এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > কংগ্রেসের “সবেধর নীলমনি”কেও এবার কেড়ে নিতে হাতে হাত মিলিয়ে আসরে সঙ্ঘ-বিজেপি

কংগ্রেসের “সবেধর নীলমনি”কেও এবার কেড়ে নিতে হাতে হাত মিলিয়ে আসরে সঙ্ঘ-বিজেপি

বহু পূর্বেই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। সংসদ থেকে শুরু করে সড়ক পর্যন্ত সবখানেই লৌহমানবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাণপুরুষ নরেন্দ্র মোদিকে। একাধিকবার সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের উপরে হওয়া কংগ্রেসকৃত অবিচারের কথা সর্বসম্মুখে জানিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্ট্যাচু অফ ইউনিটি নির্মাণ করে নিজেকে এবং নিজের দলকে প্যাটেলের উত্তরসূরি বলে প্রমাণ করতে কোনরকম ত্রুটি রাখেননি নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি এবং তার পারিষদবর্গ। কিন্তু এবার প্যাটেল নয়, যার ভাবাদর্শের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে গোটা কংগ্রেস সংগঠন। শুধু কংগ্রেস নয়, কংগ্রেস থেকে সৃষ্ট হওয়া সবকটি রাজনৈতিক দল যে মানুষটিকে নিজেদের রোল মডেল বলে মনে করেন, বারবার বিজেপির বিরুদ্ধে যার ভাবধারার বিরোধী আচরণ পড়ার অভিযোগ করে এসেছে কংগ্রেস তথা অন্যান্য বিরোধীদলগুলো, সেই জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে এবার কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের বলে প্রমাণ করতে আসরে নামতে দেখা যাচ্ছে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে।

গান্ধীজীর দেড়শো তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সকালবেলা মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিস্থল রাজঘাটে গিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। আবার বিকেল বেলা সবরমতীতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিচারণায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। শুধু তাই নয়, নিজের মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের থেকে শুরু করে বিজেপি সাংসদদেরকে গান্ধীজীর আদর্শ মোতাবেক সংকল্পও নিতে বলেন মোদিজি।

পাশাপাশি ভারতের 130 কোটি দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামী এক বছর ধরে এক ব্যক্তি এক সংকল্পে এগোতে হবে। নিজেদের পার্ষদবর্গ মন্ত্রীদেরকে আগামী 15 দিনে গান্ধীজীর স্মৃতিতে দেড়শ কিলোমিটার পদযাত্রা করার পরামর্শ দান করেন নরেন্দ্রভাই মোদি।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বস্তুত, মহাত্মা গান্ধীর সিম্প্লে লিভিং হাই থিনকিংয়ের অন্তর্গত এই পরিকল্পনার মাধ্যমে পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে মাটির আরও কাছাকাছি আসতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। যে ঘোষণা মোতাবেক ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভার একাধিক হেভিওয়েট মন্ত্রী থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদির বিশ্বস্ত সেনাপতি তথা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই দিল্লির রাজপথে পদযাত্রা শুরু করে দিয়েছেন।

এদিকে গান্ধীজিকে নিজেদের বলে প্রমাণ করার দৌড়ে পিছিয়ে নেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও সঙ্ঘপ্রধান সরসংঘ চালক মোহন ভাগবত। তিনি নিজেও গান্ধী দৌড়ে অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীকে নিজেদের আদর্শ বলে প্রমাণ করতে কোনরকম খামতি রাখছেন না। অতি উৎসাহিত হয়ে এক বিজেপি নেতা তো বলেই ফেলেন, “যদি আজ মহাত্মা গান্ধী বেঁচে থাকত, তাহলে তিনি আরএসএস করতেন।”

এই বিষয়ে কংগ্রেসকে কিছুটা কটাক্ষ করে সেই বিজেপি নেতা জানান, গান্ধীজী কোনদিনই পরিবারতন্ত্র পছন্দ করতেন না। যে কথার মাধ্যমে স্পষ্ট, নেহেরু-গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে যার নাম ব্যবহার করার অভিযোগ বারবার করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি, সেই মহাত্মা গান্ধীকে এবার কংগ্রেসের হাত থেকে পুরোপুরি ছিনিয়ে নিতে চায় গেরুয়া শিবির। কিন্তু বিজেপির তুলনায় অনেকটা দুর্বল হলেও গান্ধীজী কপিরাইট প্রসঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টিকে যে একচুলও রাস্তা ছাড়তে নারাজ জাতীয় কংগ্রেস, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে। ইতিমধ্যেই তিনি গান্ধী জয়ন্তী পালনের ক্ষেত্রে নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেসকে।

