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মিছিল যাদবপুরের এইচ বি বাসষ্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ কলকাতায় শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার বলে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বুধবারের দিন হাওড়ায় মিছিল হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একদিকে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণতান্ত্রিক পথে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এবং সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন, অন্যদিকে তেমনই বিশৃংখল ভাবে সরকারের সম্পত্তি ধ্বংস করে একদল দুষ্কৃতী সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের বিরোধিতা করছে, এক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষে। ফলে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে কিন্তু রাজ্যের বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সরকারকে আক্রমণ করতে সুবিধা হবে। আর এমন পরিস্থিতিতে আগামী দিনে ক্যাব অথবা এনআরসি রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!