সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি এবং ভয়াবহ দুর্যোগ পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পাঠানো টিম নিয়ে তিনি অমিত শাহর সঙ্গে বলা কথা সকলের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমি অমিত শাহকে বলেছিলাম পারলে আপনারা দায়িত্ব নিন। কিন্তু তখন অমিত শাহ বলেন, নির্বাচিত সরকার ভাঙবো কি করে!”

আর যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও পরাজয় স্বীকার করেন না, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন অমিত শাহকে এই ধরনের কথা বললেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছিল জল্পনা। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অমিত শাহর সঙ্গে বলা কথা সকলের সামনে তুলে ধরলেন, ঠিক তখনই এবার এই ইস্যুতে মুখ খুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন তিনি বলেন, “কেন্দ্র সব সময় রাজ্যকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই রাজ্যকে হাজার কোটি টাকা দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যেদিন ঝড় এসেছিল, তার পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। কিন্তু তাই বলে আমরা কোনো সরকার লিজ নেব না।” অর্থাৎ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সুরে সুর মিলিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বুঝিয়ে দিলেন যে, তারা কোনোমতেই রাজ্য সরকার ভাঙার পক্ষে নয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ভাঙ্গার ব্যাপারে জল্পনা উসকে দিয়েছেন দিলীপবাবু।

তিনি বলেন, “করোনা মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ব্যর্থ। আমপান মোকাবিলাতেও ব্যর্থ। এই সরকারের ব্যর্থতা দু-তিন মাসেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সরকার ভাঙ্গা বিজেপির সংস্কৃতি নয়। তবে কোনো সরকার যদি ভেঙে পড়ে, তার দায়ও আমাদের নয়।” আর এখানেই একাংশের প্রশ্ন, তাহলে দীলিপবাবু এই কথা বলে ঠিক কী বার্তা দিলেন? তাহলে কি তিনি রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের ইঙ্গিত দিতে চাইলেন? আর তাই সরকার ভাঙ্গার দায় কারোর নয় বলে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি?

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বিজেপির দিকে সরকার ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, তাহলে পরবর্তীতে ভারতীয় জনতা পার্টি এখানে অনেকটাই চাপে পড়বে। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে কথা বলেছেন বলে উঠে এসেছে, সেই একই কথা বলে সরকার ভাঙলেও ভেঙে যেতে পারে বলে জল্পনা সূচক মন্তব্য করে রাখলেন দিলীপবাবু। এদিন পরিচয় শ্রমিকদের রাজ্যে আশা নিয়েও রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।

তিনি বলেন, “লোক নিয়ে আসা বা পাঠানোর দায়িত্ব রাজ্যের। আগামী এক বছর ধরে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তার জন্য সব বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। পরিযায়ী শ্রমিকরা আসবেই। ফলে সংক্রমণ বাড়তেই পারে। এক্ষেত্রে কলকাতা ও যে জেলাগুলোতে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়ছে, সেখানে কড়াকড়ির দরকার আছে।” সব মিলিয়ে একদিকে পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে কটাক্ষ করে, সরকার ভাঙ্গার ব্যাপারে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে রীতিমতো জল্পনা বাড়িয়ে দিলেন দিলীপ ঘোষ বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।