এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > যাদের বিরুদ্ধে লড়ে সংগঠন তৈরি সেই হেভিওয়েট “দাদা-ভাই” জুটিই এখন বিজেপিতে! ক্ষোভ নীচুতলায়

যাদের বিরুদ্ধে লড়ে সংগঠন তৈরি সেই হেভিওয়েট “দাদা-ভাই” জুটিই এখন বিজেপিতে! ক্ষোভ নীচুতলায়


দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এক সময় প্রচলিত শব্দ ছিল ‘মেজদা’। অর্থাৎ গঙ্গারামপুরের প্রসিদ্ধ ‘মেজো পুত্র’ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র এই জেলায় তৃণমূলের শেষ কথা। জেলা স্তর থেকে শুরু করে গ্রামসভা স্তর পর্যন্ত তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো কাজই সম্পন্ন হত না। স্বাভাবিকভাবেই সংগঠনের এহেন শক্তিশালী জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রকে বিগত দিনে, বারেবারেই একহাত নিয়েছেন রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলো।

দক্ষিণ দিনাজপুরে কান পাতলেই শোনা যায়, জেলায় পৌরসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত নির্বাচন, সর্বত্রই বিপ্লববাবুর বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তদানীন্তন বিরোধী দলগুলোকে। যার মধ্যে অন্যতম দল ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে শুরু করে, বুনিয়াদপুর পৌরসভা নির্বাচনে লাগামহীন ‘দখল’ – বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্ব। তবে, বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন হেভিওয়েট নেতা বিপ্লব মিত্র।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট কেন্দ্রে অর্পিতা ঘোষকে প্রার্থী করার প্রবল বিরোধিতা নেত্রীর কাছে জানান তৃণমূলের এই প্রাক্তন জেলা সভাপতি। তবে অর্পিতাদেবীকে প্রার্থী করার ব্যাপারে অনড় ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই পরবর্তীতে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারের কাছে অর্পিতা ঘোষের পরাজয় ঘটলে, বিপ্লব মিত্রের বিরুদ্ধে দল বিরোধীতার অভিযোগ জানিয়ে সরব হয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের একাধিক তৃণমূল নেতা।

আর এর পরেই দেরি না করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সভাপতি পদ থেকে বিপ্লব মিত্রের বদলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি হিসেবে অর্পিতা ঘোষের নাম ঘোষণা করেন। রাজনীতির আঙিনায় অভিজ্ঞ বলে পরিচিত বিপ্লব মিত্র সময় অতিবাহিত না করে জেলা পরিষদের 10 জন সদস্যকে নিয়ে দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে যোগদান করেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। আর এই যোগদানের পরেই গঙ্গারামপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিপ্লব মিত্রের ভাই প্রশান্ত মিত্রকে দল থেকে বহিষ্কার করেন তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ।

শুধু বহিষ্কার করাতেই ক্ষান্ত থাকেননি, দক্ষিণ দিনাজপুর তৃণমূল সভানেত্রী অর্পিতা দেবী আস্থা ভোট করিয়ে গঙ্গারামপুর পৌরসভা চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন প্রশান্ত মিত্রকে। আর এর পরেই গত পরশু দাদা বিপ্লব মিত্রের অনুগামী হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে নাম লেখান গঙ্গারামপুরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র। তবে বিপ্লব মিত্র থেকে শুরু করে প্রশান্ত মিত্রের বিজেপিতে যোগদানের প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের নানা মুনির নানা মত থাকলেও, চোরা বিক্ষোভ দেখা দিতে শুরু হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের ভারতীয় জনতা পার্টির নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তাদের প্রশ্ন, যে বিপ্লব মিত্র, প্রশান্ত মিত্র নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপির সংগঠন, সেই বিপ্লব মিত্র এবং প্রশান্ত মিত্রকে শামিল করে পুরনো দিনের সেই বিজেপি কর্মীদের সংগ্রামকে কি অপমানিত করছে না ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্ব! প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ হলেও বিজেপি কর্মী সমর্থকদের একাধিকবার এই মনের কথা এখন চুপিসারে ঘোরাফেরা করছে দক্ষিণ দিনাজপুরের রাজনৈতিক মহলে। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।

