প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – বর্তমানে তৃণমূল শিবিরে শোনা যাচ্ছে ভাঙনের সুর। কোথাও না কোথাও এই ভাঙনের সুর ছুঁয়ে যাচ্ছে তৃণমূল নেত্রী্কেও। এদিন দলীয় ভার্চুয়াল বৈঠকেও সে সুরই যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো। অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি নিজের মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। আর সে কথা শুনে দলের বর্ষিয়ান সহযোদ্ধা ভেঙ্গে পড়লেন কান্নায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য নেতারাও তৃণমূল নেত্রীর কথায় অত্যন্ত হতাশার ছোঁয়া পান। শুক্রবার তৃণমূলের ভার্চুয়াল দলীয় বৈঠক হয়। এই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী সহ অন্যান্য নেতারা।

মুখ্যমন্ত্রীর মুখে মৃত্যুর কথা শুনে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়লেন সুব্রত বক্সী ওরফে বক্সীদা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তৃণমূল দল মূলত আবেগ নিয়ে চলে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রকম অসম্ভব আবেগপ্রবণ, ঠিক সেরকমই তাঁর দলের নেতা, মন্ত্রীরাও যথেষ্ট আবেগ নিয়ে চলেন। আর তা বিভিন্ন সময় প্রমাণিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী সুব্রত বক্সী। তবে তিনি যে এতটা আবেগপ্রবণ সে কথা এতদিন পর্যন্ত কারোরই জানা ছিলনা। বরং দলের অন্দরে তিনি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী বলে পরিচিত। বস্তুতঃ তিনি যেহেতু দলের অন্যতম উচ্চপদে রয়েছেন তাই বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁর কাছে অনেকেই দরবার করতে আসেন।

সেসময় সুব্রত বক্সী যেভাবে কথা বলেন, তা দেখে কিন্তু অনেকেই আড়ালে সুব্রত বক্সীকে ‘দুর্মুখ’ বলেও ডাকাডাকি করেন। সুব্রত বক্সী যে এতটা আবেগপ্রবণ হয়ে সবার সামনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠবেন, তা বোধহয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভাবেননি। তৃণমূল শিবিরের অন্দরে কিন্তু সুব্রত বক্সী অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ বলেই পরিচিত। সেই সুব্রত বক্সীকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখে মন ভারি হয়ে ওঠে সবারই। বৈঠক শেষের পরেও দলের অন্দরে সুব্রত বক্সীর কান্নায় ভেঙে পড়া নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে হঠাৎই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে বসেন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে, যে অনেকেই তাঁর মৃত্যু কামনা করছে।

কারণ তিনি মারা গেলে তাঁর চেয়ারে কেউ না কেউ বসতে পারবে। একাধিক নেতা জানিয়েছেন এদিন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবেগতাড়িত হয়েই এ কথা বলেছেন। অনেকেই নেত্রীর মুখে এই কথা শুনে যথেষ্ট দুঃখও পেয়েছেন, অবাক হয়েছেন। কিন্তু সবথেকে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া এসেছে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছ থেকে। তিনি বৈঠকের মধ্যেই সর্বসমক্ষে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলেন তৃণমূল নেত্রীর কথা শুনে। পাশাপাশি তিনি কাঁদতে কাঁদতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে থাকেন, তিনিই সারা জীবন তৃণমূলের নেত্রী থাকবেন। জানা গেছে, সুব্রত বক্সীকে এইভাবে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যথেষ্ট হকচকিয়ে যান।

এবং তারপরেই তিনি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রাজ্য সভাপতিকে শান্ত হওয়ার কথা বলেন। সুব্রত বক্সীও তখন নিজেকে সামলে নিয়েছেন। এর পরে অবশ্য পুরো বৈঠকে তাঁকে যথেষ্ট মুহ্যমান দেখা গেছে। এই আবেগঘন মুহূর্ত ছাড়া বৈঠকের বাকি অংশে কিন্তু যথেষ্ট কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী দুজনেই। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও রীতিমতো চড়া সুরে বিজেপির বিরোধিতা করেন। দলের প্রত্যেক নেতাকে নির্দেশ দেন বিজেপির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। পাশাপাশি সুব্রত বক্সীকেও সাংগঠনিক বিভিন্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃণমূল শিবির এই মুহূর্তে কিছুটা হলেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দলের অন্দরের ভাঙন কিন্তু অনেকেই উপলব্ধি করতে পারছেন। আর তাই তৃণমূলের শুরুর নেতারা কিন্তু কোনমতেই এই পরিস্থিতিকে মানতে পারছেন না। আর তাই হয়তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় চোখের জল সামলাতে পারেননি সুব্রত বক্সী। কিছুটা হলেও হতাশা গ্রাস করেছে মুখ্যমন্ত্রীকেও বলে মনে করছেন তৃণমূল শিবিরের একাংশ। এদিকে সামনেই আসছে একুশের বিধানসভা নির্বাচন। তাই সবকিছুকে সামলে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলনেত্রী হিসাবে কিভাবে দলকে আবার একজোট করেন, সেটাই দেখার!