এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > এসির আরাম ছেড়ে বিদ্যুৎহীন প্রত্যন্ত গ্রামে নিশিযাপন! দিদিকে বলো কি নেতাদের অ্যাসিড টেস্ট?

এসির আরাম ছেড়ে বিদ্যুৎহীন প্রত্যন্ত গ্রামে নিশিযাপন! দিদিকে বলো কি নেতাদের অ্যাসিড টেস্ট?

2019 সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না করতে পারায় চিন্তিত তৃণমূল কংগ্রেসের সবাই। রাজ্য জুড়ে বিজেপির প্রবল উত্থানের কারণে সকলের মনের মধ্যেই জল্পনা, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসনভার বিজেপির হাতে না চলে যায়।

আর এমত একটা সময়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে জনসংযোগের রাস্তায় পাঠাতে 2014 সালের নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী পথপ্রদর্শক প্রশান্ত কিশোরের হাতে দলের নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব তুলে দেন ভোট সম্পর্কে বিশেষ অভিজ্ঞ রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোর। তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী বৈতরণী পার করার দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি বুঝতে পারেন দল এবং দলের জনপ্রতিনিধিরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জনগণ থেকে।

তাই তাদেরকে জনসংযোগের রাস্তায় হাঁটাতে এক অভিনব পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশান্ত কিশোর। দিদিকে বলো কর্মসূচির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিকে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদেরকে জনসংযোগের রাস্তায় ধাবিত করা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মোতাবেক এখন সব তৃণমূল বিধায়ক এই কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। কিন্তু অনেক নেতৃত্বকেই বাতানুকূল ঘরের আরামদায়ক পরিবেশ থেকে বেরিয়ে রোদে, ঝড়-বৃষ্টিতে মানুষের সঙ্গে থেকে জনতার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে জড়িত হতে হচ্ছে। আর এমনই দৃশ্য চোখে পড়ল কান্দিতে। এখানে দিদিকে বলো কর্মসূচি পালন করতে বিপরীত পরিবেশে প্রত্যন্ত গ্রামে যাচ্ছেন কান্দি দুই শীর্ষ নেতা গৌতম রায় ও পার্থপ্রতিম সরকার।

চা, মুড়ি, পেঁয়াজ ডাল, ভাত ইত্যাদি খেয়ে সাংগঠনিক কাজে দিনরাত লেগে থাকতে হচ্ছে তাদের। যদিও এরকম পরিবেশের মধ্যে তারা কাজ করতে অভিজ্ঞ বলেই জানান কান্দির এই দুই তৃণমূল নেতা। তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরা জানিয়েছেন, গৌতম বাবু কান্দি মহকুমা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি একজন ব্যবসায়ী।

তিনি কান্দি পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর। তাছাড়াও এককালে তিনি চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। এই এলাকা ভালো করে চেনা। এলাকায় তার প্রতিপত্তিও রয়েছে যথেষ্ট। আর প্রাক্তন এই কাউন্সিলর এবং মহকুমা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতির বাড়ি ছাতিনা কান্দি এলাকায়।

কিন্তু জানা যাচ্ছে, বরাবরই এসি ঘরে থাকতে অভ্যস্ত এলাকার এই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা। যেখানে গরমের আঁচ পাওয়া যায় না। তবে তিনি খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে খুবই সাদামাটা। তার দৈনিক রুটিনের মধ্যে সকালের চা, পরে স্নান সেরে পুজো এবং তারপর সাধারণ মানের খাবার খেয়ে দিন কাটানো।

আবার অন্যদিকে পার্থপ্রতিমবাবু কান্দি ব্লক তৃণমূল সভাপতি। তিনি কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন। এই ব্লকে তৃণমূলের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তাকেই দেখা হয়। তিনি নিজে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আড়কান্দি ব্লকের বাড়িতে একাধিক ঘরে এসি রয়েছে। তবে যেহেতু তিনি মধুমেহ রোগের রোগী, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু যে রকমই অভ্যাসের সঙ্গে তারা অভ্যস্ত হোন না কেন, দিদিকে বলো কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদেরকে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। তারা দুইজন গত কয়েকদিন ধরেই দিদিকে বলো কর্মসূচিতে প্রচার-প্রসারে অংশগ্রহণ করছে। এখনও হিজল এলাকার বাগআছরার মত প্রত্যন্ত গ্রামে রাত কাটাচ্ছেন তারা।

