এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে লেনদেনে যুক্ত প্রাক্তন হেভিওয়েট মন্ত্রী? ইডির তদন্তে বাড়ছে জল্পনা

দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে লেনদেনে যুক্ত প্রাক্তন হেভিওয়েট মন্ত্রী? ইডির তদন্তে বাড়ছে জল্পনা

এককালে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শেষকথা ছিলেন দাউদ ইব্রাহিম। শুধুমাত্র মুম্বাই নয়, গোটা ভারতীয়দের দাউদের নামের আতঙ্ক গ্রাস করেছিল। পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে চলে গেলেও বিদেশে বসেই ডন ভাই আন্ডারওয়ার্ল্ডকে পরিচালনা করতেন। এখন দাউদ ফেরার। মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডেরও বিশেষ কোনো প্রভাব নেই।

কিন্তু অতীত সময়ে যখন দাউদ একের পর এক সমাজ বিরোধী কাজ করে পাপের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, তখন তার সঙ্গে সহাবস্থান করে দেশের কোনো কোনো প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী তথা ব্যবসায়ীরা নিজেদের আখের গুছিয়েছে। এবার তার তদন্ত করতে চলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং এই তদন্তেই কালঘাম ছুটছে এককালের হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রীদের।

সম্প্রতি ভারতের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল বলে পরিচিত দাউদ ইব্রাহিমের এককালের ডানহাত অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বিশ্বস্ত সহকারি ইকবাল মেমন মির্চি ওরফে মিরচি ভাইয়ের সঙ্গে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রভাবশালী নেতা প্রফুল্ল প্যাটেলের লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।

জানা যাচ্ছে, ইকবালের সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী প্রফুল্ল প্যাটেলের জমি কেনাবেচা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদীদেরকে অর্থনৈতিক মন্দা পর্যন্ত অভিযোগের তদন্ত করবে এনফর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডি সূত্রে এমনটাই খবর জানা যায়। অপরিসীম অর্থের মালিক ইকবাল মির্চি গত 2013 সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে 14 ই আগস্ট লন্ডনে মারা যায়।

বিশেষ সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী, দাউদের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ইকবাল মেমন মিরচি মুম্বাই শহরের ওরলিতে নেহেরু প্লানেটোরিয়ামের পাশে প্রায় কয়েক কোটি টাকার জায়গা জবর দখল করে রেখেছিল। পরবর্তীতে দখল করা ওই জায়গার মালিকানা পায় সে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিকে 2005 সালে সেই জমি চড়াদামে বিক্রি করেছিলেন মির্চি। কেন্দ্র সরকারের প্রাক্তন অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী প্রফুল্ল প্যাটেলের নাম জড়িয়ে থাকা মিলেনিয়াম ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার বিরুদ্ধে সেই জমি কেনার অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে ইকবাল মেমনের বিক্রি করে দেওয়া ওই জমিতে 15 তলা বিশিষ্ট সিজে হাউস নামে একটি বিলাসবহুল আবাসন তৈরি করেন মিলেনিয়াম সংস্থা বলে খবর।

শুধু আবাসন তৈরি করাই নয়, সেই আবাসনে অবস্থিত ফ্ল্যাটগুলিকে চড়া দামের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা সামনে আসে। পক্ষান্তরে খবর পাওয়া যাচ্ছে, এই মিলেনিয়াম সংস্থা বাস্তবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল্ল প্যাটেলের পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সংস্থা যদিও পরিবারকে দেখিয়ে ইকবালের সঙ্গে নিজের সবধরনের লেনদেনের কথা আড়াল করতে চাইছে প্রফুল্ল প্যাটেল বলে অভিযোগ।

কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি কার্যত স্পষ্ট জানিয়েছেন, ওই জমি বিক্রি ও কেনাবেচা সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক ধরনের অর্থনৈতিক অনিয়মের তদন্ত করতে গিয়ে ধরা পড়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। শুধু তথ্যই নয়, তদন্তের মাধ্যমে নতুন অনেক সূত্র উঠে এসেছে। যে সূত্রের মাধ্যমে অনেক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে জরুরী তথ্যপ্রমাণ চলে আসবে ইডির হাতে। এই বিষয়ে সমগ্র মুম্বাইয়ে এগারোটি জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি।

