এখন পড়ছেন
হোম > বিশেষ খবর > সমীক্ষা কী? কতটা মেলে? বিভিন্ন সমীক্ষা সংস্থার হিসাবে এতটা ফারাক কেনো হয়?

সমীক্ষা কী? কতটা মেলে? বিভিন্ন সমীক্ষা সংস্থার হিসাবে এতটা ফারাক কেনো হয়?


সমীক্ষা কী? কতটা মেলে? বিভিন্ন সমীক্ষা সংস্থার হিসাবে এতটা ফারাক কেনো হয়? এমন বহু প্রশ্ন মানুষের মনে দেখা দেয়। তার কিছুটা নিরসন করতেই আজকের এই লেখা।

C Voter, CSDS, AC Nielson, Axis My India, Today’s Chanakya, Brace এরূপ বহু সংস্থা আছেন যারা জনমতের আভাস তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেলের সাথে সমীক্ষা করে থাকেন। তাদের মধ্যেই যেমন C Voter নামক এই সমীক্ষক সংস্থাটির সমীক্ষা সেফোলিজিস্ট সমাজে “কঞ্জারভেটিভ” বলেই পরিচিত। অর্থ্যাৎ এরা যেকোনো রাজনৈতিক দলকেই কম করে আসন দিতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে শাসক দলের ক্ষেত্রে এদের কঞ্জারভেটিভ মোড আরো বেশি অ্যাকটিভ হয়।

কিছু সমীক্ষক সংস্থা, যেমন Today’s Chanakya, Brace কিংবা My Axis এর ঠিক উল্টো বলেই খ্যাত। এরা জনমতের আভাস কোনো রকম কনজারভেশনে না গিয়েই প্রকাশ করেন। অর্থ্যাৎ সোজা ভাষায়, যা ফলাফল উঠে আসে তাই হুবহু এরা প্রকাশ করেন। বিশেষত My Axis ভগ্নাংশে এগিয়ে থাকলেও সেটিকে অ্যাডভান্টেজ হিসাবে গণ্য করে যেটা C voter করে না। তারা ৫–৮% গ্যাপের আসন গুলিকেও দোদুল্যমান বলে ধরে নেন এবং সমীক্ষায় প্রায় শাসক বিরোধীদের মধ্যে সমান করে ভাগ করে দেন।

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটা সমীক্ষায় করা হল ১০ টি আসনের ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে। সেখানে ধরুন দেখা গেল ৫ টি আসনে তৃণমূল ৬০% বা তার উপরে ভোট পাচ্ছে, ১ আসনে বামফ্রন্ট ৫০% এর উপরে ভোট পাচ্ছে এবং বাকি ৪ টি আসনে তৃণমূল ৩৫%, বাম ৩০% ভোট পাচ্ছে।

এক্ষেত্রে সি ভোটার তৃণমূলের ক্ষুদ্র মার্জিনে এগিয়ে থাকা এই আসন গুলির অর্ধেক বিরোধীদের ও অর্ধেক তৃণমূলকে দেবে, তৃণমূলের এগিয়ে থাকা সত্বেও! অর্থ্যাৎ, তাদের হিসাবে ওই ৪ টি আসনের ২ টি তৃণমূল ও ২ টি বাম। সুতরাং টোটাল দাঁড়াচ্ছে, তৃণমূল (৫+২)=৭ ও বাম (১+২)=৩ । এটি হল কঞ্জারভেটিভ সার্ভের একটি ধরণ।

আবার ধরুন এই একই সমিক্ষা করল Axis বা Today’s চানক্য। তারা ওই ৫% এ এগিয়ে থাকা আসনও তৃণমূলকেই দেবে। অর্থ্যাৎ তারা করলে রেজাল্ট আসতো তৃণমূল (৫+৪)= ৯, বাম ১। ঠিক এই কারণেই বহু সমীক্ষক সংস্থার তুলনায় Today’s Chanakya বা Axis My India র সমীক্ষা নিখুঁত ও বাস্তবসম্মত হয়।

আপনাদের জানিয়ে রাখি, এই C voter ২০১৬ বিধানসভায় তৃণমূলকে ১৬৫–১৭০ এর কাছাকাছি আসন দিয়েছিল। Axis দিয়েছিল প্রায় ২৩০ টি ও Today’s Chanakya দিয়েছিল ২১০ টি। আমরা জানি বাস্তবে তৃণমূল ২১১ আসন জিতেছিল। অর্থ্যাৎ, C Voter এর কঞ্জারভেটিভ সমীক্ষা বাস্তব থেকে বহু দূরে ছিল। এদিকে AC Nielson বা CSDS জাতীয় সমীক্ষক সংস্থা গুলিকে মধ্য মানের বলা চলে। এদের সমীক্ষা নিখুঁত না হলেও বাস্তবের মোটামুটি নিকটে অবস্থান করে।

এখন এই বিষয় গুলোর অবতারণা করার কারণ হল আজকে কলকাতার একটি নামী বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম ও C Voter এর পঞ্চায়েত বিষয়ক সমীক্ষা। এখানে দেখানো হল তৃণমূল প্রায় ৫৩২ টি জেলা পরিষদ আসন পেতে পারে। প্রসঙ্গত, এই বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমটি আগে AC Nielson এর সাথে সমীক্ষা করত। ২০১৬ বিধানসভার পর থেকে তারা কখনো CSDS, কখনো C voter এর সাথে সমীক্ষা করছে। এখন Conservative C Voter যদি তৃণমূলকে ৫৩২ জেলা পরিষদ দেয়, বাস্তবে এটি কমপক্ষে ৬৮০ ক্রস করবে তা হলফ করে বলতে পারি।

এদিকে তারা তৃণমূলকে ৩৫%, বিজেপিকে ২৪% ভোট দিয়েছে। এক্ষেত্রেও যদি বাস্তব চিত্র বলি, তৃণমূল কমপক্ষে ৪৬% ভোট পাবেই। একই স্যাম্পেলের উপর এই সমীক্ষা Axis বা Chanakya করলে তৃণমূলকে তারা ৭০০ টির কাছাকাছি জেলা পরিষদ আসন দিত।

অর্থ্যাৎ, সংস্থার উপর নির্ভর করে একই স্যাম্পেলেও আসন বা ভোট % এর কতটা তফাৎ হতে পারে। আবার এক একটি সংস্থার সমীক্ষার ধরনের উপরেও নির্ভর করে ফলাফল..

১. কতটা প্রত্যন্ত স্থান থেকে স্যাম্পেল সংগ্রহ করা হচ্ছে।
২. গ্রাউন্ডে সমীক্ষা চালানো কর্মীদের সততা।
৩. সমীক্ষা চালানো কর্মীরা ঠিক কতটা সংস্থার কথা মত এলাকা থেকে স্যাম্পেল নিতে পারছেন।
৪. স্যাম্পেলের সংখ্যা । অর্থ্যাৎ মোট কতজনের মতামত নেওয়া হবে।
৫. আয়, জাতী, ধর্ম, বয়স, লিঙ্গ ইত্যাদির কতটা ভ্যারাইটি বা সংমিশ্রণ থাকছে।

এ ছাড়াও আরো বহু বিষয়। এখন যে সংস্থা এই শর্ত গুলিকে যতটা নিখুঁত ভাবে পূরণ করতে পারে, তাদের সমীক্ষার ফলাফল ততটাই বাস্তবের কাছাকাছি হয়।

– দেবাংশু ভট্টাচার্য্য
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক

** এই প্রবন্ধে প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণরূপে লেখকের নিজস্ব, প্রিয়বন্ধু বাংলার নিজস্ব মতামত নয়।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!