একদিকে বিজেপি যখন গান্ধী সংকল্প যাত্রায় ব্যস্ত, অন্যদিকে পাল্টা চাল দিয়ে গান্ধী সন্দেশ যাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধীকে ধরে রাখতে মরিয়া কংগ্রেস শিবির। যে কর্মসূচি মোতাবেক দিল্লিতে হাটতে দেখা গেছে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ সোনিয়া পুত্র রাহুল গান্ধীকে। কিন্তু গান্ধীজীর নাম ধারণ করার অথবা নিজেদেরকে তার উত্তরসূরি প্রমাণ করার এই প্রতিযোগিতায় কংগ্রেসের থেকে অনেকটাই যে এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সম্প্রতি মার্কিন সংবাদপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় লিখে আইনস্টাইন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ডাকও দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গান্ধীর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একবার আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, গান্ধীর মত রক্তমাংসের মানুষের অস্তিত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বাস করবে কিনা, তাই নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর আইনস্টাইনের উষ্মা যেন বাস্তবায়িত না হয়, তার জন্য “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত ও বিশ্বের কেন গান্ধীকে প্রয়োজন”

প্রাসঙ্গিক এই শীর্ষক একটি লেখায় প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান, চিন্তাবিদ উৎপত্তি ও প্রযুক্তি সংস্থার কর্ণধাররা যেন নিজস্ব উদ্ভাবনের মধ্যে দিয়ে গান্ধীর ভাবনা বিস্তার ঘটায়। ইতিমধ্যেই মোদি এবং তার মন্ত্রিসভার গোটা টিম মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্নকে সফল করে ভারতকে নতুনভাবে গড়ার কথা বলেছেন। সেই মোতাবেক সদরঘাটের তীরে বালি দ্বারা নির্মিত মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির সামনে একটি বিরাট চশমা পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর সেখান থেকেই স্বচ্ছ ভারত অভিযানের জয় ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 2014 সালে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী ঘোষণা করেছিলেন, 2019 সালে যখন গান্ধীজীর দেড়শো তম জন্ম জয়ন্তী পালন হবে, তখন গোটা ভারতের স্বচ্ছতা অভিযান যেন সফল হয়। আর সেই মোতাবেক গান্ধীজীর দেড়শত জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সেই ঘোষণাকে বাস্তব আকৃতির মাটিতে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে ভারত বলে দাবি করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।

তবে প্রধানমন্ত্রীর এই গান্ধীপ্রীতিকে কটাক্ষ করতে ছেড়ে দেননি কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি জানান, গান্ধী প্রেমের নাম ছিলেন, সহিষ্ণুতার নাম ছিলেন। নিজেকে ভারতের ভাগ্যবিধাতা মনে করা ব্যক্তিকে বিনম্রভাবে বলতে চাই, গান্ধীজি ভালোবাসার প্রতীক ছিলেন। একচ্ছত্র হয়ে ওঠা নয়, তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক ছিলেন। যে যা খুশি করুন, গান্ধীর পথে কংগ্রেসি চলেছে, আর আগামীতে কংগ্রেসই চলবে। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি আরও বলেন, যারা অসত্যের রাজনীতি করেন, ক্ষমতার জন্য যে কোন পর্যায়ে যেতে পারে। গণতন্ত্রকে নিজের মুখে রাখেন এমন সুযোগ পেলেই নিজেকে সর্বেসর্বা বলার ইচ্ছা রাখেন, তারা গান্ধীর অহিংসা ও নিঃস্বার্থ সেবার মূল্য কি বুঝবেন!

কিন্তু সোনিয়াজি নরেন্দ্র মোদিকে যতই কটাক্ষ করুন না কেন, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কিন্তু মনে করছেন, ভারতবর্ষকে একত্র করতে গেলে গান্ধীজীকে প্রধান রোল মডেল বানাতে হবে, তা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই প্রথম থেকেই তিনি গান্ধীজী এবং তার বিচারধারার উপরে জোর দিয়েছিলেন। বরাবর আরএসএস এবং বিজেপিকে গান্ধী চিন্তার পরিপন্থী বলে কংগ্রেস যে প্রচার চালিয়েছিল, 5 বছরে নিজের কার্যকালের বারবার গান্ধীজীর কথা বলে তার চিন্তাধারায় স্বচ্ছ ভারত অভিযান চালিয়ে সেই ধারণাকে অনেক বেশি দুর্বল করে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

মহাত্মা গান্ধীর জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে দিল্লিতে ছয় হাজার 841 জন পড়ুয়া একসঙ্গে সৌরলন্ঠন জ্বালিয়ে ইতিমধ্যেই গিনিস বুক অফ অ্যাওয়ার্ডে নাম নথিভুক্ত করে ফেলেছেন বলে দেশের অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রী জানিয়েছেন। কাজেই বলাই বাহুল্য, খাদি থেকে শুরু করে পদযাত্রা, রাজঘাট থেকে শুরু করে আমেদাবাদ মোদি যেভাবে গান্ধীকে নিয়ে দেশময় ছুটে বেড়াচ্ছেন, তাতে করে আগামী দিনে গান্ধীজিকে ধরে রাখা কংগ্রেসের পক্ষে কতটা সহজ হবে! তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলের অন্দরে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!