শুধু তাই নয়, গোটা বিষয়ের সঙ্গে জড়িত সমাজের বিভিন্ন স্তরের 18 জন ব্যক্তির বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, তদন্তের মাধ্যমে অনেক পরিমাণে জরুরী নথি, কাগজপত্র, ইমেল এবং ডিজিটাল সাক্ষ্য-প্রমাণ ইত্যাদি সংগ্রহ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং যার মাধ্যমে সামনে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রী প্রফুল্ল প্যাটেলের পরিবারের মিলেনিয়াম ডেভেলপার্স অবৈধ উপায়ে জমি কেনাবেচা এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা মনে করছেন, প্রফুল্ল প্যাটেল হয়ত সব ব্যাপারটাই জানতেন।

বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই গোটা অর্থনৈতিক অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে ব্রিটিশ নাগরিক হারুন আলিম ইউসুফ এবং মুম্বাইয়ের স্থানীয় বিল্ডার রঞ্জিত সিং বিন্দ্রাকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই সমস্ত অভিযুক্তদের জেরার মাধ্যমে যে তথ্য উঠে এসেছে, সেই তথ্যকে হাতিয়ার করে এবার প্রফুল্ল প্যাটেলের পরিবারের বিরুদ্ধে বড়সড় তদন্তে নামছে ইডি।

জানা যায়, বিতর্কিত ওই প্লট কালো টাকার মাধ্যমে কেনাবেচা হয়েছে এবং সেই টাকা দিয়ে এক সময় দুবাইতে পাঁচতারা হোটেল কিনেছিলেন দাউদ ইব্রাহিমের ডানহাত বলে পরিচিত ইকবাল মিরচি। ইতিমধ্যেই এনফর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাছে যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ এসে হাজির হয়েছে, তার যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত মেমনের স্ত্রী হাজরা মেমনের কাছ থেকে যে সমস্ত নথি পাওয়া গেছে এবং প্রফুল্ল প্যাটেলের পরিবারের মিলেনিয়ামের অফিস থেকে যে সমস্ত নথি পাওয়া গেছে, তার মধ্যে অনেকাংশই মিল রয়েছে।

এছাড়াও তদন্ত করে জানা গিয়েছে, পুরসভার কোনো মতো অনুমতি না নিয়েই নির্মীয়মান ভবনের নকশা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে এবং অবৈধ এই কাজ কর্মের জন্য মেমনের পরিবারকে সিজে হাউসে দুটি তলা দেওয়া হয়েছিল। যদিও এই বিষয়ে কোনো ভিত্তি যুক্ত প্রমাণ এখনও নেই। তদন্তের স্বার্থে প্রফুল্ল প্যাটেলের পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো রকম সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

আদালতের নির্দেশে যখন কোনো পলাতক আসামির পরিবারের সঙ্গে অর্থনৈতিক বড় মাপের লেনদেন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, সেই সময় মুম্বাই বিস্ফোরণের অভিযোগে অভিযুক্ত অপরাধী ইকবাল মিরচি, যার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য পাচার থেকে শুরু করে কিডন্যাপিং সহ আরো অনেক ভয়ানক অভিযোগ রয়েছিল, সেই অবস্থায় 2006 থেকে শুরু করে 2007 সালের মধ্যে তার পরিবারের সঙ্গে এই ধরনের বিজনেস করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশকে তোয়াক্কাই করেননি প্রফুল্ল প্যাটেল ও তার পরিবার বলে খবর।

যদিও বর্তমানে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল্ল প্যাটেল বলছেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড সম্পূর্ণ তার পরিবারের সংস্থার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তার কোনো যোগ নেই। কিন্তু অভিজ্ঞরা ভালোই বুঝতে পারছেন, নেপথ্যে থেকে নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই ধরনের বড় মাপের অবৈধ অর্থনৈতিক লেনদেন করিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল্ল প্যাটেল।

তাই এখন আগামী দিনে এনফর্সমেন্ট ডাইরেক্টর তদন্তে কতটা গতি আনতে পারে এবং সূত্র ধরে প্রাক্তন মন্ত্রী সাহেবের বিরুদ্ধে তৎসহ জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি বর্গের বিরুদ্ধে কি কি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে! পারে সেদিকে যথেষ্ট কৌতুহল থাকবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সমাজসচেতন মানুষদের মনে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!