প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – একসময় জঙ্গলমহলের বেতাজ বাদশা ছিলেন মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতো। সম্প্রতি তৃণমূল ভুক্ত হয়েছেন তিনি। তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে তাঁকে। গতকাল মেদিনীপুরের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন তৃণমূল দলে ছত্রধরের নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু, গতকালের সভায় তাঁকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার ফলে দলের মধ্যেই বিশেষ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিরোধীরাও মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ঘিরে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে তৃণমূলকে।গতকাল, সোমবার মেদিনীপুরে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা। এই জনসভার মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানালেন যে, গত ২০০৮ সালে ছত্রধর মাহাতো ছিলেন তৃণমূলের লালগড় এর ব্লক সভাপতি। কিন্তু তৃণমূল দলের বেশ কিছু কর্মী মনে করে দিয়েছেন যে, গত ২০০৮ সালে লালগড় ব্লক সভাপতি ছিলেন বনবিহারী রায়। সম্প্রতি তিনি তৃণমূল ছেড়ে হাম পার্টিতে যোগদান করেছেন।

গতকাল ছত্রধর মাহাতোকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর বর্ষীয়ান নেতা বনবিহারী রায় জানালেন যে, গত ১৯৯৮ সাল থেকেই তৃণমূল দলের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সে সময় থেকেই তিনি ছিলেন লালগড়ের ব্লক সভাপতি। যা কারোর কাছেই অজানা নয়। মুখ্যমন্ত্রী যে সময়ের কথা বলছেন, সে সময়ও তিনিই ছিলেন লালগড়ের ব্লক সভাপতি। এরপর ছত্রধর মাহাতোকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তাহলে সেসময় কি তিনি ব্লক সম্পাদক ছিলেন? তার উত্তরে তিনি জানিয়েছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যই চূড়ান্ত। এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না তিনি।

প্রসঙ্গত, জঙ্গলমহলের একসময়কার বেতাজ বাদশা ছত্রধরকে দিয়ে জঙ্গলমহলে বাজিমাতের চেষ্টায় শাসক দল তৃণমূল। একারণেই তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক করা হয়েছে তাঁকে। আবার আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে জঙ্গলমহলে তৃণমূল মুখ করা হবে। কিন্তু, এক সময়কার মাওবাদী নেতার নেতৃত্বকে মেনে নিতে নারাজ দলের অনেকেই। এই খবর মুখ্যমন্ত্রী কাছে পৌঁছেছে। তাই মেদিনীপুরের জনসভায় ছত্রধরকে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। গতকাল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন ছত্রধর মাহাতো।

প্রসঙ্গত, তৃণমূল দলে ছত্রধরকে মান্যতা দিতে অতীতের স্মৃতিচারণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ছত্রধর সম্পর্কে তিনি জানালেন, ” আমরা কখনও অতীতকে ভুলি না। এই জঙ্গলমহলে যে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল, ওকে তো ২০০৮ সালে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু অরিজিনালি তখন ও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিল। ” মুখ্যমন্ত্রী আরও জানালেন যে, তিনি ও ছত্রধর দীর্ঘকাল ধরে একসঙ্গে আন্দোলন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য রাখার পর মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন তৃণমূল নেতা ছত্রধর। তিনি জানালেন যে, মুখ্যমন্ত্রী যে পুরনো কথা এখনো মনে রেখেছেন, তার জন্য তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞ। তাঁর নির্দেশেই তিনি কাজ করবেন।

গতকালের জনসভায় ছত্রধর মাহাতোকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক বক্তব্য, অতীতের স্মৃতিচারণের তীব্র সমালোচনা করলো বিরোধী পক্ষ। ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপি সভাপতি সুখময় শতপথী জানালেন যে, তাঁরা জানতেন সেসময় লালগড় ব্লকের তৃণমূল সভাপতি ছিলেন বনবিহারী রায় । কিন্তু গতকাল মুখ্যমন্ত্রী ওই সময়ের ব্লক সভাপতি বলে দাবি করেছেন ছত্রধরকে। যা থেকে এটা পরিষ্কার যে, সেসময় মাওবাদী ও তৃণমূল একযোগে অশান্ত করে তুলেছিল জঙ্গলমহলকে।

অন্যদিকে, ঝাড়গ্রাম সিপিএম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে জানালেন যে, তাঁরা বহুদিন ধরেই বলছেন যে, তৃণমূল, মাওবাদী, জনসাধারণের কমিটি সব একসঙ্গে মিলে সেসময়ের জঙ্গলমহলে অশান্তি ছড়ায়। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন, কারণ, এতদিনে তিনি সত্যি কথাটা স্বীকার করে নিয়েছেন। এভাবে গতকাল ছত্রধরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।