আবার কখনও গোকর্ণ কখনও আবার মফস্বল, প্রত্যন্ত থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে নিশি যাপন করছেন তারা। সেই সমস্ত জায়গায় সাধারন ঘরেই রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। বাঘআছরা গ্রামে থাকাকালীন তাদের ঘুমোতে হয়েছে চৌকির উপর। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে গোটা রাত ঘুমের মধ্যে কাটিয়েছেন‌ তারা। এরপর বুধবার একইভাবে গোকর্ণ গ্রামে দলের এক সমর্থক তথা পেশায় হল ব্যবসায়ী বিধান সাহার বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন তারা।

বিধানবাবু একতলার পাকা বাড়িতে রাতে কান্দি দুই তৃণমূল নেতা থাকবেন তা জানতে পেরে কার্যত আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। কোথায় থাকতে দেবেন, কি খাওয়াবেন, বুঝতে না পেরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিধানবাবু। তিনি বলেন, “নেতারা আমার বাড়িতে থাকবেন, তাই হতভম্ব হয়ে পড়ি। তবে ভালো লাগছে। তৃণমূল নেত্রীর দৌলতেই আজ আমি নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি। যদিও অতি-সাধারণ মানের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছি। কিন্তু আতিথিয়তায় কোন ত্রুটি রাখিনি।”

অন্যদিকে বিধানবাবুর স্ত্রী মিঠু সাহা বলেন, “দিদির এই কর্মসূচিতে নেতারা এলাকায় মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। যেখানেই তারা গিয়েছেন, মানুষের ঢল নেমেছে।” ওইদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ দুই নেতা তাদের সারাদিনে কর্মসূচি ছেড়ে বিধানবাবুর বাড়িতে পৌছলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাংগঠনিক আলোচনা করেন। তবে গরমের কারণে হাঁসফাঁস করে ওঠেন পার্থবাবু। এরই ফাঁকে লিকার চা খান। তারপর রাত সাড়ে নটা নাগাদ প্রতিবেশীরা সেখান থেকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই দুই নেতা হাতমুখ ধুয়ে কিছুটা ফ্রেশ হন। তারপর গৌতমবাবু একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসেন। যেখানে বসেই দলীয় কর্মীর পরিবারের সঙ্গে আবারও সাংগঠনিক বৈঠকে মেতে উঠতে দেখা যায় তাদেরকে। পরিবারের অভাব-অভিযোগের কথা মন দিয়ে তারা শোনেন।

যার পরে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আলু সেদ্ধ, মুগের ডাল, পাঁচমিশালী তরকারি সহযোগে ভাত খেয়ে ঘুমোতে যান বিধানবাবু। একটি ঘরে তাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মাথার উপরে অত্যন্ত সাধারণ সিলিং ফ্যান ঘুরলেও নেতাদের সুবিধার্থে পাশে টেবিল ফ্যান চালিয়ে দেওয়া হয়। এই পরিবেশের মধ্যে আমার কাজ করার অভ্যাস বহুদিনের বলে দাবি করেন গৌতমবাবু।

তিনি এও বলেন, দিনের শেষে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছি। তার কারণ হল এই দিনের কর্মসূচি সফলভাবে হয়েছে। এলাকার মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, এসি ঘর ছেড়ে নেতারা সাধারণ বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। কিছুটা অসুবিধা হলেও দলের জন্য এসব তো করতেই হবে। তবে যে যা বলুন না কেন, দিদিকে বলো কর্মসূচি যে একেবারে পুকুর থেকে শুরু করে নিজ দলের কর্মীদের মধ্যে ঝড় বইয়ে দিয়েছে, সে বিষয়ে দ্বিমত নেই। তবে এরকম কর্মসূচির মাধ্যমে আদৌ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা, সেই প্রশ্নই বিশেষজ্ঞদের মনে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!