এদিন এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মানস সরকার সংবাদমাধ্যমকে জানান, “এই অভিযোগ ঠিক নয়। দলে এই ব্যাপারে কোনো ক্ষোভ নেই। বিপ্লববাবু দলের একাধিক সাংগঠনিক কাজে অংশ নেবেন।” তবে মানসবাবু যাই বলুন না কেন, বিজেপিতে যোগদানের এতদিন পরেও হেভিওয়েট তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি বিপ্লব মিত্র এখনও কোনরকম উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স না করতে পারায় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

গত মঙ্গলবার কলকাতা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মোদি-২ সরকার গঠন হওয়ার পরে প্রথমবার সভা করতে আসেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এনআরসি সহ একাধিক বিষয়ে রাজ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর এই মঞ্চ থেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করার কথা ছিল হেভিওয়েট তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের। তবে গঙ্গারামপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্রও এই সভা থেকেই গেরুয়া শিবিরে যোগদান করবেন বলে জানা যায়।

সেই মোতাবেক মঞ্চ থেকে তার নাম ডাকা হলেও মঞ্চে উঠতে দেখা যায়নি প্রশান্তবাবুকে। পরবর্তীতে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিজের হাতে তুলে নেন প্রশান্ত মিত্র। এদিন এই বিষয়ে প্রাক্তন গঙ্গারামপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র জানিয়েছেন, কলকাতায় যানজটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। তাই কর্মসূচিতে ঢুকতে দেরি হয়ে গেছে। তারপরে ব্যাপক ভিড় থাকার কারণে স্টেজে উঠতে পারিনি। নিজের মধ্যে আক্ষেপ রয়ে গেল। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, প্রকৃত অর্থেই প্রশান্তবাবুর সময়টা একটু খারাপ যাচ্ছে।

একদিকে আস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে পথে বসতে হয়েছে তাকে, অন্যদিকে সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি তথা ভারতবর্ষের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সভা নাম ডাকা সত্ত্বেও মঞ্চে উঠতে পারলেন না প্রাক্তন এই পৌর চেয়ারম্যান। কিন্তু পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পারফরম্যান্স ঠিক রাখতে পারলে মঞ্চে ওঠা বা না ওঠাটা কোনরকম গুরুত্ব রাখে না। দলবদলের পর প্রশান্তবাবু দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল সংগঠনে কতটা ভাঙ্গতে পারেন বা বিজেপির সংগঠনকে কতটা শক্তিশালী করতে পারেন! এখন সেদিকেই নজর থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের।

তবে, ঘটনা যাই হোক, হেভিওয়েট ‘দাদা-ভাই’ জুটি দলে আসার পর আশা ও আশঙ্কার চোরাস্রোতে ভাসছে গেরুয়া শিবির। একদলের অভিমত, বিপ্লব-প্রশান্তকে বাদ দিয়েই তো লোকসভা নির্বাচনে জেতা গেছে। এখন, এই ভোট এসেছে তৃণমূলের ‘অনৈতিক’ কাজকে সামনে রেখে প্রচারের ফলে। কিন্তু, সেই তৃণমূল নেতারাই এখন গায়ে গেরুয়া নামাবলী চাপিয়ে ভোট চাইতে গেলে – সাধারণ ভোটারদের কি জবাবদিহি করা হবে? অন্যদলের মত, নেতার আচার-আচরণ ঠিক হয় দলীয় নির্দেশিকার উপর। এই হেভিওয়েট ‘দাদা-ভাই’ জুটি অনেক সমীকরণ বদলে দিতে পারেন। তাই, গেরুয়া শিবিরের সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে এঁদের সঠিকভাবে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!