এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > অবশেষে সামনে এল বহু প্রতীক্ষিত ডিএ মামলার রায় – কি বলল আদালত জানুন বিস্তারিত

অবশেষে সামনে এল বহু প্রতীক্ষিত ডিএ মামলার রায় – কি বলল আদালত জানুন বিস্তারিত


অবশেষে সামনে এল বহু প্রতীক্ষিত, অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ডিএ মামলার রায়। বকেয়া ডিএ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমছিল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মনে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের থেকে সবসময়েই প্রায় ৩৫-৫৫% পিছিয়ে থেকে বিপুল পরিমান ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে, রাজ্য সরকারের কাছে বারবার নিবেদন করেও কোনো ফল না মেলায় অবশেষে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করতে বাধ্য হন বলে দাবি। কিন্তু আদালতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সুপ্রিম কোর্টের ১৯৫৪ সালের একটি মামলার রায় দেখিয়ে স্পষ্ট জানান, ডিএ সরকারি কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে পরে না।

কিন্তু রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন মামলাকারীদের পক্ষের দুই আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ও সর্দার আমজাদ আলি। আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য তাঁর শেষ দুদিনের সওয়ালে তুলে ধরেন মূলত চারটি বিষয়। এক, রাজ্য সরকারেরই আইন বলছে ডিএ সরকারি কর্মাচারদিকে অধিকারের মধ্যে পরে। দুই, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ১৯৫৪ সালের যে রায়ের কথা বলছেন তারপরে সুপ্রিম কোর্টেই বহু মামলার রায়ে স্পষ্ট ডিএ সরকারি কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে পরে। তিন, সুপ্রিম কোর্টের রায় থেকেই স্পষ্ট বছরে দুবার করে ডিএ দিতে হবে। এবং চার, ডিএর হার প্রাইস ইনডেক্স বা পিআইএর উপর নির্ভর করবে (সেটা কেন্দ্রের ইনডেক্স ফলো করেও হতে পারে বা রাজ্যের নিজস্ব ইনডেক্সও হতে পারে)।

অন্যদিকে, আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি প্রশ্ন তোলেন, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ১৯৫৪ সালের যে রায়ের কথা বলছেন তা আদতে ১৯২২ সালের ‘ব্রিটিশ ভারতের কলোনিয়াল আইনের’ উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আজ ভারতবর্ষ স্বাধীন, তার নিজস্ব সংবিধান আছে, তাহলে বর্তমানে কোনো আইন কি পরাধীন ভারতের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে হতে পারে? রাজ্য সরকার যেসব কর্মী দিল্লি বা চেন্নাইয়ে কর্মরত তাঁদের সিপিআই মেনে ডিএ দিলেও, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যেসব কর্মী আছেন তাঁদের ক্ষেত্রে তা দিচ্ছে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কোনো সরকার ‘পাবলিক মানি’ নিয়ে আদৌ কি এমন করতে পারে?

গত ২৪ শে জুলাই এই মামলার শুনানি শেষ হলেও, তখনই এই মামলার কোনো রায় দেন নি মাননীয় বিচারপতি। মামলাটি এতদিন ছিল ‘সিএভি স্ট্যাটাসে’ – কিন্তু গত পরশুদিন বেশ রাতের দিকে একটি সূত্র থেকে আমরা খবর পাই যে গতকাল এই মামলার রায় বেড়োতে পারে। কিন্তু গতকালই এই মামলার অন্যতম মুখ তথা কনফেডারেশনের অনুপম শীর্ষনেতা সুবীর সাহা জানান, যে তাঁদের সংগঠন আদালত থেকে ফোন পেয়েছে এবং সেখানেই জানানো হয়েছে যে আজ দুপুর ১ টার সময় এই বহু প্রতীক্ষিত মামলার রায় বেরোতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ রাজ্যের আপামর সরকারি কর্মচারী এই রায়ের দিকে তাকিয়েছিলেন।

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

আজ এই প্রসঙ্গে আমরা সুবীর বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আজ আদালতের রায়ে বড় জয় পেলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। এর আগে ‘স্যাটে’ জানানো হয়েছিল ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের আইনি অধিকারের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু, আদালত নিজের রায়ে আজ স্পষ্ট জানালো মহার্ঘভাতা আইনি অধিকার। ফলে, ডিএ মামলায় হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেলো ‘স্যাটের’ রায়। তবে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়ার প্রশ্নে বা রাজ্যের বাইরে যে সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী (দিল্লি বা চেন্নাইয়ের বঙ্গভবনে) কাজ করেন তাঁদের সমহারে বাকি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ পাওয়ার প্রশ্নে – কলকাতা হাইকোর্ট কিছু জানাল না, তা আবার ‘স্যাটে’ ফেরত পাঠানো হল। ‘স্যাটকে’ আগের রায় মাথায় না রেখে নতুন করে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে আদালত। ফলে, এই নিয়ে আপাতত ‘স্যাটের’ রায় থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আমরা এই নিয়ে শীঘ্রই আমাদের আইনি পরামর্শদাতাদের সঙ্গে বসছি এবং সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।

তবে এই প্রসঙ্গে আমরা সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। কেননা এই একই দাবিতে তাঁদের সংগঠন ‘স্যাটে’ একটি মামলা করেছিল এবং সেখানে তাঁদের জানানো হয়েছিল যেহেতু কলকাতা আদালতে মামলা চলছে তাই এখনই ‘স্যাট’ এই নিয়ে কিছু রায় দেবে না, আদালত কি রায় দেয় – তার উপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে। দেবাশিসবাবুকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি এর সত্যতা স্বীকার করে নেন এবং জানান, কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ে আমরা খুশি – ‘স্যাটের’ কথামত আদালতের রায় সামনে এসেছে। এবার রায়ের প্রতিলিপি হাতে পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সেখানে আবার যাব। তবে যেহেতু বছরে কতবার ডিএ দেওয়া হবে বা ডিএর হার কি হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ‘স্যাট’ তাই আমাদের করা মামলার গুরুত্ত্ব অনেক বেড়ে গেল। আর যদি ‘স্যাটে’ এই বিষয়ে কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষিত না হয় তাহলে – আমাদের সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তা আরো প্রশস্ত হয়ে গেল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!