দলীয় কোন্দলে দফতরের সামনেই নিগৃহীত সভাপতি, জোর চাপানউতোর রাজ্যে নদীয়া-২৪ পরগনা রাজ্য October 17, 2019 রাজনৈতিক দলগুলোর সুবাদেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব খুব পরিচিত শব্দ আমাদের কাছে এখন। বরাবরই শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ওঠে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে বহু সমস্যার সমাধান হয়না। এতদিন পর্যন্ত রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁদের প্রতিনিয়ত কটাক্ষ করেছে। এবার সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হানা দিয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অন্দরমহলেও। ইতিমধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে। তা সত্বেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা একটার পর একটা ঘটেই চলেছে প্রধান বিরোধী দলের অন্দরে। এবারের ঘটনা রানাঘাটে। নদীয়ার দক্ষিণে বিজেপি শিবিরের গোষ্ঠী কোন্দল বহুদিনের। সেই সূত্রেই এবার দলীয় দপ্তরের সামনেই নিগৃহীত হলেন নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায়। তবে এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনো রকম লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। বিজেপি সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে দলীয় দপ্তরের সামনে যখন মানবেন্দ্রনাথ রায়ের ওপর হামলা হয়, তখন বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার দলীয় দপ্তরে হাজির ছিলেন। এই হামলাকারীদের মধ্যে যাদের নাম জড়িয়েছে, তাঁরা জগন্নাথ সরকারের অনুগামী বলেই এলাকায় সুপরিচিত। তাঁদের একজনের বিরুদ্ধে আবার লোকসভা ভোটের আগে দলীয় দপ্তরের ভেতরেই এক মহিলা কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। শুধু তাই নয়, এই হামলার অভিযোগ তাঁর ছেলের নামেও আছে। বুধবার রাতেই রানাঘাট থানায় গেলেও মানবেন্দ্রনাথ রায় কারোর নামে কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলাকারীদের মধ্যে জনৈক ‘সাহা’ এবং তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এই ঘটনায় বুধবার রাতেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “জগন্নাথ সরকারকে ডেকে ঘটনাটি জানতে চাওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড়া হবে না। দলীয় তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাঁদের বহিষ্কার করা হবে।”বরাবরই মানবেন্দ্রনাথ রায় জগন্নাথ সরকারের বিরোধী গোষ্ঠীর লোক হিসেবেই পরিচিত। লোকসভা ভোটের আগে প্রার্থী নিয়ে যখন টালমাটাল অবস্থা, সেসময় মানবেন্দ্রনাথ নিজেই মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। যদিও দল শেষমেষ জগন্নাথ সরকারকে ভোটে দাঁড় করায়। জগন্নাথ সরকার সে সময় দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীকালে সাংসদ হওয়ার পরে সেই পদ তিনি ছেড়ে দেন। এবং সেই পদে আসীন হন মানবেন্দ্রনাথ। কিন্তু গোষ্ঠীকোন্দল কোন অবস্থাতেই মেটেনি। বরং নতুন জেলা কমিটি গঠন নিয়ে জগন্নাথ গোষ্ঠীদের অনেকেই পিছিয়ে থাকেন এবং অনেকেই বাদ পড়েন। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - এদিন বিজেপি সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, রানাঘাটে 34 নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দলের নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার দপ্তরে সাংসদের সঙ্গে জেলা সভাপতির বৈঠক চলাকালীন বাইরে থেকে গালিগালাজ ভেসে আসছিল। বৈঠক শেষে বেরোনোর সময় মানবেন্দ্রনাথ এর ওপর চড়াও হয় কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, মানবেন্দ্রনাথকে রীতিমতন ধাক্কা মারা হয় এলোপাথাড়ি। গোলমাল এর মধ্যে মানবেন্দ্রনাথ এর এক পরিচিত যুবক পড়ে যায়। গন্ডগোলে তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এই গন্ডগোলের পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিতে দেখা যায় জনৈক প্রাক্তন অফিস সম্পাদক এবং তাঁর ছেলেকে। দলের এক সূত্রের দাবি, কয়েক বছর আগে একটি বৈঠকে মানবেন্দ্রকে জুতা ছুড়ে মেরেছিলেন ওই অফিস সম্পাদক। ঘটনাচক্রে নতুন জেলা কমিটি থেকে তিনি বাদ পড়েছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, সম্প্রতি দলে সাংগঠনিক নির্বাচন চলছে। ইতিমধ্যে বুথস্তরের নির্বাচন শেষ হয়েছে। এবার মন্ডল স্তরের নির্বাচনের পালা। তাতেই বিজেপির দুই গোষ্ঠী একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এর আগে বীরনগর দলের এক মন্ডল সভাপতি সম্পর্কে জেলা নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। সব মিলিয়ে বিজেপি দলে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ উর্ধমুখী। সমস্ত ঘটনা প্রসঙ্গে জগন্নাথ সরকারের দাবি, “এরকম ঘটনার কথা আমার জানা নেই। আমার সামনে অন্তত এরকম কিছুই হয়নি।” আর ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রাক্তন অফিস সম্পাদকের বক্তব্য, “মারধর করার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। জেলা সভাপতির সঙ্গে মন্ডল সভাপতিদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে। আমি এতে কোনোভাবেই জড়িত নই।” অন্যদিকে মানবেন্দ্রনাথও সংবাদমাধ্যমের সামনে কারোর নাম নেননি। এমনকি ঘটনাটি নিয়েও তিনি কোনো আলোচনাও করতে চাননি। রাতে রানাঘাট থানা থেকে বেরিয়ে তিনি শুধু বলেন, “দলের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের নির্দেশ মতো পরে যা বলার বলব।” সমস্ত ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেবে। এটাই স্বাভাবিক। ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় এক বৃহৎ গোষ্ঠীর মধ্যে ছোট ছোট বহু গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এবং এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগে। তবে এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু কোন একটি দলকে শুধুমাত্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই শেষ করে দিতে পারে। তাই শুধুমাত্র সাংগঠনিক জোরে যে দল ক্ষমতা দখলের লড়াই লড়ছে, তাঁদের এই মুহূর্তে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেক বড় ক্ষতি করে দিতে পারে। তাই এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের নিকেশ হওয়া প্রয়োজন এখনই। সমস্ত ঘটনার ওপর নজর রেখেছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এই মুহূর্তে এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা বা আলোচনা তাঁরা করছেন না। আপনার মতামত জানান -