প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – রাজ্যে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তগুলিকে কুর্নিশ জানালো রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তাদের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে করোনা সংক্রমণকে কেন্দ্র করে রাজ্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি সমস্ত কিছুর পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানা পদক্ষেপকে যথেষ্ট প্রশংসা করেছে আরবিআই।

প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের করোনা মোকাবিলায় জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করেছে। রাজ্য সরকারের এই কাজের প্রশংসা করেছে আরবিআই। তবে রাজ্য অতিরিক্ত কত টাকা স্বাস্থ্য দপ্তরকে দিয়েছে, সে কথা রিপোর্টে জানানো হয়নি। আরবিআইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, দেশে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া তামিলনাড়ু, রাজস্থান, সিকিম এই রাজ্যগুলিই শুধু এই কাজ করেছে। এছাড়া রাজ্য সরকার রাজ্যের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের যেভাবে বীমার আওতাভুক্ত করেছেন, তা অন্য কোন রাজ্যে করা হয়নি, বলে জানিয়েছে আরবিআই।

আবার, বিনামূল্যে রাজ্যবাসীকে রেশন দানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক। এছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আর্থিক ও সামাজিক ভাবে সাহায্য করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার তারও প্রশংসা করেছে আরবিআই। নির্মাণ শিল্প সহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের উন্নতির জন্য রাজ্য যথেষ্ট ভালো প্রচেষ্টা রেখেছে। আবার, করোনার সংক্রমণ শুরু হলে রাজ্যের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো পরিযায়ী শ্রমিক। বিদেশ থেকে বা অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে ফিরেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা, করোনা সংক্রমণ রোধে সেফ হোমের ব্যবস্থা করা, করোনার চিকিৎসা করা, সে সঙ্গে তাদের অন্ন দান, বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া এই সমস্ত কিছু দেখতে হয়েছে রাজ্যকে।

রিজার্ভ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বন্দে ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩৭ টি দেশ থেকে মোট ১৮ লক্ষ কর্মী দেশে ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক বিদেশ থেকে ফিরেছে কেরালায়, এরপর উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের স্থান। আরবিআইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, করোনা সংক্রমণ কালে দেশে বিদেশের বিনিয়োগ কমে গেছে। যার ফলে যথেষ্ট আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে। আবার বিদেশ থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য চাপ বাড়ছে রাজ্যগুলির। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে রাজ্যগুলিকে।

অন্যদিকে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, রাজস্থান ছাড়াও বহু রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে। গুজরাট থেকে ফিরেছেন ৩৮ হাজার শ্রমিক, রাজস্থান থেকে ৪৭ হাজার , মহারাষ্ট্র থেকে ১.০১ লক্ষ , তামিলনাড়ু থেকে ৭২ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে। এর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যগুলো থেকেও এ রাজ্যে ফিরে এসেছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। এই ব্যাপক সংখ্যায় শ্রমিককে সামাজিক ও আর্থিক ভাবে রাজ্য যথেষ্ট সাহায্য করতে পেরেছে আরবিআইএর রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
আবার, ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রকল্প ঘোষণা, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কাজের সন্ধান করেছে রাজ্য।

এছাড়া রিজার্ভ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, রাজ্যের সাধারণ মানুষদের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ প্রকল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা চালু করেছে রাজ্য সরকার। একাধিক সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে যে, করোনা সংক্রমনের যাবতীয় তথ্যাবলী রাজ্যের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ‘সন্ধানে’ অ্যাপ থেকে মিলছে নানা পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য, ‘অন্নদাত্রী’ নামে একটি ই-রিটেল মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। ‘কর্মভূমি’ কাজের সন্ধান দেয়। এছাড়া ‘প্রচেষ্টা’, ‘স্নেহের পরশ’ অ্যাপ থেকে নানা আর্থিক সুবিধা ও পরিষেবা পাওয়া যায়। এ ভাবে সমস্ত দিক থেকে করোনা মোকাবিলায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে পেরেছে রাজ্য সরকার, এমনটাই আরবিআইএর রিপোর্টে দেখানো হয়েছে।