প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাকে নিয়ে আবার জল্পনা ছড়াতে শুরু করেছিল। তিনি আবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসতে পারেন বলে মনে করা হয়েছিল। এমনকি তার হাত ধরে তার বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়, যার জন্য এক সময় তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করেছিলেন, সেই বৈশাখীদেবীও ঘাসফুল শিবিরে শামিল হতে পারেন বলে জল্পনা বাড়তে শুরু করে।

তবে তেমন কিছুই হতে দেখা যায়নি। কিন্তু সোমবার নারদ কান্ডে অন্যান্য তৃণমূল নেতাদের মত তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হতে না হতেই তার তৃণমূলের ফেরার সম্ভাবনা ক্রমশ উস্কে উঠতে শুরু করল। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং মদন মিত্র প্রত্যেকেই তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি।

কিন্তু তৃণমূলের প্রাক্তন জনপ্রতিনিধি শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগদান করার পর নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকলেও অন্য কোন দলে যোগদান করেননি। তাই এখনও পর্যন্ত তাকে বিজেপি নেতা হিসেবেই ধরা হয়। কিন্তু যেভাবে ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জন্যেও নিজাম প্যালেসে গিয়ে ধরনা দিতে দেখা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাতে শোভনবাবুর আবার তৃণমূলে ফিরে আসা যে শুধু সময়ের অপেক্ষা, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ এবং বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, শোভন চট্টোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শকে ছুড়ে ফেলে দেন। দীর্ঘদিনের নেত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে ত্যাগ করে যোগদান করেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। পরবর্তীতে বিজেপি তাকে যথেষ্টভাবে কাজে লাগাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য বিজেপি তাকে কাজে লাগায়নি বলে অভিযোগ আসে নানা মহলের তরফ থেকে।

পরবর্তীতে মাঝে বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সক্রিয় হতে দেখা গেলেও, আবার সেই গতি ধীরে ধীরে স্তব্ধ হতে শুরু করে আর সাম্প্রতিক কালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয়বারের জন্য বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা যায় শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যেখানে তাদের কথার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা বিজেপির সঙ্গে আর থাকতে চাইছেন না। এক্ষেত্রে শোভন চট্টোপাধ্যায় আবার তৃণমূলে ফিরতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়।

তবে তার তৃণমূলের ফেরার রাস্তা যে পরিষ্কার হয়ে গেল, তা এদিনের ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতার পাশাপাশি প্রাক্তন সহকর্মীর জন্যেও নিজাম প্যালেসে গিয়ে উপস্থিত হলেন। পাশাপাশি যতই দূরত্ব তৈরি হোক না কেন, স্বামী শোভন চট্টোপাধ্যায় আটক হয়েছেন শুনে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেখা যায় তৃণমূল বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়কে। স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতিতে এমন একটা আবহ তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে যে, তৃণমূলের কাছে গোটা বিষয় চিন্তার হলেও আশার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ফের ঘাসফুল শিবিরে প্রত্যাবর্তন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আইনি পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সময় বলবে। তবে একসময় বিপদের বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাথে নিয়ে জার্সি পরিবর্তন করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বারবার বিজেপিতে যোগদান করার পর তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তার আসল বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এখন যখন তিনি সিবিআইয়ের হাতে আটক হলেন, তখন প্রাক্তন সহকর্মী হিসেবে সেই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জন্যেও গলা ফাটাতে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

তাই অতীতে একসময় বিপদের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলে শোভন চট্টোপাধ্যায় অভিহিত করলেও, এবার নিজের প্রাক্তন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার এই প্রবল বিপদে তার পাশে দাঁড়ানোয় তিনি যে তার প্রতিদান স্বরূপ ঘাসফুল শিবিরে যোগদান করবেন, তা একপ্রকার পরিষ্কার। তবে কবে সেই যোগদান পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।