এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > স্যাটে শেষ ডিএ মামলার শুনানি, অপেক্ষা রায়ের, তারমাঝেই বড় স্বীকারোক্তি রাজ্য সরকারের

স্যাটে শেষ ডিএ মামলার শুনানি, অপেক্ষা রায়ের, তারমাঝেই বড় স্বীকারোক্তি রাজ্য সরকারের


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে আজ স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুন্যালে শেষ হল ডিএ মামলার শুনানি। গত ১২ ই জুন এই মামলায় রাজ্য সরকারের শুনানি শেষ হয়ে গিয়েছিল, আজ বাকি ছিল মামলাকারী দুই পক্ষ কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ীজ ও ইউনিটি ফোরামের সওয়াল। দুই পক্ষের দুই আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি ও প্রবীর চ্যাটার্জি আজ কার্যত দাঁড়াতেই দেন নি রাজ্য সরকারি আইনজীবীদের। তার থেকেও বড় কথা আজকের শুনানিতেই রাজ্য সরকারের বড়সড় স্বীকারোক্তি সামনে এল, যা এতদিন অন্তরালে ছিল।

কলকাতা হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়ে দেয় ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেই ডিএর হার কি হবে বা তা বছরে কতবার করে দেওয়া হবে তা নিয়ে স্যাটকে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে রাজ্য সরকার বারেবারেই সওয়াল করেছিল, যে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তাই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আজ আমজাদ সাহেব স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ডিএ সাংবিধানিক অধিকার, সুতরাং সেখানে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা কি তা বিচার্য বিষয় নয়। তাছাড়া রাজ্য সরকার এইভাবে ‘আর্থিক অবস্থা খারাপ’ বলে কোনো মন্তব্য করতে পারে না, এর জন্য যথাযথ প্রামাণ্য নথি দরকার।

আমজাদ সাহেব আরও জানান, বিগত আর্থিক বছরগুলির রাজ্য সরকারের যে বাজেট সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার সরকারি কর্মীদের জন্য বেতন খাতে যে অর্থ বরাদ্দ ধরেছে, বছরের শেষে তা সম্পূর্ণ খরচ হয় নি। এদিকে, রাজ্য সরকার জিএসটি থেকে শুরু করে মদবিক্রি – বিভিন্ন খাতে রাজস্ব আদায় বহুগুন বেড়েছে বলে নিজেই জানিয়েছে। তাছাড়া, ডিএ যেহেতু সাংবিধানিক অধিকার তা রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থার উপর কোনোমতেই নির্ভরশীল হতে পারে না। যদি হয়, তাহলে তো যে কোনদিন রাজ্য সরকার বলতে পারে, আর্থিক অবস্থা খারাপ বলে ডিএ দেওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হল! সেটা কি আদৌ সম্ভব?

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আমজাদ সাহেব এরপর বলেন, একই রাজ্য সরকারের অন্তর্গত দিল্লি বা চেন্নাইয়ের কর্মীরা ডিএ পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় হারে, অথচ রাজ্যের কর্মীরা তা পাচ্ছেন না। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের যুক্তি, যেহেতু ঐসব কর্মীকে রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরে দুজায়গায় ‘এস্টাব্লিশমেন্ট’ সামলাতে হচ্ছে, তাই তাঁদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, ডিএ নির্ধারিত হয় কনসিউমার প্রাইস ইনডেক্স মেনে, যা একটি স্বশাসিত সংস্থা এবং কোনোমতেই কত জায়গায় সংসার সামলাতে হয় তার উপর এর রেট নির্ভর করে না। তাহলে তো যাঁর বাড়ি কলকাতায় আর চাকরি সূত্রে কাজ করতে হয় উত্তরবঙ্গে, তাঁকেও দুটি সংসার সামলাতে হচ্ছে। তাঁর বেলায় কেন রাজ্য সরকার কেন্দ্রিয়হারে ডিএ দিচ্ছে না?

আমজাদ সাহেবের তোলা এই সকল প্রশ্নের উত্তর কার্যত ছিল না রাজ্য সরকারি আইনজীবীদের কাছে। ফলে, এরপরেই শুনানি কার্যত শেষ হয়ে যায়। শুনানি শেষ করার আগে স্যাটের বিচারপতিরা জানান, আগের দিনে শুনানির পরে রাজ্য সরকার জানিয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়া হয় সিপিআই মেনেই, তবে তা রাজ্যের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে মামলার শেষ লগ্নে এসে এটি একটি চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি রাজ্য সরকারের। কেননা এর আগে স্যাট হোক বা হাইকোর্ট – সরকার কখনোই স্বীকার করে নি ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এবার রাজ্য সরকারের এই স্বীকারোক্তির পর এই মামলায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা অনেক সুবিধাজনক জায়গায় চলে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিন এই প্রসঙ্গে অন্যতম মামলাকারী ও কনফেডারেশনের অন্যতম শীর্ষনেতা সুবীর সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই মামলায় আজ সব পক্ষের শুনানি শেষ হয়ে গেল। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এতদিন রাজ্য সরকারি আইনজীবীরা যা বলেছেন আর তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আইনজীবীরা যা উত্তর দিয়েছেন, তাতে সবমিলিয়ে আমরা খুশি। যেহেতু আজ শুনানি শেষ হয়ে গেল, তাই এরপরে কোনো একটি দিন দেখে বিচারপতিরা কবে এই মামলার রায়দান হবে তা জানিয়ে দেবেন। তবে, যা শুনানি হয়েছে, তাতে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই মামলায় রায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পক্ষেই যাবে।

সুবীরবাবুর সুরে সুর মিলিয়েই এদিন আত্মপ্রত্যয়ী শোনায় এই মামলার আর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার তথা ইউনিটি ফোরামের দেবপ্রসাদ হালদারের গলা। দেবপ্রসাদবাবু এদিন বলেন, এই মামলায় আমরা প্রথম থেকেই আত্মপ্রত্যয়ী ছিলাম যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের এই রাজ্যে বরাবর কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দেওয়া হয়। শুধুমাত্র এই রাজ্য সরকার তা বর্তমানে দিতে চাইছে না, তাই বারবার স্যাট-হাইকোর্ট করে এই মামলাকে প্রলম্বিত করতে চাইছে। কিন্তু আমরা খুশি এই মামলার শেষলগ্নে এসে রাজ্য সরকার তা মেনে নিতে বাধ্য হল। এখন অপেক্ষা এই মামলার রায়ের – আমরা আশাবাদী মাননীয় বিচারপতিরা এই মামলায় কর্মচারীদের স্বার্থই রক্ষা করবেন, আমাদের দীর্ঘ লড়াই জয়ের মুখ দেখবেই।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!